পুরনো একটি সাইকেল কেনার জন্য ৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় খালার বাসায় গিয়েছিল ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। খালার কাছে না চেয়ে নিজে থেকেই টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে দুই খালাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় সে।
তিন দিন আগে শুক্রবার পশ্চিম শেওড়াপাড়া থেকে মরিয়ম বেগম (৬০) ও সুফিয়া বেগম (৫২) নামে দুই নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের আরেক বোনের ছেলেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এক কিশোরকে শনাক্ত করা হয়। একপর্যায়ে সে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৬৪৯ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম ও সুফিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন বাড়িটির মালিক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের পরিবার। মরিয়মের পরিবার সেখানে প্রায় দুই দশক ধরে বসবাস করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মরিয়ম। ২০২১ সালে অবসর নেন। তার স্বামী কাজী আলাউদ্দিন বনবিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যিনি বেশিরভাগ সময় বরিশালে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
মরিয়মের বড় মেয়ে ইসরাত জাহান খুসবু যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ছোট মেয়ে নুসরাত জাহান বৃষ্টি ঢাকায় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। নিহত সুফিয়া ছিলেন অবিবাহিত এবং মানসিকভাবে কিছুটা অস্বাভাবিক, যিনি বড় বোন মরিয়মের বাসায় থাকতেন।
যেভাবে ঘটেছে হত্যাকাণ্ড
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মরিয়ম ও সুফিয়া যেদিন খুন হন, সেদিন বাসাটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে ব্যাগসহ ওই কিশোর বাড়ির ভেতরে ঢোকে এবং দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে পোশাক পাল্টে বের হয়ে যায়।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ছেলেটির অস্বাভাবিক আচরণ তাদের নজরে আসে। সে পুলিশের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে মিশে থাকার চেষ্টা করছিল।
ছেলেটি জানাজায় অংশ নিতে ঝালকাঠি যায়। তার অবস্থান শনাক্ত করে সেখান থেকে বাবার সঙ্গে নিয়ে আসা হয়।
হত্যার কারণ ব্যাখ্যা করে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, “একটি পুরনো সাইকেল কেনার জন্য টাকা আনতে সে খালার বাসায় যায়। সাইকেলের দাম ৩ হাজার টাকা। স্কুল বন্ধ থাকায় সে কাপড়চোপড় নিয়ে খালার বাসায় অবস্থান নেয়।”
“বড় খালা মরিয়ম জানতে চান, সে একা এসেছে নাকি মা এসেছে। তখন সে জানায়, মা পরে আসবেন। মরিয়ম তখন ডাইনিং রুমে ছুরি দিয়ে লেবু কেটে শরবত তৈরি করছিলেন, আর সুফিয়া রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। এই ফাঁকে কিশোর লিভিং রুমে গিয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করছিল। চুরির দৃশ্য দেখে ফেলেন মরিয়ম। বিষয়টি মাকে জানাবেন বললে ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোর ডাইনিংয়ের ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে। চিৎকার শুনে সুফিয়া এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে এবং পরে রান্নাঘরের শিল-পাটা দিয়ে তাদের মাথায় আঘাত করে।”
হত্যার পর সে কাপড় পাল্টে বাসায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। অটোরিকশায় করে শনির আখড়ায় যাওয়ার পথে চাবি ও ক্যাপ ফেলে দেয়। এরপর ইস্টার্ন শপিংমলের মসজিদের ওয়াশরুমে জামাকাপড় ভেন্টিলেটর দিয়ে ফেলে এবং কাছাকাছি এলাকায় স্যান্ডেলও ফেলে দেয়।
পুলিশ জানায়, তার দেওয়া তথ্যে এসব আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, ছেলেটির এলাকায় বন্ধু কম। একবার বাবাকে ‘পাগলা’ বলায় বটি নিয়ে ধাওয়া করে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো পারফরম্যান্স না থাকায় তাকে বহিষ্কারও করা হয়। মাদকাসক্তির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পাঠানো হয়েছে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে
ঘটনার পর মরিয়ম বেগমের মেয়ে নুসরাত জাহান মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। সোমবার মামলায় আদালতে হাজির করা হলে কিশোর জবানবন্দি দেয়। ঢাকার মহানগর হাকিম মনিরুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করে গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
