সমাজে ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষ প্রতিরোধে শিক্ষা, সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার জরুরী। কেবল আইন করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ঠেকানো যাবে না। সামাজিক সংহতি ও শান্তির জন্য বৈচিত্র্যকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধের প্রথম আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন গত ২০ জুন এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী অফিসের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জেন্ডার এক্টিভিস্ট নেওয়াজুল কবির এবং আর্টিকেল নাইনটিনের হিউম্যান রাইট অ্যাম্বাসেডর ফেলো মেছান হ্লা।
আর্টিকেল নাইনটিনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রুমকি ফারহানা অনুষ্ঠানে বিদ্বেষ প্রতিরোধ দিবসের উদ্দেশ্য ও করণীয় বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ওয়েবিনারে বাংলাদেশ ও নেপালের সাংবাদিক, শিক্ষক ও অধিকারকর্মীরা অংশ নেন।
হুমা খান বলেন, সমালোচনা কিংবা ভিন্নমত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নয়। তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রেখেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, প্রয়োজন ইতিবাচক কর্মপরিকল্পনা।
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বিদ্বেষ মোকাবেলায় শিক্ষার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈচিত্র্য সমাজের জন্য হুমকি নয়; বরং শক্তি – এই মানসিকতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশপাশি সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তির জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার এবং বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিয়মিত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
জেন্ডার এক্টিভিস্ট নেওয়াজুল কবির বলেন, ‘যৌন বৈচিত্রের মানুষের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ও আচরণের মূল কারণ সুশিক্ষার অভাব। বৈচিত্র্যকে সাদরে গ্রহণে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ইতিবাচক হতে হবে।। এছাড়া জেন্ডারভিত্তিক বিদ্বেষ-কুসংস্কার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে মূলধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্বেষমূলক আচরণের শিকার হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেছান হ্লা বলেন, ‘আমার স্কুলে একমাত্র আমিই আদিবাসী শিক্ষার্থী ছিলাম। ভাষা ও দৈহিক গড়নে অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ায় আমি সবসময়ই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও হয়রানির শিকার হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ। আদিবাসীরা ভিন্ন কেউ নয়, এই দেশেরই নাগরিক। তাই ঘৃণা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আমাদের প্রাপ্য নয়।’
অনুষ্ঠানে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সমাজে বৈষম্য বাড়ায় ও সহিংসতা উস্কে দেয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয়, জাতিগত ও যৌন বৈচিত্রের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষের শিকার। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের। এজন্য সরকারের সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরী। একইসঙ্গে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোকেও সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
সমাজে ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষ প্রতিরোধে শিক্ষা, সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার জরুরী। কেবল আইন করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ঠেকানো যাবে না। সামাজিক সংহতি ও শান্তির জন্য বৈচিত্র্যকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধের প্রথম আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন গত ২০ জুন এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী অফিসের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জেন্ডার এক্টিভিস্ট নেওয়াজুল কবির এবং আর্টিকেল নাইনটিনের হিউম্যান রাইট অ্যাম্বাসেডর ফেলো মেছান হ্লা।
আর্টিকেল নাইনটিনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রুমকি ফারহানা অনুষ্ঠানে বিদ্বেষ প্রতিরোধ দিবসের উদ্দেশ্য ও করণীয় বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ওয়েবিনারে বাংলাদেশ ও নেপালের সাংবাদিক, শিক্ষক ও অধিকারকর্মীরা অংশ নেন।
হুমা খান বলেন, সমালোচনা কিংবা ভিন্নমত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নয়। তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রেখেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, প্রয়োজন ইতিবাচক কর্মপরিকল্পনা।
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বিদ্বেষ মোকাবেলায় শিক্ষার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈচিত্র্য সমাজের জন্য হুমকি নয়; বরং শক্তি – এই মানসিকতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশপাশি সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তির জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার এবং বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিয়মিত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
জেন্ডার এক্টিভিস্ট নেওয়াজুল কবির বলেন, ‘যৌন বৈচিত্রের মানুষের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ও আচরণের মূল কারণ সুশিক্ষার অভাব। বৈচিত্র্যকে সাদরে গ্রহণে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ইতিবাচক হতে হবে।। এছাড়া জেন্ডারভিত্তিক বিদ্বেষ-কুসংস্কার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে মূলধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্বেষমূলক আচরণের শিকার হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেছান হ্লা বলেন, ‘আমার স্কুলে একমাত্র আমিই আদিবাসী শিক্ষার্থী ছিলাম। ভাষা ও দৈহিক গড়নে অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ায় আমি সবসময়ই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও হয়রানির শিকার হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ। আদিবাসীরা ভিন্ন কেউ নয়, এই দেশেরই নাগরিক। তাই ঘৃণা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আমাদের প্রাপ্য নয়।’
অনুষ্ঠানে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সমাজে বৈষম্য বাড়ায় ও সহিংসতা উস্কে দেয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয়, জাতিগত ও যৌন বৈচিত্রের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষের শিকার। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের। এজন্য সরকারের সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরী। একইসঙ্গে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোকেও সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।