alt

ক্যাম্পাস

ক্যাম্পাসবিহীন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

হাবিবুর রহমান স্বপন ও বিমল কুণ্ডু, শাহজাদপুর থেকে : সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেন শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অস্থায়ী ভবন -সংবাদ

‘বাংলাদেশ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়েছে অথচ প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়নি। পর্যাপ্ত সরকারি খাস জমি থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য জমি বরাদ্দ মেলেনি এবং অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। সাড়ে ৮শ’ শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে হচ্ছে অস্থায়ী ভাড়া করা ভবনে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে ২০১৫ সালের ৮ মে (২৫ বৈশাথ’ ১৪২২) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালে সংসদে দেশের ৪০তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আইন পাস হয়। ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ এর ১৫ জুন প্রফেসর বিশ্বনাথ ঘোষ ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পান। তার কার্যকাল শেষ হয়ে গেছে ২০২১ এর ১৪ জুন।

এখন পাঁচটি সাবজেক্টে শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সাড়ে ৮শ’। বাংলা, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও সংগীত। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক শিক্ষক নিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। প্রয়োজন ৫০ জন শিক্ষক, আছেন ২৬ জন।

শাহজাদপুরের ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্লাস চলছে। এছাড়া ভাড়া বাড়িতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এর জন্য প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মাওলানা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজ ও বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজে সংকীর্ণ ক্লাস কক্ষে ক্লাস ও লাইব্রেরি কার্যক্রম চলছে। এতে উল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রায় ৬ মাস শূন্য থাকার পর ২০২১ এর ৮ ডিসেম্বর ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো শাহ আজম। তিনি ‘সংবাদ’ কে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী ক্যাম্পাস অতি আবশ্যক। ২০১৮ এর ২ ডিসেম্বর ১৪১২ স্মারক নং পত্রে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহজাদপুর উপজেলার ‘বুড়ি পোতাজিয়া’ মৌজায় ১০০ একর জমি বরাদ্দ দেন। এরপর অন্য একটি আদেশে ২০২১ এর ১৮ অক্টোবর আরও ১১ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি এই জমি বুঝে পাননি। শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান জমি বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এখনও ওই জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তিনি জানান, দাগ নং ১০৪৭, ১০৩৮ ও ২০৪৩ থেকে উক্ত জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুড়ি পোতাজিয়া মৌজার আরও ২৩৬ একর খাস জমি বরাদ্দ চেয়েছেন। ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শাহ আজম বলেন, ‘রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যে স্থানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুবই সুন্দর। এখানে বিশ্বভারতীর চেয়েও সাজানো গোছানো ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ২৩৬ একর জমির চাহিদা দিয়েছেন তার মধ্যে বুড়ি পোতাজিয়া মৌজার ১২৫ একর জমি অবৈধ দখলদাররা জাল দলিলপত্র করে বেদখল করে রেখেছে। কয়েকজন জাল দলিলকারীর বিরুদ্ধে শাহজাদপুর উপজেলা ভূমি দপ্তর মামলা দয়ের করেছে। যা সিরাজগঞ্জ আদালতে বিচারাধীন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩০২ বঙ্গাব্দের ২৯ চৈত্র মাত্র ৫শ’ টাকার বিনিময়ে রাউতারা গ্রামের গিরীশচন্দ্র ঘোষকে (গুরুচরণ ঘোষের পুত্র) ১শ’ ৯৯ বিঘা দান করেন অর্থাৎ খারিজ দলিল করে দেন। উল্লেখ্য গিরীশচন্দ্র ঘোষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলকাতার জোড়াসাঁকো বাড়িতে এবং যখন তিনি শাহজাদপুর অবস্থান করতেন তখন ঘি, ছানা, মাখন এবং দধি সরবরাহ করতেন। গিরীশচন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ জমি দান করেন। উক্ত জমি এবং তার পার্শ্ববর্তী প্রায় ১৪শ’ একর জমি এখন খাস সম্পত্তি, যা সরকারি সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে কিছু জমি গো-চারণ ভূমি হিসেবে চিহ্নিত। যা মিল্কভিটার সমবায়ী গোখামারিদের জন্য বরাদ্দ।

