মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফলতা, খাদ্য নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ, যা চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে, সরকার অর্থনীতির উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বৃদ্ধির আশা অনুযায়ী ছিল, তবে চূড়ান্ত হিসাবে এটি ১ দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ হয়েছে। সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, যা পরবর্তীতে কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রবৃদ্ধি তার চেয়েও কম হয়েছে।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল, কিন্তু এরপর মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, যা ছিল দেশটির ইতিহাসের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। এর পরবর্তীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি আরো কমে যায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের মোট জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ২৭ বিলিয়ন টাকা বা প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। এটি সাময়িক হিসাবের চেয়ে কম। গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, জিডিপির আকার ছিল ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া, মাথাপিছু আয় (পার ক্যাপিটা জিএনআই) দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার, যা পূর্ববর্তী প্রাক্কলন ২ হাজার ৭৮৪ ডলার থেকে কম।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি জানান, রপ্তানি আয় এবং মূল্যস্ফীতি সহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক উন্নতি করেছে। শফিকুল আলম আরো জানান, রপ্তানি আয় গত পাঁচ মাসে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনৈতিক উন্নতির একটি সূচক।
এছাড়া, নতুন চাকরি সৃষ্টির পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করে সরকারের সরকারি খরচ হ্রাসের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
দেশের মূল্যস্ফীতি একসময় ১২ শতাংশে পৌঁছেছিল, কিন্তু তা এখন কমে এক অংকের ঘরে চলে এসেছে। সরকার এর জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সহায়ক রাজস্ব নীতি গ্রহণ করেছে।
প্রেস সচিব জানিয়েছেন, সরকার ঋণের সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। এর ফলে, তিনি আশা করেন, জুলাইয়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এর মধ্যে চলে আসবে।
প্রেস সচিব খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও কথা বলেছেন। গত বছর দেশব্যাপী বন্যা হওয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে, কিন্তু সরকার আমদানি করে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।
তিনি জানান, দেশের ফসল উৎপাদন কিছুটা কম হলেও, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। গত বছর আউশ এবং আমন ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে, কিন্তু খাদ্য আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে।
আগামীতে খাদ্য শস্য আরও ৯ লাখ টন আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, ইউরিয়া সারের বাফার স্টক ৮ লাখ টনে উন্নীত করা হয়েছে যা মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে।
বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া কমানোর লক্ষ্যে ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া, বিদ্যুৎ খাতে নতুন কূপ খনন এবং গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও সিলেট অঞ্চলে গ্যাস উত্তোলনের নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের গ্যাস খাতের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
প্রেস সচিব ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এর কার্যক্রম এবং কমান্ড সেন্টারের উদ্বোধন সম্পর্কেও কথা বলেছেন। এই কমান্ড সেন্টার চালু হওয়ার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে এবং দ্রুত কুইক রেসপন্স প্রদান করা সম্ভব হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যেমন পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এবং র্যাব এই কমান্ড সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বিত হবে।
প্রেস সচিব বলেন, সামনে আরও কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। তবে সরকারের সংকোচনমূলক অর্থনৈতিক নীতি, উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল, এবং চাকরি সৃষ্টির উদ্যোগ অর্থনীতির শক্তি বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আশাবাদী যে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিশেষত, বিদ্যুৎ খাতের উন্নতি এবং বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী উপকার বয়ে আনবে।
সর্বশেষ, শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে রয়েছে এবং এর উন্নতির জন্য সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।”
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফলতা, খাদ্য নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ, যা চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে, সরকার অর্থনীতির উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বৃদ্ধির আশা অনুযায়ী ছিল, তবে চূড়ান্ত হিসাবে এটি ১ দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ হয়েছে। সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, যা পরবর্তীতে কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রবৃদ্ধি তার চেয়েও কম হয়েছে।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল, কিন্তু এরপর মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, যা ছিল দেশটির ইতিহাসের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। এর পরবর্তীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি আরো কমে যায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের মোট জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ২৭ বিলিয়ন টাকা বা প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। এটি সাময়িক হিসাবের চেয়ে কম। গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, জিডিপির আকার ছিল ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া, মাথাপিছু আয় (পার ক্যাপিটা জিএনআই) দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার, যা পূর্ববর্তী প্রাক্কলন ২ হাজার ৭৮৪ ডলার থেকে কম।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি জানান, রপ্তানি আয় এবং মূল্যস্ফীতি সহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক উন্নতি করেছে। শফিকুল আলম আরো জানান, রপ্তানি আয় গত পাঁচ মাসে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনৈতিক উন্নতির একটি সূচক।
এছাড়া, নতুন চাকরি সৃষ্টির পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করে সরকারের সরকারি খরচ হ্রাসের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
দেশের মূল্যস্ফীতি একসময় ১২ শতাংশে পৌঁছেছিল, কিন্তু তা এখন কমে এক অংকের ঘরে চলে এসেছে। সরকার এর জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সহায়ক রাজস্ব নীতি গ্রহণ করেছে।
প্রেস সচিব জানিয়েছেন, সরকার ঋণের সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। এর ফলে, তিনি আশা করেন, জুলাইয়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এর মধ্যে চলে আসবে।
প্রেস সচিব খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও কথা বলেছেন। গত বছর দেশব্যাপী বন্যা হওয়ায় অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে, কিন্তু সরকার আমদানি করে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।
তিনি জানান, দেশের ফসল উৎপাদন কিছুটা কম হলেও, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। গত বছর আউশ এবং আমন ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে, কিন্তু খাদ্য আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে।
আগামীতে খাদ্য শস্য আরও ৯ লাখ টন আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, ইউরিয়া সারের বাফার স্টক ৮ লাখ টনে উন্নীত করা হয়েছে যা মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে।
বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া কমানোর লক্ষ্যে ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া, বিদ্যুৎ খাতে নতুন কূপ খনন এবং গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও সিলেট অঞ্চলে গ্যাস উত্তোলনের নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের গ্যাস খাতের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
প্রেস সচিব ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এর কার্যক্রম এবং কমান্ড সেন্টারের উদ্বোধন সম্পর্কেও কথা বলেছেন। এই কমান্ড সেন্টার চালু হওয়ার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে এবং দ্রুত কুইক রেসপন্স প্রদান করা সম্ভব হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যেমন পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এবং র্যাব এই কমান্ড সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বিত হবে।
প্রেস সচিব বলেন, সামনে আরও কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। তবে সরকারের সংকোচনমূলক অর্থনৈতিক নীতি, উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল, এবং চাকরি সৃষ্টির উদ্যোগ অর্থনীতির শক্তি বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আশাবাদী যে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিশেষত, বিদ্যুৎ খাতের উন্নতি এবং বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী উপকার বয়ে আনবে।
সর্বশেষ, শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে রয়েছে এবং এর উন্নতির জন্য সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।”