alt

ট্রাম্পের শুল্ক মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার আহ্বান ব্যবসায়ীদের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছেন, এই সময় বাংলাদেশকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে বলে মনে করেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা মনে করেন, এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তা না হলে বড়দিনের ক্রয়াদেশ ধরা কঠিন হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় দেশের বেসরকারি খাতকে যুক্ত করতে হবে।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত তরাশ সভায় এসব কথা বলেন নাসিম মঞ্জুর। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রস্তাব তুলে ধরতে এই সভার আয়োজন করে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)।

শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যেন আত্মতুষ্টির কারণ না হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে বাংলাদেশ কী করতে যাচ্ছে। এক দিনও দেরি করা চলবে না। আমাদের রপ্তানির বেশির ভাগ পণ্য মৌসুমভিত্তিক। এই ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হবে, যখন বছরের সবচেয়ে বড় অর্ডার নেওয়ার সময়। যদি তার আগেই বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে পুরো মৌসুমের অর্ডার হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে। এতে অনেক কারখানা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।’

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আমদানি শুল্ক পদ্ধতি (কাস্টমস ডিউটি) ঠিক করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য প্রধান প্রধান পণ্যের বেশির ভাগেরই শুল্ক শূন্য বা প্রায় শূন্য, যদিও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) অনেক বেশি। বিষয়টি হলো, কোনো সরকার সম্পূরক শুল্কের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। এই রীতি থেকে বের হয়ে আসা খুব জরুরি। সে জন্য অবিলম্বে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।’

বাণিজ্যে অশুল্ক বাধাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘অশুল্ক বাধা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। সম্ভবত আমরাই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে এখনো খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রেডিয়েশন বা বিকিরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রয়েছে। এমন আরও অনেক বিষয় আছে। এসব পরীক্ষা করতে গিয়ে সময় ও অর্থের অপচয় হয়, যার দায় শেষমেশ ভোক্তাদের ঘাড়েই পড়ে।’

সভায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বলেন, ‘শুল্কের বিষয়ে সাধারণ যেসব জিজ্ঞাসা রয়েছে, সে বিষয়ে আমারও কাছেও পরিষ্কার উত্তর নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব।’

জন ফে বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ অনেক বেশি। শুধু আমদানি শুল্কই নয়; সম্পূরক শুল্কও অনেক বেশি। প্রযুক্তিপণ্য, কোল্ডচেইনসহ বিভিন্ন পণ্যে এ ধরনের উচ্চশুল্ক রয়েছে। অন্যদিকে অশুল্ক বাধাও আছে অনেক। এগুলো সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য বাণিজ্য কঠিন করে তুলেছে। আমার মনে হয়, এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা। ৯০ দিন বেশি সময় নয়। শুধু আলোচনা করলেই হবে না, এ সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিকারক দুটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, ‘পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের পরীক্ষা (ল্যাব টেস্ট) করতে হয়। কিন্তু পরীক্ষাগারের সংখ্যা কম থাকায় সাধারণ প্রতিবেদন পেতে তিন থেকে চার দিন লেগে যায়। সরকারি ছুটির সময় ৮-১০ দিনও লেগে যায়। এসব কারণে আমদানির সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়।’

সভায় অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শরিফ জহির বলেন, ‘৩ মাস স্থগিতের মধ্যেও এখন ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আছে, বেশির ভাগ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই বাড়তি করের (১০ শতাংশ) বোঝা আমাদের ভাগ করে নিতে বলেছে। ৩৭ শতাংশ শুল্ক আবার ফিরে এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আমাদের কারখানাগুলো এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে যে তিন মাস বা ছয় মাস রপ্তানি বন্ধ থাকলে বা কারখানা চালু না থাকলে আমরা টিকতে পারব না।

ফলে এই ৯০ দিনের সময়সীমার প্রতিটি দিন আমাদের পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে।’ তার অনুরোধ, এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখা হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালক আবু মোখলেস আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।’ এ ছাড়া বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘মান ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমরা সব সময়ই ব্যবহার করতে চাই। তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় এ তুলার দাম বেশি এবং পরিবহন ব্যয়ও অনেক বেশি। ফলে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বিনষ্ট হয়।’ যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে না, যদিও তার মত, অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক সুবিধা দিতে পারে তারা। এ ক্ষেত্রে সরকার দর-কষাকষি করতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগের সদস্য বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর কোন কোন পণ্য আমদানি করতে পারি, তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। অন্যান্য দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন অনেক কোম্পানির পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি তালিকায় নেই। এ ক্ষেত্রে উৎস দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইনভয়েস দেওয়া হলে আমাদের আমদানির পরিমাণ বাড়বে।’

