সব মিলিয়ে ১১ মাস ১৪ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ জুন) এসেছে ২৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে রেমিটেন্স। আর এই রেমিটেন্স গড়তে চলেছে নতুন ইতিহাস। ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। এবার ৩০ বিলিয়ন (৩ হাজার কোটি) ডলারের মাইলফলক ছুঁতে চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, কোরবানির ঈদের পর প্রবাসী আয়ে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এই মাসের প্রথম ১৪ দিনে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ (১.১৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা।
এর মধ্যে ঈদের আগে তিন দিনই (১ থেকে ৩ জুন) এসেছিল ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ৫ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। ৪ জুন শুরু হয় ১০ দিনের লম্বা ছুটি। ১৫ জুন শুরু হয়েছে অফিস-আদালত, খুলেছে ব্যাংক-বিমা।
বরাবরই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। তবে রোজার ঈদের পর কমেনি। এবার কোরবানি ঈদে দীর্ঘ ছুটির কারণে টানা ১০ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে পারেননি। সে কারণেই এই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাগে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তবে অর্থ বছরের শেষ মাস এবং জুন মাসের শেষ দুই সপ্তাহে (১৫ থেকে ৩০ জুন) রেমিটেন্স বাড়বে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১৪ দিনে ১৪ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১০ কোটি। মাসের বাকি ১৬ দিনে (১৫ থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলেও মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৪৬ কোটি ২১ লাখ (২.৪৬ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসীরা ২ হাজার ৭৫০ কোটি ৬৩ লাখ (২৭.৫১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১১ মাস ১৪ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ জুন) এসেছে ২৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে জুন মাসে যদি ২৪৬ কোটি ২১ লাখ ডলার আসে, তাহলে সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রেমিটেন্সের অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি (প্রায় ৩০ বিলিয়ন) লাখ ডলার।
আর এর মধ্য দিয়ে রেমিটেন্স আহরণে নতুন ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। এর আগে এক অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার, ২০২০-২১ অর্থ বছরে। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল গত এপ্রিল মাসে।
রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে। গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। গ্রস হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ১৫ জুন রোববার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্সের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। আগের মতো ডলার নিয়ে হাহাকার নেই ব্যবসায়ীদের।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
রেমিটেন্সে কেন ইতিহাস হতে চলেছে- এ প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন বলেন, ‘মূলত হুন্ডি কমে যাওয়ার কারণেই রেমিটেন্স বাড়ছে। নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে হুন্ডি কমে গেছে। এখন দেশে যে রেমিটেন্স আসছে তার পুরোটাই বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগতির কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে। বেশ কিছুদিন ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটা সুখবর।’
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল। দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাসে আসে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার। মে মাসে এসেছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসের ১০ মাসেই (আগস্ট-মে) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। চলতি জুন মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আসবে বলে হিসাব বলছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন দেখা যায়নি। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।
সব মিলিয়ে ১১ মাস ১৪ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ জুন) এসেছে ২৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে রেমিটেন্স। আর এই রেমিটেন্স গড়তে চলেছে নতুন ইতিহাস। ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। এবার ৩০ বিলিয়ন (৩ হাজার কোটি) ডলারের মাইলফলক ছুঁতে চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, কোরবানির ঈদের পর প্রবাসী আয়ে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এই মাসের প্রথম ১৪ দিনে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ (১.১৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা।
এর মধ্যে ঈদের আগে তিন দিনই (১ থেকে ৩ জুন) এসেছিল ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ৫ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। ৪ জুন শুরু হয় ১০ দিনের লম্বা ছুটি। ১৫ জুন শুরু হয়েছে অফিস-আদালত, খুলেছে ব্যাংক-বিমা।
বরাবরই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। তবে রোজার ঈদের পর কমেনি। এবার কোরবানি ঈদে দীর্ঘ ছুটির কারণে টানা ১০ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে পারেননি। সে কারণেই এই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাগে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তবে অর্থ বছরের শেষ মাস এবং জুন মাসের শেষ দুই সপ্তাহে (১৫ থেকে ৩০ জুন) রেমিটেন্স বাড়বে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১৪ দিনে ১৪ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১০ কোটি। মাসের বাকি ১৬ দিনে (১৫ থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলেও মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৪৬ কোটি ২১ লাখ (২.৪৬ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসীরা ২ হাজার ৭৫০ কোটি ৬৩ লাখ (২৭.৫১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১১ মাস ১৪ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ জুন) এসেছে ২৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে জুন মাসে যদি ২৪৬ কোটি ২১ লাখ ডলার আসে, তাহলে সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রেমিটেন্সের অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি (প্রায় ৩০ বিলিয়ন) লাখ ডলার।
আর এর মধ্য দিয়ে রেমিটেন্স আহরণে নতুন ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। এর আগে এক অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার, ২০২০-২১ অর্থ বছরে। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল গত এপ্রিল মাসে।
রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে। গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। গ্রস হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ১৫ জুন রোববার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্সের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। আগের মতো ডলার নিয়ে হাহাকার নেই ব্যবসায়ীদের।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
রেমিটেন্সে কেন ইতিহাস হতে চলেছে- এ প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন বলেন, ‘মূলত হুন্ডি কমে যাওয়ার কারণেই রেমিটেন্স বাড়ছে। নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে হুন্ডি কমে গেছে। এখন দেশে যে রেমিটেন্স আসছে তার পুরোটাই বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগতির কারণেই রিজার্ভ বাড়ছে। বেশ কিছুদিন ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে। টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটা সুখবর।’
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল। দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাসে আসে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার। মে মাসে এসেছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসের ১০ মাসেই (আগস্ট-মে) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। চলতি জুন মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আসবে বলে হিসাব বলছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন দেখা যায়নি। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।