alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিকার, হুমকির মুখে সুন্দরবনে কাঁকড়ার বংশ বিস্তার

জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা : সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে কাঁকড়া ধরার ধুম -সংবাদ

শিলাসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়ার প্রজনন হয় সুন্দরবনে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে সুন্দরবনে জলজ এ প্রাণীটি শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে বাজারে চাহিদা থাকায় নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কাঁকড়া শিকারিরা।

প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া রক্ষা করতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো। তিনি বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস সুন্দরবনের নদী-খালে ডিম পাড়ে কাঁকড়া। সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। তাই কাঁকড়ার প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।

তবে প্রজনন মৌসুমে একটি চক্র নানা কৌশলে কাঁকড়া ধরছে। বন বিভাগের কার্যকর তৎপরতার অভাবে ওই চক্রটি কাঁকড়া ধরা অব্যাহত রেখেছে। এতে সাধারণ জেলেরা যেমন আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন তেমনি কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার আসল উদ্দেশ্যে হচ্ছে ব্যাহত। পাশাপাশি বংশবিস্তার ও সুন্দরবনের জলজ জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।

তারা বলছেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া রক্ষা করা না গেলে এর বংশবিস্তার লোপ পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে পুরো সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের উপর। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এ সম্পদ রপ্তানিতেও প্রভাব পড়বে।

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়েকটি উপজেলার কয়েকজন বনজীবী জেলে জানান, কাঁকড়ার ব্যবসা বেশ লাভজনক। যে কারণে প্রজনন মৌসুমেও কাঁকড়া ধরা বন্ধ হচ্ছে না সুন্দরবনে। অধিক লাভের আশায় একশ্রেণীর জেলে বন বিভাগের কাছ থেকে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে বনে ঢুকে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছেন।

প্রায় প্রতিদিনই সুন্দরবনের ভেতর থেকে কাঁকড়া ধরে নৌকায় করে লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়। তারপর তা সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার ঘড়িলাল, গোলখালি, আংটিহারা, কাটাকাট, দেউলিয়া এবং দাকোপ উপজেলার নলিয়ান, কালিনগর, কৈলাশগঞ্জ, রামনগর, বাজুয়া, চালনা ও পাইকগাছা বাজারে ডিপোতে বিক্রি করা হয়।খুলনার পাইকগাছার কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হীরামন ম-ল জানান, মূলত খুলনা অঞ্চলের কাঁকড়া চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি করা হয়। খুলনা অঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ টন কাঁকড়া প্রতিদিন ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে খুলনা থেকে পাঠানো হয় সাত টন, সাতক্ষীরা থেকে আট টন, ও বাগেরহাট থেকে ছয় টন।

২০০ গ্রাম ওজনের মাদী কাঁকড়া বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২,৫০০ টাকায় এবং ১৮০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রামের কম ওজনেরগুলো বিক্রি হয় ২,২০০ টাকা দরে। অন্যদিকে ৫০০ গ্রামেরও বেশি ওজনের পুরুষ কাঁকড়া কেজি প্রতি ১,৮০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বনজীবী জেলে জানান, সুন্দরবনের নদী-খালে জাল ফেললেই কাঁকড়া ওঠে। এগুলো চড়া দামে বিক্রিও করা যায়। একশ্রেণির ডিপো মালিক ও আড়তদারা কাঁকড়া শিকারিদের অগ্রিম টাকা দাদন দেন। তারাই সুন্দরবনের প্রভাবশালী কোম্পানি মহাজনদের সহায়তায় অসাধু বনরক্ষী ও কর্মকর্তাদের ঘুষের মাধ্যমে ‘ম্যানজ’ করে বনের নদী-খালে ঢুকে কাঁকড়া শিকারের সুযোগ করে দেন।

খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার কয়েকজন বনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কাঁকড়া ধরা বেশ সহজ এবং তা তেমন ব্যয়বহুলও নয়। যে কারণে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার গোনে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার এক শ্রেণীর জেলে বন বিভাগের কাছ থেকে মাছ ধরার অনুমতি নেন। তারপর তারা ‘নিষিদ্ধ’ মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় সরঞ্জাম নিয়ে সুন্দরবনের নদী-খালে নেমে পড়েন কাঁকড়া শিকারে।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু বনরক্ষী ও কর্মকর্তা কাঁকড়া শিকারিদের সহায়তা করেন। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ বা কাঁকড়ার দু-একটি চালান ধরা পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না শিকার। আবার যারা ধরা পড়ছেন তথ্য-প্রমাণের অভাবে তারাও সুন্দরবনের প্রভাবশালী কোম্পানি মহাজনদের সহায়তায় দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজে ফিরছেন।

খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। সুন্দরবনে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে জেলেসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি বনবিভাগের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপরও কেউ যদি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাঁকড়া আহরণ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য ফাঁস: তাজুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ

ছবি

ধানমন্ডিতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

হা-মীম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক হত্যায় দুই গ্রেপ্তার

ছবি

জি কে শামীমের সাড়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড, ২৯৭ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত

‘আওয়ামী লিগ’ নামে দল নিবন্ধনের আবেদন, একমাত্র সদস্য উজ্জল রায়

ছবি

টেস্ট ড্রাইভের নামে গাড়ি ছিনতাই, বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

ছবি

কেরাণীগঞ্জে কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যা, তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ, সাবেক চিফ হুইপের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানের সম্পদ ক্রোকের আদেশ

ছবি

অবৈধ সম্পদের মামলায় গাড়িচালক মালেকের ১৩ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

প্রাচীন মুদ্রার নামে প্রতারণা: চার ব্যক্তি গ্রেপ্তার

ছবি

ছিনতাইকারী সন্দেহে ধাওয়া, নদীতে ঝাঁপিয়ে বাঁচার চেষ্টা—গণপিটুনিতে নিহত ১

ছবি

গুলশানে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

ছবি

সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

ছবি

আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ: পুতুলের বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা

ছবি

বিশ্ব ইজতেমায় জঙ্গি হামলার মামলায় রিমান্ডে নাট্য ব্যক্তিত্ব এহসানুল বাবু

ছবি

দুদকের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ দাবি টিউলিপের

ব্যবসায়ী পরিচয়ে ৫ মাস নারায়ণগঞ্জে ছিলেন আরসা প্রধান

ছবি

খিলগাঁওয়ে সাত বছরের শিশু ধর্ষণ মামলায় গৃহশিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক-বাবরসহ ৪৯ জনের খালাস রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল

ছবি

পল্লবীতে দলবদ্ধ ধর্ষণ, ৯৯৯-এ ফোন করে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২

ছবি

পরিবেশে ভেজাল সেমাই তৈরী হচ্ছে ঃ কারখানায় অভিযানে ৩জন গ্রেপ্তার ও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা

ছবি

ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে টেলিকম জালিয়াতি বিটিআরসির ১২৬ কোটি টাকা ফাঁকির অভিযোগ

সিলেটে মোটরসাইকেল আরোহী খুন

ছবি

শেখ হাসিনার স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ,এসব হিসাবে আছে ৩৯৪ কোটি টাকা

সোনারগাঁয়ে এক রাতে দুই স্থানে ডাকাতি, নগদ টাকা স্বর্ণালংকার লুট

ছবি

দোহারে কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যুবকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সিলেটে প্রবাসী হত্যা: অভিযুক্তদের বসতঘরে আগুন

লালমনিরহাটে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

৩৮ লাখ টাকা ও ৭৭ হাজার জাল রুপি উদ্ধার ঃ নোট তৈরীর সঞ্জামসহ ২ জন গ্রেপ্তার-ডিবি

শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির ঘুষ বিতর্ক, আদালতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন

শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভা ডেকে ঘুষ নির্ধারণের ঘটনায় সভাপতি ও সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

মহাসড়কের সোনারগাঁয়ে ডিবি পরিচয়ে কোটি টাকা ডাকাতি, পুলিশ বলছে রহস্যজনক

শ্রীনগরে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে চাচীকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ,অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: প্রধান আসামির আদালতে জবানবন্দি

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিকার, হুমকির মুখে সুন্দরবনে কাঁকড়ার বংশ বিস্তার

জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা

সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে কাঁকড়া ধরার ধুম -সংবাদ

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শিলাসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়ার প্রজনন হয় সুন্দরবনে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে সুন্দরবনে জলজ এ প্রাণীটি শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে বাজারে চাহিদা থাকায় নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কাঁকড়া শিকারিরা।

প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া রক্ষা করতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো। তিনি বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস সুন্দরবনের নদী-খালে ডিম পাড়ে কাঁকড়া। সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। তাই কাঁকড়ার প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।

