alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে

জাল মৃত্যু সনদসহ নানা অভিযোগ : ডিবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ‘রাজধানীর মিরপুর থেকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে আটক করে বলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর রশিদ এতথ্য জানিয়েছেন।

ডিবি প্রধান জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে এনে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ডিবি জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ উঠে আসে। এতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। এই অর্থের অপব্যবহার করেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বহুল আলোচিত ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে মানব পাচারের ও আরেকটি মামলা হয়েছে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ‘জাল সনদ’ তৈরির অভিযোগে। এছাড়া তিন নম্বর মামলায় তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বুধবার রাতে মানব পাচারের অভিযোগে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ প্রথম মামলাটি করেছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা এক বাসিন্দা। বাকি দুটি মামলা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে জাল মৃত্যু সনদ তৈরির’ অভিযোগে মামলা করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মো. কামাল পাশা। আর ‘অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেয়ার’ অভিযোগের মামলার বাদী মিরপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান।

মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমকে এসব মামলার তথ্য জানান। ওসি বলেন, দুটি মামলায় আসামি শুধু মিল্টন সমাদ্দার। আরেকটি মামলায় মিল্টনের পাশাপাশি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের ম্যানেজারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া একটি মামলায় ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে কিশোর বালা পলাতক রয়েছেন।

বুধবার রাতে মিল্টনকে গ্রেপ্তারের পরে রাতেই এ বিষয়ে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ। মিল্টনের বিরুদ্বে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে দুই বছরের এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তখন শেরেবাংলা নগর থানায় বিষয়টি জানান। কিন্তু থানাপুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফোন করলে মিল্টন সমাদ্দার ওই শিশুকে সেখান থেকে নিয়ে যান। বাদী এজাহারে বলেছেন যে, তিনি অভিভাবক হয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে ১০ হাজার টাকা দেন এবং শিশুটিকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ভর্তি করান। এরপর মিল্টন সমাদ্দার জানান, আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে দত্তক নেয়া যাবে। এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের কোনো একদিন মিল্টন ফোন করে তাকে জানান, আমি যেন ওই প্রতিষ্ঠানে আর না যাই এবং শিশুটির খোঁজ খবর না নেই। এরপর আরও বেশ কয়েকজন ফোন করে আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। প্রাণভয়ে আমি আর সেখানে যাইনি।

সম্প্রতি একটি খবর চোখে আসার পর ২৪ এপ্রিল চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে যাই। কিন্তু শিশুটিকে সেখানে পাওয়া যায়নি। শিশুটি কোথায় আছে, সে ব্যাপারেও তাদের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বাদীর অভিযোগ, ২০২১ সালের যেকোনো সময় শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে।

জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ‘মৃত্যু সনদ’ তৈরির অভিযোগে দ্বিতীয় মামলায় বাদী গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত এসআই কামাল পাশা। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মিল্টন নিজেই মৃত্যু সনদ দিতেন। এমন তথ্য পেয়ে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালালে সেখান থেকে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সিল উদ্ধার করা হয়। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যু সনদ তৈরি করতেন মিল্টন সমাদ্দার।

তৃতীয় মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে-২০২১ সালে মিরপুর মাজার রোডে রাত ১১টার দিকে এক বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফোন করেন তিনি। এরপর মিল্টনের লোকজন বৃদ্ধকে নিয়ে যায়। এরপর বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানে গেলে ওই বৃদ্ধকে আর পাওয়া যায়নি। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন তাকে মারধর করেন ও হত্যার হুমকি দেন এবং পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন।

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার অনলাইন-অফলাইনে একজন পরিচিত মুখ। অনলাইনে তার অনুসারী দেড় কোটির বেশি। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু করেন। ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিল্টন সমাদ্দার।

