alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

পুলিশের অপরাধ তদন্তে ‘স্বাধীন কমিশন’ কেন নয়: হাইকোর্টের রুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ২৮ নভেম্বর ২০২১

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠলে সেটি তদন্তে স্বাধীন কমিশন কেন নয় তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের আদেশের ধার্য দিনে রোববার (২৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করার জন্য স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের ওপর এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি শেষ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ নামে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন আইনজীবীরা।

সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপিকে) বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের অন্তর্র্বতীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত সংবলিত রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে জমা দেবেন।

রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির জানান, ১৪৫ পৃষ্ঠার রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি আকারে এক হাজার ৫২২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট (মোট ১ হাজার ৬৬৭ পৃষ্ঠা) দেওয়া হয়েছে। রিটে আটটি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, পুলিশের গৌরবময় অর্জনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা বিধানের বর্তমান আইনি কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৫৮৯টি এ সংক্রান্ত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ঘটনাগুলোর সংবাদ রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুলিশ বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, খুন, মারধর, হুমকি ও হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, জমি দখল ও সম্পত্তি বিনষ্টকরণ, মাদক ব্যবসা ও উদ্ধারকৃত মাদক আত্মসাৎ, আটক বাণিজ্য, অপরাধীদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া, মামলা নিতে গড়িমসি ও মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ, মিথ্যা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি, তদন্তে গাফিলতি, হয়রানি ও ঘুষ নেয়া, সাংবাদিক নির্যাতন, কর্তব্যে অবহেলা, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্টকরণ ও আসামিদের নাম বাদ দেয়া এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে দুর্নীতিসহ মোট ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

রিটে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, দৃষ্টান্ত হিসেবে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ছয়টি মামলার কপি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা চূড়ান্ত রিপোর্ট বা আপোষের মাধ্যমে অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘তদন্ত’ হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্ত হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠু তদন্ত সংবিধানের ৩৫(৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের ওপরই ন্যস্ত। ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ২০০৭ সালে ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সেই খসড়া অধ্যাদেশ আজও আইনে পরিণত হয়নি।

তিনি জানান, রিটে ৮টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও নীতিমালা সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব আন্তর্জাতিক দলিলে পুলিশের অপরাধ তদন্তে আলাদা কর্তৃপক্ষ/কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন কার্যকর রয়েছে। ২০০৬ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বিখ্যাত ‘প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা প্রদানের নজিরও যুক্ত করা হয়েছে রিটে।

এর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।

রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন—অ্যাভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শিকদার মাহমুদুর রাজি, শ্যাম সুন্দর দাস, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. মোর্শেদ মীর, জামিলুর রহমান খান, শেখ নাসের ওয়াহেদ (সিমন), মো. আল-আমিন, আল রেজা মো. আমির, ইমরুল কায়েস, অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার, মো. শাহাবুদ্দিন খান (লার্জ), মো. দুলাল মিয়া, মো. জাকির হায়দার, মো. আব্দুল আলীম, মো. হুমায়ুন কবির, জি এম মুজাহিদুর রহমান, মো. মতিয়ার রহমান প্রমুখ।

ছবি

ড. ইউনূসকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন

ছবি

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাই ও চুরি হওয়া ফোন সেট উদ্ধার

মতলবে ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের রহস্য উন্মোচন,মূল আসামী সহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

লঞ্চে বোরকা পরে ছিনতাই করতেন তারা

বন্ধুর সহায়তায় প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মালামাল লুট করে আপন ভাই

গাজীপুরে ৩জন ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক

ছবি

আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি কাদের খানের চার বছরের দন্ড

গাজীপুরে পুত্রকে কুপিয়ে হত্যা, পিতা আটক

ছবি

এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

সিলেটে ‘ধর্ষক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রপ্তার করেছে র‌্যাব

ছবি

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

ছবি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

মুন্সীগঞ্জে ডালিম হ.ত্যা মামলার ৬ আসামি জেলহাজতে

ছবি

শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

ছবি

গেন্ডারিয়ায় ৯৮৩ পিস ভয়াবহ মাদক বুপ্রেনরফিনসহ গ্রেপ্তার কারবারি

ছবি

সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ অধরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ অভিযুক্তরা

নারায়ণগঞ্জে প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের প্রতারণার মামলা

ছবি

মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫ জন

ছবি

দুই বছরের দণ্ড ২৭ বছর পর বাতিল, রায়ের কপি যাচ্ছে সব আদালতে

ছবি

মানিকদির জমি দখল নাজিমের দৌরাত্ম্য থামছেই না, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার পলাতক ২ আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ঢাকায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