যেহেতু সব জমি খাস। অতএব জমি অধিগ্রহণের জন্য কোন টাকা খরচ হবে না সরকারের। এর পরেও অজ্ঞাত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হচ্ছে না। অথচ রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তীতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন পেয়েছে সেগুলোর জমি ক্রয় করে স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে।

ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শাহ আজম জানান, গোয়ালা, বড়াল ও সোনাই নদীর মোহনায় উন্মুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে স্থানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে সেখানে বিশ্বভারতীর মতো ‘পল্লীশ্রী’ গড়ে তোলা সম্ভব। কৃষি অনুষদের জন্য অনেক জমি দরকার, যা এখানে রয়েছে। তিনি তার পরিকল্পনার কথা বলেন, ‘যেহেতু নিম্ন বা নিচু ভূমি এটি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইমারত সমূহ তৈরি করার আগে মাটি দ্বারা ভরাট করে ভূমির উন্নয়ন করতে হবে। ৩ বছরের একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার ২ হাজার ৪শ’ ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। মাটি ভরাট ছাড়া এই বাজেটে প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, সাপোর্ট সার্ভিস বিল্ডিং, শিক্ষার্থীদের ২টি আবসিক হল (একটি ছাত্রদের, একটি ছাত্রীদের জন্য), শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, লাইব্রেরি, টিএসসি (অডিটোরিয়ামসহ) এবং ক্যাফেটরিয়া। প্রস্তবিত খসড়া নক্সা উপস্থাপন করা হয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর। তাতে আরও রয়েছে মুক্তমঞ্চ, রবীন্দ্র প্রাঙ্গণ ও বঙ্গবন্ধু প্রাঙ্গণ।’

সরকরের কাছে পাঠনো এই প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনুমোদন এখনও মেলেনি। তবে এ ব্যাপারে ভাইস চ্যান্সেলর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর জন্য দরকার একজন প্রকল্প পরিচালক, একজন উপ-পরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক এবং কয়েকজন অফিসিয়াল কর্মচারী।

চলতি বছর রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের পাঁচ বছর শেষ হবে। প্রথম ব্যাচ তাদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করবেন। ক্যাম্পাসবিহীন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে সন্তুষ্ট নন। মাস্টার্স শেষ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে সাংস্কৃতিক ও বিশ্বজনীন পরিবেশ আবশ্যক তা তারা পেলেন না। তাদের আশা খুব দ্রুতই সুন্দর একটি ক্যাম্পাস তৈরি হবে।

নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শাহ আজম নতুন পাঁচটি সাবজেক্ট খোলার অনুমতি চান, স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় বা স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনুমতি মেলেনি। সাবজেক্টগুলো হলো চারুকলা, নাট্যকলা, প্রত্নতত্ত্ব, আইন ও মার্কেটিং।

প্রথম ৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সংগঠন ছিল না। যেমন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ক্যারিয়ার ক্লাব, বিএনসিসি, বিতর্ক ক্লাব, থিয়েটার, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, চলচ্চিত্র সোসাইটি। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রফেসর শাহ আজম শিক্ষার্থীদের জন্য এসব সংঘঠন গঠন করেছেন। সংঘঠনগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

প্রতিষ্ঠার পর ৪ বছরে (প্রফেসর বিশ্বনাথ ঘোষ ভাইস চ্যান্সেলর থাকাকালীন) রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ জন কর্মকর্তা ও ১১৮ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে প্রথমে অস্থায়ী (এডহক) ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। পরে পছন্দের প্রার্থীদের জন্য সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর বয়স, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত শিথীল করে তাদের স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্বনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস চালু না করা, অবৈধ ছাত্র ভর্তি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ ৫৬ টি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিনি তার মেয়াদকালে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোন অডিট হয়নি। এ ব্যাপারে প্রফেসর বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়মিত অডিট করেছে। সরকারের অডিট কমিটি দ্বারা খরচের অডিট করানো হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বারবার অডিট কমিটিকে চিঠি দিয়েছি, তারা বলেছেন পরে সব একত্রে করবেন।

