প্রকৃতির কাছাকাছি মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুড়ি মেলা ভার। দেশের সংস্কৃতিক রাজধানী নামে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নানা কারণে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। বটতলার ঐতিহ্যবাহী ১২০ পদের ভর্তা সমাহার তার মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বল্প মূল্যে খাবারের একমাত্র জায়গা হচ্ছে হলের ক্যান্টিন অথবা ডাইনিং। কিন্তু ব্যতিক্রম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে হলের ক্যান্টিন ছাড়াও বটতলাতে স্বল্পমূল্যে হরেক রকমের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। দুপুর হতে না হতেই এমন হাঁকডাকে সরব হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীর ভিড়। দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে আসেন ভর্তার স্বাদ চেখে দেখতে। হরেক রকম ভর্তা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।নানা ধরনের ভর্তার মধ্যে রয়েছে চ্যাপা শুঁটকি, লইট্টা শুঁটকি, মলা শুঁটকি, কাচকি শুঁটকি, চিংড়ি শুঁটকি, টাকি শুঁটকি, বাইন মাছ শুঁটকি, রসুন-শুঁটকি, লোনা ইলিশ, বাটা মাছ, টাকি মাছ, চিতল মাছ, ইলিশ মাছ, রুই মাছ, বোয়াল মাছ, বাইলা মাছ, বেলে মাছ, চিকেন, দেশি চিকেন, কালোজিরা, ধনিয়া, রসুন, পটল, বেগুন, টমেটো, মরিচ, বাদাম, আলু, মরিচ-পেঁয়াজ, ডিম-আলু, শাক, ডিম, বরবটি, শিম ও কলা ভর্তা।
ভর্তার পাশাপাশি পাওয়া যায় বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি, খাসির মাংস ও মগজ, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, পুঁটি মাছ, চাপিলা মাছ, শিং মাছ, বেলে মাছ, কাতলা মাছ, পাঙ্গাস মাছ, কালি বাউস মাছ, গজার মাছ ও তেলাপিয়া মাছ। বটতলাতে প্রায় ৫০টিরও বেশি খাবারের দোকান রয়েছে। তাজমহল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, ছুটির দিনে অন্যান্য দিনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি খাবার রান্না করা হয়। প্রায় ৪০ ধরনের আইটেম থাকে ছুটির দিন! আর সাধারণ দিনে প্রায় ৩০ রকমের খাবার তৈরি হয়।
এত কিছুর পরও বটতলার খাবারের মান নিয়ে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এখানকার খাবারে মসলার পরিমাণ বেশি দেয়। মাঝে মাঝে বাসি খাবার পরিবেশন করার অভিযোগ উঠে। অন্যদিকে, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত দাম বেশি রাখা হয়।
এখানে দোকানগুলোর নামও কি বাহারি। তাজমহল, নূরজাহান, KFC, বাংলার স্বাদ, রাফি, সুজন, বাঙালি হোটেল ইত্যাদি। নামগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি।বটতলার এসব দোকান আ ফ ম কামালউদ্দিন, মওলানা ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অধীনে। বর্তমানে হল কর্তৃপক্ষ এবং কনজ্যুমার ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত তদাররির ফলে বটতলা এখন অনেকটাই বদলে গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজধানীখ্যাত ‘বটতলা’ শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা। এই বটতলার নামকরণ কবে বা কীভাবে হয়েছে তা জানা না গেলেও লোক মুখে শোনা যায়, আগে এখানে বড় বট গাছ ছিল। সেখান থেকেই এই বটতলার নামকরণ।প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষাথী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই বটতলা। সেই সঙ্গে চলে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা। এটিই বটতলার প্রাণ। শুধু শিক্ষার্থীরাই না, বাহিরের দর্শনার্থীরা অন্তত একবারের জন্য হলেও এখান থেকে খেয়ে যান। না হলে এ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসাটা যেন তাদের অতৃপ্তই থেকে যায়। জাহাঙ্গীরনগরে ঘুরতে এসেছেন অথচ বটতলায় খাননি এমন লোক হয়ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
নিয়মমাফিক যান্ত্রিকজীবনে একঘেয়েমি আসলে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটু মুক্তবাতাসের যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র আনতে আয়োজন করি ভিন্ন ধাঁচের দেশীয় খাবারের। এ দিক-বিবেচনায় জাহাঙ্গীরনগরের বটতলা হতে পারে একটি আদর্শ জায়গা। একদিকে নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্যদিকে সুস্বাদু নানাপদের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায় এখানে।
