তিন মাসে বিদেশ থেকে নেয়া বাংলাদেশের ঋণ কিছুটা কমেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ঋণের ওই পরিমাণ দেশীয় মুদ্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।
ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ঋণের ওই পরিমাণ দেশীয় মুদ্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকার ও সরকারি দপ্তর মিলিয়ে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি ১৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। মোট ঋণের মধ্যে বিদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে নেওয়া ?দীর্ঘমেয়াদী ?ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মোট ঋণের ৮৭ দশমিক ৫৪ শতাংশই দীর্ঘমেয়াদী।
আর সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী ঋণ এসেছে ১২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার যা মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। একই বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৪ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ কমেছে ৭৪০ মিলিয়ন ডলার বা শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে বিদেশ থেকে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার যা মোট ঋণের ৮০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর বাকি ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ গেছে বেসরকারি খাতে।
সে প্রান্তিকে বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে ৯১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ছিল। অর্থাৎ ৮৭ দশমিক ৯১ শতাংশ বিদেশি ঋণই ছিল দীর্ঘমেয়াদী। আর সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী ঋণ ছিল ১২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বিদেশ থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার বা ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে ব্ড় বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের কাজে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এর আগে জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাড়ে ১৫ বছরে সরকার প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ করে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বিদায় নেওয়ার বছর শেষে (২০০৬ সাল শেষে) বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে তা সোয়া দুই বিলিয়ন ডলারের মত বাড়ে। তাতে ২০০৮ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে যদিও বিদেশি মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। এসব ঋণের একটা অংশ দর কষাকষি বা কম বাছবিচার করে নেওয়ার সমালোচনাও রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে উন্নয়ন কাজের চাপ সামাল দিতে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার বিষয় নিয়েও সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, বিগত সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা যথাযথ না থাকায় দেশি ও বিদেশি উভয় উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ কমার বড় কারণ হচ্ছে আস্থার সংকট রয়েছে। আদানির বকেয়া, উড়োজাহাজ কোম্পানির বকেয়া, সঠিক সময় এলসির খরচ না দেওয়াসহ বিদেশি মুদ্রার একটা সংকটের চিত্র ছিল। যদিও ইদানিং বিদেশি মুদ্রার প্রবাহ ভালো হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সিগুলো বাংলাদেশকে ডাউনগ্রেড দিয়েছে। বিনিয়োগ করার সময় এসব বিষয় বিবেচনায় আনা হয়। এতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সুদ বেশি হওয়ার কারণে যেমন দেশের অনেকে ঋণ নিচ্ছেন না, আবার এটাও সঠিক যে বেশি সুদ পাবে, তবুও আস্থার অভাবে ঋণ দিয়েছে কম। সম্প্রতি বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি বাড়লেও উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক এমন কোনো পরিবর্তন হয়নি যাতে বিদেশিরা এদেশে ঋণ দেওয়া বাড়াবে।’
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
তিন মাসে বিদেশ থেকে নেয়া বাংলাদেশের ঋণ কিছুটা কমেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ঋণের ওই পরিমাণ দেশীয় মুদ্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।
ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ঋণের ওই পরিমাণ দেশীয় মুদ্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকার ও সরকারি দপ্তর মিলিয়ে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি ১৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। মোট ঋণের মধ্যে বিদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে নেওয়া ?দীর্ঘমেয়াদী ?ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মোট ঋণের ৮৭ দশমিক ৫৪ শতাংশই দীর্ঘমেয়াদী।
আর সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী ঋণ এসেছে ১২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার যা মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। একই বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৪ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ কমেছে ৭৪০ মিলিয়ন ডলার বা শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে বিদেশ থেকে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার যা মোট ঋণের ৮০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর বাকি ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ গেছে বেসরকারি খাতে।
সে প্রান্তিকে বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে ৯১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ছিল। অর্থাৎ ৮৭ দশমিক ৯১ শতাংশ বিদেশি ঋণই ছিল দীর্ঘমেয়াদী। আর সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী ঋণ ছিল ১২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বিদেশ থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার বা ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে ব্ড় বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের কাজে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এর আগে জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাড়ে ১৫ বছরে সরকার প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ করে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বিদায় নেওয়ার বছর শেষে (২০০৬ সাল শেষে) বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে তা সোয়া দুই বিলিয়ন ডলারের মত বাড়ে। তাতে ২০০৮ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে যদিও বিদেশি মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। এসব ঋণের একটা অংশ দর কষাকষি বা কম বাছবিচার করে নেওয়ার সমালোচনাও রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে উন্নয়ন কাজের চাপ সামাল দিতে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার বিষয় নিয়েও সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, বিগত সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা যথাযথ না থাকায় দেশি ও বিদেশি উভয় উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ কমার বড় কারণ হচ্ছে আস্থার সংকট রয়েছে। আদানির বকেয়া, উড়োজাহাজ কোম্পানির বকেয়া, সঠিক সময় এলসির খরচ না দেওয়াসহ বিদেশি মুদ্রার একটা সংকটের চিত্র ছিল। যদিও ইদানিং বিদেশি মুদ্রার প্রবাহ ভালো হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সিগুলো বাংলাদেশকে ডাউনগ্রেড দিয়েছে। বিনিয়োগ করার সময় এসব বিষয় বিবেচনায় আনা হয়। এতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সুদ বেশি হওয়ার কারণে যেমন দেশের অনেকে ঋণ নিচ্ছেন না, আবার এটাও সঠিক যে বেশি সুদ পাবে, তবুও আস্থার অভাবে ঋণ দিয়েছে কম। সম্প্রতি বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি বাড়লেও উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক এমন কোনো পরিবর্তন হয়নি যাতে বিদেশিরা এদেশে ঋণ দেওয়া বাড়াবে।’