alt

ক্যাম্পাস

ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে তিন শিক্ষার্থীর অনশনসহ উত্তাল ক্যাম্পাস

প্রতিনিধি, ঢাবি : সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২০

ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকের বিচারের দাবিতে ঢাবি ক্যম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ-সংবাদ

কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদসহ ক্যাম্পাসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকের বিচারের দাবিতে সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো ঢাবি ক্যাম্পাস। ধর্ষণের খবর জানাজানি হওয়ার পর রোববার মধ্যরাত থেকেই দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতসহ অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার ক্যাম্পাসে আলাদাভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, মোমবাতি প্রজ্বলন, প্রতিবাদী গান ও কবিতা পরিবেশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে ডাকসু, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যসহ প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করতে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এদিকে, ধর্ষকের বিচারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশন শুরু করেছেন তিন শিক্ষার্থী। ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। এক সহপাঠী ধর্ষণের শিকার হওয়ায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন হাজারো সহপাঠী।

ছাত্রলীগের মানববন্ধন

‘প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল’ স্লোগানে অনতিবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার সকাল সাড়ে এগারটায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করে সংগঠনটি। এর আগে রোববার রাতে তারা ক্যাম্পাসে ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাসহ বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে আজ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেলা ১১টায় একযোগে মানববন্ধনের ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। পরদিন বুধবার সব সাংগঠনিক ইউনিটে মানববন্ধনের ঘোষণাও দেন তিনি। মানববন্ধনে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছিল। দেশ স্বাধীন হলেও পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা এখনও বসে নেই। স্বাধীন দেশের ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা জাতির জন্য লজ্জার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে চাই, ধর্ষকের শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক। আইনের দীর্ঘসূত্রতায় যাতে ধর্ষকরা পার না পায়। সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে যাতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ :

ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সোমবার সকাল এগারটায় বিশ^বিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিন থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে ঢাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকায় আজকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের পেটুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের জবাবদিহি নেই। এ কারণেই সারাদেশে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজের উৎসব চলছে।

বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ :

এদিকে, ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’র ব্যানারে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা দেড়টার দিকে তারা শাহবাগ ছেড়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি আবু রায়হান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, স্বাধীন দেশে ধর্ষণের বিচার চাইতে রাস্তা অবরোধ করতে হয়, আন্দোলনে নামতে হয়। শুধু আন্দোলন, অবরোধ দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আশা করবো সরকার আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নইলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

ধর্ষণের বিচার দাবিতে তিন শিক্ষার্থীর অনশন :

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ চার দাবিতে অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষার্থী। তারা হলেন- ঢাবির দর্শন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিফাতুল ইসলাম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রাসেল (ডাকসুর সদস্য) এবং তথ্য-প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নাফিজ। তাদের মধ্যে সিফাতুল ইসলাম ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পরপরই সোমবার রাত সাড়ে তিনটা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেছেন। পরবর্তীতে সোমবার সকালে রাসেল ও মোস্তাফিজ অনশনে বসেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী সংহতি জানিয়েছে। তাদের চার দাবি হলো- অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা; বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের অভিভাবকসুলভ আচরণ; সরকারি ও বেসরকারিভাবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ; দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা।

নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার দাবি :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় বিচার দাবি করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রশ্ন তুলেছে, নারী নির্যাতনের বিচার কেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে না। তারা বলেন, গত বছর দেশে চার হাজার নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশেরই বিচার হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম নুসরাত হত্যার বিচার হলেও বাকি ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার কিংবা তদন্তের অগ্রগতি দেখা যায়নি। তারা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলির বিচার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।

মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফৌওজিয়া মোসলেম বলেন, ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধি, যা দুর্নীতিকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে না। তিনি পরিষদের পক্ষ থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘নারী নির্যাতনের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কেন হচ্ছে না?’ ঢাবির উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মুজিববর্ষে এ ধরনের অপরাধের জন্য দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন উপহার দিন।

ভুক্তভোগীর পিতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা :

ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। সোমবার সকালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা। আর শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি কাজী শাহান হক ও শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ :

এদিকে, জঘন্য ও পাশবিক এই ঘটনায় প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সোমবার বিকেলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ধর্ষণ একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্য, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং কখনো কখনো সঠিক তদন্তের অভাবে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সমাজে ধর্ষণ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে চলেছে। ঘৃণ্য এই কাজের অবসানকল্পে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।’

সাদা দলের বিবৃতি :

এদিকে, ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামাতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। বিবৃতিতে তারা বলেন, কুমিল্লায় তনু হত্যা, ফেনীতে নুসরাত হত্যাসহ অসংখ্য নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বর্তমান সরকারের আমলে। কিন্তু এসব ঘটনাসমূহের সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার হয়নি বলে দেশে নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেই চলছে। যার সর্বশেষ শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমরা অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি ডাকসুর

ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ডাকসু। সোমবার ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ডাকসু থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত নিপীড়নবিরোধী পদযাত্রা ও মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে। রাত ৯টায় স্বরাষ্টমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ বিকেল ৩টায় রাজু ভাস্কর্যে নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আর সন্ধ্যা ৬টায় নিপীড়নবিরোধী ডাকসু মঞ্চ থেকে ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হবে।

পালাবদল’র প্রতিবাদী গান-কবিতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই তিনজন শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদী গান ও কবিতা পরিবেশনের মাধ্যমে ধর্ষকের শাস্তি দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম পালাবদল। এ বিষয়ে পালাবদলের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবির বলেন, আমাদের বোন ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছে। ইতোমধ্যে ধর্ষণের বিচার দাবিতে তিনজন শিক্ষার্থী অনশনে বসেছে। আমরা ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংহতি জানাই। আমরা সকাল থেকে তাদের সঙ্গে ছিলাম। দোষীদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।

পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার পাশে আছে : ঢাবি উপাচার্য

রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার সেই ছাত্রীর পাশে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সোমবার ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে দেখতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী। উপাচার্য বলেন, প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রথম দায়িত্ব। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা প্রয়োজন তাই করবে। সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা সেই শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হটলাইন সেবা’ চালুর দাবি :

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ‘হটলাইন সেবা’ চালুসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে ঢাবির দুটি হল সংসদের ভিপি। তারা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের ভিপি আকমল হোসেন ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের ভিপি এসএম কামাল উদ্দিন। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সেগুলো হলো- ঢাবির বাসে যাতায়াতরত দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ; দূরবর্তী স্টপেজগুলোতে যাত্রী ছাউনিসহ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; বাসগুলোতে দক্ষ ড্রাইভার ও হেলপারের ব্যবস্থা করা; পুরাতন বাস সংস্কারসহ গেইটলকের ব্যবস্থা করা এবং ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনভিত্তিক নিরাপত্তা সেল গঠন করা।

এছাড়া, ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অনতিবিলম্বে ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) ও বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন। সোমবার বিকেলে তারা টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এদিকে, এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের সভাপতি এসএম আবদুল্লাহ আল ফয়সাল ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হোসেন এক বিবৃতি পাঠিয়ে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে আজ প্লানচেট বিতর্ক পরিবেশন করবে। ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ঢাবির হল সংসদগুলো ধর্ষণের ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে জবি

জবি প্রতিনিধি জানান,

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করে। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রফিক ভবনের নিচে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জহির উদ্দিন ফাগুন বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ আমাদের দেশে নিত্যদিনের একটা রুটিন হয়ে গেছে। ধর্ষণের খবর দেখে সকালে ঘুম ভাঙে, ধর্ষণের খবর শুনে আমরা রাতে ঘুমাতে যাই। আমাদের দেশে অপরাধের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়া হয়। যার কারণে এরকম ঘটনা বেড়েই চলেছে।

ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক খাইরুল হাসান জাহিন বলেন, আজকে যে ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটেছে সে ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গেও ঘটতে পারতো। আমাদের হল না থাকার কারণে নারী শিক্ষার্থীরা মেসে মানবেতর জীবনযাপন করেন। যেখানে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। এ সময় তিনি অবিলম্বে জগন্নাথের একমাত্র ছাত্রীহল উদ্বোধন করে ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদান করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি কেএম মুত্তাকী বলেন, বার বার ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা কেন বেড়ে যাচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধের অভাবে এসব ঘটনা বেড়ে চলছে। এই ঘটনায় অপরাধী ধরার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর। আমরা এর আগেও দেখেছি এরকম ঘটনায় অপরাধীদের ধরতে প্রশাসন টালবাহানা করে। কুর্মিটোলার এই ঘটনায় প্রশাসন যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