শাহজাদপুরবাসীর দাবি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা এবং বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে এবং বিশ্ব দরবারে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমরত্ব লাভ করেছেন। তার রেখে যাওয়া জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, অথচ কাজে মন্থরতা দীর্ঘ ৬ বছরেও অবকাঠামো নির্মাণ না করায় তারা ব্যথিত। খুব দ্রুতই নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলবে বিশ্ববিদ্যালয় এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

ছবি

শিক্ষার্থী শূন্য জাবির হল, ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ-পানি-ইন্টারনেট বন্ধ

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ, হল ছাড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী

ছবি

ঢাবি ক্যাম্পাসে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল

ছবি

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জবির ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল

ছবি

ঢাবির হলে ছাত্র রাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’, অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষদের সই নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

ছবি

শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবরে ঢাকা কলেজে হল ছাড়ার হিড়িক

ছবি

বেরোবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২

ছবি

ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলই থাকছে

ছবি

মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিনতাই কান্ডে জড়িত তিন শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পঞ্চম দিনে উত্তাল ঢাবি, কাল থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি

ছবি

কুষ্টিয়ায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

কোটা সংস্কার ও পুনর্বহাল বাতিলের দাবিতে রাবিতে শিক্ষার্থীদের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

৭২ বছরে পা রাখছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে জবি ছাত্রলীগের সঙ্গে কবি নজরুল ছাত্রলীগের মারামারির অভিযোগ

ছবি

কর্মবিরতিতে অচল ঢাবি, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

ছবি

রাবি-ব্র্যাক এআইএসপি কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠিত

ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের কটুক্তির প্রতিবাদে জবিতে মানববন্ধন

ছবি

দ্বিতীয় দিনের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে অচল জবি

ছবি

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু ঢাবি শিক্ষার্থীদের

ছবি

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বশেমুরকৃবি শিক্ষকদের সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি

ছবি

প্রত্যয় স্কিম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বয়কট করল শিক্ষক সমিতি

ছবি

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ বছরে পদার্পণ

ক্লাস বর্জনের ঘোষণা শাবিপ্রবি শিক্ষকদের

ছবি

পেনশন স্কিম : কাল থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি

কাল থেকে জবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ : শিক্ষক সমিতি

ছবি

জবি রোভার ইন কাউন্সিলের নেতৃত্বে রাকিব-মেহেদি

ছবি

২০১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা জবির, গবেষণায় বরাদ্দ ৯ কোটি

ছবি

দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ঢাবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি

ছবি

খাসি তুমি কার!

ছবি

ঈদের ছুটিতে হলে অবস্থান করায় ছাত্রীদের ডেকে শাসালেন জবির হল প্রভোস্ট

ছবি

ঢাবিতে বাজেট ২০২৪-২৫: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক সভা

ছবি

তীব্র গরমে লম্বা লাইনে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

কোটা পুনবর্হালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী আন্দোলনে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

tab

ক্যাম্পাস

ক্যাম্পাসবিহীন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

হাবিবুর রহমান স্বপন ও বিমল কুণ্ডু, শাহজাদপুর থেকে

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেন শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অস্থায়ী ভবন -সংবাদ

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

‘বাংলাদেশ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়েছে অথচ প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়নি। পর্যাপ্ত সরকারি খাস জমি থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য জমি বরাদ্দ মেলেনি এবং অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। সাড়ে ৮শ’ শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে হচ্ছে অস্থায়ী ভাড়া করা ভবনে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে ২০১৫ সালের ৮ মে (২৫ বৈশাথ’ ১৪২২) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালে সংসদে দেশের ৪০তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আইন পাস হয়। ২০১৭-’১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ এর ১৫ জুন প্রফেসর বিশ্বনাথ ঘোষ ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পান। তার কার্যকাল শেষ হয়ে গেছে ২০২১ এর ১৪ জুন।

