নানা বাধাবিপত্তির মধ্যেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪২৪ কোটি ৮৬ লাখ (৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮০ কোটি ২৮ লাখ (৩.৮০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। এর পর টানা চার মাস (অক্টোবর থেকে জানুয়ারি) ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসে। তবে ফেব্রুয়ারিতে হোঁচট খায়; ওই মাসে তা ৪ বিলিয়ন ডলারের কম ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ (৩.৯৭ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪২৪ কোটি ৮৬ লাখ (৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ১৩ লাখ (৩৭.১৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ৭৪ লাখ (৩৩.৭২ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ (৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন রপ্তানিকারকরা। যা ছিল গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। তার আগের মাস ডিসেম্বরে রপ্তানি অঙ্ক ছিল ৪৬২ কোটি ৭৫ লাখ (৪.৬২ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ (৪.১২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য। বেড়েছিল ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে আয়ের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য তিন ও ৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৬১ ও ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে যে খাত থেকে- সেই পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে ঊর্ধ্বমূখী ধারা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতিতে আগামী মাসগুলোতে কেমন আয় হবে- তা নিয়ে চিন্তায় আছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, ইপিবি রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে। গত বছরের জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইপিবি। এর পর থেকে রপ্তানি আয়ের সংশোধিত বা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করছে ইপিবি। গরমিল ধরা পরার পর গত বছরের ৯ অক্টোবর চলতি অর্থ বছরের তিন মাসের (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করেছিল ব্যুরো।
৪ ডিসেম্বর নভেম্বর মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বর মাসের তথ্য। ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয় জানুয়ারি মাসের তথ্য। ৪ মার্চ প্রকাশ করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য। সবশেষ সোমবার মার্চ মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১২.৪০ শতাংশ: দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক; মোট আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের মার্চে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮১ দশমিক ৩২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এই নয় মাসে ৩০ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ২৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, জুলাই-মার্চ সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এই নয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
মার্চ মাসে নিট পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
অন্যান্য খাত: ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য খাতের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের মার্চে আয়ের অঙ্ক ছিল ৭ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এই নয় মাসে ৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থ বছরের একই সময়ে রপ্তানি অঙ্ক ছিল ৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। মার্চে কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের মার্চে আয়ের অঙ্ক ছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। কমেছে ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।
তবে নয় মাসের হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। জুলাই-মার্চ সময়ে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৮০ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত অর্থ বছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ৭৬ কোটি ৪ লাখ ডলার। মার্চে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় বেড়েছে দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে জুলাই-মার্চ অর্থাৎ নয় মাসের হিসাবে বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। নয় মাসের হিসাবে বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। মার্চ মাসে হিমায়িত মাচ রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নয় মাসের হিসাবে বেড়েছে ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে। উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকা-। বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অস্থিরতার মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় খুশি ছিলেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। কিন্তু ট্রাম্প সরকারের শুল্কের ধাক্কায় সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে। এখন কি হবে—তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। এদিকে ট্রাম্প শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ স্থগিতের নির্দেশনা আসতে শুরু করেছে। অথচ বছরের শুরুতেও এমনটা ভাবেননি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। কারণ ২০২৫ সালের শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের উল্লম্ফন দিয়ে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। তা দেখে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা বেজায় খুশি হয়ে ব্যবসা আরও বাড়ার আশা যখন করছিলেন। হিসাব কষে দেখছিলেন, এবছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি ২৫ শতাংশ বাড়বে। ঠিক তখনই আঘাত হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি। গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের পণ্যে যোগ হয় ৩৭ শতাংশ শুল্ক। আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে মিলে সর্বমোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৫২ শতাংশ।
মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫
নানা বাধাবিপত্তির মধ্যেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪২৪ কোটি ৮৬ লাখ (৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮০ কোটি ২৮ লাখ (৩.৮০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। এর পর টানা চার মাস (অক্টোবর থেকে জানুয়ারি) ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসে। তবে ফেব্রুয়ারিতে হোঁচট খায়; ওই মাসে তা ৪ বিলিয়ন ডলারের কম ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ (৩.৯৭ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪২৪ কোটি ৮৬ লাখ (৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ১৩ লাখ (৩৭.১৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ৭৪ লাখ (৩৩.৭২ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ (৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন রপ্তানিকারকরা। যা ছিল গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। তার আগের মাস ডিসেম্বরে রপ্তানি অঙ্ক ছিল ৪৬২ কোটি ৭৫ লাখ (৪.৬২ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ (৪.১২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য। বেড়েছিল ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে আয়ের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য তিন ও ৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৬১ ও ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে যে খাত থেকে- সেই পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে ঊর্ধ্বমূখী ধারা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতিতে আগামী মাসগুলোতে কেমন আয় হবে- তা নিয়ে চিন্তায় আছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, ইপিবি রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে। গত বছরের জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইপিবি। এর পর থেকে রপ্তানি আয়ের সংশোধিত বা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করছে ইপিবি। গরমিল ধরা পরার পর গত বছরের ৯ অক্টোবর চলতি অর্থ বছরের তিন মাসের (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করেছিল ব্যুরো।
৪ ডিসেম্বর নভেম্বর মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বর মাসের তথ্য। ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয় জানুয়ারি মাসের তথ্য। ৪ মার্চ প্রকাশ করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য। সবশেষ সোমবার মার্চ মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১২.৪০ শতাংশ: দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক; মোট আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের মার্চে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮১ দশমিক ৩২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এই নয় মাসে ৩০ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ২৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, জুলাই-মার্চ সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এই নয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
মার্চ মাসে নিট পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
অন্যান্য খাত: ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য খাতের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের মার্চে আয়ের অঙ্ক ছিল ৭ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এই নয় মাসে ৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থ বছরের একই সময়ে রপ্তানি অঙ্ক ছিল ৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। মার্চে কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের মার্চে আয়ের অঙ্ক ছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। কমেছে ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।
তবে নয় মাসের হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। জুলাই-মার্চ সময়ে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৮০ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত অর্থ বছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ৭৬ কোটি ৪ লাখ ডলার। মার্চে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় বেড়েছে দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে জুলাই-মার্চ অর্থাৎ নয় মাসের হিসাবে বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। নয় মাসের হিসাবে বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। মার্চ মাসে হিমায়িত মাচ রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নয় মাসের হিসাবে বেড়েছে ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে। উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকা-। বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অস্থিরতার মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় খুশি ছিলেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। কিন্তু ট্রাম্প সরকারের শুল্কের ধাক্কায় সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে। এখন কি হবে—তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। এদিকে ট্রাম্প শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ স্থগিতের নির্দেশনা আসতে শুরু করেছে। অথচ বছরের শুরুতেও এমনটা ভাবেননি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। কারণ ২০২৫ সালের শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের উল্লম্ফন দিয়ে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। তা দেখে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা বেজায় খুশি হয়ে ব্যবসা আরও বাড়ার আশা যখন করছিলেন। হিসাব কষে দেখছিলেন, এবছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি ২৫ শতাংশ বাড়বে। ঠিক তখনই আঘাত হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি। গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের পণ্যে যোগ হয় ৩৭ শতাংশ শুল্ক। আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে মিলে সর্বমোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৫২ শতাংশ।