মিল্টনের ভাষ্য, মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। সেখানে আশ্রয়হীন বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেয়া হয়। সম্প্রতি সাভারে জমি কিনে আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য স্থায়ী নিবাস বানানো হয়েছে। সেটা নিয়েই একটি চক্র তার বিরোধিতা করছে। মিল্টন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে নিয়মিত প্রচারণা চালান। এ সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র দেন। ফেইসবুকে তাকে অনুসরণ করেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।

এর আগে মিরপুর থেকে মিল্টনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার রাতে ডিবিপ্রধান জানান, তার (মিল্টন) বিরুদ্ধে মানব পাচার, অবৈধভাবে মরদেহ দাফন, টর্চার সেল, আয়ের উৎসসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ-৯০০ মরদেহের ৮৩৫টির ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি মিল্টন।

ছবি

বিএনপির মামলায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দি রেকর্ড শুরু

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তিনটি হত্যা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ, আছেন সাবেক এসপিও

ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর, ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

রূপগঞ্জে মদ্যপ অবস্থায় অশোভন আচরণ, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি

নাইক্ষ্যংছড়িতে ইমাম হত্যা,৫ জনকে আসামী করে মামলা

ছবি

হত্যা মামলায় ইনু, কামাল, পলকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখালো আদালত

ছবি

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় প্রিন্স মামুনের বিচার শুরু

ছবি

ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দুদক চেয়ারম্যান, টিউলিপকে বাংলাদেশি নাগরিক বলেও মন্তব্য

ছবি

১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ, এস আলম গ্রুপ ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

‘ভোটের প্রতারণা’ অভিযোগে রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি নূরুল হুদার

ছবি

নগদের ১ কোটি টাকার ডাকাতি: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, উদ্ধার সাড়ে ৩২ লাখ

ছবি

স্বপ্না হত্যা: থানা থেকে সিআইডি, তবু রহস্য অজানা

ছবি

সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাল অপহরণ ও হত্যার আসামি

ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের সহায়তাকারী নিযুক্ত

ছবি

সবজি ব্যবসায়ী শাওন হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে, আনিসুল হক গ্রেপ্তার

মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

ছবি

কেরাণীগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

রংপুরের কাউনিয়ায় টিসিবির কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

ছবি

মানিলন্ডারিং তদন্ত: তিন সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

হাজিরা না দিলে অনুপস্থিতিতেই শেখ হাসিনার বিচার শুরু হবে: ট্রাইব্যুনাল

ছবি

যুক্তরাজ্যে বসুন্ধরা মালিকপক্ষসহ কয়েকজনের সম্পদ জব্দে উদ্যোগ: দুদক

ছবি

টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, তাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখছে দুদক

ছবি

লাশ টুকরো করে বালু চাপা: ব্যবসায়ী জাকির হত্যা মামলায় চার আসামি আদালতে, একজনের স্বীকারোক্তি

ছবি

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্যকে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান

অবশেষে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা

পীরগাছায় ইসলামিক রিলিফের গরুর মাংস বিতরণের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আটক-১

ছবি

রিমান্ড শেষে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন কারাগারে

ছবি

ই-মানি জালিয়াতিতে ‘নগদ’-এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অবমাননার মামলায় দুইজনের অনুপস্থিতি

পাঁচটি মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর

ছবি

ভাড়ার মোটরসাইকেলচালকের ধর্ষণের শিকার বিউটি পার্লারের কর্মী, কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল

কেরাণীগঞ্জে হত্যা করে মরদেহ ১০ টুকরো, দেবর-ভাবির মৃত্যুদণ্ড

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে

জাল মৃত্যু সনদসহ নানা অভিযোগ : ডিবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ‘রাজধানীর মিরপুর থেকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে আটক করে বলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর রশিদ এতথ্য জানিয়েছেন।

ডিবি প্রধান জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে এনে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ডিবি জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ উঠে আসে। এতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। এই অর্থের অপব্যবহার করেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বহুল আলোচিত ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে মানব পাচারের ও আরেকটি মামলা হয়েছে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ‘জাল সনদ’ তৈরির অভিযোগে। এছাড়া তিন নম্বর মামলায় তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বুধবার রাতে মানব পাচারের অভিযোগে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ প্রথম মামলাটি করেছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা এক বাসিন্দা। বাকি দুটি মামলা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে জাল মৃত্যু সনদ তৈরির’ অভিযোগে মামলা করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মো. কামাল পাশা। আর ‘অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেয়ার’ অভিযোগের মামলার বাদী মিরপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান।

মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমকে এসব মামলার তথ্য জানান। ওসি বলেন, দুটি মামলায় আসামি শুধু মিল্টন সমাদ্দার। আরেকটি মামলায় মিল্টনের পাশাপাশি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের ম্যানেজারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া একটি মামলায় ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে কিশোর বালা পলাতক রয়েছেন।

বুধবার রাতে মিল্টনকে গ্রেপ্তারের পরে রাতেই এ বিষয়ে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ। মিল্টনের বিরুদ্বে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে দুই বছরের এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তখন শেরেবাংলা নগর থানায় বিষয়টি জানান। কিন্তু থানাপুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফোন করলে মিল্টন সমাদ্দার ওই শিশুকে সেখান থেকে নিয়ে যান। বাদী এজাহারে বলেছেন যে, তিনি অভিভাবক হয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে ১০ হাজার টাকা দেন এবং শিশুটিকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ভর্তি করান। এরপর মিল্টন সমাদ্দার জানান, আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে দত্তক নেয়া যাবে। এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের কোনো একদিন মিল্টন ফোন করে তাকে জানান, আমি যেন ওই প্রতিষ্ঠানে আর না যাই এবং শিশুটির খোঁজ খবর না নেই। এরপর আরও বেশ কয়েকজন ফোন করে আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। প্রাণভয়ে আমি আর সেখানে যাইনি।

সম্প্রতি একটি খবর চোখে আসার পর ২৪ এপ্রিল চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে যাই। কিন্তু শিশুটিকে সেখানে পাওয়া যায়নি। শিশুটি কোথায় আছে, সে ব্যাপারেও তাদের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বাদীর অভিযোগ, ২০২১ সালের যেকোনো সময় শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে।

জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ‘মৃত্যু সনদ’ তৈরির অভিযোগে দ্বিতীয় মামলায় বাদী গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত এসআই কামাল পাশা। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মিল্টন নিজেই মৃত্যু সনদ দিতেন। এমন তথ্য পেয়ে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালালে সেখান থেকে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সিল উদ্ধার করা হয়। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যু সনদ তৈরি করতেন মিল্টন সমাদ্দার।

তৃতীয় মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে-২০২১ সালে মিরপুর মাজার রোডে রাত ১১টার দিকে এক বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফোন করেন তিনি। এরপর মিল্টনের লোকজন বৃদ্ধকে নিয়ে যায়। এরপর বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানে গেলে ওই বৃদ্ধকে আর পাওয়া যায়নি। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন তাকে মারধর করেন ও হত্যার হুমকি দেন এবং পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন।

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার অনলাইন-অফলাইনে একজন পরিচিত মুখ। অনলাইনে তার অনুসারী দেড় কোটির বেশি। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু করেন। ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিল্টন সমাদ্দার।

মিল্টনের ভাষ্য, মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। সেখানে আশ্রয়হীন বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেয়া হয়। সম্প্রতি সাভারে জমি কিনে আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য স্থায়ী নিবাস বানানো হয়েছে। সেটা নিয়েই একটি চক্র তার বিরোধিতা করছে। মিল্টন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে নিয়মিত প্রচারণা চালান। এ সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র দেন। ফেইসবুকে তাকে অনুসরণ করেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।

এর আগে মিরপুর থেকে মিল্টনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার রাতে ডিবিপ্রধান জানান, তার (মিল্টন) বিরুদ্ধে মানব পাচার, অবৈধভাবে মরদেহ দাফন, টর্চার সেল, আয়ের উৎসসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ-৯০০ মরদেহের ৮৩৫টির ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি মিল্টন।

back to top