# নীল দলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল # নবীন শিক্ষকদের উপর ভোটদানে চাপ প্রয়োগের আশঙ্কা সাদা দলের
আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রচারে সরগরম প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। নীল ও সাদা দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ বলয়ে ভোট টানতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে (২০০৯ সাল) শিক্ষক সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্যানেল একচেটিয়াভাবে জয়ী হয়ে আসছে। সাদা দলের প্রার্থীরা সর্বোচ্চ একটি কিংবা দুটি পদে জয়ী হতে পারছেন। সর্বশেষ, ২০২০ সালে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রোভিসি হলে তার পদটি খালি হলে পদাধিকারবলে সভাপতি হন সাদা দলের মো. লুৎফর রহমান। অন্যদিকে ২০১৬ সালের পর নির্বাচনে আর অংশ নেয়নি বামপন্থি গোলাপি দল।
এবারের নির্বাচনে সাদা দল থেকে ১৫ জন এবং নীল দল থেকে ১৫ জনের প্যানেল চূড়ান্ত হয়েছে। এর বাইরে নীল দলের বিদ্রোহী প্রার্থী (সভাপতি) হিসেবে নির্বাচনে থাকছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন। নীল দল থেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে লড়বেন পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়াঁ, সাধারণ সম্পাদক পদে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। সাদা দলের সভাপতি প্রার্থী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ভূমিকার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষোভ অসন্তোষ রয়েছে নীল দলে। সিনিয়র, যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দেওয়ায় অসন্তোষের পাশাপাশি মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন।
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, চীনের প্রাচীর ভাঙ্গাতো সহজ না। নীল দলে দীর্ঘদিন যাবৎ একটা অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিশেষ করে অধ্যাপক নিজাম একজন সিন্ডিকেট সদস্য যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কন্ট্রোলিং এজেন্সি। শিক্ষক সমিতিতো একটা বার্গেনিং এজেন্সি। একই ব্যক্তি দুই জায়গায় দাঁড়িয়ে অপজিট রোল প্লে করবে কীভাবে!
তিনি আরো বলেন, গত দু-এক বছরে শিক্ষকদের অনেক সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো সিস্টেমে একটা জটলা সৃষ্টি হয়েছে। সিঙ্গেল প্রতিযোগী হিসেবে আমার জন্য বিষয়টি কঠিন। নীল দলের দুঃসময়ে আমার অনেক বড় ভূমিকা ছিল। আমি আশাবাদী শিক্ষকরা যদি বিকল্প চিন্তা করে তার একটা সুযোগ তাদের রয়েছে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীল দলের এক শীর্ষ পদপ্রত্যাশী বলেন, বিভিন্ন গ্রুপ থাকার কারণে অনেক সময় ত্যাগী ও যোগ্যরা বাদ পড়ে যায়। এবারের মনোনয়ন আরও ভালো হতে পারত। ত্যাগী ও সিনিয়রদের কিছুটা উপেক্ষা করা হয়েছে। বারবার একজনকে সব জায়গায় মনোনয়ন না দিয়ে কিছু নতুন নেতৃত্ব তুলে নিয়ে আসার কাজটাও এবার করা যেত। সর্বোপরি ভোট হারানোর কিছুটা শঙ্কা তো থাকেই।
নীল দলের মনোনীত সভাপতি প্রার্থী নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, নীল দলের প্রার্থীরা প্রধানমন্ত্রী, সরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আমরা নারী নেতৃত্বের পক্ষে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে। আশা করি আমরা ১৫-০ ভোটে জয়লাভ করবো। শিক্ষকদের যেসব দাবি-দাওয়া আছে ইতোমধ্যে আমরা অনেকাংশে পূরন করেছি। যেগুলো পারিনাই সেগুলো সামনে পূরণ করবো৷
নীল দলের ভেতর কোনো কোন্দল আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলের ভেতর কোনো কোন্দল নেই। নীল দলের আহ্বায়ক কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে এই প্যানেল দিয়েছে। দল থেকে বের হয়ে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতেই। তার অধিকার আছে। তবে এটি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
ভোটের জন্য তরুণ শিক্ষকদের উপর চাপ প্রয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, "তরুণ ভোটারদের উপর কখনোই চাপ প্রয়োগ করা হয় না। তারা বঙ্গবন্ধু ও নীল দলের আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই আমাদের দলে আসে।
অন্যদিকে নির্বাচনে তরুণ শিক্ষকদের উপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করে সাদা দলের অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, গত এক-দুবছর থেকে শিক্ষকদের পেশাগত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেভাবে কমানো হচ্ছে, আবার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের উপর আঘাত হানছে- এসব বিষয় আমরা ভোটারদের সামনে উপস্থিত করছি। প্রশাসনের সাথে বার্গেইনিং করার জন্য একটা ভরসাম্যপূর্ণ শিক্ষক সমিতি দরকার সেটা আমরা তাদেরকে বুঝাচ্ছি। আমরা আমাদের প্রচারণা চালাচ্ছি নির্বিঘ্নে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে নির্বাচন আসলে আমাদের তরুণ সহকর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করার একটা প্রবণতা থাকে৷ ইলেকশন কমিশনকে আমরা বিষয়টি অবহিত করবো।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ভোটগণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন পরিচালক হিসেবে থাকছেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।
মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
# নীল দলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল # নবীন শিক্ষকদের উপর ভোটদানে চাপ প্রয়োগের আশঙ্কা সাদা দলের
আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রচারে সরগরম প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। নীল ও সাদা দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ বলয়ে ভোট টানতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে (২০০৯ সাল) শিক্ষক সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্যানেল একচেটিয়াভাবে জয়ী হয়ে আসছে। সাদা দলের প্রার্থীরা সর্বোচ্চ একটি কিংবা দুটি পদে জয়ী হতে পারছেন। সর্বশেষ, ২০২০ সালে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রোভিসি হলে তার পদটি খালি হলে পদাধিকারবলে সভাপতি হন সাদা দলের মো. লুৎফর রহমান। অন্যদিকে ২০১৬ সালের পর নির্বাচনে আর অংশ নেয়নি বামপন্থি গোলাপি দল।
এবারের নির্বাচনে সাদা দল থেকে ১৫ জন এবং নীল দল থেকে ১৫ জনের প্যানেল চূড়ান্ত হয়েছে। এর বাইরে নীল দলের বিদ্রোহী প্রার্থী (সভাপতি) হিসেবে নির্বাচনে থাকছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন। নীল দল থেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে লড়বেন পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়াঁ, সাধারণ সম্পাদক পদে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। সাদা দলের সভাপতি প্রার্থী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ভূমিকার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষোভ অসন্তোষ রয়েছে নীল দলে। সিনিয়র, যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দেওয়ায় অসন্তোষের পাশাপাশি মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন।
অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, চীনের প্রাচীর ভাঙ্গাতো সহজ না। নীল দলে দীর্ঘদিন যাবৎ একটা অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিশেষ করে অধ্যাপক নিজাম একজন সিন্ডিকেট সদস্য যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কন্ট্রোলিং এজেন্সি। শিক্ষক সমিতিতো একটা বার্গেনিং এজেন্সি। একই ব্যক্তি দুই জায়গায় দাঁড়িয়ে অপজিট রোল প্লে করবে কীভাবে!
তিনি আরো বলেন, গত দু-এক বছরে শিক্ষকদের অনেক সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো সিস্টেমে একটা জটলা সৃষ্টি হয়েছে। সিঙ্গেল প্রতিযোগী হিসেবে আমার জন্য বিষয়টি কঠিন। নীল দলের দুঃসময়ে আমার অনেক বড় ভূমিকা ছিল। আমি আশাবাদী শিক্ষকরা যদি বিকল্প চিন্তা করে তার একটা সুযোগ তাদের রয়েছে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীল দলের এক শীর্ষ পদপ্রত্যাশী বলেন, বিভিন্ন গ্রুপ থাকার কারণে অনেক সময় ত্যাগী ও যোগ্যরা বাদ পড়ে যায়। এবারের মনোনয়ন আরও ভালো হতে পারত। ত্যাগী ও সিনিয়রদের কিছুটা উপেক্ষা করা হয়েছে। বারবার একজনকে সব জায়গায় মনোনয়ন না দিয়ে কিছু নতুন নেতৃত্ব তুলে নিয়ে আসার কাজটাও এবার করা যেত। সর্বোপরি ভোট হারানোর কিছুটা শঙ্কা তো থাকেই।
নীল দলের মনোনীত সভাপতি প্রার্থী নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, নীল দলের প্রার্থীরা প্রধানমন্ত্রী, সরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আমরা নারী নেতৃত্বের পক্ষে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে। আশা করি আমরা ১৫-০ ভোটে জয়লাভ করবো। শিক্ষকদের যেসব দাবি-দাওয়া আছে ইতোমধ্যে আমরা অনেকাংশে পূরন করেছি। যেগুলো পারিনাই সেগুলো সামনে পূরণ করবো৷
নীল দলের ভেতর কোনো কোন্দল আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলের ভেতর কোনো কোন্দল নেই। নীল দলের আহ্বায়ক কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে এই প্যানেল দিয়েছে। দল থেকে বের হয়ে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতেই। তার অধিকার আছে। তবে এটি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
ভোটের জন্য তরুণ শিক্ষকদের উপর চাপ প্রয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, "তরুণ ভোটারদের উপর কখনোই চাপ প্রয়োগ করা হয় না। তারা বঙ্গবন্ধু ও নীল দলের আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই আমাদের দলে আসে।
অন্যদিকে নির্বাচনে তরুণ শিক্ষকদের উপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করে সাদা দলের অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, গত এক-দুবছর থেকে শিক্ষকদের পেশাগত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেভাবে কমানো হচ্ছে, আবার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের উপর আঘাত হানছে- এসব বিষয় আমরা ভোটারদের সামনে উপস্থিত করছি। প্রশাসনের সাথে বার্গেইনিং করার জন্য একটা ভরসাম্যপূর্ণ শিক্ষক সমিতি দরকার সেটা আমরা তাদেরকে বুঝাচ্ছি। আমরা আমাদের প্রচারণা চালাচ্ছি নির্বিঘ্নে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে নির্বাচন আসলে আমাদের তরুণ সহকর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করার একটা প্রবণতা থাকে৷ ইলেকশন কমিশনকে আমরা বিষয়টি অবহিত করবো।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ভোটগণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন পরিচালক হিসেবে থাকছেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।