সমাবেশে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, সাত দফা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক তাওসিব মাহমুদ সোহান, মেহেদী হাসান, মাহফুজুর রহমান হীরা সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আবু বকর খান, তৌফিক মেসবাহ, তিথি সরকার, মাহমুদুল হাসান মিশু ও সৌরভ আমান।

ছবি

জাবিতে উপড়ে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ

ছবি

বিচার না হওয়া ও ‘স্বচ্ছতার অভাব’—জাকসু নির্বাচন পেছানোর পেছনে নানা ব্যাখ্যা

রাবিতে প্রেমঘটিত হতাশায় শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা প্রচেষ্টা’

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কমিশন গঠনের আশ্বাস, ঘোষণা আসতে পারে সোমবার

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ঢাবিতে বিশেষ ভর্তি সুবিধা

ছবি

সাম্য হত্যা: তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি

ছবি

রাবির বঙ্গবন্ধু হলের নাম এখন ‘বিজয়-২৪’

ছবি

চবিতে ক্লাস করতে আসা বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর, মুচলেকা নিয়ে ছাড়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন

ছবি

সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াস

ছবি

রায় বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে হাইকোর্টে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অবস্থান

দাবি মানার প্রতিশ্রুতিতে আন্দোলন স্থগিত করেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ছবি

যমুনার উদ্দেশে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লং মার্চ শুরু

ছবি

ছুরিকাঘাতে ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্যের মৃত্যু, বিক্ষোভ

ছবি

বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে জবি শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ’ ঘোষণা

ছবি

চায়ের দোকানের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা, তালা ঝুলিয়ে ‘দিলেন জবি ছাত্রদল নেতা’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবরে ঢাবিতে স্লোগানে মুখর রাত

আবু সাঈদের জীবন দান দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দার্শনিক ঘটনা: ফরহাদ মজহার

ছবি

কুয়েট উপাচার্যের দায়িত্বে হযরত আলী

ছবি

রাকসু নির্বাচন: ধীরগতি, ঝুলে আছে বিধিমালা ও ভোটার তালিকা

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: গভীর রাতে রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

ছবি

৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ভোট ৩১ জুলাই

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চার মাসে চারজনের আত্মহত্যা, প্রবণতা কি বাড়ছে? কী করছে কাউন্সেলিং সেন্টার?

ছবি

গলায় ফাঁস দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, পুলিশ হেফাজতে ১

ছবি

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলো ইউআইইউ

ছবি

কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি

জবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বুকশেলফ প্রদান

ছবি

পিএসসি সংস্কারে ৮ দফা দাবি জবি শিক্ষার্থীদের

ছবি

জবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি: ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম, কুশপুত্তলিকা দাহ

ছবি

‘এলাকার কলেজে পড়লে পারতে, … গেট আউট’, জবি শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রার

ছবি

কুয়েট শিক্ষার্থীদের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ শিক্ষা উপদেষ্টার

ছবি

বাউবিতে ‘উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণের জন্য মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রোডাকশন কৌশল’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

ছবি

‎জবি শিক্ষার্থীদের কাঁথা-বালিশ কর্মসূচি ঘোষণা

কুয়েট উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল

ছবি

খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণ, ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ

tab

ক্যাম্পাস

ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে তিন শিক্ষার্থীর অনশনসহ উত্তাল ক্যাম্পাস

প্রতিনিধি, ঢাবি

ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকের বিচারের দাবিতে ঢাবি ক্যম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ-সংবাদ

সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২০

কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদসহ ক্যাম্পাসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকের বিচারের দাবিতে সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো ঢাবি ক্যাম্পাস। ধর্ষণের খবর জানাজানি হওয়ার পর রোববার মধ্যরাত থেকেই দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতসহ অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার ক্যাম্পাসে আলাদাভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, মোমবাতি প্রজ্বলন, প্রতিবাদী গান ও কবিতা পরিবেশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে ডাকসু, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যসহ প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করতে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এদিকে, ধর্ষকের বিচারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশন শুরু করেছেন তিন শিক্ষার্থী। ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। এক সহপাঠী ধর্ষণের শিকার হওয়ায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন হাজারো সহপাঠী।

