# সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড়
# সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব দিতে চায় কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ
শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো কমিটি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বিরত থাকে সব ধরনের উৎসবের আয়োজন থেকেও। তবে এবার সেই চিরায়ত রেওয়াজ ভেঙ্গে আগস্ট মাস (শোকের মাস) শুরুর আগে রোববার (৩১ জুলাই) রাতে একদিনে জেলা, উপজেলা মিলে ১১টি কমিটি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ ছিল ৩০টির মতো। সেগুলোতেও চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বর্ধিত কমিটি, যা শূণ্য পদ থেকে কয়েকগুণ বেশি।
বর্ধিত কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ইস্যু করা চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই সেটিকে এডিট করে নাম বসিয়ে নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে পরিচয় দেন।
নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুমিত আয়াত সাহিদা নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দাবি করে এডিট করা একটি চিঠি ফেইসবুকে পোস্ট করেন। যদিও সে চিঠি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নজরে আসলে তাকে বহিষ্কার করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। একই কাজ করেন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গ্রীণ ইউনিভার্সিটির এক নেতা। তাকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরকম অসংখ্য এডিট করা ছবি ঘুরছে সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে। এ নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা ও হাসি-ঠাট্টা।
মামুন সরকার নামে একজন ফেইসবুকে লেখেন, "বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পোস্ট এখন সবার জন্য উম্মুক্ত। ৫০ লক্ষ কর্মীর এখনই ৫০ লক্ষ নেতা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। আশা করি এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবেন না।"
নাঈম হোসেন নামে আরেকজন লেখেন, "পিতা মুজিবের নিজ হাতে গড়া সংগঠনকে এমন জোকার সংগঠনে পরিণত করার ধৃষ্টতা যারা দেখাতে পারে, তাদের হাতেই একবিংশ শতকের ছাত্রলীগ।"
নামের জায়গা ফাঁকা রেখে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়ার একটি চিঠির অনুলিপি ফেইসবুকে শেয়ার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির পদ এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে কি না! নাম ও পদ বসিয়ে দিলেই হলো।’ তিনি আরও লেখেন, ‘বিএনপি-জামায়াত উল্লাস করে আগস্ট মাসে। আর আমাদের দুই নেতাও (আল নাহিয়ান ও লেখক) উল্লাসের উপলক্ষ সৃষ্টি করলেন এই মাসে।’
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সহ-সভপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, "আমরা পদায়নের বিরুদ্ধে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল কমিটিতে যারা নেতৃত্বে আসতে পারে নাই , তাদের অবশ্যই পদায়ন করা দরকার ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হল কমিটি হওয়ার পর পাঁচ মাসেও কেন তারা পদায়ন করতে পারে নাই। এখন হঠাৎ নামে-বেনামে শত শত ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়িত করা হলো। এদের অনেকে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়েও নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। স্পষ্টত এখানে অর্থের অনৈতিক লেনদেন হয়েছে। এটা জয়-লেখকের চূড়ান্তভাবে সাংগঠনিক ব্যর্থতা। ধোয়াশা সৃষ্টির মাধ্যমে পকেট ভারী করে তারা তাদের আখের গোছাচ্ছে। এটি এখন দীবালোকের মতো সত্য।"
সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার উচিত হবে সংগঠনের স্বচ্ছতার স্বার্থে বর্ধিত কমিটিতে আসা নামগুলোর নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ করা। যদি তা না করা হয়, তাহলে এদের কেউ কোনো অপকর্ম করলে তার দায়ভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেই নিতে হবে।’
অতীতে চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত করার রীতি থাকলেও এত ব্যাপকহারে কখনো পদায়িত করতে দেখা যায়নি। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বর্ধিত কমিটিতে আনা হলেও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো নাম প্রকাশ করা হয়নি। যারা ফলে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মার কাছে জানতে তার মোবাইলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হল কমিটিতে যেসব পদ-প্রত্যাশী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি, তাদের নাম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আগস্টের শোক ভুলে পদপ্রাপ্ত এবং তাদের অনুসারী-সমর্থক-পরিচিতজনরা উৎসবে মগ্ন হয়েছেন ফেইসবুকে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব আনার ঘোষণা দিয়েছেন অনেকে।
এ বিষয়ে সহ-সভাপতি কামাল খান বলেন, "আমাদের কাছে ছাত্রলীগ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আমানত। এই শোকের মাসে জয়-লেখক সেই আমানতের খেয়ানত করেছে। ছাত্রলীগের কমিটিকে হাসি-ঠাট্টার বিষয়ে পরিণত করেছে। আমরা শীঘ্রই জয়-লেখক বরাবর সাধারণ সভা ডাকার জন্য চিঠি দিব। সেখানে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। পনের দিনের মধ্যে সভা না ডাকলে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির এক তৃতীয়ংশকে নিয়ে সভা ডাকবো। সেখানে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে জয়-লেখককে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও আমরা সংরক্ষণ করি।।"
এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে মোবাইলফোনে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২
# সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড়
# সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব দিতে চায় কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ
শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো কমিটি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বিরত থাকে সব ধরনের উৎসবের আয়োজন থেকেও। তবে এবার সেই চিরায়ত রেওয়াজ ভেঙ্গে আগস্ট মাস (শোকের মাস) শুরুর আগে রোববার (৩১ জুলাই) রাতে একদিনে জেলা, উপজেলা মিলে ১১টি কমিটি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ ছিল ৩০টির মতো। সেগুলোতেও চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বর্ধিত কমিটি, যা শূণ্য পদ থেকে কয়েকগুণ বেশি।
বর্ধিত কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ইস্যু করা চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই সেটিকে এডিট করে নাম বসিয়ে নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে পরিচয় দেন।
নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুমিত আয়াত সাহিদা নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দাবি করে এডিট করা একটি চিঠি ফেইসবুকে পোস্ট করেন। যদিও সে চিঠি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নজরে আসলে তাকে বহিষ্কার করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। একই কাজ করেন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গ্রীণ ইউনিভার্সিটির এক নেতা। তাকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরকম অসংখ্য এডিট করা ছবি ঘুরছে সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে। এ নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা ও হাসি-ঠাট্টা।
মামুন সরকার নামে একজন ফেইসবুকে লেখেন, "বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পোস্ট এখন সবার জন্য উম্মুক্ত। ৫০ লক্ষ কর্মীর এখনই ৫০ লক্ষ নেতা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। আশা করি এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবেন না।"
নাঈম হোসেন নামে আরেকজন লেখেন, "পিতা মুজিবের নিজ হাতে গড়া সংগঠনকে এমন জোকার সংগঠনে পরিণত করার ধৃষ্টতা যারা দেখাতে পারে, তাদের হাতেই একবিংশ শতকের ছাত্রলীগ।"
নামের জায়গা ফাঁকা রেখে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়ার একটি চিঠির অনুলিপি ফেইসবুকে শেয়ার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির পদ এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে কি না! নাম ও পদ বসিয়ে দিলেই হলো।’ তিনি আরও লেখেন, ‘বিএনপি-জামায়াত উল্লাস করে আগস্ট মাসে। আর আমাদের দুই নেতাও (আল নাহিয়ান ও লেখক) উল্লাসের উপলক্ষ সৃষ্টি করলেন এই মাসে।’
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সহ-সভপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, "আমরা পদায়নের বিরুদ্ধে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল কমিটিতে যারা নেতৃত্বে আসতে পারে নাই , তাদের অবশ্যই পদায়ন করা দরকার ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হল কমিটি হওয়ার পর পাঁচ মাসেও কেন তারা পদায়ন করতে পারে নাই। এখন হঠাৎ নামে-বেনামে শত শত ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়িত করা হলো। এদের অনেকে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়েও নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। স্পষ্টত এখানে অর্থের অনৈতিক লেনদেন হয়েছে। এটা জয়-লেখকের চূড়ান্তভাবে সাংগঠনিক ব্যর্থতা। ধোয়াশা সৃষ্টির মাধ্যমে পকেট ভারী করে তারা তাদের আখের গোছাচ্ছে। এটি এখন দীবালোকের মতো সত্য।"
সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার উচিত হবে সংগঠনের স্বচ্ছতার স্বার্থে বর্ধিত কমিটিতে আসা নামগুলোর নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ করা। যদি তা না করা হয়, তাহলে এদের কেউ কোনো অপকর্ম করলে তার দায়ভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেই নিতে হবে।’
অতীতে চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত করার রীতি থাকলেও এত ব্যাপকহারে কখনো পদায়িত করতে দেখা যায়নি। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বর্ধিত কমিটিতে আনা হলেও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো নাম প্রকাশ করা হয়নি। যারা ফলে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মার কাছে জানতে তার মোবাইলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হল কমিটিতে যেসব পদ-প্রত্যাশী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি, তাদের নাম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আগস্টের শোক ভুলে পদপ্রাপ্ত এবং তাদের অনুসারী-সমর্থক-পরিচিতজনরা উৎসবে মগ্ন হয়েছেন ফেইসবুকে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব আনার ঘোষণা দিয়েছেন অনেকে।
এ বিষয়ে সহ-সভাপতি কামাল খান বলেন, "আমাদের কাছে ছাত্রলীগ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আমানত। এই শোকের মাসে জয়-লেখক সেই আমানতের খেয়ানত করেছে। ছাত্রলীগের কমিটিকে হাসি-ঠাট্টার বিষয়ে পরিণত করেছে। আমরা শীঘ্রই জয়-লেখক বরাবর সাধারণ সভা ডাকার জন্য চিঠি দিব। সেখানে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। পনের দিনের মধ্যে সভা না ডাকলে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির এক তৃতীয়ংশকে নিয়ে সভা ডাকবো। সেখানে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে জয়-লেখককে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও আমরা সংরক্ষণ করি।।"
এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে মোবাইলফোনে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।