alt

অর্থ-বাণিজ্য

চিনি : এক দশকে চাহিদা বেড়েছে দেড়গুণের বেশি, দাম দ্বিগুণের বেশি

রেজাউল করিম : শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সব নিত্যপণ্যের দামই বেড়েছে, তবে প্রায়ই আলোচনার শীর্ষে থাকছে চিনি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এক দশকে চিনির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। দাম বাড়ার এই প্রবণতার মধ্যে গত এক দশকে দেশে চিনির চাহিদাও বেড়েছে দেড়গুণের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে যে পরিমান চিনি আমদানি হয়েছিল তার দেড়গুণের বেশি আমদানি হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে চিনি আমদানি হয়েছিল ৭৪৭ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারের। এরপরের বছরই অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯২৭ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে চিনি আমদানি বাড়ে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার।

এর পরের বছর আমদানি কমে তার পরের বছর আবার বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয় ৭৬০ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলারের। পরের বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮৪১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলারের।

এর পরের বছর সামান্য বেড়েছে, আর তার পরের বছর আরও বেশি বাড়ে চিনির আমদানি। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয় ৮৫৪ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলারের। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয় ৯৬৮ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারের।

এর পরের দুই বছর আমদানি অনেকখানি কমে যায়। তার পরের বছর আবার বাড়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয় ৬৬৩ মিলিয়ন ডলারের, ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয় ৬৪৮ মিলিয়ন ডলারের ও ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮৩৮ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলারের।

এরপরের বছরই হঠাৎ চিনির আমদানি হাজার মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয় ১২১৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলারের। এখন পর্যন্ত দেশে এটিই সর্বোচ্চ চিনি আমদানি।

দেশে চিনির ব্যবহার যেমন বাড়ছে তেমন বেড়েই চলেছে চিনির দাম। বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরের ডিসেম্বরে চিনির (আমদানি) খুচরা মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৫১ টাকা। এটি বর্তমানে অনেকখানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকায়। তবে ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, খুচরা বাজারে ১০৯ টাকা দরে চিনি বিক্রি করতে চান না বিক্রেতারা।

আবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ২৭ জানুয়ারি পরিসংখ্যানে বলছে, এদিন চিনি বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১২০ টাকায়।

অর্থাৎ এই দুই প্রতিষ্ঠানের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে দেশে চিনির চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দামও দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

তবে দ্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জের (আইসিই) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ছিল ৪৭ টাকা। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকায়। এরপর সম্প্রতি এর দাম কিছুটা বেড়েছে। ২৭ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা।

অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি চিনি যে দামে পাওয়া যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি দামে দেশের বাজারে বিক্রি হয়। ব্যবসায়িরা দাবি করছেন, বর্তমানে আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে। তাই বিদেশ থেকে চিনি দেশে আসার পর সেটাকে রিফাইন করে বাজারজাত করলে দাম বেড়ে যায়।

তবে বাজার বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ ভোক্তারা বলছেন অন্য কথা।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘দিনদিন বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি তো বাড়ছেই। সেজন্যে ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে তার চেয়ে বড় কথা, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের ‘লোভোস্ফীতি’ সেই বৃদ্ধিকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা অতি মুনাফা করার জন্য মজুদ চিনি থাকলেও বাজারে ছাড়ছে না। তারা মনে করছে, সামনে রমজান মাস আসছে। তখন দাম আরও বাড়বে। তখন আরও মুনাফা করতে পারবে।’

ব্যবসায়ীদের অতি ‘লোভোস্ফীতি’র প্রবণতা থেকে সাধারণ ভোক্তাদের রক্ষা খুব সহজ হবে না বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এসব ব্যবসায়ীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হলে সরকারকে বড় রকমের ইন্টারভেশন করতে হবে। এখন কথা হলো, সরকারের সেই সামর্থ্য আছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’

তবে চিনির বাড়তি দাম ও সর্বশেষ দাম বৃদ্ধিকে যৌক্তিক মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলছেন, ‘সব হিসাব-নিকাশ করে চিনির দাম যতটুকু বাড়ানো দরকার ততটুকু বাড়ানো হয়েছে। আমাদের ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন আছে তারা এগুলো হিসাব করে। যদি এটা বাড়ানো না হতো তাহলে ফলাফল হবে কি? বাজারে চিনি পাওয়াই যাবে না। সে সব বিবেচনা করে তারা দাম বাড়িয়েছে।’

