alt

অর্থ-বাণিজ্য

৭ মাসেই ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) প্রায় ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৫৯৬ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২২৮ কোটি ২ লাখ (২.২৮ বিলিয়ন) ডলার। মাসের বাকি পাঁচ মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুন) এই হারে এলে অর্থবছর শেষে প্রবাসী আয়ের অঙ্ক ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে যা হবে অতীতের যে কোনো অর্থবছরের চেয়ে বেশি। এর আগে সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সপ্তম মাস এবং নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

এই অঙ্ক বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। মাসের প্রথম দিকে ধীর গতি দেখা দিলেও শেষের দিকে বাড়ায় রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এ নিয়ে টানা ছয় মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটা দেখা যায়নি। তবে আগের মাসের চেয়ে এই সূচক কমেছে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ; ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল একক মাসের হিসাবে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার। অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ৭১ লাখ (১৩.৭৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১ হাজার ২৯৬ কোটি ৪২ লাখ (১২.৯৬ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল অর্থবছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের। রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে।

কোভিড মহামারীর সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সাথে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে। সংকট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।কয়েক মাসে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সূচকে।

এদিকে রেমিটেন্স বাড়লেও অর্থনীতির আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ২২ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। তার এক সপ্তাহ আগে ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ৮ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

৯ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এখনও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই অবস্থান করছে।

ছবি

ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে

১১৮তম প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত

জানুয়ারিতে রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি বন্ধের সুপারিশ অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোসের

ছবি

গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি সিরামিকশিল্প মালিকদের

ছবি

তরুণদের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম উদযাপিত

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে আসছে অপো রেনো১৩ সিরিজ

১শ’ জন বেকারের মধ্যে ২৮ জনই উচ্চশিক্ষিত: টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন

ছবি

পণ্য সরবরাহ-বাজার স্বাভাবিক রাখতে আলাদা কমিশন গঠনের প্রস্তাব

ছবি

ইউনিয়ন ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে মোহাম্মদ ইকবালের যোগদান

টিআইএন থাকার পরও রিটার্ন দাখিল না করলে নোটিশ: এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকার বাজেটে ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা কমাতে চেষ্টা করবো: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখি না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

১২ কেজি এলপিজির দাম বেড়েছে

ছবি

বিশ্ববাজারে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো সোনা

ছবি

বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম

ছবি

সবজিতে স্বস্তি বাজারে

ছবি

হায়ার পার্টনার্স মিট ২০২৫ এ সম্মাননা পেলো টিভি হাট

ছবি

রেমিট্যান্সে ডলারের দাম ফের বাড়ছে

ছবি

আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়লো ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

ছবি

দেশজুড়ে ৩৫৬টি কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য বিকাশের সেবা

ছবি

স্বর্ণের দাম আবারও বেড়ে দাঁড়ালো প্রতি ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৯১ টাকা

ছবি

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলায় সাবেক এমপি মিজানুর রহমানের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা আরও ১৬ দিন বাড়ানো হলো

ছবি

১৫ দিন বাড়ছে আয়কর রিটার্ন জমার সময়

রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কার সম্ভব নয় : সিপিডি

ছবি

ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন জমার সময় আরও ১৫ দিন বাড়ছে

ছবি

করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ নয়, সরকারের খরচ কমানোর তাগিদ নাসিম মঞ্জুরের

ছবি

ফল আমদানি সংকট: শুল্ক প্রত্যাহার না হলে বন্দর অবরোধের হুমকি

ছবি

লোকসানে আছে বেক্সিমকো, উৎপাদন বন্ধের প্রভাব

ছবি

শিবলী রুবাইয়াতসহ ৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল

অনুমতি ছাড়াই অনিবাসীদের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ

১০ হাজার চর কৃষকের পাশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ফ্রেইন্ডশিপ

ছবি

পরপর পাঁচ কার্যদিবস শেয়ারবাজারে পতন

ছবি

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ তহবিলের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত চায় ডিবিএ

ছবি

এক্সিম ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আব্দুল আজিজের যোগদান

tab

অর্থ-বাণিজ্য

৭ মাসেই ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) প্রায় ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৫৯৬ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২২৮ কোটি ২ লাখ (২.২৮ বিলিয়ন) ডলার। মাসের বাকি পাঁচ মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুন) এই হারে এলে অর্থবছর শেষে প্রবাসী আয়ের অঙ্ক ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে যা হবে অতীতের যে কোনো অর্থবছরের চেয়ে বেশি। এর আগে সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সপ্তম মাস এবং নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

এই অঙ্ক বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। মাসের প্রথম দিকে ধীর গতি দেখা দিলেও শেষের দিকে বাড়ায় রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এ নিয়ে টানা ছয় মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে আসল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটা দেখা যায়নি। তবে আগের মাসের চেয়ে এই সূচক কমেছে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ; ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল একক মাসের হিসাবে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার। অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ৭১ লাখ (১৩.৭৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১ হাজার ২৯৬ কোটি ৪২ লাখ (১২.৯৬ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল অর্থবছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ওই সময় আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের। রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে।

কোভিড মহামারীর সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সাথে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে। সংকট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।কয়েক মাসে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সূচকে।

এদিকে রেমিটেন্স বাড়লেও অর্থনীতির আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ২২ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। তার এক সপ্তাহ আগে ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ৮ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

৯ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এখনও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই অবস্থান করছে।

back to top