‘আপন ঘর’ এর মশলা ৩৫ বছর ধরে ব্যবহার করছেন ফারহানা খন্দকার। যখন ঢাকায় ছিলেন তখন তো করতেনই। এখন কানাডায় থাকেন। ঢাকা থেকে পরিচিত কেউ কানাডা গেলে তার একটাই চাহিদা, তা হলো আপন ঘরের মশলা। ‘আপন ঘর’ এর স্বত্বাধিকারী মুনিরা সুলতানা বললেন, ‘আমার ভালো লাগা, আমার অর্জন এইটাই। এত বছর একজন ক্লায়েন্ট আমাকে মনে রেখেছে, আমার প্রডাক্ট (পণ্য) ব্যবহার করছে, এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।’
গত শতকের নয়ের দশকে প্রথম যে দুই তিনজন নারী উদ্যোক্তা প্রথা ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন, নিজেদের পরিচিত করেছেন নতুনভাবে তাদের একজন মুনিরা সুলতানা। পরিবারের পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্তে¡ও কিছুটা ভয় কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শুরু করেছিলেন ‘আপন ঘর’ এর যাত্রা। নতুন ভাবনা, নতুন চেতনায় এক নতুন মুনিরার জন্ম হয় পার্লার দিয়ে।
৬১তে পা দেয়া মুনিরা জানান, লেখাপড়া শেষ করে ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছিল না। আবার ছোট ছোট তিন বাচ্চাকে রেখে চাকরি করবেন তাতেও মন সায় দিচ্ছিল না। কী করা যায়, পাশাপাশি মেয়েদের জন্য কী করা যায় এসব নিয়ে যখন এলোমেলো চিন্তা করছেন, তখন তার চিন্তাকে সহজ করে দেন তার স্বামী বাটা শু কোম্পানির চিফ ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী খান।
সাজগোজ থেকে শুরু করে রান্না-বান্না, ঘর সাজানো ইত্যাদি বিষয়ে মুনিরা অন্যদের থেকে কিছুটা যে আলাদা তা খেয়াল করে শওকত আলী বলেন, ‘তুমি যে কাজ করে আনন্দ পাও, সেই কাজ করো। তুমি মেয়েদেরকে সাজগোজ শেখাও। রান্না শেখাও। এসবের জন্য বাসার বাইরে যেতে হবে না। বাচ্চাদের দেখাশোনা করেও এসব করতে পারবে। আর এতে করে তুমি আরও শিখতে পারবে, শেখাতে পারবে।’
ব্যাস, স্বামীর অভয় ও সাহসে সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্ক থেকে বিউটিফিকেশন বা পার্লারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন মুনিরা। ‘আপন ঘর’ নাম দিয়ে শুরু করেন পার্লার। পার্লার দিতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন বাসা ভাড়া নিয়ে। কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না।
একেতো নারী, তার ওপর নতুন ব্যবসা, বাসা ভাড়া ঠিকমতো দেবেন কিনা বাড়িওয়ালাদের এমন নানা প্রশ্ন ও শঙ্কাই ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই সমস্যাও কেটে যায় এক সময়। সেই যে ১৯৯০ এ শুরু করেছেন আজও চলছে ‘আপন ঘর’, আপন গতিতে।
পার্লারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন নাস্তা বানানো শুরু করলেন। বিশেষ করে কেক বানাতেন অনেক। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গেলে কেক নিয়ে যেতেন। সবার প্রশংসা তাকে উৎসাহিত করতো আরও ভালো করে বানানোর জন্য। বন্ধুরা একটা ফ্রি নিলে একটার টাকা দিত।
‘এভাবে ধীরে ধীরে কেকের অর্ডার নেয়া শুরু করলাম। এবং অন্য খাবারেরও অর্ডার আসতে শুরু করে। ঘরে বসে বাচ্চা সামলে এ কাজগুলো করতে খুব ভালো লাগতো। একদিকে আমার হাতে তৈরি খাবার সবাই পছন্দ করে খাচ্ছে, অন্যদিকে আমার হাতেও কিছু টাকা পয়সা আসছে, তারচেয়েও বড়ো যে বিষয়টা ভালো লাগতো তা হলো- আমার সঙ্গে কাজ করে অনেক মেয়ে স্বাবলম্বী হতে পারছে,’ বলছিলেন মুনিরা।
এখন তো ইউটিউব থেকে সব কিছু জানা বা শেখা যায় তাহলে কেন তার কাছে কেউ আসবে এমন প্রশ্নে মুনিরা বলেন, ‘হাতেকলমে শেখা আর ভিডিও দেখে শেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। যেকোন জিনিসের বেসিক জানতে হয় খুব ভালো করে। ভিডিও দেখে যদি সব শেখা যেত তবে লাখ টাকা কোর্স ফি দিয়ে কেউ রান্না বা পার্লারের কাজ শিখতো না। বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যেত না। এখন তো অনেকই পার্লার দেয়, রান্নার কাজ করে কয়জন টিকে থাকতে পারে। কারণ তারা অস্থির। শিখতে চায় না। শিখতে হবে। চর্চা করতে হবে। আমার বেসিক ভালো ছিল বলে ৩৫ বছর ধরে আজও টিকে আছি বলবো ভালোভাবে টিকে আছি।’
কিছুদিন আগে চ্যানেল আই উদ্যেক্তা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেছে।
এবার বেকিং অ্যান্ড কুকিং এন্টারপ্রেনারস সম্মাননা দিতে চলেছে। কেমন লাগছে জানতে চাইলে মুনিরা বলেন, ‘নিজের স্যাটিসফেকশন (সন্তুষ্টি) বড় পুরস্কার, আমার সেই স্যাটিসফেকশন আছে। তবে পুরস্কার বা সম্মাননা এক ধরনের স্বীকৃতি। যা অনেক ভালা লাগায়, আরো দায়িত্বশীল হতে শেখায়। বেকিং অ্যান্ড কুকিং এন্টারপ্রেনারসের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। অন্যকে সম্মান দিলে সম্মান বাড়ে। ভালো লাগছে। আমাদের মনে রেখেছে। একসময় এতটা ব্যস্ত ছিলাম, কাজের মধ্যে ছিলাম, কারও সঙ্গে দু’দণ্ড বসে কথা বলার সময় ছিল না। এখন অনেকেই এই পেশায় আসছে ভালো করছে। এটা যেন আমাদের জয়।’
শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২
‘আপন ঘর’ এর মশলা ৩৫ বছর ধরে ব্যবহার করছেন ফারহানা খন্দকার। যখন ঢাকায় ছিলেন তখন তো করতেনই। এখন কানাডায় থাকেন। ঢাকা থেকে পরিচিত কেউ কানাডা গেলে তার একটাই চাহিদা, তা হলো আপন ঘরের মশলা। ‘আপন ঘর’ এর স্বত্বাধিকারী মুনিরা সুলতানা বললেন, ‘আমার ভালো লাগা, আমার অর্জন এইটাই। এত বছর একজন ক্লায়েন্ট আমাকে মনে রেখেছে, আমার প্রডাক্ট (পণ্য) ব্যবহার করছে, এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।’
গত শতকের নয়ের দশকে প্রথম যে দুই তিনজন নারী উদ্যোক্তা প্রথা ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন, নিজেদের পরিচিত করেছেন নতুনভাবে তাদের একজন মুনিরা সুলতানা। পরিবারের পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্তে¡ও কিছুটা ভয় কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শুরু করেছিলেন ‘আপন ঘর’ এর যাত্রা। নতুন ভাবনা, নতুন চেতনায় এক নতুন মুনিরার জন্ম হয় পার্লার দিয়ে।
৬১তে পা দেয়া মুনিরা জানান, লেখাপড়া শেষ করে ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছিল না। আবার ছোট ছোট তিন বাচ্চাকে রেখে চাকরি করবেন তাতেও মন সায় দিচ্ছিল না। কী করা যায়, পাশাপাশি মেয়েদের জন্য কী করা যায় এসব নিয়ে যখন এলোমেলো চিন্তা করছেন, তখন তার চিন্তাকে সহজ করে দেন তার স্বামী বাটা শু কোম্পানির চিফ ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী খান।
সাজগোজ থেকে শুরু করে রান্না-বান্না, ঘর সাজানো ইত্যাদি বিষয়ে মুনিরা অন্যদের থেকে কিছুটা যে আলাদা তা খেয়াল করে শওকত আলী বলেন, ‘তুমি যে কাজ করে আনন্দ পাও, সেই কাজ করো। তুমি মেয়েদেরকে সাজগোজ শেখাও। রান্না শেখাও। এসবের জন্য বাসার বাইরে যেতে হবে না। বাচ্চাদের দেখাশোনা করেও এসব করতে পারবে। আর এতে করে তুমি আরও শিখতে পারবে, শেখাতে পারবে।’
ব্যাস, স্বামীর অভয় ও সাহসে সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্ক থেকে বিউটিফিকেশন বা পার্লারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন মুনিরা। ‘আপন ঘর’ নাম দিয়ে শুরু করেন পার্লার। পার্লার দিতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন বাসা ভাড়া নিয়ে। কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না।
একেতো নারী, তার ওপর নতুন ব্যবসা, বাসা ভাড়া ঠিকমতো দেবেন কিনা বাড়িওয়ালাদের এমন নানা প্রশ্ন ও শঙ্কাই ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই সমস্যাও কেটে যায় এক সময়। সেই যে ১৯৯০ এ শুরু করেছেন আজও চলছে ‘আপন ঘর’, আপন গতিতে।
পার্লারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন নাস্তা বানানো শুরু করলেন। বিশেষ করে কেক বানাতেন অনেক। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গেলে কেক নিয়ে যেতেন। সবার প্রশংসা তাকে উৎসাহিত করতো আরও ভালো করে বানানোর জন্য। বন্ধুরা একটা ফ্রি নিলে একটার টাকা দিত।
‘এভাবে ধীরে ধীরে কেকের অর্ডার নেয়া শুরু করলাম। এবং অন্য খাবারেরও অর্ডার আসতে শুরু করে। ঘরে বসে বাচ্চা সামলে এ কাজগুলো করতে খুব ভালো লাগতো। একদিকে আমার হাতে তৈরি খাবার সবাই পছন্দ করে খাচ্ছে, অন্যদিকে আমার হাতেও কিছু টাকা পয়সা আসছে, তারচেয়েও বড়ো যে বিষয়টা ভালো লাগতো তা হলো- আমার সঙ্গে কাজ করে অনেক মেয়ে স্বাবলম্বী হতে পারছে,’ বলছিলেন মুনিরা।
এখন তো ইউটিউব থেকে সব কিছু জানা বা শেখা যায় তাহলে কেন তার কাছে কেউ আসবে এমন প্রশ্নে মুনিরা বলেন, ‘হাতেকলমে শেখা আর ভিডিও দেখে শেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। যেকোন জিনিসের বেসিক জানতে হয় খুব ভালো করে। ভিডিও দেখে যদি সব শেখা যেত তবে লাখ টাকা কোর্স ফি দিয়ে কেউ রান্না বা পার্লারের কাজ শিখতো না। বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যেত না। এখন তো অনেকই পার্লার দেয়, রান্নার কাজ করে কয়জন টিকে থাকতে পারে। কারণ তারা অস্থির। শিখতে চায় না। শিখতে হবে। চর্চা করতে হবে। আমার বেসিক ভালো ছিল বলে ৩৫ বছর ধরে আজও টিকে আছি বলবো ভালোভাবে টিকে আছি।’
কিছুদিন আগে চ্যানেল আই উদ্যেক্তা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেছে।
এবার বেকিং অ্যান্ড কুকিং এন্টারপ্রেনারস সম্মাননা দিতে চলেছে। কেমন লাগছে জানতে চাইলে মুনিরা বলেন, ‘নিজের স্যাটিসফেকশন (সন্তুষ্টি) বড় পুরস্কার, আমার সেই স্যাটিসফেকশন আছে। তবে পুরস্কার বা সম্মাননা এক ধরনের স্বীকৃতি। যা অনেক ভালা লাগায়, আরো দায়িত্বশীল হতে শেখায়। বেকিং অ্যান্ড কুকিং এন্টারপ্রেনারসের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। অন্যকে সম্মান দিলে সম্মান বাড়ে। ভালো লাগছে। আমাদের মনে রেখেছে। একসময় এতটা ব্যস্ত ছিলাম, কাজের মধ্যে ছিলাম, কারও সঙ্গে দু’দণ্ড বসে কথা বলার সময় ছিল না। এখন অনেকেই এই পেশায় আসছে ভালো করছে। এটা যেন আমাদের জয়।’