জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে রঙিন মাত্রা যুক্ত করে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক কাজকর্ম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে শিক্ষার্থীদের নান্দনিক পেইন্টিং ও নানারকম শিল্পকর্ম তৈরী সহ উদ্ভাবনী বিভিন্ন কাজ-কর্মে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয় বৈশাখকে ঘিরে।
তবে এক্ষেত্রে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থায়ন সম্ভব হয়না। যার ফলে সার্বিক আয়োজন বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয় শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের। অর্থের পরিমাণ বাড়ালে আরও সুন্দর কাজ বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিতে পারবেন দাবি শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বর্ণিল কর্মযজ্ঞ। বর্ষবরণের মূল আয়োজন থাকে চারুকলা অনুষদকে ঘিরেই। তাই সবার প্রথমে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেয়াল চিত্র অঙ্কন। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীর্ণশীর্ণ দেয়ালও হয়ে উঠে রঙিন।
২০২২ সালে বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউটিলিটি ভবন ও চতুর্থ গেইটের দেয়াল জুড়ে গাজীর পট,রিকশা-ঘোড়া নিয়ে ছুটে চলার দৃশ্য ও চারুকলা বিভাগ সংশ্লিষ্ট নানান চিত্র অঙ্কন করে সাড়া ফেলেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। বিগত বছরের মত এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেইট ও দ্বিতীয় গেইট জুড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন রিকশা চিত্র এবং ফুল, মাছ, বাঘ,ময়ূর, নৌকা,বিল্ডিং সহ নানা চিত্র। যাতে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে গেইটগুলো। গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে চিত্রকর্ম অঙ্কনের কাজ ২ এপ্রিল শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিনের কর্ম প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় আকৃতির কৃত্রিম রিক্সাটি রঙতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাশাপাশি বর্ষবরণ উপলক্ষে একটি কুমিরের অবয়ব তৈরী করেছেন তারা।
প্রতিবছর বৈশাখকে ঘিরে স্বল্প সময়েই অসংখ্য মুখোশ,ফ্যাস্টুন,মৌমাছি,পায়রা, প্যাঁচা সহ বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তৈরী করেন অনুষদটির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এক চমৎকার মেলবন্ধন তৈরী হয় এক্ষেত্রে। চারুকলা অনুষদের শিক্ষকরা এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে গাইডলাইন দিয়ে থাকেন শিক্ষার্থীদের। কাজের ক্ষেত্রে যেকোনো সমস্যা সমাধান কিংবা আনুষঙ্গিক প্রয়োজনে শিক্ষকরা সাড়া দেন।
এবার চারুকলা বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বৈশাখকে রাঙিয়ে তোলার জন্য সার্বিক আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন। গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। বিভাগগুলোতে চলছিল আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তৈরী করার কর্মযজ্ঞ। নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় দুইটি স্ট্রাকচার তৈরীতে দিন-রাত কাজ করে গেছেন তারা।
দেয়ালে পেইন্টিং করা অবস্থায় কথা হয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী রুবেল সরকারের সাথে। তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী বিভাগের ৫ম ব্যাচ হিসেবে এবার আমাদের উপর বৈশাখের মূল দায়িত্ব এসেছে। দুইটি স্ট্রাকচারের পাশাপাশি দেয়ালচিত্র এবং মুখোশ-ফ্যাস্টুনের কাজ শেষ হয়েছে। এত অল্প সময়ে সব কাজ শেষ করা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তাও অনুষদের শিক্ষক ও সিনিয়র-জুনিয়র সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফলস্বরূপ আমরা মহা সমারোহে বৈশাখ উদযাপন করতে পারবো।
চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সূচনা দাস বলেন,প্রতিবছর আমাদের শিক্ষকরাই সিলেক্ট করে দেন কোন থিমে বৈশাখ উদযাপন করা হবে। বৈশাখের সময় আর ক্লাস হয় না। এ সময়ে কয়েকটা দিন সিনিয়র-জুনিয়র সবাই মিলে একত্রে খুব আনন্দ নিয়ে কাজ করি। কাজের সময় আড্ডা,গান-বাজনা, আর একসাথে সবার খাওয়া-দাওয়া এসব পুরোটাই একটা উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করে। আমরা চারুকলার শিক্ষার্থীরা এসব কাজে ভীষণ আগ্রহী। তবে বাজেট বাড়ানো হলে আরও সুন্দর কাজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিতে পারবো।
জবির চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাঃ আলপ্তগীন তুষার বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে আসছে। এই আয়োজন আমাদের ঐতিহ্য ও শৈল্পিক সত্ত্বাকে পুনরুজ্জীবিত করে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা বরাবরই নিজ প্রচেষ্টা ও শৈল্পিক গুণে বৈশাখের জন্য কাজ করে থাকেন। এটি অনুষদের জন্য গর্বের বিষয়। তবে এই বিশাল আয়োজন ও পরিশ্রমের বিপরীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে অর্থ পাই সেটা অপ্রতুল। অর্থের পরিমাণ বাড়ালে সুন্দরভাবে সার্বিক আয়োজন করা সম্ভব।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে ১৮ এপ্রিল আমরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করবো। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা সহ বিগত দিনে চলে আসা সকল আয়োজন থাকবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা নান্দনিক রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তুলার কাজ করছে।
সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে রঙিন মাত্রা যুক্ত করে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক কাজকর্ম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে শিক্ষার্থীদের নান্দনিক পেইন্টিং ও নানারকম শিল্পকর্ম তৈরী সহ উদ্ভাবনী বিভিন্ন কাজ-কর্মে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয় বৈশাখকে ঘিরে।
তবে এক্ষেত্রে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থায়ন সম্ভব হয়না। যার ফলে সার্বিক আয়োজন বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয় শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের। অর্থের পরিমাণ বাড়ালে আরও সুন্দর কাজ বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিতে পারবেন দাবি শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বর্ণিল কর্মযজ্ঞ। বর্ষবরণের মূল আয়োজন থাকে চারুকলা অনুষদকে ঘিরেই। তাই সবার প্রথমে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেয়াল চিত্র অঙ্কন। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীর্ণশীর্ণ দেয়ালও হয়ে উঠে রঙিন।
২০২২ সালে বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউটিলিটি ভবন ও চতুর্থ গেইটের দেয়াল জুড়ে গাজীর পট,রিকশা-ঘোড়া নিয়ে ছুটে চলার দৃশ্য ও চারুকলা বিভাগ সংশ্লিষ্ট নানান চিত্র অঙ্কন করে সাড়া ফেলেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। বিগত বছরের মত এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেইট ও দ্বিতীয় গেইট জুড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন রিকশা চিত্র এবং ফুল, মাছ, বাঘ,ময়ূর, নৌকা,বিল্ডিং সহ নানা চিত্র। যাতে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে গেইটগুলো। গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে চিত্রকর্ম অঙ্কনের কাজ ২ এপ্রিল শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিনের কর্ম প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় আকৃতির কৃত্রিম রিক্সাটি রঙতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাশাপাশি বর্ষবরণ উপলক্ষে একটি কুমিরের অবয়ব তৈরী করেছেন তারা।
প্রতিবছর বৈশাখকে ঘিরে স্বল্প সময়েই অসংখ্য মুখোশ,ফ্যাস্টুন,মৌমাছি,পায়রা, প্যাঁচা সহ বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তৈরী করেন অনুষদটির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এক চমৎকার মেলবন্ধন তৈরী হয় এক্ষেত্রে। চারুকলা অনুষদের শিক্ষকরা এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে গাইডলাইন দিয়ে থাকেন শিক্ষার্থীদের। কাজের ক্ষেত্রে যেকোনো সমস্যা সমাধান কিংবা আনুষঙ্গিক প্রয়োজনে শিক্ষকরা সাড়া দেন।
এবার চারুকলা বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বৈশাখকে রাঙিয়ে তোলার জন্য সার্বিক আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন। গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। বিভাগগুলোতে চলছিল আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তৈরী করার কর্মযজ্ঞ। নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় দুইটি স্ট্রাকচার তৈরীতে দিন-রাত কাজ করে গেছেন তারা।
দেয়ালে পেইন্টিং করা অবস্থায় কথা হয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী রুবেল সরকারের সাথে। তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী বিভাগের ৫ম ব্যাচ হিসেবে এবার আমাদের উপর বৈশাখের মূল দায়িত্ব এসেছে। দুইটি স্ট্রাকচারের পাশাপাশি দেয়ালচিত্র এবং মুখোশ-ফ্যাস্টুনের কাজ শেষ হয়েছে। এত অল্প সময়ে সব কাজ শেষ করা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তাও অনুষদের শিক্ষক ও সিনিয়র-জুনিয়র সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফলস্বরূপ আমরা মহা সমারোহে বৈশাখ উদযাপন করতে পারবো।
চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সূচনা দাস বলেন,প্রতিবছর আমাদের শিক্ষকরাই সিলেক্ট করে দেন কোন থিমে বৈশাখ উদযাপন করা হবে। বৈশাখের সময় আর ক্লাস হয় না। এ সময়ে কয়েকটা দিন সিনিয়র-জুনিয়র সবাই মিলে একত্রে খুব আনন্দ নিয়ে কাজ করি। কাজের সময় আড্ডা,গান-বাজনা, আর একসাথে সবার খাওয়া-দাওয়া এসব পুরোটাই একটা উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করে। আমরা চারুকলার শিক্ষার্থীরা এসব কাজে ভীষণ আগ্রহী। তবে বাজেট বাড়ানো হলে আরও সুন্দর কাজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিতে পারবো।
জবির চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাঃ আলপ্তগীন তুষার বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে আসছে। এই আয়োজন আমাদের ঐতিহ্য ও শৈল্পিক সত্ত্বাকে পুনরুজ্জীবিত করে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা বরাবরই নিজ প্রচেষ্টা ও শৈল্পিক গুণে বৈশাখের জন্য কাজ করে থাকেন। এটি অনুষদের জন্য গর্বের বিষয়। তবে এই বিশাল আয়োজন ও পরিশ্রমের বিপরীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে অর্থ পাই সেটা অপ্রতুল। অর্থের পরিমাণ বাড়ালে সুন্দরভাবে সার্বিক আয়োজন করা সম্ভব।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে ১৮ এপ্রিল আমরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করবো। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা সহ বিগত দিনে চলে আসা সকল আয়োজন থাকবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা নান্দনিক রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তুলার কাজ করছে।