বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দামও ঈদের পর থেকে বাড়ছে এবং শুক্রবার (১২ মে) ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। এই দুই পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহের ঘাটতির কারণে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে।
তবে বাজার করতে এসেছেন যেসব ক্রেতা তাদের অভিযোগ, ইচ্ছেমতো যে যার পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ দেখার নেই।
শুক্রবার রাজধানীর শ্যামলী, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ ও দেশি পেঁয়াজ কেজি ৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা আর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায় ।
পণ্যের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বাজার করতে আসা আদাবরের বাসিন্দা সাহিদা বেগম সংবাদকে বলেন, তরকারির যে দাম! একটা তরকারিও কিনি নাই। লাউ আশি টাকা, একটা সাধারণ চাল কুমড়া ৬০ টাকার নিচে দেবে না। এটা কোন যুক্তি হইল? যারা বিক্রি করে তারাও মনে করে- এই দামে নেবে, যারা নেবার তারা নেবে। বরবটি একটু কিনছি ৩০ টাকা দিয়ে এটা অনেকদিন খাব। কাচকি মাছ নিয়েছি আড়াইশ টাকার এটাও অনেকদিন যাবে। অল্প অল্প খাব। আলু ভর্তা খাব। মিষ্টি আলু খাব। আমাদের তো উপায় নাই। যারা মন্ত্রী-মিনিস্টার, বড়লোক, বাড়ি আছে দুইটা-তিনটা করে তারা ওই দামি তরকারি খায়।
তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের দামে এমন মেজাজ খারাপ হইল, আল্লাহ! প্রতিদিন ১০ টাকা করে বাড়তাছে। প্রথমে দেখলাম কয়দিন আগে ৫০ টাকা, তারপর দেখলাম ৬০ টাকা, আজকে দেখলাম ৭০ টাকা। এটা কোন কথা হইল? যা মন চাইতেছে তাই করতাছে।’
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান সংবাদকে বলেন, ‘বাজারে পরিস্থিতি খারাপ। আসলে ধরেন, আমরা তো মধ্যবিত্ত যাই কামাই করি সেই জায়গা থেকে প্রতি সপ্তাহে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটা সামলাতে আমাদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাহলে গরিব মানুষদের কী অবস্থা? তাদের তো দিশেহারা অবস্থা না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা, এইটা তো কোন ওয়ে হতে পারে না। কোন ব্যবস্থা নেই সরকারি স্টেপ নেই কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। এইটা নিতে হবে ইমিডিয়েটলি।’
সামনে নির্বাচন আসতেছে, কেন ভোট দেবে? যদি ভোট হয়ও! সুষ্ঠু মতো। মানুষ কেন এই সরকারকে ভোট দেবে? সরকারি স্টেপ নিতে হবে। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের... । এটা তো অনেকদিন ধরে চলে আসতাছে এবং কেউ কিছু বলছে না। এইটা হা হা হা .... । ঈদের আগে আমি পেঁপে কিনছি ৩০ টাকা দিয়ে এখন ৮০ টাকা। এটা তো কোন সভ্য দেশে হওয়া সম্ভব না। অরাজকতা চলছে।
পণ্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সংসার সামাল দিচ্ছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘সামাল দিতে পারছি না তো। কম খাচ্ছি আমরা। আমি আগে বাজারে আসলে দুইটা মুরগি নিতাম এখন একটা নিচ্ছি। এইভাবে চলতে হচ্ছে। কন্ট্রোল করতে হচ্ছে। আগে হয়তো একটা রেস্টুরেন্টে খাইতে যাইতাম, এখন যাই না। এইটা আমি না সবার মনের কথা।
কথা বলতে বলতেই তিনি পাশের রিকশাওয়ালাকে দেখিয়ে বলেন ওনাকেও জিজ্ঞেস করে দেখেন কী বলে? ওনার দেখানো রিকশাওয়ালা (আশিক) জিজ্ঞেস করলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘উনি যে কথা বলছে ওটা আমার কথা, একদম সেম। সরকার কইলে আমি আপনি সবাই শুনতে বাধ্য। সরকার যদি বলে প্রত্যেকটা দোকানদারকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পড়া লাগবে। সরকার যদি কিছু না করে তাহলে তো হবে না।’
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সস্তা সবজি হিসেবে পরিচিত কাঁচা পেঁপে ৮০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগে ৪০ টাকা আর ছয় মাস আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া একটা লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, একটা চালকুমড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা-চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও সজনে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে বাজার ও জাত ভেদে কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।