বাংলাদেশের চিনির কলগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ায় দামে প্রভাব পড়েছে কি না প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ২০ লাখ টন চিনি দরকার। সেখানে দেশে ৫০ হাজার টনও উৎপাদন হয় না। আমাদের নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপরে। গ্লোবাল মার্কেটে চিনির দাম বেড়েছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় পণ্যটির পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজির দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে ১১২ টাকা এবং খোলা চিনি প্রতি কেজির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। নতুন এই দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করা হয়। আগে দাম ছিল ৯৫ টাকা।

তবে দাম যে পরিমান বাড়ানো হয় বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েও চিনি পাওয়া যায় না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। বাকি চিনি আমদানি করতে হয়।

ছবি

চব্বিশ ঘন্টা গ্যাস বিক্রির সুযোগ চান সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকরা

ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির সময় বাড়ল ৩১ মে পর্যন্ত

নতুন নীতিমালা, ব্যাংক পরিচালকদের বেনামি ঋণও হিসাবে আসবে

ছবি

পরপর পাঁচ সপ্তাহ পতনে বাজার মূলধন কমলো ২১ হাজার কোটি টাকা

ছবি

শেয়ারবাজারে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব ৯০ শতাংশ বিনিয়োগকারী

ছবি

মার্চে বেসরকারি ঋণে সুবাতাস

ছবি

কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না

দশ বছরের পুরাতন গাড়ি আমদানিযোগ্য করার দাবি বারভিডার

ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করল দুবাই চেম্বার

ছবি

১৭ ও ২৪ মে, দুই শনিবার ব্যাংক খোলা থাকবে

সঞ্চয়পত্র কেনায় রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকছে না

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে সর্বোচ্চ ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের

ছবি

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে থেকে

ছবি

এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি কমেছে, পিএমআই সূচক নামলো ৮ দশমিক ৮ পয়েন্টে

অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

বাংলাদেশ জুড়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের টেকসই নানা উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করলেন এডিবি প্রেসিডেন্ট

মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

ছবি

কর প্রশাসন আধুনিকায়নে এডিবির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ

ছবি

২০৩০ সালে চালু হবে বে টার্মিনাল, কর্মসংস্থান লাখ মানুষের

ছবি

চলতি অর্থবছরের সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় এপ্রিলে

ছবি

গ্লাস শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০৩০ সাল পর্যন্ত মওকুফ

বিজিএমইএ নির্বাচন: সম্মিলিত পরিষদের ৩৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা

ছবি

মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মুনাফা ৩৩০০ কোটি টাকা, যা ব্র্যাক, সিটি ও পূবালী ব্যাংকের চেয়েও বেশি

দ্বিতীয় দিনেও আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি

ছবি

ডেনিম এক্সপো শুরু হচ্ছে ১২ মে

যুদ্ধের প্রভাবে সূচক পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে, রুপিরও দরপতন

একনেকে ৩৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ফের পতন শেয়ারবাজারে, সূচকের অবস্থান ৪ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

চিনি : এক দশকে চাহিদা বেড়েছে দেড়গুণের বেশি, দাম দ্বিগুণের বেশি

রেজাউল করিম

শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সব নিত্যপণ্যের দামই বেড়েছে, তবে প্রায়ই আলোচনার শীর্ষে থাকছে চিনি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এক দশকে চিনির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। দাম বাড়ার এই প্রবণতার মধ্যে গত এক দশকে দেশে চিনির চাহিদাও বেড়েছে দেড়গুণের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে যে পরিমান চিনি আমদানি হয়েছিল তার দেড়গুণের বেশি আমদানি হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে চিনি আমদানি হয়েছিল ৭৪৭ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারের। এরপরের বছরই অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯২৭ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে চিনি আমদানি বাড়ে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার।

এর পরের বছর আমদানি কমে তার পরের বছর আবার বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয় ৭৬০ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলারের। পরের বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮৪১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলারের।

