ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাত কলেজের ছাত্রদের সংবাদ সম্মেলন -সংবাদ.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি থেকে মুক্ত হচ্ছে ঢাকার সাত সরকারি কলেজ। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই ঢাবির অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে ঢাবি কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তবে ঢাবির অধিভুক্তি থেকে মুক্তির পর এই সাত কলেজ পরিচালনার ‘রুপরেখা’ বা ‘কাঠামোর’ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সাত কলেজের ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের আলোকে আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে ২০২৪-২০২৫ থেকে ঢাবির অধীনে আর ভর্তি না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সেশনজট নিরসন ও উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা
সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়।
কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ (মিরপুর) ও তিতুমীর কলেজ।
কিন্তু ঢাবি অধিভুক্তির পর সেশনজটসহ হয়রানি আরও বেড়েছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। সেজন্য সাত কলেজ নিয়ে আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায়ই ‘সড়ক অবরোধ’ করাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
গতবছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, অধিভুক্তির কারণে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগতে হয় তাদের। নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। সেজন্য শিক্ষার্থীরা ঢাবি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এর মধ্যে ২৫ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় ওই দাবিসহ আরও দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, নীলক্ষেত ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, দাবি-দাওয়া জানাতে তারা ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের কাছে গিয়েছিলেন; কিন্তু উপ-উপাচার্য তাদের ‘অপমান’ করেন।
ওই অভিযোগে রাত সোয়া ১১টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হন সাত কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। রাতেই তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঢাকা কলেজের বিভিন্ন হল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। তারা নীলক্ষেত মোড় হয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেয়।
এক পর্যায়ে গভীর রাতেই উপ-উপাচার্যের বাসভবনে অভিমুখে রওনা হওয়ার ঘোষণা দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই খবর পেয়ে ঢাবির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে লাঠি সোঁটা নিয়ে স্যার এএফ রহমান হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন। মধ্যরাতে শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ; ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিজিবি সদস্যদেরও সেখানে মোতায়েন করা হয়। এ নিয়ে রাতভর উত্তেজনা চলে দুই পক্ষের মধ্যে।
‘হামলাকারীদের’ বিচার দাবিতে ২৫ জানুয়ারি নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবারের সব চূড়ান্ত পরীক্ষাও স্থগিত রাখা হয়। ঢাবির প্রশাসনও সোমবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ঢাবি প্রশাসন ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা সোমবার সাড়ে ১২টায় জরুরি সভায় বসেন। ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদের কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে সভা হয়। সভা শেষে সাত কলেজকে ঢাবি থেকে ‘আলাদা’ হওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ঢাবি কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ
ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ বিষয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ইতোমধ্যে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে ধৈর্যধারণ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’
সাত কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘সাত কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আমরা টেক কেয়ার করব। বাকিটা আপনাদেরকে লিখিত আকারে জানানো হবে।’
এর বাইরে সাংবাদিকদের আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি ঢাবি উপাচার্য।
যৌথ সভায় পাঁচ সিদ্ধান্ত
সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাবি কর্তৃপক্ষের সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণ
২. আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে
৩. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুপারিশ
৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং
৫. যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সাত কলেজের অধ্যক্ষদের অবস্থান
ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাত কলেজের পক্ষে সোমবার বিকেল ৪টায় নিজের কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ইলিয়াস।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ, যেটি শুরু হওয়ার কথা, সেটি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হচ্ছে না। এটা একেবারে কংক্রিট।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের কতগুলো পরীক্ষা চলমান। এ চলমান পরীক্ষাগুলো আমরা শেষ করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এতে সহযোগিতা করতে সম্মত। এবার শিক্ষার্থীরা যদি সম্মত থাকেন তাহলে যে পরীক্ষাগুলোর তারিখ পরিবর্তন হয়েছে, সেটি নতুন করে দিতে বলেছি। এতে যদি শিক্ষার্থীদের ভিন্ন মত না থাকে।’
সাত কলেজ প্রতিটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হবে, নাকি সবগুলো একসঙ্গে হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস বলেন, ‘যেহেতু সরকার একটি উচ্চ মানসম্মত কমিটি করেছে, সেখানে আমরা সাত কলেজের প্রিন্সিপাল ও বিভাগীয় প্রধানরা আমন্ত্রিত হয়ে তাদের কাছে অবস্থাটা ব্যাখ্যা করেছি। শিক্ষার্থীদের যে চাওয়া, সেটির সঙ্গে এটা কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তাদের কাছে তুলে ধরেছি।’
সে পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ‘অবশ্যই সুচিন্তিত’ সিদ্ধান্ত নেবেন জানিয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘তারা বলেছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে, তারা একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটা হলো- এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আরেকটি কাঠামো দাঁড় করাবেন। সেটি কি রূপরেখা হবে, কাঠামো হবে, সেটি নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা শুধু সমস্যাটি কি হয়েছে এবং সেটির সমাধান কি হবে সেটি লিখিত দিয়েছি।’
ঢাবির উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কীনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির সবগুলো বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। সেটি ঢাবি প্রশাসন নেবে।’
তবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবি উপ-উপাচার্যের আচরণের বিষয়টিকে ‘অনাকাঙ্খিত’ এবং তা ‘মোটেও কাম্য’ নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাদের বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাত কলেজের ছাত্রদের সংবাদ সম্মেলন -সংবাদ.
সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি থেকে মুক্ত হচ্ছে ঢাকার সাত সরকারি কলেজ। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই ঢাবির অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে ঢাবি কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তবে ঢাবির অধিভুক্তি থেকে মুক্তির পর এই সাত কলেজ পরিচালনার ‘রুপরেখা’ বা ‘কাঠামোর’ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সাত কলেজের ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের আলোকে আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে ২০২৪-২০২৫ থেকে ঢাবির অধীনে আর ভর্তি না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সেশনজট নিরসন ও উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা
সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়।
কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ (মিরপুর) ও তিতুমীর কলেজ।
কিন্তু ঢাবি অধিভুক্তির পর সেশনজটসহ হয়রানি আরও বেড়েছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। সেজন্য সাত কলেজ নিয়ে আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায়ই ‘সড়ক অবরোধ’ করাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
গতবছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, অধিভুক্তির কারণে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগতে হয় তাদের। নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ার কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। সেজন্য শিক্ষার্থীরা ঢাবি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এর মধ্যে ২৫ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় ওই দাবিসহ আরও দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, নীলক্ষেত ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, দাবি-দাওয়া জানাতে তারা ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের কাছে গিয়েছিলেন; কিন্তু উপ-উপাচার্য তাদের ‘অপমান’ করেন।
ওই অভিযোগে রাত সোয়া ১১টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হন সাত কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। রাতেই তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঢাকা কলেজের বিভিন্ন হল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। তারা নীলক্ষেত মোড় হয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেয়।
এক পর্যায়ে গভীর রাতেই উপ-উপাচার্যের বাসভবনে অভিমুখে রওনা হওয়ার ঘোষণা দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই খবর পেয়ে ঢাবির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে লাঠি সোঁটা নিয়ে স্যার এএফ রহমান হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন। মধ্যরাতে শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ; ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিজিবি সদস্যদেরও সেখানে মোতায়েন করা হয়। এ নিয়ে রাতভর উত্তেজনা চলে দুই পক্ষের মধ্যে।
‘হামলাকারীদের’ বিচার দাবিতে ২৫ জানুয়ারি নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবারের সব চূড়ান্ত পরীক্ষাও স্থগিত রাখা হয়। ঢাবির প্রশাসনও সোমবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ঢাবি প্রশাসন ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা সোমবার সাড়ে ১২টায় জরুরি সভায় বসেন। ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদের কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে সভা হয়। সভা শেষে সাত কলেজকে ঢাবি থেকে ‘আলাদা’ হওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ঢাবি কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ
ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ বিষয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ইতোমধ্যে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে ধৈর্যধারণ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’
সাত কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘সাত কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আমরা টেক কেয়ার করব। বাকিটা আপনাদেরকে লিখিত আকারে জানানো হবে।’
এর বাইরে সাংবাদিকদের আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি ঢাবি উপাচার্য।
যৌথ সভায় পাঁচ সিদ্ধান্ত
সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাবি কর্তৃপক্ষের সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণ
২. আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে
৩. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুপারিশ
৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং
৫. যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সাত কলেজের অধ্যক্ষদের অবস্থান
ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাত কলেজের পক্ষে সোমবার বিকেল ৪টায় নিজের কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ইলিয়াস।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ, যেটি শুরু হওয়ার কথা, সেটি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হচ্ছে না। এটা একেবারে কংক্রিট।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের কতগুলো পরীক্ষা চলমান। এ চলমান পরীক্ষাগুলো আমরা শেষ করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এতে সহযোগিতা করতে সম্মত। এবার শিক্ষার্থীরা যদি সম্মত থাকেন তাহলে যে পরীক্ষাগুলোর তারিখ পরিবর্তন হয়েছে, সেটি নতুন করে দিতে বলেছি। এতে যদি শিক্ষার্থীদের ভিন্ন মত না থাকে।’
সাত কলেজ প্রতিটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় হবে, নাকি সবগুলো একসঙ্গে হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস বলেন, ‘যেহেতু সরকার একটি উচ্চ মানসম্মত কমিটি করেছে, সেখানে আমরা সাত কলেজের প্রিন্সিপাল ও বিভাগীয় প্রধানরা আমন্ত্রিত হয়ে তাদের কাছে অবস্থাটা ব্যাখ্যা করেছি। শিক্ষার্থীদের যে চাওয়া, সেটির সঙ্গে এটা কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তাদের কাছে তুলে ধরেছি।’
সে পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ‘অবশ্যই সুচিন্তিত’ সিদ্ধান্ত নেবেন জানিয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘তারা বলেছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে, তারা একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটা হলো- এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আরেকটি কাঠামো দাঁড় করাবেন। সেটি কি রূপরেখা হবে, কাঠামো হবে, সেটি নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা শুধু সমস্যাটি কি হয়েছে এবং সেটির সমাধান কি হবে সেটি লিখিত দিয়েছি।’
ঢাবির উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কীনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির সবগুলো বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। সেটি ঢাবি প্রশাসন নেবে।’
তবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবি উপ-উপাচার্যের আচরণের বিষয়টিকে ‘অনাকাঙ্খিত’ এবং তা ‘মোটেও কাম্য’ নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাদের বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা হবে না।