alt

ক্যাম্পাস

এক প্রতিবাদী ফুলপরীর গল্প

রুমি নোমান, ইবি : বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার অখ্যাত এক গ্রাম শিবপুরে জন্ম তার। ভ্যানচালক বাবা ও গৃহিণী মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় দুই ভাইবোন উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ দুটি বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত। অগ্রজদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন তিনিও। চোখে মুখে স্বপ্ন আর উচ্ছ্বাস নিয়ে পা রাখেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ক্লাস। সবকিছু ঠিকই চলছিল, কিন্তু হঠাৎ বিপত্তি দেখা দেয় আবাসিক হলে ওঠা নিয়ে। এরপর দুই দফায় নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে যান আপন নীড়ে। কিন্তু থেমে যাননি তিনি। সেই অদম্য প্রতিবাদী কন্যার নাম ফুলপরী খাতুন।

জানা যায়, ঘটনাটি ছিল ছাত্রলীগ নেত্রীর অনুমতি নেয়া কে কেন্দ্র করে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবাসিক হলে ফুলপরী ওঠেন এক পরিচিত বড় বোনের সিটে। বিষয়টি জানতে পেরে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ আরও ৭-৮ জন জড়িত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

তবে এ ঘটনায় চুপসে যাননি তিনি। বাবার সাহস আর পরিবারের সহযোগিতায় আবারো ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে। প্রতিবাদমুখর হয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ দেন তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফুলপরী বলেন, বাবা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। তিনি হয়তো খুব ক্ষুদ্র পেশার মানুষ কিন্তু সে সৎ ও নিষ্ঠাবান।

আমাদেরকে শিখিয়েছেন অন্যায়ের সঙ্গে আপোস না করতে। এমনকি তিনি আজীবন এভাবেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করবো না। আমি আমার সাধ্যমত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো।

তার এ সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের নানা মানুষ। তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিবাদী হতে যে মানসিকতা বা সাহস থাকা দরকার ফুলপরী সেটা দেখিয়েছে। আর প্রতিবাদ করলে যে হাজারো মানুষ তার পাশে দাঁড়াতে পারে, তারও উদাহরণ ফুলপরীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান বলেন, আমরা যখন রাজনীতি করতাম শিক্ষার্থীদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়। কিন্তু এখন হচ্ছে জবরদস্তিমূলক সংগঠন। জাতীয়ভাবে এর পরিবর্তন না হলে, এই ধরনের মানসিকতা পরিবর্তন কঠিন। তবে ফুলপরী যে প্রতিবাদ করেছে, সে সমাজের তথা রাজনীতির অসহিষ্ণু অবস্থা তুলে ধরেছে। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যালামনাইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জাকারিয়া হায়দার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বসহ নানা বিষয়ে প্রতিবাদ করেছি। কারণ প্রতিবাদই হতে পারে মুক্তির পথ। এর জন্য আমরাও বিভিন্ন সময় হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কিন্তু সমাজের যেকোন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানো উচিত। ফুলপরী সেটি করে দেখিয়েছে।

ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, আমার মেয়ে বাড়ি এসে আমার কাছে ঘটনা বলল। তখন ভেবেছি আজ আমার মেয়ের ওপর হয়েছে, সামনে আরও হাজার হাজার মেয়ের ওপর হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি আমরা, যাতে অন্যায় প্রশ্রয় না পায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার ও কঠিন শাস্তি চাই। আমার মেয়ের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে তা যেন অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে না ঘটে।

সেদিন রাতের ঘটনা উল্লেখ করে ফুলপরী বলেন, অন্তরা আপু, তাবাসসুম, উর্মি, মিম, মুয়াবিয়াসহ ৭-৮ জন আপু উপস্থিত ছিল। তারা নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আপুরা হুমকি দিয়ে বলছিল, ‘এসব বাইরে বললে একেবারে মেরে ফেলবো। তোকে উলঙ্গ করে এখান থেকে বের করে দেব। এই কথা বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করে দেব।’

তারা আমাকে নির্যাতন করে আনন্দ পাচ্ছিল, হাসাহাসি করছিল। তারা এতটাই মজা পাচ্ছিলেন যে রাত পার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই এমন নির্যাতনের পর অনেকেই ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। কিন্তু ওই হলের কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি।

ফুলপরী আরও বলেন, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা তো আর ফিরে আসবে না। তবে অভিযুক্তদের এমন শাস্তি হোক যেন আর কেউ এমন কিছু করার সাহস না দেখায়। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আর আমি ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। নিয়মিত ক্লাস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে চাই। আগের থেকে আরও বেশি পড়াশোনা করে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।

কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। ফুলপরীও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হতে ক্লান্ত অনেকটা। তবু তার চোখে মুখে কিছুটা তৃপ্তির পাশাপাশি সন্ধিহান দৃষ্টি। সে দৃষ্টি যেনো বলে উঠছে, আসলেই কি আমি বিচার পাবো? স্বাভাবিক ভাবে পড়াশোনা করে স্বপ্ন যাত্রায় অংশ নিতে পারবো কি?