শ্যামলী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, সবজির বাজারে আগুন। ধরেন, রাজধানীতে যে সবজি আসে সেই সবজি পাইকাররা কেজি ৩০ টাকা কিনে একদাম ৫০ টাকায় বিক্রি করে। এইযে লাউ ১০০ টাকা বিক্রি হয় হুনছেন। ৩০টা লাউ এক কাটুন ২৪০০ টাকা। পাইকারি বাজার প্রত্যেক দিন মনিটরিং হওয়া দরকার। একেক দিন একেকটা গলি। আরেকটা প্রব্লেম আছে পচা মালের ওপর লাইট লাগায় কিছু বোঝা যায় না।’
সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। এ সপ্তাহে কেজিতে আরও ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ টাকায়। তার আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ টাকা আর ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। পাশাপাশি দেশি রসুন ১৬০ টাকা আর আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে।
১৯৮৪ সাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ব্যবসা করে আসছেন মোজাম্মেল মিয়া। দেশি পেঁয়াজের দাম ও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পাইকারি এই ব্যবসায়ী সংবাদকে বলেন, ‘মানভেদে পাল্লা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি করছি। বাজারে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ সরবরাহ নেই। সরকার পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারছে না।’
বাজারে তো দেশি পেঁয়াজ প্রচুর দেখা যাচ্ছে, তারপরও দাম বাড়ছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা। এর মধ্যে ৩ (পাবনা, ফরিদপুর আর রাজশাহী) জেলাতে পেঁয়াজ হয়। তাওতো পুরা জেলায় পেঁয়াজ হয় না। এই পেঁয়াজ সরাদেশে বিতরণ হইতেছে। এর ওপরেই নির্ভরশীল। না জাইনা সরকারকে দুষতাছে। একবার পেঁয়াজ ৩০০ টাকা হইছিল এইটা কি সরকারের মাথায় আছে না। বিকল্প রাস্তা পারতাছে না তো।’
বাজারে চাষের মাছ পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া কৈ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারে দেশি মুরগি ৭২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি ৩৪০ টাকা ব্রয়লার ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বকরির মাংস ১ হাজার টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের কামাল মাংস বিতানের বিক্রয় কর্মী রাজু সংবাদকে বলেন, ‘আগে যেমন ধুমধাম বেচাকেনা হতো এখন তেমন নেই।’
মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিরা মসলা কেজিতে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা ঈদের আগেও ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়ছে। এছাড়া গোলমরিচ ৭৫০ থেকে ৮০০ সাদা এলাচ মান ভেদে ১৮০০ থেকে ২৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তেল, চিনি ও মসলার দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ নূর আলম সংবাদকে বলেন, ‘ঈদের পর জিরা মসলার দাম বেড়েছে। আগে বিক্রি করেছি ৭০০ কেজি আর আজ বিক্রি করছি ৮৫০ টাকা। সরকার চিনি দাম বাড়ার পর দোকানে চিনি তুলিনি। সরকার যে রেট দিয়েছে চিনি দোকানে তুলে কি জরিমানা দেব। আমরা যাদের থেকে চিনি কিনি তারা তো কেনার রশিদ দেয় না। আর ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের কাছে কেনার রশিদ চায়। সয়াবিন তেল যা আছে তা আগের দামেই বিক্রি করছি।’
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারভেদে মোটা চাল ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিআর আটাশের চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৭২ থেকে ৭৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আতব চাল মানভেদে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দরদাম ও বেচা-বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জগলু সংবাদকে বলেন, ‘কেজিতে দুই তিন টাকা কমেছে। বাজারে নতুন চাল পুরোপুরি আসলে দাম আর একটু কমতে পারে। তবে সে বাজারটা বেশিদিন থাকবে না কারণ বড় বড় কোম্পানিরা আবার...।’
বাজারে পুরোপুরি নতুন চাল কবে নাগাদ আসবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চলে আসবে। ’
শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩
বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দামও ঈদের পর থেকে বাড়ছে এবং শুক্রবার (১২ মে) ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। এই দুই পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহের ঘাটতির কারণে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে।
তবে বাজার করতে এসেছেন যেসব ক্রেতা তাদের অভিযোগ, ইচ্ছেমতো যে যার পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ দেখার নেই।
শুক্রবার রাজধানীর শ্যামলী, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ ও দেশি পেঁয়াজ কেজি ৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা আর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায় ।
পণ্যের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বাজার করতে আসা আদাবরের বাসিন্দা সাহিদা বেগম সংবাদকে বলেন, তরকারির যে দাম! একটা তরকারিও কিনি নাই। লাউ আশি টাকা, একটা সাধারণ চাল কুমড়া ৬০ টাকার নিচে দেবে না। এটা কোন যুক্তি হইল? যারা বিক্রি করে তারাও মনে করে- এই দামে নেবে, যারা নেবার তারা নেবে। বরবটি একটু কিনছি ৩০ টাকা দিয়ে এটা অনেকদিন খাব। কাচকি মাছ নিয়েছি আড়াইশ টাকার এটাও অনেকদিন যাবে। অল্প অল্প খাব। আলু ভর্তা খাব। মিষ্টি আলু খাব। আমাদের তো উপায় নাই। যারা মন্ত্রী-মিনিস্টার, বড়লোক, বাড়ি আছে দুইটা-তিনটা করে তারা ওই দামি তরকারি খায়।
তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের দামে এমন মেজাজ খারাপ হইল, আল্লাহ! প্রতিদিন ১০ টাকা করে বাড়তাছে। প্রথমে দেখলাম কয়দিন আগে ৫০ টাকা, তারপর দেখলাম ৬০ টাকা, আজকে দেখলাম ৭০ টাকা। এটা কোন কথা হইল? যা মন চাইতেছে তাই করতাছে।’
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান সংবাদকে বলেন, ‘বাজারে পরিস্থিতি খারাপ। আসলে ধরেন, আমরা তো মধ্যবিত্ত যাই কামাই করি সেই জায়গা থেকে প্রতি সপ্তাহে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটা সামলাতে আমাদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাহলে গরিব মানুষদের কী অবস্থা? তাদের তো দিশেহারা অবস্থা না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা, এইটা তো কোন ওয়ে হতে পারে না। কোন ব্যবস্থা নেই সরকারি স্টেপ নেই কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। এইটা নিতে হবে ইমিডিয়েটলি।’
সামনে নির্বাচন আসতেছে, কেন ভোট দেবে? যদি ভোট হয়ও! সুষ্ঠু মতো। মানুষ কেন এই সরকারকে ভোট দেবে? সরকারি স্টেপ নিতে হবে। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের... । এটা তো অনেকদিন ধরে চলে আসতাছে এবং কেউ কিছু বলছে না। এইটা হা হা হা .... । ঈদের আগে আমি পেঁপে কিনছি ৩০ টাকা দিয়ে এখন ৮০ টাকা। এটা তো কোন সভ্য দেশে হওয়া সম্ভব না। অরাজকতা চলছে।
পণ্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সংসার সামাল দিচ্ছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘সামাল দিতে পারছি না তো। কম খাচ্ছি আমরা। আমি আগে বাজারে আসলে দুইটা মুরগি নিতাম এখন একটা নিচ্ছি। এইভাবে চলতে হচ্ছে। কন্ট্রোল করতে হচ্ছে। আগে হয়তো একটা রেস্টুরেন্টে খাইতে যাইতাম, এখন যাই না। এইটা আমি না সবার মনের কথা।
কথা বলতে বলতেই তিনি পাশের রিকশাওয়ালাকে দেখিয়ে বলেন ওনাকেও জিজ্ঞেস করে দেখেন কী বলে? ওনার দেখানো রিকশাওয়ালা (আশিক) জিজ্ঞেস করলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘উনি যে কথা বলছে ওটা আমার কথা, একদম সেম। সরকার কইলে আমি আপনি সবাই শুনতে বাধ্য। সরকার যদি বলে প্রত্যেকটা দোকানদারকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পড়া লাগবে। সরকার যদি কিছু না করে তাহলে তো হবে না।’
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সস্তা সবজি হিসেবে পরিচিত কাঁচা পেঁপে ৮০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগে ৪০ টাকা আর ছয় মাস আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া একটা লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, একটা চালকুমড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা-চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও সজনে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে বাজার ও জাত ভেদে কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।