রোববার, ২৭ আগস্ট ২০২৩
প্রকৃতির কাছাকাছি মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুড়ি মেলা ভার। দেশের সংস্কৃতিক রাজধানী নামে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নানা কারণে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। বটতলার ঐতিহ্যবাহী ১২০ পদের ভর্তা সমাহার তার মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বল্প মূল্যে খাবারের একমাত্র জায়গা হচ্ছে হলের ক্যান্টিন অথবা ডাইনিং। কিন্তু ব্যতিক্রম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে হলের ক্যান্টিন ছাড়াও বটতলাতে স্বল্পমূল্যে হরেক রকমের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। দুপুর হতে না হতেই এমন হাঁকডাকে সরব হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীর ভিড়। দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে আসেন ভর্তার স্বাদ চেখে দেখতে। হরেক রকম ভর্তা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।নানা ধরনের ভর্তার মধ্যে রয়েছে চ্যাপা শুঁটকি, লইট্টা শুঁটকি, মলা শুঁটকি, কাচকি শুঁটকি, চিংড়ি শুঁটকি, টাকি শুঁটকি, বাইন মাছ শুঁটকি, রসুন-শুঁটকি, লোনা ইলিশ, বাটা মাছ, টাকি মাছ, চিতল মাছ, ইলিশ মাছ, রুই মাছ, বোয়াল মাছ, বাইলা মাছ, বেলে মাছ, চিকেন, দেশি চিকেন, কালোজিরা, ধনিয়া, রসুন, পটল, বেগুন, টমেটো, মরিচ, বাদাম, আলু, মরিচ-পেঁয়াজ, ডিম-আলু, শাক, ডিম, বরবটি, শিম ও কলা ভর্তা।
ভর্তার পাশাপাশি পাওয়া যায় বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি, খাসির মাংস ও মগজ, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, পুঁটি মাছ, চাপিলা মাছ, শিং মাছ, বেলে মাছ, কাতলা মাছ, পাঙ্গাস মাছ, কালি বাউস মাছ, গজার মাছ ও তেলাপিয়া মাছ। বটতলাতে প্রায় ৫০টিরও বেশি খাবারের দোকান রয়েছে। তাজমহল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, ছুটির দিনে অন্যান্য দিনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি খাবার রান্না করা হয়। প্রায় ৪০ ধরনের আইটেম থাকে ছুটির দিন! আর সাধারণ দিনে প্রায় ৩০ রকমের খাবার তৈরি হয়।
এত কিছুর পরও বটতলার খাবারের মান নিয়ে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এখানকার খাবারে মসলার পরিমাণ বেশি দেয়। মাঝে মাঝে বাসি খাবার পরিবেশন করার অভিযোগ উঠে। অন্যদিকে, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত দাম বেশি রাখা হয়।
এখানে দোকানগুলোর নামও কি বাহারি। তাজমহল, নূরজাহান, KFC, বাংলার স্বাদ, রাফি, সুজন, বাঙালি হোটেল ইত্যাদি। নামগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি।বটতলার এসব দোকান আ ফ ম কামালউদ্দিন, মওলানা ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অধীনে। বর্তমানে হল কর্তৃপক্ষ এবং কনজ্যুমার ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত তদাররির ফলে বটতলা এখন অনেকটাই বদলে গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজধানীখ্যাত ‘বটতলা’ শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা। এই বটতলার নামকরণ কবে বা কীভাবে হয়েছে তা জানা না গেলেও লোক মুখে শোনা যায়, আগে এখানে বড় বট গাছ ছিল। সেখান থেকেই এই বটতলার নামকরণ।প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষাথী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই বটতলা। সেই সঙ্গে চলে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা। এটিই বটতলার প্রাণ। শুধু শিক্ষার্থীরাই না, বাহিরের দর্শনার্থীরা অন্তত একবারের জন্য হলেও এখান থেকে খেয়ে যান। না হলে এ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসাটা যেন তাদের অতৃপ্তই থেকে যায়। জাহাঙ্গীরনগরে ঘুরতে এসেছেন অথচ বটতলায় খাননি এমন লোক হয়ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
নিয়মমাফিক যান্ত্রিকজীবনে একঘেয়েমি আসলে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটু মুক্তবাতাসের যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র আনতে আয়োজন করি ভিন্ন ধাঁচের দেশীয় খাবারের। এ দিক-বিবেচনায় জাহাঙ্গীরনগরের বটতলা হতে পারে একটি আদর্শ জায়গা। একদিকে নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্যদিকে সুস্বাদু নানাপদের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায় এখানে।