এখন পাঁচটি সাবজেক্টে শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সাড়ে ৮শ’। বাংলা, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও সংগীত। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক শিক্ষক নিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। প্রয়োজন ৫০ জন শিক্ষক, আছেন ২৬ জন।

শাহজাদপুরের ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্লাস চলছে। এছাড়া ভাড়া বাড়িতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এর জন্য প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মাওলানা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজ ও বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজে সংকীর্ণ ক্লাস কক্ষে ক্লাস ও লাইব্রেরি কার্যক্রম চলছে। এতে উল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রায় ৬ মাস শূন্য থাকার পর ২০২১ এর ৮ ডিসেম্বর ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো শাহ আজম। তিনি ‘সংবাদ’ কে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী ক্যাম্পাস অতি আবশ্যক। ২০১৮ এর ২ ডিসেম্বর ১৪১২ স্মারক নং পত্রে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহজাদপুর উপজেলার ‘বুড়ি পোতাজিয়া’ মৌজায় ১০০ একর জমি বরাদ্দ দেন। এরপর অন্য একটি আদেশে ২০২১ এর ১৮ অক্টোবর আরও ১১ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি এই জমি বুঝে পাননি। শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান জমি বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এখনও ওই জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তিনি জানান, দাগ নং ১০৪৭, ১০৩৮ ও ২০৪৩ থেকে উক্ত জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুড়ি পোতাজিয়া মৌজার আরও ২৩৬ একর খাস জমি বরাদ্দ চেয়েছেন। ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শাহ আজম বলেন, ‘রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যে স্থানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুবই সুন্দর। এখানে বিশ্বভারতীর চেয়েও সাজানো গোছানো ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ২৩৬ একর জমির চাহিদা দিয়েছেন তার মধ্যে বুড়ি পোতাজিয়া মৌজার ১২৫ একর জমি অবৈধ দখলদাররা জাল দলিলপত্র করে বেদখল করে রেখেছে। কয়েকজন জাল দলিলকারীর বিরুদ্ধে শাহজাদপুর উপজেলা ভূমি দপ্তর মামলা দয়ের করেছে। যা সিরাজগঞ্জ আদালতে বিচারাধীন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩০২ বঙ্গাব্দের ২৯ চৈত্র মাত্র ৫শ’ টাকার বিনিময়ে রাউতারা গ্রামের গিরীশচন্দ্র ঘোষকে (গুরুচরণ ঘোষের পুত্র) ১শ’ ৯৯ বিঘা দান করেন অর্থাৎ খারিজ দলিল করে দেন। উল্লেখ্য গিরীশচন্দ্র ঘোষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলকাতার জোড়াসাঁকো বাড়িতে এবং যখন তিনি শাহজাদপুর অবস্থান করতেন তখন ঘি, ছানা, মাখন এবং দধি সরবরাহ করতেন। গিরীশচন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ জমি দান করেন। উক্ত জমি এবং তার পার্শ্ববর্তী প্রায় ১৪শ’ একর জমি এখন খাস সম্পত্তি, যা সরকারি সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে কিছু জমি গো-চারণ ভূমি হিসেবে চিহ্নিত। যা মিল্কভিটার সমবায়ী গোখামারিদের জন্য বরাদ্দ।

যেহেতু সব জমি খাস। অতএব জমি অধিগ্রহণের জন্য কোন টাকা খরচ হবে না সরকারের। এর পরেও অজ্ঞাত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হচ্ছে না। অথচ রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তীতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন পেয়েছে সেগুলোর জমি ক্রয় করে স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে।

ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শাহ আজম জানান, গোয়ালা, বড়াল ও সোনাই নদীর মোহনায় উন্মুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে স্থানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে সেখানে বিশ্বভারতীর মতো ‘পল্লীশ্রী’ গড়ে তোলা সম্ভব। কৃষি অনুষদের জন্য অনেক জমি দরকার, যা এখানে রয়েছে। তিনি তার পরিকল্পনার কথা বলেন, ‘যেহেতু নিম্ন বা নিচু ভূমি এটি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইমারত সমূহ তৈরি করার আগে মাটি দ্বারা ভরাট করে ভূমির উন্নয়ন করতে হবে। ৩ বছরের একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দরকার ২ হাজার ৪শ’ ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। মাটি ভরাট ছাড়া এই বাজেটে প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, সাপোর্ট সার্ভিস বিল্ডিং, শিক্ষার্থীদের ২টি আবসিক হল (একটি ছাত্রদের, একটি ছাত্রীদের জন্য), শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন, লাইব্রেরি, টিএসসি (অডিটোরিয়ামসহ) এবং ক্যাফেটরিয়া। প্রস্তবিত খসড়া নক্সা উপস্থাপন করা হয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর। তাতে আরও রয়েছে মুক্তমঞ্চ, রবীন্দ্র প্রাঙ্গণ ও বঙ্গবন্ধু প্রাঙ্গণ।’

সরকরের কাছে পাঠনো এই প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনুমোদন এখনও মেলেনি। তবে এ ব্যাপারে ভাইস চ্যান্সেলর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর জন্য দরকার একজন প্রকল্প পরিচালক, একজন উপ-পরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক এবং কয়েকজন অফিসিয়াল কর্মচারী।

চলতি বছর রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের পাঁচ বছর শেষ হবে। প্রথম ব্যাচ তাদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করবেন। ক্যাম্পাসবিহীন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে সন্তুষ্ট নন। মাস্টার্স শেষ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে সাংস্কৃতিক ও বিশ্বজনীন পরিবেশ আবশ্যক তা তারা পেলেন না। তাদের আশা খুব দ্রুতই সুন্দর একটি ক্যাম্পাস তৈরি হবে।

নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শাহ আজম নতুন পাঁচটি সাবজেক্ট খোলার অনুমতি চান, স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় বা স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনুমতি মেলেনি। সাবজেক্টগুলো হলো চারুকলা, নাট্যকলা, প্রত্নতত্ত্ব, আইন ও মার্কেটিং।

প্রথম ৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সংগঠন ছিল না। যেমন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ক্যারিয়ার ক্লাব, বিএনসিসি, বিতর্ক ক্লাব, থিয়েটার, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, চলচ্চিত্র সোসাইটি। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রফেসর শাহ আজম শিক্ষার্থীদের জন্য এসব সংঘঠন গঠন করেছেন। সংঘঠনগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

প্রতিষ্ঠার পর ৪ বছরে (প্রফেসর বিশ্বনাথ ঘোষ ভাইস চ্যান্সেলর থাকাকালীন) রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ জন কর্মকর্তা ও ১১৮ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে প্রথমে অস্থায়ী (এডহক) ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। পরে পছন্দের প্রার্থীদের জন্য সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর বয়স, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত শিথীল করে তাদের স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্বনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস চালু না করা, অবৈধ ছাত্র ভর্তি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ ৫৬ টি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিনি তার মেয়াদকালে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোন অডিট হয়নি। এ ব্যাপারে প্রফেসর বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়মিত অডিট করেছে। সরকারের অডিট কমিটি দ্বারা খরচের অডিট করানো হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বারবার অডিট কমিটিকে চিঠি দিয়েছি, তারা বলেছেন পরে সব একত্রে করবেন।

শাহজাদপুরবাসীর দাবি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা এবং বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে এবং বিশ্ব দরবারে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমরত্ব লাভ করেছেন। তার রেখে যাওয়া জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, অথচ কাজে মন্থরতা দীর্ঘ ৬ বছরেও অবকাঠামো নির্মাণ না করায় তারা ব্যথিত। খুব দ্রুতই নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলবে বিশ্ববিদ্যালয় এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

back to top