alt

ঢাকা শহরে ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাজধানীবাসীকে নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদ রাখার মাধ্যমে পুলিশকে ছিনতাই প্রতিরোধে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এসব সম্পদ নিজে নিরাপদ রাখতে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা কমেছে।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত বুধবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সভায় তিনি রাজধানী ঢাকার মধ্যে বেড়ে যাওয়া ছিনতাইয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তার প্রতিরোধে ডিএমপির নেয়া পদক্ষেপের বিবরণ দেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, "আমরা আপনাদের সাহায্য করব। কিন্তু আপনারা নিজের মোবাইল, পার্স এবং ব্যাগ নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি এসব বিষয়ে সচেতন হন, তাহলে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।" এর মাধ্যমে তিনি জনগণকে তাদের ব্যক্তিগত সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং পুলিশকে ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাজ্জাত আলী ছিনতাইয়ের মূল কারণ হিসেবে মাদকাসক্তির প্রতি নজর দেন। তিনি বলেন, “ইদানীং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, তা হলো ছিনতাই। এই অপরাধে জড়িত অধিকাংশই মাদকাসক্ত অল্প বয়সী ছেলেরা। ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সী ছেলেরা মাদকে আসক্ত হয়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ছিনতাইয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা।” ডিএমপি কমিশনার জানান, "বাসে বা প্রাইভেটকারে কেউ যখন মোবাইলে কথা বলেন, তখন ছিনতাইকারী তার মোবাইল নিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের হাতেনাতে ধরা অনেক কঠিন কাজ, কারণ তারা সাধারণত খালি পায়ে বা সস্তা জুতো পরে থাকে, এবং তাদের দ্রুত পালানোর ক্ষমতা থাকে।"

সাজ্জাত আলী ঢাকাবাসীকে আরও বলেন, “আমরা দুঃখিত, কিন্তু আমাদের অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট পরা, ইউনিফর্ম পরা থাকে। কিন্তু ছিনতাইকারীরা অনেক দ্রুত দৌড়ে পালাতে পারে।” তাই তিনি ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করেন, তারা যেন নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদে রাখার জন্য সচেতন থাকেন।

ছিনতাই প্রতিরোধে গত এক সপ্তাহে পুলিশ পেট্রলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করেছে। ডিএমপি কমিশনার জানান, গত এক সপ্তাহে ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে এবং আশা করা হচ্ছে, পুলিশ আরও কার্যকরভাবে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এর আগে ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় ছিনতাই প্রতিরোধে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করে ডিএমপি। অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ছিনতাইয়ের প্রবণতা না কমা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী ঢাকায় মানুষের সমস্যা ও বেকারত্বের কথা তুলে ধরেন এবং এই পরিস্থিতি পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “ঢাকায় দুই থেকে আড়াই কোটি লোক বাস করছে, এর মধ্যে হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বেশি। বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে নানা সামাজিক সমস্যা পুলিশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইদানীং ছোটখাটো দাবি আদায়ের জন্য কিছু গোষ্ঠী রাজপথে আন্দোলন শুরু করছে। তারা মনে করে, রাজপথ দখল করলে তাদের দাবিদাওয়া দ্রুত আদায় হবে, কিন্তু এর ফলে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ছে।”

ঢাকার প্রধান সড়কগুলো যেমন মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড এবং রামপুরা রোডের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হলে পুরো শহর অচল হয়ে যায়।” এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায় এবং পুলিশের জন্যও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এ সময় ডিএমপি কমিশনার ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন আন্দোলন ও দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকে নয়, বরং খোলা মাঠ বা অডিটোরিয়াম ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “দাবির বিষয়ে সমস্যা সমাধান করতে হলে, সুষ্ঠু আলোচনা প্রয়োজন, যাতে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও ভঙ্গুর না করে ফেলি।”

ডিএমপির সদস্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের পুলিশ সদস্যদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, যাতে তারা আরও দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।” বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ সদস্যদের একযোগভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়ে দেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকাবাসী পুলিশকর্মীদের নৈতিক মনোবল ভেঙে পড়ার বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। তিনি বলেন, “যখন পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকে, তখন তার ফলাফল কী হয়, তা ঢাকাবাসী মর্মে মর্মে বুঝেছে। আমরা আপনাদের সেবা দিতে চাই, কিন্তু ডিএমপি আপনাদের সহায়তা ছাড়া কাজ করতে পারবে না।”

তিনি ঢাকাবাসীকে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আপনারা আমাদের সেবা দেবেন এবং আমরা সবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে কাজ করবো। একসাথে কাজ করলে আমরা অবশ্যই ভালো থাকতে পারবো।”