এ প্রশ্নের জবাব কেবলই মিলতে পারে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে।

প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।

এরই মাঝে গত শনিবার, সোমবার ও বুধবার ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের তদন্ত সাক্ষাৎকার সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, মহিলা পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, সাদা দল, জিয়া পরিষদ থেকে প্রতিবাদলিপি, মানববন্ধনসহ সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

ছবি

চায়ের দোকানের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা, তালা ঝুলিয়ে ‘দিলেন জবি ছাত্রদল নেতা’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবরে ঢাবিতে স্লোগানে মুখর রাত

আবু সাঈদের জীবন দান দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দার্শনিক ঘটনা: ফরহাদ মজহার

ছবি

কুয়েট উপাচার্যের দায়িত্বে হযরত আলী

ছবি

রাকসু নির্বাচন: ধীরগতি, ঝুলে আছে বিধিমালা ও ভোটার তালিকা

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: গভীর রাতে রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

ছবি

৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ভোট ৩১ জুলাই

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চার মাসে চারজনের আত্মহত্যা, প্রবণতা কি বাড়ছে? কী করছে কাউন্সেলিং সেন্টার?

ছবি

গলায় ফাঁস দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, পুলিশ হেফাজতে ১

ছবি

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলো ইউআইইউ

ছবি

কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি

জবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বুকশেলফ প্রদান

ছবি

পিএসসি সংস্কারে ৮ দফা দাবি জবি শিক্ষার্থীদের

ছবি

জবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি: ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম, কুশপুত্তলিকা দাহ

ছবি

‘এলাকার কলেজে পড়লে পারতে, … গেট আউট’, জবি শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রার

ছবি

কুয়েট শিক্ষার্থীদের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ শিক্ষা উপদেষ্টার

ছবি

বাউবিতে ‘উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণের জন্য মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রোডাকশন কৌশল’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

ছবি

‎জবি শিক্ষার্থীদের কাঁথা-বালিশ কর্মসূচি ঘোষণা

কুয়েট উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল

ছবি

খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণ, ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ছবি

মে’র মধ্যে সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ও জুনে ডাকসু নির্বাচনের দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের

ছবি

কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, হল খুলবে ২ মে

ছবি

ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়ে স্মারকলিপি

ছবি

মায়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩,৩৫৪, নিখোঁজ ২২০

ছবি

পথ শিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার ঈদ উপহার বিতরণ

ছবি

মধ্যরাতে ঢাবি বিক্ষোভ: দাবি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের

ছবি

কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

ঢাবিতে হামলা ঘটনায় ১২৮ জনের তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয়, অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন

সাদ্দাম-ইনানসহ ঢাবিতে হামলায় অংশ নেওয়া ১২৮ জন ছাত্রলীগের তালিকা প্রকাশ

জাবিতে ‘১৫ জুলাইকে’ কালোরাত ঘোষণা; ৯ শিক্ষক এবং ২৮৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বরখাস্ত

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ঢাবি শিক্ষার্থীদের পাশে সাদা দল

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দর্শন পরিবারের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

ছবি

সারা বছরই আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে: জবি উপাচার্য

ছবি

শেখ মুজিবুবের হলের নাম পরিবর্তন নিয়ে পোস্ট: ইবি শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া

ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণবিরোধী সমাবেশে হট্টগোল

ছবি

ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল

tab

ক্যাম্পাস

এক প্রতিবাদী ফুলপরীর গল্প

রুমি নোমান, ইবি

বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার অখ্যাত এক গ্রাম শিবপুরে জন্ম তার। ভ্যানচালক বাবা ও গৃহিণী মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় দুই ভাইবোন উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ দুটি বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত। অগ্রজদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন তিনিও। চোখে মুখে স্বপ্ন আর উচ্ছ্বাস নিয়ে পা রাখেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ক্লাস। সবকিছু ঠিকই চলছিল, কিন্তু হঠাৎ বিপত্তি দেখা দেয় আবাসিক হলে ওঠা নিয়ে। এরপর দুই দফায় নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে যান আপন নীড়ে। কিন্তু থেমে যাননি তিনি। সেই অদম্য প্রতিবাদী কন্যার নাম ফুলপরী খাতুন।

জানা যায়, ঘটনাটি ছিল ছাত্রলীগ নেত্রীর অনুমতি নেয়া কে কেন্দ্র করে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবাসিক হলে ফুলপরী ওঠেন এক পরিচিত বড় বোনের সিটে। বিষয়টি জানতে পেরে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ আরও ৭-৮ জন জড়িত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

তবে এ ঘটনায় চুপসে যাননি তিনি। বাবার সাহস আর পরিবারের সহযোগিতায় আবারো ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে। প্রতিবাদমুখর হয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ দেন তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফুলপরী বলেন, বাবা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। তিনি হয়তো খুব ক্ষুদ্র পেশার মানুষ কিন্তু সে সৎ ও নিষ্ঠাবান।

আমাদেরকে শিখিয়েছেন অন্যায়ের সঙ্গে আপোস না করতে। এমনকি তিনি আজীবন এভাবেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করবো না। আমি আমার সাধ্যমত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো।

তার এ সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের নানা মানুষ। তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিবাদী হতে যে মানসিকতা বা সাহস থাকা দরকার ফুলপরী সেটা দেখিয়েছে। আর প্রতিবাদ করলে যে হাজারো মানুষ তার পাশে দাঁড়াতে পারে, তারও উদাহরণ ফুলপরীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান বলেন, আমরা যখন রাজনীতি করতাম শিক্ষার্থীদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়। কিন্তু এখন হচ্ছে জবরদস্তিমূলক সংগঠন। জাতীয়ভাবে এর পরিবর্তন না হলে, এই ধরনের মানসিকতা পরিবর্তন কঠিন। তবে ফুলপরী যে প্রতিবাদ করেছে, সে সমাজের তথা রাজনীতির অসহিষ্ণু অবস্থা তুলে ধরেছে। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যালামনাইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জাকারিয়া হায়দার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বসহ নানা বিষয়ে প্রতিবাদ করেছি। কারণ প্রতিবাদই হতে পারে মুক্তির পথ। এর জন্য আমরাও বিভিন্ন সময় হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কিন্তু সমাজের যেকোন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানো উচিত। ফুলপরী সেটি করে দেখিয়েছে।

ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, আমার মেয়ে বাড়ি এসে আমার কাছে ঘটনা বলল। তখন ভেবেছি আজ আমার মেয়ের ওপর হয়েছে, সামনে আরও হাজার হাজার মেয়ের ওপর হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি আমরা, যাতে অন্যায় প্রশ্রয় না পায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার ও কঠিন শাস্তি চাই। আমার মেয়ের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে তা যেন অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে না ঘটে।

সেদিন রাতের ঘটনা উল্লেখ করে ফুলপরী বলেন, অন্তরা আপু, তাবাসসুম, উর্মি, মিম, মুয়াবিয়াসহ ৭-৮ জন আপু উপস্থিত ছিল। তারা নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আপুরা হুমকি দিয়ে বলছিল, ‘এসব বাইরে বললে একেবারে মেরে ফেলবো। তোকে উলঙ্গ করে এখান থেকে বের করে দেব। এই কথা বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করে দেব।’

তারা আমাকে নির্যাতন করে আনন্দ পাচ্ছিল, হাসাহাসি করছিল। তারা এতটাই মজা পাচ্ছিলেন যে রাত পার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই এমন নির্যাতনের পর অনেকেই ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। কিন্তু ওই হলের কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি।

ফুলপরী আরও বলেন, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা তো আর ফিরে আসবে না। তবে অভিযুক্তদের এমন শাস্তি হোক যেন আর কেউ এমন কিছু করার সাহস না দেখায়। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আর আমি ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। নিয়মিত ক্লাস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে চাই। আগের থেকে আরও বেশি পড়াশোনা করে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।

কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। ফুলপরীও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হতে ক্লান্ত অনেকটা। তবু তার চোখে মুখে কিছুটা তৃপ্তির পাশাপাশি সন্ধিহান দৃষ্টি। সে দৃষ্টি যেনো বলে উঠছে, আসলেই কি আমি বিচার পাবো? স্বাভাবিক ভাবে পড়াশোনা করে স্বপ্ন যাত্রায় অংশ নিতে পারবো কি?

এ প্রশ্নের জবাব কেবলই মিলতে পারে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে।

প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আজগর হোসেন তুহিন। তখন তাদের লিখিত আবেদন দিতে বলেন আদালত। সে অনুসারে তারা জনস্বার্থে রিট করেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি শেষে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।

এরই মাঝে গত শনিবার, সোমবার ও বুধবার ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তদের তদন্ত সাক্ষাৎকার সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, মহিলা পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, সাদা দল, জিয়া পরিষদ থেকে প্রতিবাদলিপি, মানববন্ধনসহ সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

back to top