এর পরের বছর সামান্য বেড়েছে, আর তার পরের বছর আরও বেশি বাড়ে চিনির আমদানি। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয় ৮৫৪ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলারের। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয় ৯৬৮ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারের।

এর পরের দুই বছর আমদানি অনেকখানি কমে যায়। তার পরের বছর আবার বাড়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয় ৬৬৩ মিলিয়ন ডলারের, ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয় ৬৪৮ মিলিয়ন ডলারের ও ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮৩৮ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলারের।

এরপরের বছরই হঠাৎ চিনির আমদানি হাজার মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি আমদানি হয় ১২১৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলারের। এখন পর্যন্ত দেশে এটিই সর্বোচ্চ চিনি আমদানি।

দেশে চিনির ব্যবহার যেমন বাড়ছে তেমন বেড়েই চলেছে চিনির দাম। বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরের ডিসেম্বরে চিনির (আমদানি) খুচরা মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৫১ টাকা। এটি বর্তমানে অনেকখানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকায়। তবে ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, খুচরা বাজারে ১০৯ টাকা দরে চিনি বিক্রি করতে চান না বিক্রেতারা।

আবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ২৭ জানুয়ারি পরিসংখ্যানে বলছে, এদিন চিনি বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১২০ টাকায়।

অর্থাৎ এই দুই প্রতিষ্ঠানের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে দেশে চিনির চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দামও দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

তবে দ্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জের (আইসিই) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ছিল ৪৭ টাকা। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকায়। এরপর সম্প্রতি এর দাম কিছুটা বেড়েছে। ২৭ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা।

অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি চিনি যে দামে পাওয়া যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি দামে দেশের বাজারে বিক্রি হয়। ব্যবসায়িরা দাবি করছেন, বর্তমানে আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে। তাই বিদেশ থেকে চিনি দেশে আসার পর সেটাকে রিফাইন করে বাজারজাত করলে দাম বেড়ে যায়।

তবে বাজার বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ ভোক্তারা বলছেন অন্য কথা।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘দিনদিন বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি তো বাড়ছেই। সেজন্যে ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে তার চেয়ে বড় কথা, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের ‘লোভোস্ফীতি’ সেই বৃদ্ধিকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা অতি মুনাফা করার জন্য মজুদ চিনি থাকলেও বাজারে ছাড়ছে না। তারা মনে করছে, সামনে রমজান মাস আসছে। তখন দাম আরও বাড়বে। তখন আরও মুনাফা করতে পারবে।’

ব্যবসায়ীদের অতি ‘লোভোস্ফীতি’র প্রবণতা থেকে সাধারণ ভোক্তাদের রক্ষা খুব সহজ হবে না বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এসব ব্যবসায়ীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হলে সরকারকে বড় রকমের ইন্টারভেশন করতে হবে। এখন কথা হলো, সরকারের সেই সামর্থ্য আছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’

তবে চিনির বাড়তি দাম ও সর্বশেষ দাম বৃদ্ধিকে যৌক্তিক মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলছেন, ‘সব হিসাব-নিকাশ করে চিনির দাম যতটুকু বাড়ানো দরকার ততটুকু বাড়ানো হয়েছে। আমাদের ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন আছে তারা এগুলো হিসাব করে। যদি এটা বাড়ানো না হতো তাহলে ফলাফল হবে কি? বাজারে চিনি পাওয়াই যাবে না। সে সব বিবেচনা করে তারা দাম বাড়িয়েছে।’

বাংলাদেশের চিনির কলগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ায় দামে প্রভাব পড়েছে কি না প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ২০ লাখ টন চিনি দরকার। সেখানে দেশে ৫০ হাজার টনও উৎপাদন হয় না। আমাদের নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপরে। গ্লোবাল মার্কেটে চিনির দাম বেড়েছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় পণ্যটির পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজির দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে ১১২ টাকা এবং খোলা চিনি প্রতি কেজির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। নতুন এই দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করা হয়। আগে দাম ছিল ৯৫ টাকা।

তবে দাম যে পরিমান বাড়ানো হয় বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েও চিনি পাওয়া যায় না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। বাকি চিনি আমদানি করতে হয়।

back to top