তবে প্রজনন মৌসুমে একটি চক্র নানা কৌশলে কাঁকড়া ধরছে। বন বিভাগের কার্যকর তৎপরতার অভাবে ওই চক্রটি কাঁকড়া ধরা অব্যাহত রেখেছে। এতে সাধারণ জেলেরা যেমন আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন তেমনি কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার আসল উদ্দেশ্যে হচ্ছে ব্যাহত। পাশাপাশি বংশবিস্তার ও সুন্দরবনের জলজ জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।

তারা বলছেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া রক্ষা করা না গেলে এর বংশবিস্তার লোপ পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে পুরো সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের উপর। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এ সম্পদ রপ্তানিতেও প্রভাব পড়বে।

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়েকটি উপজেলার কয়েকজন বনজীবী জেলে জানান, কাঁকড়ার ব্যবসা বেশ লাভজনক। যে কারণে প্রজনন মৌসুমেও কাঁকড়া ধরা বন্ধ হচ্ছে না সুন্দরবনে। অধিক লাভের আশায় একশ্রেণীর জেলে বন বিভাগের কাছ থেকে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে বনে ঢুকে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছেন।

প্রায় প্রতিদিনই সুন্দরবনের ভেতর থেকে কাঁকড়া ধরে নৌকায় করে লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়। তারপর তা সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার ঘড়িলাল, গোলখালি, আংটিহারা, কাটাকাট, দেউলিয়া এবং দাকোপ উপজেলার নলিয়ান, কালিনগর, কৈলাশগঞ্জ, রামনগর, বাজুয়া, চালনা ও পাইকগাছা বাজারে ডিপোতে বিক্রি করা হয়।খুলনার পাইকগাছার কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হীরামন ম-ল জানান, মূলত খুলনা অঞ্চলের কাঁকড়া চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি করা হয়। খুলনা অঞ্চল থেকে প্রায় ২৫ টন কাঁকড়া প্রতিদিন ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে খুলনা থেকে পাঠানো হয় সাত টন, সাতক্ষীরা থেকে আট টন, ও বাগেরহাট থেকে ছয় টন।

২০০ গ্রাম ওজনের মাদী কাঁকড়া বিক্রি হয় কেজি প্রতি ২,৫০০ টাকায় এবং ১৮০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রামের কম ওজনেরগুলো বিক্রি হয় ২,২০০ টাকা দরে। অন্যদিকে ৫০০ গ্রামেরও বেশি ওজনের পুরুষ কাঁকড়া কেজি প্রতি ১,৮০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বনজীবী জেলে জানান, সুন্দরবনের নদী-খালে জাল ফেললেই কাঁকড়া ওঠে। এগুলো চড়া দামে বিক্রিও করা যায়। একশ্রেণির ডিপো মালিক ও আড়তদারা কাঁকড়া শিকারিদের অগ্রিম টাকা দাদন দেন। তারাই সুন্দরবনের প্রভাবশালী কোম্পানি মহাজনদের সহায়তায় অসাধু বনরক্ষী ও কর্মকর্তাদের ঘুষের মাধ্যমে ‘ম্যানজ’ করে বনের নদী-খালে ঢুকে কাঁকড়া শিকারের সুযোগ করে দেন।

খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার কয়েকজন বনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কাঁকড়া ধরা বেশ সহজ এবং তা তেমন ব্যয়বহুলও নয়। যে কারণে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার গোনে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার এক শ্রেণীর জেলে বন বিভাগের কাছ থেকে মাছ ধরার অনুমতি নেন। তারপর তারা ‘নিষিদ্ধ’ মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় সরঞ্জাম নিয়ে সুন্দরবনের নদী-খালে নেমে পড়েন কাঁকড়া শিকারে।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু বনরক্ষী ও কর্মকর্তা কাঁকড়া শিকারিদের সহায়তা করেন। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ বা কাঁকড়ার দু-একটি চালান ধরা পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না শিকার। আবার যারা ধরা পড়ছেন তথ্য-প্রমাণের অভাবে তারাও সুন্দরবনের প্রভাবশালী কোম্পানি মহাজনদের সহায়তায় দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজে ফিরছেন।

খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। সুন্দরবনে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে জেলেসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি বনবিভাগের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপরও কেউ যদি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাঁকড়া আহরণ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

back to top