স্বাগত বক্তব্যে অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে শুল্ক বাধার চেয়ে অশুল্ক বাধাই বেশি। আমরা এসব বিষয় নিয়ে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারি এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা প্রস্তাব দিতে পারি। মোদ্দা কথা হলো, সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। এরপর এই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করে ট্রাম্পকে চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্ক-সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেন।

এ ছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রীর মতো বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথা বলেন তিনি। ৯ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ব্যতীত সব দেশের পণ্যে ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক স্থগিত করেন।

ছবি

বিজিএমইএ–মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক: শুল্ক কমাতে আহ্বান

ছবি

জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ

ছবি

বিবিএসের নাম পরিবর্তন ও তদারক পরিষদ রাখার সুপারিশ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করার তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের

ছবি

নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর

ছবি

আড়াই মাসে ১৩৯ কোটি ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে আবেদনের সময় বাড়লো ২ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পুঁজিবাজারে সূচকের নামমাত্র উত্থান, লেনদেন আরও তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে লেনোভো ভি সিরিজের নতুন ল্যাপটপ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরও কমতে পারে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

বাজারে গিগাবাইট এআই টপ ১০০ জেড৮৯০ পিসি

ছবি

কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সফটওয়্যার চালু করলো এনবিআর

ছবি

ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম ও ডেবিট কার্ডসেবা সাময়িক বন্ধ থাকবে

ছবি

বেপজার ইপিজেডগুলোতে শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু

ছবি

বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসে আরও ৫ সেবা যুক্ত

ছবি

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছাতে ব্যবসায়ীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান

ছবি

আড়াইগুণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনে বাজার মূলধন কমলো ৩ হাজার কোটি টাকা

ছবি

পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে রোববার ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল

ছবি

বাংলাদেশে ব্লুটুথ হেডফোন ও ডেটা কেবল তৈরির কারখানা করবে চীন

ছবি

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার নিয়ম

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে অপো এ৫ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট

ছবি

নিত্যপণ্যের বাজারে সবজির সঙ্গে বেড়েছে চাল ও মুরগির দামও

ছবি

ডিসেম্বরের মধ্যে এনবিআরের কার্যক্রম দুই ভাগ হয়ে যাবে

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ

ছবি

শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর আমানত এক মাসে বেড়েছে ৮ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা

ছবি

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে মূসক অব্যাহতি

ছবি

অর্থ বিভাগের পরিপত্র: ৯ মাসে ৬০ শতাংশ খরচ করতে না পারলে অর্থছাড় বন্ধ

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে মিতসুবিশি’র নতুন এক্সপ্যান্ডার ব্ল্যাক সিরিজ

ছবি

বেসিসের নতুন প্রশাসক আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান

ছবি

দারাজ বাংলাদেশের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৯.৯ অ্যানিভার্সারি মেগা সেল

ছবি

শাওমি বাজারে নিয়ে এলো রেডমি প্যাড ২

ছবি

নভেম্বরের মধ্যেই একীভূত হবে পাঁচ ব্যাংক

tab

ট্রাম্পের শুল্ক মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার আহ্বান ব্যবসায়ীদের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছেন, এই সময় বাংলাদেশকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে বলে মনে করেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা মনে করেন, এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তা না হলে বড়দিনের ক্রয়াদেশ ধরা কঠিন হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় দেশের বেসরকারি খাতকে যুক্ত করতে হবে।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত তরাশ সভায় এসব কথা বলেন নাসিম মঞ্জুর। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রস্তাব তুলে ধরতে এই সভার আয়োজন করে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)।

শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যেন আত্মতুষ্টির কারণ না হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে বাংলাদেশ কী করতে যাচ্ছে। এক দিনও দেরি করা চলবে না। আমাদের রপ্তানির বেশির ভাগ পণ্য মৌসুমভিত্তিক। এই ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হবে, যখন বছরের সবচেয়ে বড় অর্ডার নেওয়ার সময়। যদি তার আগেই বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে পুরো মৌসুমের অর্ডার হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে। এতে অনেক কারখানা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।’