পুরনো একটি সাইকেল কেনার জন্য ৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় খালার বাসায় গিয়েছিল ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। খালার কাছে না চেয়ে নিজে থেকেই টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে দুই খালাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় সে।
তিন দিন আগে শুক্রবার পশ্চিম শেওড়াপাড়া থেকে মরিয়ম বেগম (৬০) ও সুফিয়া বেগম (৫২) নামে দুই নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের আরেক বোনের ছেলেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এক কিশোরকে শনাক্ত করা হয়। একপর্যায়ে সে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৬৪৯ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম ও সুফিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন বাড়িটির মালিক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের পরিবার। মরিয়মের পরিবার সেখানে প্রায় দুই দশক ধরে বসবাস করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মরিয়ম। ২০২১ সালে অবসর নেন। তার স্বামী কাজী আলাউদ্দিন বনবিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যিনি বেশিরভাগ সময় বরিশালে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
মরিয়মের বড় মেয়ে ইসরাত জাহান খুসবু যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ছোট মেয়ে নুসরাত জাহান বৃষ্টি ঢাকায় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। নিহত সুফিয়া ছিলেন অবিবাহিত এবং মানসিকভাবে কিছুটা অস্বাভাবিক, যিনি বড় বোন মরিয়মের বাসায় থাকতেন।
যেভাবে ঘটেছে হত্যাকাণ্ড
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মরিয়ম ও সুফিয়া যেদিন খুন হন, সেদিন বাসাটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে ব্যাগসহ ওই কিশোর বাড়ির ভেতরে ঢোকে এবং দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে পোশাক পাল্টে বের হয়ে যায়।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ছেলেটির অস্বাভাবিক আচরণ তাদের নজরে আসে। সে পুলিশের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে মিশে থাকার চেষ্টা করছিল।
ছেলেটি জানাজায় অংশ নিতে ঝালকাঠি যায়। তার অবস্থান শনাক্ত করে সেখান থেকে বাবার সঙ্গে নিয়ে আসা হয়।
হত্যার কারণ ব্যাখ্যা করে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, “একটি পুরনো সাইকেল কেনার জন্য টাকা আনতে সে খালার বাসায় যায়। সাইকেলের দাম ৩ হাজার টাকা। স্কুল বন্ধ থাকায় সে কাপড়চোপড় নিয়ে খালার বাসায় অবস্থান নেয়।”
“বড় খালা মরিয়ম জানতে চান, সে একা এসেছে নাকি মা এসেছে। তখন সে জানায়, মা পরে আসবেন। মরিয়ম তখন ডাইনিং রুমে ছুরি দিয়ে লেবু কেটে শরবত তৈরি করছিলেন, আর সুফিয়া রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। এই ফাঁকে কিশোর লিভিং রুমে গিয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করছিল। চুরির দৃশ্য দেখে ফেলেন মরিয়ম। বিষয়টি মাকে জানাবেন বললে ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোর ডাইনিংয়ের ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে। চিৎকার শুনে সুফিয়া এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে এবং পরে রান্নাঘরের শিল-পাটা দিয়ে তাদের মাথায় আঘাত করে।”
হত্যার পর সে কাপড় পাল্টে বাসায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। অটোরিকশায় করে শনির আখড়ায় যাওয়ার পথে চাবি ও ক্যাপ ফেলে দেয়। এরপর ইস্টার্ন শপিংমলের মসজিদের ওয়াশরুমে জামাকাপড় ভেন্টিলেটর দিয়ে ফেলে এবং কাছাকাছি এলাকায় স্যান্ডেলও ফেলে দেয়।
পুলিশ জানায়, তার দেওয়া তথ্যে এসব আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, ছেলেটির এলাকায় বন্ধু কম। একবার বাবাকে ‘পাগলা’ বলায় বটি নিয়ে ধাওয়া করে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো পারফরম্যান্স না থাকায় তাকে বহিষ্কারও করা হয়। মাদকাসক্তির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পাঠানো হয়েছে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে
ঘটনার পর মরিয়ম বেগমের মেয়ে নুসরাত জাহান মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। সোমবার মামলায় আদালতে হাজির করা হলে কিশোর জবানবন্দি দেয়। ঢাকার মহানগর হাকিম মনিরুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করে গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।