alt

অর্থ-বাণিজ্য

শিক্ষা বাজেট: ‘গতানুগতিক’ ও ‘হতাশার’, বলছেন শিক্ষাবিদরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে এবারও কমেছে। প্রযুক্তি খাতেও একই অনুপাতে বরাদ্দ কমেছে। গত আট বছর ধরেই শিক্ষায় জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে। টাকার অংকে যেটুকু বাড়ে তার প্রায় পুরোটাই ‘ইনফ্লেশন’ ও ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ খাতে ব্যয় হয় বলে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন।

গত ২ জুন সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য সাত লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এক লাখ দশ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন, যা মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৭ শতাংশ।

বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দকে ‘হতাশার’ আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলেছেন, শিক্ষা বাজেটে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়নি’। তারা বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দকে ‘গতানুগতিক’ বলছেন।

নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ নিয়ে হতাশ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

তিনি মঙ্গলবার (৩ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে শিক্ষায় বরাদ্দ অংকে বেড়েছে কিন্তু জিডিপির শতাংশে ২.২৮% থেকে কমতে কমতে গত বাজেটে ১.৬৯%-এ ঠেকেছিল। কিন্তু টাকার অঙ্কে বেড়েছিল। টাকার অঙ্কে যেটুকু বাড়ে তার প্রায় সবটাই ইনফ্লেশন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন খেয়ে ফেলে।’

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, যা সংশোধীত বাজেটে ৯৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। ওই টাকার পরিমাণ ছিল সংশোধিত বাজেটের ১৩.৩২ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মানদ-ে একটি দেশের শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ হলে সেটিকে ‘আদর্শ’ মানদ- হিসেবে ধরা হয়।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে এইটা চরম ফাঁকিবাজি কথা। বলতে হবে জিডিপির স্কেলে শিক্ষায় বরাদ্দ কতটা বেড়েছে। ইউনেস্কো বলে একটি দেশ শিক্ষায় নূন্যতম তার জিডিপির ৫.৫% বরাদ্দ দেয়া উচিত। কেন বলে? যাতে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করা যায়, যাতে করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও স্কলারশিপ পায়, যাতে করে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া যায়।’

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের থেকে টাকার অঙ্কে ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এবার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে মোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিন হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ টাকা হিসাবে কিছুটা কমেছে। তবে বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় এবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় তিন হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৮৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

নতুন অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য ১২ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ছিল।

এ বিষয়ে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমদ সংবাদকে বলেছেন, ‘বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা গতানুগতিক; আগের মতোই হলো। নতুন কিছু নেই।’

প্রাথমিকে তারা ‘নিরাময়মূলক শিক্ষা’ প্রত্যাশা করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকের শিক্ষার মান বাড়ানো, কোচিংয়ের পরিবর্তে স্কুলগুলোতে দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা, শিক্ষক বাড়ানো, এ সংক্রান্ত্র সাপোর্ট বাড়ানো, প্রয়োজনে বেসরকারি এনজিও সহায়তা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বাজেটে এসবের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে আমরা একেবারেই হতাশ। সেখানে গতানুগতিক অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার-এসব কথাই বলা হয়েছে। উপদেষ্টারা মুখে মুখে শিক্ষায় মান বৃদ্ধি ও গুরুত্বের কথা বললেও বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।’

এ দিকে নতুন অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য দুই হাজার ১৬৪ কোটি টাকা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ে ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব ‘আশানরূপ নয়’ মন্তব্য করে সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, শিক্ষায় টাকার অংকে যতটুকু বরাদ্দ বেড়েছে তা ‘আশানরূপ’ নয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষায় বারাদ্দ অনেকটা কমে যাওয়া ‘হতাশার’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকায় শিক্ষায় ‘আশানরূপ’ বরাদ্দ আসেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের হার আশানরূপ থাকলে শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ খাত আরও অগ্রাধিকার পেত।

উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী করা :
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক মানের আউটকাম বেইজড অ্যাডুকেশন (ওবিই) পদ্ধতিতে কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় ৬২টি প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫১ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আট লাখ এবং স্নাতক পর্যায়ে এক লাখ ৬৫ হাজার অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি এবং গ্রাচুইটি প্রদানসহ সব স্তরের শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা বলেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল হালিম বলেছেন, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান কোন দিকে যাচ্ছে সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। কারণ অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা পিছিয়ে। বিশ্ব র‌্যাংকিংগুলোতে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে শিক্ষার মান ঠিক আছে কিনা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোতে অধ্যাপক নেই। এমন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে।

সরকারকে উচ্চশিক্ষার মানে নজর দেওয়া আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে টাকায় একজন অধ্যাপকের বেতনভাতা হয়, সে টাকায় হয়ত তিনজন প্রভাষককে নিয়োগ দেয়া যায়। সেখানেও অর্থনৈতিক চিন্তা। এসব জায়গায় নজর দেয়ার সময় এসেছে।