রামুর কচ্ছপিয়ায় ছুরিকাঘাতে ছায়া হত্যার ঘটনায় আটক দুই

ছবি

মহেশখালীর সিরিয়াল কিলার আজরাইল গ্রেফতার

ছবি

মুন্সীগঞ্জে পাইপগান-ফেন্সিডিলসহ দু’জন আটক

ছবি

দুদকের মামলায় ২০ কোটি ২২ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক এমপি মান্নান কারাগারে

ছবি

আইএমইআই নম্বর পাল্টে মোবাইল বিক্রি, চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

চুনারুঘাটে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা, স্বামী আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৫ কোটি টাকা গায়েব, ৩ কর্মকর্তা কারাগারে

শতাধিক শিক্ষা ভবন নির্মাণের নামে বিল ভাগ-বাটোয়ারা

নরসিংদীতে গাড়ী চালককে হত্যার অভিযোগে ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

চালক ‘সেজে’ শিক্ষার্থী অপহরণ ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়, গ্রেপ্তার ৭

ছবি

সালাম মুর্শেদীর বাড়ি ছাড়তে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি

ফয়সালকে কুপিয়ে হত্যার পর পার্টি করে গালকাটা রাব্বির গ্যাং

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

পুলিশের অপরাধ তদন্তে ‘স্বাধীন কমিশন’ কেন নয়: হাইকোর্টের রুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ২৮ নভেম্বর ২০২১

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠলে সেটি তদন্তে স্বাধীন কমিশন কেন নয় তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের আদেশের ধার্য দিনে রোববার (২৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করার জন্য স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের ওপর এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি শেষ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ নামে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন আইনজীবীরা।

সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপিকে) বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের অন্তর্র্বতীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত সংবলিত রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে জমা দেবেন।

রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির জানান, ১৪৫ পৃষ্ঠার রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি আকারে এক হাজার ৫২২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট (মোট ১ হাজার ৬৬৭ পৃষ্ঠা) দেওয়া হয়েছে। রিটে আটটি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, পুলিশের গৌরবময় অর্জনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা বিধানের বর্তমান আইনি কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৫৮৯টি এ সংক্রান্ত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ঘটনাগুলোর সংবাদ রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুলিশ বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, খুন, মারধর, হুমকি ও হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, জমি দখল ও সম্পত্তি বিনষ্টকরণ, মাদক ব্যবসা ও উদ্ধারকৃত মাদক আত্মসাৎ, আটক বাণিজ্য, অপরাধীদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া, মামলা নিতে গড়িমসি ও মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ, মিথ্যা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি, তদন্তে গাফিলতি, হয়রানি ও ঘুষ নেয়া, সাংবাদিক নির্যাতন, কর্তব্যে অবহেলা, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্টকরণ ও আসামিদের নাম বাদ দেয়া এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে দুর্নীতিসহ মোট ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

রিটে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, দৃষ্টান্ত হিসেবে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ছয়টি মামলার কপি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা চূড়ান্ত রিপোর্ট বা আপোষের মাধ্যমে অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘তদন্ত’ হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্ত হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠু তদন্ত সংবিধানের ৩৫(৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের ওপরই ন্যস্ত। ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ২০০৭ সালে ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সেই খসড়া অধ্যাদেশ আজও আইনে পরিণত হয়নি।

তিনি জানান, রিটে ৮টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও নীতিমালা সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব আন্তর্জাতিক দলিলে পুলিশের অপরাধ তদন্তে আলাদা কর্তৃপক্ষ/কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন কার্যকর রয়েছে। ২০০৬ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বিখ্যাত ‘প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা প্রদানের নজিরও যুক্ত করা হয়েছে রিটে।

এর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।

রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন—অ্যাভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শিকদার মাহমুদুর রাজি, শ্যাম সুন্দর দাস, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. মোর্শেদ মীর, জামিলুর রহমান খান, শেখ নাসের ওয়াহেদ (সিমন), মো. আল-আমিন, আল রেজা মো. আমির, ইমরুল কায়েস, অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার, মো. শাহাবুদ্দিন খান (লার্জ), মো. দুলাল মিয়া, মো. জাকির হায়দার, মো. আব্দুল আলীম, মো. হুমায়ুন কবির, জি এম মুজাহিদুর রহমান, মো. মতিয়ার রহমান প্রমুখ।

back to top