দেশীয় সিরামিকশিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের দাম নতুন করে না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সিরামিকশিল্পের মালিকেরা। একই সঙ্গে সিরামিকশিল্পে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
৩ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএর উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, সহসভাপতি মো. মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন, সহসভাপতি আবদুল হাকিম এবং পরিচালক রাশীদ মাইমুনুল ইসলাম ও ফারিয়ান ইউসুফ।
লিখিত বক্তব্যে বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম জানান, সিরামিক একটি গ্যাসনির্ভর শিল্প। গ্যাসকে এ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে গণ্য করা হয়। সিরামিক পণ্য প্রস্তুত করতে নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে কারখানায় ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে গ্যাসের সরবরাহের ঘাটতি হলে উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় থাকা সব পণ্য তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যায়। বিগত বছরগুলোয় প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপের অভাবে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিশ্ববাজারে নামীদামি কোম্পানি ফরমাশ বাতিল করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বক্তব্য দেন। তিনি জানান, বর্তমানে সব দেশীয় টাইলস পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে এবং স্যানিটারি পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আছে। তিনি বলেন, ‘সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য এখন আর বিলাস দ্রব্য নয়। ফলে এ খাতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে বিসিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রায় এক বছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহ জেলার ২২ থেকে ২৫টি সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার সিরামিক ব্রিকস কারখানায় তীব্র গ্যাসসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সিরামিক কারখানায় যেখানে গ্যাসের ১৫ পিএসআই চাপ থাকা প্রয়োজন হয়, সেখানে গ্যাসের চাপ কখনো কখনো ২-৩ পিএসআই থেকে শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। এতে এসব কারখানায় দৈনিক সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার বেশি উৎপাদন ক্ষতির হচ্ছে।
সংগঠনটি জানায়, শুধু গ্যাসসংকটের কারণে নিবন্ধিত ৫০টির বেশি সিরামিক কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ স্থগিত রেখেছে। আর নতুন স্থাপিত পাঁচটি কারখানা উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। অর্থাৎ এই খাতের বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগও নষ্ট হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দেশের সিরামিকশিল্পকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান শিল্পমালিকেরা।
মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক ধাপে গ্যাসের দাম তিন গুণ বাড়ানো হয়েছিল। তবে দাম বাড়লেও গ্যাসের সরবরাহ আজও ঠিক হয়নি।’
বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম জানান,৯ বছরে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম প্রায় ৩৪৫ শতাংশ বেড়েছে। শুধু ২০২৩ সালে শিল্প খাতে প্রায় ১৫০ শতাংশ গ্যাসের দাম বেড়েছিল। এর ফলে প্রতি কেজি সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন খরচ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়লেও পণ্যের দাম সেই অনুসারে বাড়ানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সরকার গ্যাসের দাম আরেক দফায় গড়ে ১৫২ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি করা হলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়বে।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সিরামিকশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই দেশের গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিরামিক কারখানাগুলোয় প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না, সেখানে সরকার গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি করলে দেশীয় সিরামিকশিল্প সংকটের মধ্যে পড়বে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে রুগ্?ণ শিল্পে পরিণত হবে। শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই হবে, বেকারত্ব বাড়বে। সময়মতো ব্যাংকঋণ পরিশোধের ব্যর্থতায় ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাবে। এটি সরকারের শিল্পবান্ধব নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’
ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে গেছে—এমন মন্তব্য করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই খরচ কমানো না গেলে শিল্প খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে। বিশেষ করে গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। সরকার সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু আর্থিক খাতের চাহিদা ও জোগানের সমন্বয় না করে শুধু সুদহার বাড়িয়ে লাভ হবে না।’
সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশীয় সিরামিকশিল্প রক্ষায় জ্বালানি গ্যাসের দাম নতুন করে না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সিরামিকশিল্পের মালিকেরা। একই সঙ্গে সিরামিকশিল্পে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
৩ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএর উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, সহসভাপতি মো. মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন, সহসভাপতি আবদুল হাকিম এবং পরিচালক রাশীদ মাইমুনুল ইসলাম ও ফারিয়ান ইউসুফ।
লিখিত বক্তব্যে বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম জানান, সিরামিক একটি গ্যাসনির্ভর শিল্প। গ্যাসকে এ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে গণ্য করা হয়। সিরামিক পণ্য প্রস্তুত করতে নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে কারখানায় ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে গ্যাসের সরবরাহের ঘাটতি হলে উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় থাকা সব পণ্য তৎক্ষণাৎ নষ্ট হয়ে যায়। বিগত বছরগুলোয় প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপের অভাবে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিশ্ববাজারে নামীদামি কোম্পানি ফরমাশ বাতিল করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বক্তব্য দেন। তিনি জানান, বর্তমানে সব দেশীয় টাইলস পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে এবং স্যানিটারি পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আছে। তিনি বলেন, ‘সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য এখন আর বিলাস দ্রব্য নয়। ফলে এ খাতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে বিসিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রায় এক বছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহ জেলার ২২ থেকে ২৫টি সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার সিরামিক ব্রিকস কারখানায় তীব্র গ্যাসসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সিরামিক কারখানায় যেখানে গ্যাসের ১৫ পিএসআই চাপ থাকা প্রয়োজন হয়, সেখানে গ্যাসের চাপ কখনো কখনো ২-৩ পিএসআই থেকে শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। এতে এসব কারখানায় দৈনিক সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার বেশি উৎপাদন ক্ষতির হচ্ছে।
সংগঠনটি জানায়, শুধু গ্যাসসংকটের কারণে নিবন্ধিত ৫০টির বেশি সিরামিক কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ স্থগিত রেখেছে। আর নতুন স্থাপিত পাঁচটি কারখানা উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। অর্থাৎ এই খাতের বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগও নষ্ট হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দেশের সিরামিকশিল্পকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান শিল্পমালিকেরা।
মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক ধাপে গ্যাসের দাম তিন গুণ বাড়ানো হয়েছিল। তবে দাম বাড়লেও গ্যাসের সরবরাহ আজও ঠিক হয়নি।’
বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম জানান,৯ বছরে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম প্রায় ৩৪৫ শতাংশ বেড়েছে। শুধু ২০২৩ সালে শিল্প খাতে প্রায় ১৫০ শতাংশ গ্যাসের দাম বেড়েছিল। এর ফলে প্রতি কেজি সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন খরচ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়লেও পণ্যের দাম সেই অনুসারে বাড়ানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সরকার গ্যাসের দাম আরেক দফায় গড়ে ১৫২ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি করা হলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়বে।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সিরামিকশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই দেশের গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিরামিক কারখানাগুলোয় প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না, সেখানে সরকার গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি করলে দেশীয় সিরামিকশিল্প সংকটের মধ্যে পড়বে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে রুগ্?ণ শিল্পে পরিণত হবে। শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই হবে, বেকারত্ব বাড়বে। সময়মতো ব্যাংকঋণ পরিশোধের ব্যর্থতায় ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাবে। এটি সরকারের শিল্পবান্ধব নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’
ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে গেছে—এমন মন্তব্য করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই খরচ কমানো না গেলে শিল্প খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে। বিশেষ করে গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। সরকার সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু আর্থিক খাতের চাহিদা ও জোগানের সমন্বয় না করে শুধু সুদহার বাড়িয়ে লাভ হবে না।’