ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ঢাকার একটি ফ্ল্যাট ও ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জানান, হারুনের নামে থাকা তিনটি প্লট ঢাকার উত্তরায় এবং ১ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে হারুন অর রশীদ দেশে-বিদেশে ‘শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুদক জানায়, অনুসন্ধান চলাকালে হারুন এসব সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যা তদন্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে তার এসব সম্পদ জব্দের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন একই আদালত।
একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি তার ভাই এ বি এম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর হারুন, তার স্ত্রী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
হারুনের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার ৮০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী শিরিন আক্তারকে আসামি করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
শিরিন আক্তার প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের পরিচালক, যিনি ২০০৭ সাল থেকে সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
আরেক মামলায় হারুনের ছোট ভাই এবিএম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট থেকে হারুনের অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
২৪ অক্টোবর হারুনসহ তার স্ত্রী, শ্বশুরসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সংস্থাটি।
হারুন ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
এ ছাড়া হারুন ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানা কারণে আলোচিত হারুনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অর্ধ-শতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও জেদ্দাসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল সম্পদের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন।
গণআন্দোলনের চার দিন আগে, গত ৩১ জুলাই তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) করা হয়।
সরকার পতনের পর থেকে তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
ডিবিতে দায়িত্বকালীন সময়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে খাওয়ানোর ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করে আলোচনায় আসেন তিনি।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ডিবি কার্যালয়ে এনে কয়েকদিন রাখেন এবং আপ্যায়নের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
২০১১ সালে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে পেটানোর ঘটনায় আলোচিত হন তিনি।
পরে ডিএমপির লালবাগে দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন।
২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
এরপর তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বকালে হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদে প্রশংসা কুড়ালেও প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে আলোচনায় আসেন।
২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের স্ত্রী-সন্তান আটক করে আলোচনায় আসেন।
পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়।
ডিআইজি পদে পদোন্নতির পর ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ডিবির প্রধান হন হারুন। এর আগে তিনি ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ঢাকার একটি ফ্ল্যাট ও ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জানান, হারুনের নামে থাকা তিনটি প্লট ঢাকার উত্তরায় এবং ১ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে হারুন অর রশীদ দেশে-বিদেশে ‘শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুদক জানায়, অনুসন্ধান চলাকালে হারুন এসব সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যা তদন্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে তার এসব সম্পদ জব্দের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন একই আদালত।
একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি তার ভাই এ বি এম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর হারুন, তার স্ত্রী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
হারুনের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার ৮০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী শিরিন আক্তারকে আসামি করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
শিরিন আক্তার প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের পরিচালক, যিনি ২০০৭ সাল থেকে সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
আরেক মামলায় হারুনের ছোট ভাই এবিএম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট থেকে হারুনের অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
২৪ অক্টোবর হারুনসহ তার স্ত্রী, শ্বশুরসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সংস্থাটি।
হারুন ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
এ ছাড়া হারুন ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানা কারণে আলোচিত হারুনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অর্ধ-শতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও জেদ্দাসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল সম্পদের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন।
গণআন্দোলনের চার দিন আগে, গত ৩১ জুলাই তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) করা হয়।
সরকার পতনের পর থেকে তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
ডিবিতে দায়িত্বকালীন সময়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে খাওয়ানোর ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করে আলোচনায় আসেন তিনি।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ডিবি কার্যালয়ে এনে কয়েকদিন রাখেন এবং আপ্যায়নের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
২০১১ সালে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে পেটানোর ঘটনায় আলোচিত হন তিনি।
পরে ডিএমপির লালবাগে দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন।
২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
এরপর তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বকালে হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদে প্রশংসা কুড়ালেও প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে আলোচনায় আসেন।
২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজের স্ত্রী-সন্তান আটক করে আলোচনায় আসেন।
পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়।
ডিআইজি পদে পদোন্নতির পর ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ডিবির প্রধান হন হারুন। এর আগে তিনি ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।