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আমদানি শুল্ক পদ্ধতি (কাস্টমস ডিউটি) ঠিক করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য প্রধান প্রধান পণ্যের বেশির ভাগেরই শুল্ক শূন্য বা প্রায় শূন্য, যদিও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) অনেক বেশি। বিষয়টি হলো, কোনো সরকার সম্পূরক শুল্কের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। এই রীতি থেকে বের হয়ে আসা খুব জরুরি। সে জন্য অবিলম্বে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।’

বাণিজ্যে অশুল্ক বাধাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘অশুল্ক বাধা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। সম্ভবত আমরাই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে এখনো খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রেডিয়েশন বা বিকিরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রয়েছে। এমন আরও অনেক বিষয় আছে। এসব পরীক্ষা করতে গিয়ে সময় ও অর্থের অপচয় হয়, যার দায় শেষমেশ ভোক্তাদের ঘাড়েই পড়ে।’

সভায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বলেন, ‘শুল্কের বিষয়ে সাধারণ যেসব জিজ্ঞাসা রয়েছে, সে বিষয়ে আমারও কাছেও পরিষ্কার উত্তর নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব।’

জন ফে বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ অনেক বেশি। শুধু আমদানি শুল্কই নয়; সম্পূরক শুল্কও অনেক বেশি। প্রযুক্তিপণ্য, কোল্ডচেইনসহ বিভিন্ন পণ্যে এ ধরনের উচ্চশুল্ক রয়েছে। অন্যদিকে অশুল্ক বাধাও আছে অনেক। এগুলো সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য বাণিজ্য কঠিন করে তুলেছে। আমার মনে হয়, এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা। ৯০ দিন বেশি সময় নয়। শুধু আলোচনা করলেই হবে না, এ সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিকারক দুটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, ‘পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের পরীক্ষা (ল্যাব টেস্ট) করতে হয়। কিন্তু পরীক্ষাগারের সংখ্যা কম থাকায় সাধারণ প্রতিবেদন পেতে তিন থেকে চার দিন লেগে যায়। সরকারি ছুটির সময় ৮-১০ দিনও লেগে যায়। এসব কারণে আমদানির সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়।’

সভায় অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শরিফ জহির বলেন, ‘৩ মাস স্থগিতের মধ্যেও এখন ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আছে, বেশির ভাগ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই বাড়তি করের (১০ শতাংশ) বোঝা আমাদের ভাগ করে নিতে বলেছে। ৩৭ শতাংশ শুল্ক আবার ফিরে এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আমাদের কারখানাগুলো এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে যে তিন মাস বা ছয় মাস রপ্তানি বন্ধ থাকলে বা কারখানা চালু না থাকলে আমরা টিকতে পারব না।

ফলে এই ৯০ দিনের সময়সীমার প্রতিটি দিন আমাদের পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে।’ তার অনুরোধ, এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখা হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালক আবু মোখলেস আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।’ এ ছাড়া বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘মান ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমরা সব সময়ই ব্যবহার করতে চাই। তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় এ তুলার দাম বেশি এবং পরিবহন ব্যয়ও অনেক বেশি। ফলে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বিনষ্ট হয়।’ যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে না, যদিও তার মত, অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক সুবিধা দিতে পারে তারা। এ ক্ষেত্রে সরকার দর-কষাকষি করতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগের সদস্য বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর কোন কোন পণ্য আমদানি করতে পারি, তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। অন্যান্য দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন অনেক কোম্পানির পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি তালিকায় নেই। এ ক্ষেত্রে উৎস দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইনভয়েস দেওয়া হলে আমাদের আমদানির পরিমাণ বাড়বে।’

স্বাগত বক্তব্যে অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে শুল্ক বাধার চেয়ে অশুল্ক বাধাই বেশি। আমরা এসব বিষয় নিয়ে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারি এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা প্রস্তাব দিতে পারি। মোদ্দা কথা হলো, সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। এরপর এই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করে ট্রাম্পকে চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্ক-সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেন।

এ ছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রীর মতো বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথা বলেন তিনি। ৯ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ব্যতীত সব দেশের পণ্যে ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক স্থগিত করেন।

back to top