শ্যামলী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, সবজির বাজারে আগুন। ধরেন, রাজধানীতে যে সবজি আসে সেই সবজি পাইকাররা কেজি ৩০ টাকা কিনে একদাম ৫০ টাকায় বিক্রি করে। এইযে লাউ ১০০ টাকা বিক্রি হয় হুনছেন। ৩০টা লাউ এক কাটুন ২৪০০ টাকা। পাইকারি বাজার প্রত্যেক দিন মনিটরিং হওয়া দরকার। একেক দিন একেকটা গলি। আরেকটা প্রব্লেম আছে পচা মালের ওপর লাইট লাগায় কিছু বোঝা যায় না।’
সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। এ সপ্তাহে কেজিতে আরও ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ টাকায়। তার আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ টাকা আর ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। পাশাপাশি দেশি রসুন ১৬০ টাকা আর আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে।
১৯৮৪ সাল থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ব্যবসা করে আসছেন মোজাম্মেল মিয়া। দেশি পেঁয়াজের দাম ও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পাইকারি এই ব্যবসায়ী সংবাদকে বলেন, ‘মানভেদে পাল্লা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি করছি। বাজারে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ সরবরাহ নেই। সরকার পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারছে না।’
বাজারে তো দেশি পেঁয়াজ প্রচুর দেখা যাচ্ছে, তারপরও দাম বাড়ছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা। এর মধ্যে ৩ (পাবনা, ফরিদপুর আর রাজশাহী) জেলাতে পেঁয়াজ হয়। তাওতো পুরা জেলায় পেঁয়াজ হয় না। এই পেঁয়াজ সরাদেশে বিতরণ হইতেছে। এর ওপরেই নির্ভরশীল। না জাইনা সরকারকে দুষতাছে। একবার পেঁয়াজ ৩০০ টাকা হইছিল এইটা কি সরকারের মাথায় আছে না। বিকল্প রাস্তা পারতাছে না তো।’
বাজারে চাষের মাছ পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া কৈ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারে দেশি মুরগি ৭২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি ৩৪০ টাকা ব্রয়লার ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বকরির মাংস ১ হাজার টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের কামাল মাংস বিতানের বিক্রয় কর্মী রাজু সংবাদকে বলেন, ‘আগে যেমন ধুমধাম বেচাকেনা হতো এখন তেমন নেই।’
মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিরা মসলা কেজিতে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা ঈদের আগেও ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়ছে। এছাড়া গোলমরিচ ৭৫০ থেকে ৮০০ সাদা এলাচ মান ভেদে ১৮০০ থেকে ২৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তেল, চিনি ও মসলার দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ নূর আলম সংবাদকে বলেন, ‘ঈদের পর জিরা মসলার দাম বেড়েছে। আগে বিক্রি করেছি ৭০০ কেজি আর আজ বিক্রি করছি ৮৫০ টাকা। সরকার চিনি দাম বাড়ার পর দোকানে চিনি তুলিনি। সরকার যে রেট দিয়েছে চিনি দোকানে তুলে কি জরিমানা দেব। আমরা যাদের থেকে চিনি কিনি তারা তো কেনার রশিদ দেয় না। আর ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের কাছে কেনার রশিদ চায়। সয়াবিন তেল যা আছে তা আগের দামেই বিক্রি করছি।’
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারভেদে মোটা চাল ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিআর আটাশের চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৭২ থেকে ৭৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আতব চাল মানভেদে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দরদাম ও বেচা-বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জগলু সংবাদকে বলেন, ‘কেজিতে দুই তিন টাকা কমেছে। বাজারে নতুন চাল পুরোপুরি আসলে দাম আর একটু কমতে পারে। তবে সে বাজারটা বেশিদিন থাকবে না কারণ বড় বড় কোম্পানিরা আবার...।’
বাজারে পুরোপুরি নতুন চাল কবে নাগাদ আসবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চলে আসবে। ’