এবতেদায়ী শিক্ষায় সুখবর :
এবারের বাজেটে প্রাথমিক পর্যায়ের মাদ্রাসা ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য সুখবর রয়েছে। নতুন বাজেটে এবতেদায়ী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদ্রাসাগুলোর এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে এক হাজার ১৩৫টি মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫১৩টি বহুতল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। ৪৯৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।’

কারিগরিতে ২০ শতাংশ এনরোলমেন্টের লক্ষ্য :
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় কারিগরি শিক্ষা এনরোলমেন্ট হার বাড়ানোর লক্ষ্য তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্টের হার ১৯ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ২০ শতাংশে উন্নীত করতে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে মহিলা পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জেলা পর্যায়ে পলিটেকনিক এবং উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।’

ছবি

বিদেশ থেকে বছরে একবারই সোনা আনার সুযোগ, শুল্কও বাড়ল

ছবি

আইএমএফের ছকের বাজেট শিল্পের জন্য ‘হুমকি’: বিসিআই

ছবি

জুলাই থেকে নতুন হারে আয়কর: এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

হঠাৎ করে অনেক সাহসী বাজেট দেয়া সম্ভব ছিল না: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

“ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব নিয়েছি”—বাজেট নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য

ছবি

বিনিময় হারে স্বস্তিতে মূল্যস্ফীতি কমার আশা দেখছেন গভর্নর আহসান মনসুর

ছবি

বাজেটে আইসিটি খাতে ‘সুখবর’ দেখতে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা

ছবি

বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বিদেশী উদ্যোক্তাদের

ছবি

ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে বাজেট ততটা আশাব্যঞ্জক নয়: ডিসিসিআই

ছবি

ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ও সচিবরা

ক্রেডিট কার্ডসহ ১২ সেবায় রিটার্ন নয়, লাগবে শুধু টিআইএন সনদ

ছবি

আবাসনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল, বাড়ছে করহার

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নয়, বাড়ছে ‘বিশেষ সুবিধা’

মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজেটে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই: ঢাকা চেম্বার

ছবি

নোবেলসহ ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের অর্থ করমুক্ত রাখার প্রস্তাব

ছবি

বাজেট: বৈষম্যহীনতার প্রতিশ্রুতি, পুরনো কৌশলেই ভরসা

কালো টাকাকে বৈধতা দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের স্ববিরোধিতা: টিআইবি

দাম কমতে পারে

দাম বাড়তে পারে

ছবি

যাত্রী পরিবহনে খরচ কমাতে এয়ারলাইন্সে ভ্যাট ছাড়

ছবি

নতুন শুল্কে গলা টিপে ধরার শঙ্কায় ওটিটি ইন্ডাস্ট্রি

ছবি

ত্রৈমাসিক রিটার্ন, দলিল যাচাইয়ে নতুন কর বিধান

মূল্যস্ফীতির হার ২৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

ছবি

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা

ছবি

২০২৫-২৬ বাজেটে কালোটাকা সাদা রাখার প্রস্তাব, কর হার বাড়ল এলাকাভেদে

ছবি

ব্লু ইকোনমি ও বিজ্ঞান গবেষণায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

ছবি

বাড়লো না করমুক্ত আয়ের সীমা, কর ধাপ সাত থেকে ছয়ে, বাড়বে করের বোঝা

ছবি

বাজেটে বিনিয়োগকারীর জন্য সরাসরি প্রণোদনা নেই, শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা

ছবি

ট্যারিফ ভ্যালুর বদলে ইনভয়েস ভ্যালুতে শুল্ক প্রস্তাব, বিপিসির শুল্ক হার কমানোর উদ্যোগ

ছবি

ছোট আমানতকারীদের স্বস্তি: আবগারি শুল্ক ছাড়ের সীমা বাড়ল

ছবি

মে মাসে রেমিটেন্স এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার

ছবি

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট টিভিতে উপস্থাপন করছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নকশার নোট বিতরণ শুরু সোমবার

ছবি

পোশাক খাত: এখনও বোনাস পরিশোধ করেনি ৭৩ শতাংশ কারখানা

বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক, দুই সমঝোতা সই

ছবি

বিজিএমইএ’র সভাপতি হচ্ছেন মাহমুদ হাসান, ৩৫ পদের ৩১টিতে জয়ী ফোরাম

tab

অর্থ-বাণিজ্য

শিক্ষা বাজেট: ‘গতানুগতিক’ ও ‘হতাশার’, বলছেন শিক্ষাবিদরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে এবারও কমেছে। প্রযুক্তি খাতেও একই অনুপাতে বরাদ্দ কমেছে। গত আট বছর ধরেই শিক্ষায় জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে। টাকার অংকে যেটুকু বাড়ে তার প্রায় পুরোটাই ‘ইনফ্লেশন’ ও ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ খাতে ব্যয় হয় বলে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন।

গত ২ জুন সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য সাত লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এক লাখ দশ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন, যা মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৭ শতাংশ।

বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দকে ‘হতাশার’ আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলেছেন, শিক্ষা বাজেটে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়নি’। তারা বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দকে ‘গতানুগতিক’ বলছেন।

নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ নিয়ে হতাশ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

তিনি মঙ্গলবার (৩ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে শিক্ষায় বরাদ্দ অংকে বেড়েছে কিন্তু জিডিপির শতাংশে ২.২৮% থেকে কমতে কমতে গত বাজেটে ১.৬৯%-এ ঠেকেছিল। কিন্তু টাকার অঙ্কে বেড়েছিল। টাকার অঙ্কে যেটুকু বাড়ে তার প্রায় সবটাই ইনফ্লেশন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন খেয়ে ফেলে।’

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, যা সংশোধীত বাজেটে ৯৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। ওই টাকার পরিমাণ ছিল সংশোধিত বাজেটের ১৩.৩২ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মানদ-ে একটি দেশের শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ হলে সেটিকে ‘আদর্শ’ মানদ- হিসেবে ধরা হয়।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে এইটা চরম ফাঁকিবাজি কথা। বলতে হবে জিডিপির স্কেলে শিক্ষায় বরাদ্দ কতটা বেড়েছে। ইউনেস্কো বলে একটি দেশ শিক্ষায় নূন্যতম তার জিডিপির ৫.৫% বরাদ্দ দেয়া উচিত। কেন বলে? যাতে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করা যায়, যাতে করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও স্কলারশিপ পায়, যাতে করে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া যায়।’

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের থেকে টাকার অঙ্কে ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এবার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে মোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিন হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ টাকা হিসাবে কিছুটা কমেছে। তবে বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় এবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় তিন হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৮৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

নতুন অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য ১২ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ছিল।

এ বিষয়ে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমদ সংবাদকে বলেছেন, ‘বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা গতানুগতিক; আগের মতোই হলো। নতুন কিছু নেই।’

প্রাথমিকে তারা ‘নিরাময়মূলক শিক্ষা’ প্রত্যাশা করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকের শিক্ষার মান বাড়ানো, কোচিংয়ের পরিবর্তে স্কুলগুলোতে দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা, শিক্ষক বাড়ানো, এ সংক্রান্ত্র সাপোর্ট বাড়ানো, প্রয়োজনে বেসরকারি এনজিও সহায়তা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বাজেটে এসবের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে আমরা একেবারেই হতাশ। সেখানে গতানুগতিক অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার-এসব কথাই বলা হয়েছে। উপদেষ্টারা মুখে মুখে শিক্ষায় মান বৃদ্ধি ও গুরুত্বের কথা বললেও বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।’

এ দিকে নতুন অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য দুই হাজার ১৬৪ কোটি টাকা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ে ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব ‘আশানরূপ নয়’ মন্তব্য করে সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, শিক্ষায় টাকার অংকে যতটুকু বরাদ্দ বেড়েছে তা ‘আশানরূপ’ নয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষায় বারাদ্দ অনেকটা কমে যাওয়া ‘হতাশার’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকায় শিক্ষায় ‘আশানরূপ’ বরাদ্দ আসেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের হার আশানরূপ থাকলে শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ খাত আরও অগ্রাধিকার পেত।

উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী করা :
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক মানের আউটকাম বেইজড অ্যাডুকেশন (ওবিই) পদ্ধতিতে কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় ৬২টি প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫১ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আট লাখ এবং স্নাতক পর্যায়ে এক লাখ ৬৫ হাজার অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি এবং গ্রাচুইটি প্রদানসহ সব স্তরের শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা বলেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল হালিম বলেছেন, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান কোন দিকে যাচ্ছে সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। কারণ অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা পিছিয়ে। বিশ্ব র‌্যাংকিংগুলোতে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে শিক্ষার মান ঠিক আছে কিনা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোতে অধ্যাপক নেই। এমন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে।

সরকারকে উচ্চশিক্ষার মানে নজর দেওয়া আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে টাকায় একজন অধ্যাপকের বেতনভাতা হয়, সে টাকায় হয়ত তিনজন প্রভাষককে নিয়োগ দেয়া যায়। সেখানেও অর্থনৈতিক চিন্তা। এসব জায়গায় নজর দেয়ার সময় এসেছে।

এবতেদায়ী শিক্ষায় সুখবর :
এবারের বাজেটে প্রাথমিক পর্যায়ের মাদ্রাসা ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য সুখবর রয়েছে। নতুন বাজেটে এবতেদায়ী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদ্রাসাগুলোর এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে এক হাজার ১৩৫টি মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫১৩টি বহুতল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। ৪৯৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।’

কারিগরিতে ২০ শতাংশ এনরোলমেন্টের লক্ষ্য :
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় কারিগরি শিক্ষা এনরোলমেন্ট হার বাড়ানোর লক্ষ্য তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্টের হার ১৯ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ২০ শতাংশে উন্নীত করতে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে মহিলা পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জেলা পর্যায়ে পলিটেকনিক এবং উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।’

back to top