ছাত্রলীগের মানববন্ধন

‘প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল’ স্লোগানে অনতিবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার সকাল সাড়ে এগারটায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করে সংগঠনটি। এর আগে রোববার রাতে তারা ক্যাম্পাসে ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাসহ বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে আজ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেলা ১১টায় একযোগে মানববন্ধনের ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। পরদিন বুধবার সব সাংগঠনিক ইউনিটে মানববন্ধনের ঘোষণাও দেন তিনি। মানববন্ধনে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছিল। দেশ স্বাধীন হলেও পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা এখনও বসে নেই। স্বাধীন দেশের ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা জাতির জন্য লজ্জার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে চাই, ধর্ষকের শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক। আইনের দীর্ঘসূত্রতায় যাতে ধর্ষকরা পার না পায়। সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে যাতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ :

ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সোমবার সকাল এগারটায় বিশ^বিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিন থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে ঢাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকায় আজকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের পেটুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের জবাবদিহি নেই। এ কারণেই সারাদেশে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজের উৎসব চলছে।

বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ :

এদিকে, ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’র ব্যানারে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা দেড়টার দিকে তারা শাহবাগ ছেড়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি আবু রায়হান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, স্বাধীন দেশে ধর্ষণের বিচার চাইতে রাস্তা অবরোধ করতে হয়, আন্দোলনে নামতে হয়। শুধু আন্দোলন, অবরোধ দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আশা করবো সরকার আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নইলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

ধর্ষণের বিচার দাবিতে তিন শিক্ষার্থীর অনশন :

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ চার দাবিতে অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষার্থী। তারা হলেন- ঢাবির দর্শন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিফাতুল ইসলাম, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রাসেল (ডাকসুর সদস্য) এবং তথ্য-প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নাফিজ। তাদের মধ্যে সিফাতুল ইসলাম ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পরপরই সোমবার রাত সাড়ে তিনটা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেছেন। পরবর্তীতে সোমবার সকালে রাসেল ও মোস্তাফিজ অনশনে বসেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী সংহতি জানিয়েছে। তাদের চার দাবি হলো- অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা; বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের অভিভাবকসুলভ আচরণ; সরকারি ও বেসরকারিভাবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ; দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা।

নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার দাবি :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় বিচার দাবি করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রশ্ন তুলেছে, নারী নির্যাতনের বিচার কেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে না। তারা বলেন, গত বছর দেশে চার হাজার নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশেরই বিচার হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম নুসরাত হত্যার বিচার হলেও বাকি ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার কিংবা তদন্তের অগ্রগতি দেখা যায়নি। তারা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলির বিচার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।

মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফৌওজিয়া মোসলেম বলেন, ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধি, যা দুর্নীতিকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে না। তিনি পরিষদের পক্ষ থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘নারী নির্যাতনের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কেন হচ্ছে না?’ ঢাবির উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মুজিববর্ষে এ ধরনের অপরাধের জন্য দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন উপহার দিন।

ভুক্তভোগীর পিতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা :

ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। সোমবার সকালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা। আর শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি কাজী শাহান হক ও শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ :

এদিকে, জঘন্য ও পাশবিক এই ঘটনায় প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সোমবার বিকেলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ধর্ষণ একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্য, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং কখনো কখনো সঠিক তদন্তের অভাবে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সমাজে ধর্ষণ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে চলেছে। ঘৃণ্য এই কাজের অবসানকল্পে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।’

সাদা দলের বিবৃতি :

এদিকে, ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামাতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। বিবৃতিতে তারা বলেন, কুমিল্লায় তনু হত্যা, ফেনীতে নুসরাত হত্যাসহ অসংখ্য নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বর্তমান সরকারের আমলে। কিন্তু এসব ঘটনাসমূহের সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার হয়নি বলে দেশে নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেই চলছে। যার সর্বশেষ শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমরা অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি ডাকসুর

ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ডাকসু। সোমবার ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ডাকসু থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত নিপীড়নবিরোধী পদযাত্রা ও মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে। রাত ৯টায় স্বরাষ্টমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ বিকেল ৩টায় রাজু ভাস্কর্যে নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আর সন্ধ্যা ৬টায় নিপীড়নবিরোধী ডাকসু মঞ্চ থেকে ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হবে।

পালাবদল’র প্রতিবাদী গান-কবিতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই তিনজন শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদী গান ও কবিতা পরিবেশনের মাধ্যমে ধর্ষকের শাস্তি দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম পালাবদল। এ বিষয়ে পালাবদলের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবির বলেন, আমাদের বোন ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছে। ইতোমধ্যে ধর্ষণের বিচার দাবিতে তিনজন শিক্ষার্থী অনশনে বসেছে। আমরা ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংহতি জানাই। আমরা সকাল থেকে তাদের সঙ্গে ছিলাম। দোষীদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।

পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার পাশে আছে : ঢাবি উপাচার্য

রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার সেই ছাত্রীর পাশে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সোমবার ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে দেখতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী। উপাচার্য বলেন, প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রথম দায়িত্ব। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা প্রয়োজন তাই করবে। সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা সেই শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হটলাইন সেবা’ চালুর দাবি :

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ‘হটলাইন সেবা’ চালুসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে ঢাবির দুটি হল সংসদের ভিপি। তারা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের ভিপি আকমল হোসেন ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের ভিপি এসএম কামাল উদ্দিন। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সেগুলো হলো- ঢাবির বাসে যাতায়াতরত দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ; দূরবর্তী স্টপেজগুলোতে যাত্রী ছাউনিসহ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; বাসগুলোতে দক্ষ ড্রাইভার ও হেলপারের ব্যবস্থা করা; পুরাতন বাস সংস্কারসহ গেইটলকের ব্যবস্থা করা এবং ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনভিত্তিক নিরাপত্তা সেল গঠন করা।

এছাড়া, ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অনতিবিলম্বে ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) ও বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন। সোমবার বিকেলে তারা টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এদিকে, এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের সভাপতি এসএম আবদুল্লাহ আল ফয়সাল ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হোসেন এক বিবৃতি পাঠিয়ে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে আজ প্লানচেট বিতর্ক পরিবেশন করবে। ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ঢাবির হল সংসদগুলো ধর্ষণের ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে জবি

জবি প্রতিনিধি জানান,

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করে। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রফিক ভবনের নিচে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জহির উদ্দিন ফাগুন বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ আমাদের দেশে নিত্যদিনের একটা রুটিন হয়ে গেছে। ধর্ষণের খবর দেখে সকালে ঘুম ভাঙে, ধর্ষণের খবর শুনে আমরা রাতে ঘুমাতে যাই। আমাদের দেশে অপরাধের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়া হয়। যার কারণে এরকম ঘটনা বেড়েই চলেছে।

ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক খাইরুল হাসান জাহিন বলেন, আজকে যে ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটেছে সে ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গেও ঘটতে পারতো। আমাদের হল না থাকার কারণে নারী শিক্ষার্থীরা মেসে মানবেতর জীবনযাপন করেন। যেখানে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। এ সময় তিনি অবিলম্বে জগন্নাথের একমাত্র ছাত্রীহল উদ্বোধন করে ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদান করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি কেএম মুত্তাকী বলেন, বার বার ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা কেন বেড়ে যাচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধের অভাবে এসব ঘটনা বেড়ে চলছে। এই ঘটনায় অপরাধী ধরার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর। আমরা এর আগেও দেখেছি এরকম ঘটনায় অপরাধীদের ধরতে প্রশাসন টালবাহানা করে। কুর্মিটোলার এই ঘটনায় প্রশাসন যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

সমাবেশে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, সাত দফা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক তাওসিব মাহমুদ সোহান, মেহেদী হাসান, মাহফুজুর রহমান হীরা সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আবু বকর খান, তৌফিক মেসবাহ, তিথি সরকার, মাহমুদুল হাসান মিশু ও সৌরভ আমান।

back to top