এছাড়া, তিনি শহরের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নতি অর্জনের আশা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা সীমিত সংখ্যক পুলিশ নিয়ে কাজ করছি, তবে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই সফল হবো।”

এভাবে ডিএমপি কমিশনার একদিকে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে জনগণের সচেতনতা এবং সহায়তার গুরুত্বও ব্যাখ্যা করেছেন, যা ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়ক হবে।

ছবি

সাতরাস্তা মোড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, যান চলাচল স্থবির

ছবি

স্বতন্ত্র কাঠামোর দাবিতে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

ছবি

যমুনা অভিমুখী বেসরকারি শিক্ষকদের পিটিয়ে সরাল পুলিশ

ছবি

আশুলিয়ায় একই পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

ধানমন্ডিতে ১২ সাবেক সচিব-অধিকর্তাকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিলের পর দুদকে তলব

ছবি

কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলি: অভিযোগ গঠনের আদেশ মঙ্গলবার

ছবি

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করেছেন ২২ বিশিষ্ট নাগরিক

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: রাজধানীতে বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক

ছবি

চেক জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা

ছবি

চানখাঁরপুলে গুলিতে নিহত আনাসের রক্তে ভেসে গিয়েছিল শরীর: ট্রাইব্যুনালে মায়ের সাক্ষ্য

ছবি

ডিএসসিসিতে কোটি টাকার জ্বালানি খরচের ‘অনিয়ম’, দুদকের অভিযান

ছবি

মালিবাগে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার হামলায় আরও দুজন গ্রেপ্তার

ছবি

সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ও মালিকের বাসায় হামলার মামলায় এক আসামি রিমান্ডে, আরেকজন কারাগারে

ছবি

সংস্কারে আরো দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে ‘চাঁদপুর ইলিশ চত্বর’

ছবি

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক র‌্যালি

ছবি

আদাবরে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে গিয়ে পুলিশের গাড়িচালককে কুপিয়ে জখম

ছবি

৩৮ লাখ টাকার অভিযোগে ঢাকার সহকারী কর কমিশনার মিতু সাময়িক বরখাস্ত

ছবি

একাধিক অভিযোগে বরখাস্ত হল চিকিৎসক ফাতেমা দোজা

ছবি

ডিআরইউ আলোচনায় হামলার শিকার অধ্যাপক কার্জনের জামিন নামঞ্জুর

ছবি

সহকারী শিক্ষকদের আল্টিমেটাম :  ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পদক্ষেপ না নিলে আমরণ অনশন

ছবি

কাকরাইলে জাপা কার্যালয়ের সামনে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত কয়েকজন

ছবি

আগারগাঁও অবরোধে শেকৃবি শিক্ষার্থীরা, তিন দফা দাবিতে দুর্ভোগে যাত্রীরা

ছবি

ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশের পর শাহবাগ ছাড়লেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা

ছবি

কাকরাইলে আন্দোলনকারী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

ছবি

বুয়েট উপাচার্যের ক্ষোভ: শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ গ্রহণযোগ্য নয়

ছবি

শাহবাগে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অবস্থান, পুলিশের হামলার বিরুদ্ধে পাঁচ দফা দাবি

ছবি

বিআইপি অভিযোগ: রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় আবাসন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করছে

ছবি

হিজাব বিতর্কে শিক্ষক বরখাস্ত, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিকারুননিসা নূন স্কুলে

ছবি

যমুনামুখী হতে চাইলে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ছবি

শাহবাগে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অবরোধ, তীব্র যানজট

ছবি

ঢাকায় ৮ কেজি কোকেনসহ গায়ানার নাগরিক গ্রেপ্তার

ছবি

শাহবাগ মোড়ে প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, তিন দাবিতে সড়ক অবরোধ

ছবি

রাজধানীতে সমাবেশের জন্য ডিএমপির চিহ্নিত ৯১ বিকল্প স্থান

ছবি

সহপাঠীকে মারধরের অভিযোগে বিক্ষুব্ধ বুয়েট শিক্ষার্থীদের যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা

ছবি

জুলাই আন্দোলনে চোখের ক্ষতির শিকারদের চিত্র ট্রাইব্যুনালে

ছবি

রামপুরার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা : ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ চারজন পলাতক আসামিকে আত্মসমর্পণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

tab

ঢাকা শহরে ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাজধানীবাসীকে নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদ রাখার মাধ্যমে পুলিশকে ছিনতাই প্রতিরোধে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এসব সম্পদ নিজে নিরাপদ রাখতে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা কমেছে।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত বুধবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সভায় তিনি রাজধানী ঢাকার মধ্যে বেড়ে যাওয়া ছিনতাইয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তার প্রতিরোধে ডিএমপির নেয়া পদক্ষেপের বিবরণ দেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, "আমরা আপনাদের সাহায্য করব। কিন্তু আপনারা নিজের মোবাইল, পার্স এবং ব্যাগ নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি এসব বিষয়ে সচেতন হন, তাহলে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।" এর মাধ্যমে তিনি জনগণকে তাদের ব্যক্তিগত সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং পুলিশকে ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাজ্জাত আলী ছিনতাইয়ের মূল কারণ হিসেবে মাদকাসক্তির প্রতি নজর দেন। তিনি বলেন, “ইদানীং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, তা হলো ছিনতাই। এই অপরাধে জড়িত অধিকাংশই মাদকাসক্ত অল্প বয়সী ছেলেরা। ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সী ছেলেরা মাদকে আসক্ত হয়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ছিনতাইয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা।” ডিএমপি কমিশনার জানান, "বাসে বা প্রাইভেটকারে কেউ যখন মোবাইলে কথা বলেন, তখন ছিনতাইকারী তার মোবাইল নিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের হাতেনাতে ধরা অনেক কঠিন কাজ, কারণ তারা সাধারণত খালি পায়ে বা সস্তা জুতো পরে থাকে, এবং তাদের দ্রুত পালানোর ক্ষমতা থাকে।"

সাজ্জাত আলী ঢাকাবাসীকে আরও বলেন, “আমরা দুঃখিত, কিন্তু আমাদের অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট পরা, ইউনিফর্ম পরা থাকে। কিন্তু ছিনতাইকারীরা অনেক দ্রুত দৌড়ে পালাতে পারে।” তাই তিনি ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করেন, তারা যেন নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদে রাখার জন্য সচেতন থাকেন।

ছিনতাই প্রতিরোধে গত এক সপ্তাহে পুলিশ পেট্রলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করেছে। ডিএমপি কমিশনার জানান, গত এক সপ্তাহে ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে এবং আশা করা হচ্ছে, পুলিশ আরও কার্যকরভাবে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এর আগে ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় ছিনতাই প্রতিরোধে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করে ডিএমপি। অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ছিনতাইয়ের প্রবণতা না কমা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী ঢাকায় মানুষের সমস্যা ও বেকারত্বের কথা তুলে ধরেন এবং এই পরিস্থিতি পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “ঢাকায় দুই থেকে আড়াই কোটি লোক বাস করছে, এর মধ্যে হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বেশি। বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে নানা সামাজিক সমস্যা পুলিশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইদানীং ছোটখাটো দাবি আদায়ের জন্য কিছু গোষ্ঠী রাজপথে আন্দোলন শুরু করছে। তারা মনে করে, রাজপথ দখল করলে তাদের দাবিদাওয়া দ্রুত আদায় হবে, কিন্তু এর ফলে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ছে।”

ঢাকার প্রধান সড়কগুলো যেমন মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড এবং রামপুরা রোডের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হলে পুরো শহর অচল হয়ে যায়।” এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায় এবং পুলিশের জন্যও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এ সময় ডিএমপি কমিশনার ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন আন্দোলন ও দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকে নয়, বরং খোলা মাঠ বা অডিটোরিয়াম ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “দাবির বিষয়ে সমস্যা সমাধান করতে হলে, সুষ্ঠু আলোচনা প্রয়োজন, যাতে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও ভঙ্গুর না করে ফেলি।”

ডিএমপির সদস্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের পুলিশ সদস্যদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, যাতে তারা আরও দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।” বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ সদস্যদের একযোগভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়ে দেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকাবাসী পুলিশকর্মীদের নৈতিক মনোবল ভেঙে পড়ার বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। তিনি বলেন, “যখন পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকে, তখন তার ফলাফল কী হয়, তা ঢাকাবাসী মর্মে মর্মে বুঝেছে। আমরা আপনাদের সেবা দিতে চাই, কিন্তু ডিএমপি আপনাদের সহায়তা ছাড়া কাজ করতে পারবে না।”

তিনি ঢাকাবাসীকে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আপনারা আমাদের সেবা দেবেন এবং আমরা সবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে কাজ করবো। একসাথে কাজ করলে আমরা অবশ্যই ভালো থাকতে পারবো।”

এছাড়া, তিনি শহরের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নতি অর্জনের আশা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা সীমিত সংখ্যক পুলিশ নিয়ে কাজ করছি, তবে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই সফল হবো।”

এভাবে ডিএমপি কমিশনার একদিকে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে জনগণের সচেতনতা এবং সহায়তার গুরুত্বও ব্যাখ্যা করেছেন, যা ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়ক হবে।

back to top