# ‘খুনের বদলা খুন’ নীতিতে ধারাবাহিক হত্যাকান্ড!
যশোরের চৌগাছায় ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা হত্যাকান্ডের ২২ বছর পর সেই আসামিদের হাতে খুন হলেন তার আপন ভাই আনিসুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে তাকে কুপিয়ে জখমের পর বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। নিহত আনিসুর রহমান (৫৫) চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে ও নিহত ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা’র সেজো ভাই। হামলায় আনিসুরের ফুফাতো ভাই আব্দুস সালামও আহত হন। হতাহতরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
হামলাকারীরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং চেয়ারম্যান আশা হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া নিহত আনিসুর আশা হত্যা মামলার আরেক আসামি আতিয়ার হত্যাকা-ের আসামি ছিলেন। ২০১৫ সালে রাজনৈতিকভাবে আশা ও আতিয়ার হত্যা মামলা মীমাংসা করে নেওয়া হয়। আদালতে বিচার না হলেও ‘খুনের বদলা খুন’ এই নীতিতে ধারাবাহিক এসব হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নিহত আনিসুরের ছোটভাই আশিকুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আনিসুর রহমান ও তার ফুফাতো ভাই আব্দুস সালাম জগন্নাথপুর উত্তরপাড়া মোড়ে একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন। চা পান শেষে আনিসুর বাড়ির উদ্দেশ্যে দোকান থেকে বের হন। এসময় হঠাৎ সন্ত্রাসীরা তার উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আশা চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি বিএনপি সমর্থক লেন্টু, হাদি, আমিন ও কোরবানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী এই হামলা চালায়। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান ফুফাতো ভাই আব্দুস সালাম। সন্ত্রাসীরা তাকেও কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আনিসুর রহমানকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, নিহতের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
চৌগাছার থানায় ওসি’র চলতি দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক মেহেদি হাসান জানান, হামলার শিকার আনিসুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টার দিকে মারা গেছেন। পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চৌগাছার সিংহঝুলীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২০০২ সালের ২৪ জুলাই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন আশা। ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত লেন্টু ও হাদি। ২২ বছর পর তাদের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী মঙ্গলবার রাতে আনিসুরের উপর হামলা চালায়।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, চৌগাছার সিংহঝুলি ইউনিয়নে আশা চেয়ারম্যান হত্যাকা-ের পর ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খুন হন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু। দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। চেয়ারম্যান মিন্টু হত্যাকান্ডের তিনদিন আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর’১৩ রাতে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন যুবদল কর্মী আতিয়ার রহমান (৪৫)। আতিয়ার সিংহঝুলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আবার এই আতিয়ার হত্যা মামলায় আসামি হন আশার ভাই আনিসুর রহমান। এছাড়া উপজেলা বিএনপি নেতা ইউনুস দফাদার হত্যাপ্রচেষ্টা মামলায়ও আসামি হন এই আনিসুর। ফলে পাল্টাপাল্টি হত্যা ও হত্যাপ্রচেষ্টা মামলা নিয়ে ২০১৫ সালে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা হয়। এই মীমাংসায় আশা হত্যাকা- ও আতিয়ার হত্যা মামলার বিচার আদালতে সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু ‘স্বজন হারানোর বেদনা’ থেকে পাল্টাপাল্টি এবং ধারাবাহিক এসব হত্যাকা- ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ধারাবাহিক এসব হত্যাকা- একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত বলেও স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি।
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
# ‘খুনের বদলা খুন’ নীতিতে ধারাবাহিক হত্যাকান্ড!
যশোরের চৌগাছায় ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা হত্যাকান্ডের ২২ বছর পর সেই আসামিদের হাতে খুন হলেন তার আপন ভাই আনিসুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে তাকে কুপিয়ে জখমের পর বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। নিহত আনিসুর রহমান (৫৫) চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে ও নিহত ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা’র সেজো ভাই। হামলায় আনিসুরের ফুফাতো ভাই আব্দুস সালামও আহত হন। হতাহতরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
হামলাকারীরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং চেয়ারম্যান আশা হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া নিহত আনিসুর আশা হত্যা মামলার আরেক আসামি আতিয়ার হত্যাকা-ের আসামি ছিলেন। ২০১৫ সালে রাজনৈতিকভাবে আশা ও আতিয়ার হত্যা মামলা মীমাংসা করে নেওয়া হয়। আদালতে বিচার না হলেও ‘খুনের বদলা খুন’ এই নীতিতে ধারাবাহিক এসব হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নিহত আনিসুরের ছোটভাই আশিকুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আনিসুর রহমান ও তার ফুফাতো ভাই আব্দুস সালাম জগন্নাথপুর উত্তরপাড়া মোড়ে একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন। চা পান শেষে আনিসুর বাড়ির উদ্দেশ্যে দোকান থেকে বের হন। এসময় হঠাৎ সন্ত্রাসীরা তার উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আশা চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি বিএনপি সমর্থক লেন্টু, হাদি, আমিন ও কোরবানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী এই হামলা চালায়। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান ফুফাতো ভাই আব্দুস সালাম। সন্ত্রাসীরা তাকেও কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আনিসুর রহমানকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, নিহতের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
চৌগাছার থানায় ওসি’র চলতি দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক মেহেদি হাসান জানান, হামলার শিকার আনিসুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টার দিকে মারা গেছেন। পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চৌগাছার সিংহঝুলীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২০০২ সালের ২৪ জুলাই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন আশা। ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত লেন্টু ও হাদি। ২২ বছর পর তাদের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী মঙ্গলবার রাতে আনিসুরের উপর হামলা চালায়।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, চৌগাছার সিংহঝুলি ইউনিয়নে আশা চেয়ারম্যান হত্যাকা-ের পর ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খুন হন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু। দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। চেয়ারম্যান মিন্টু হত্যাকান্ডের তিনদিন আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর’১৩ রাতে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন যুবদল কর্মী আতিয়ার রহমান (৪৫)। আতিয়ার সিংহঝুলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন আশা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আবার এই আতিয়ার হত্যা মামলায় আসামি হন আশার ভাই আনিসুর রহমান। এছাড়া উপজেলা বিএনপি নেতা ইউনুস দফাদার হত্যাপ্রচেষ্টা মামলায়ও আসামি হন এই আনিসুর। ফলে পাল্টাপাল্টি হত্যা ও হত্যাপ্রচেষ্টা মামলা নিয়ে ২০১৫ সালে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা হয়। এই মীমাংসায় আশা হত্যাকা- ও আতিয়ার হত্যা মামলার বিচার আদালতে সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু ‘স্বজন হারানোর বেদনা’ থেকে পাল্টাপাল্টি এবং ধারাবাহিক এসব হত্যাকা- ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ধারাবাহিক এসব হত্যাকা- একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত বলেও স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি।