বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র, ষড়ঋতুর সৌন্দর্য যাঁর ক্যানভাসে উঠে আসে তুলির আঁচড়ে, তিনি চিত্রশিল্পী কারু তিতাস। রাজধানীর লালমাটিয়ায় শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে চলছে তার একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। ‘মৃত্তিকা মোহ’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীটি শিল্পীর ৫ম একক প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
শিল্পীর প্রিয় মাধ্যম হলো অয়েল। কিন্তু এ মাধ্যমটি সংরক্ষণ করা খুব কঠিন এবং আমাদের দেশে ভালো মেট্রিয়াল পাওয়া যায় না বলে তিনি নিয়মিত কাজ করেন এক্রেলিক দিয়ে। তবে জলরং তার খুব প্রিয় মাধ্যম। যে মাধ্যমেই কাজ করেন না কেন এক মাধ্যমে বেশি দিন থাকতে পারেন না কারু তিতাস। যে কারণে সব মাধ্যমেই কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তাই প্রদর্শনীতে দেখা মিলছে শিল্পীর আঁকা অনেক মাধ্যমের কাজ। যার মধ্যে আছে অ্যাক্রিলিক, জলরং, মিশ্র, অয়েলসহ নানা মাধ্যমের কাজ। চীনা কালি আর প্যাস্টেলেরও কাজ আছে কয়েকটি। সব মিলিয়ে ৪৯টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে তার এবারের প্রদর্শনীটিতে ।
ক্যানভাসে কারু তিতাস এঁকেছেন বাংলার রূপবৈচিত্র্য। তুলে ধরেছেন বিভিন্ন জনপদের যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন স্থাপতি ও অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস। সেদিন বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। শিল্পীরা সৌন্দর্যের পূজারী। সৌন্দর্য ও মানবিক বোধকে তারা মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করেন তাদের কাজের মাধ্যমে। অন্তরের মধ্যে গেঁথে দেন ভালোবাসার অনুভূতি। শিল্পী কারু তিতাসের চিত্রকর্ম যেন তেমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করিয়ে দেয়।
শিল্পীকর্মগুলো ঘুরে দেখার পর ছবিগুলো নিয়ে কারু তিতাসের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে যাই। শহর আমার তেমন ভালো লাগত না। আমার কাছে গ্রাম, নদী ও প্রকৃতি যেমন প্রিয়, তেমনই প্রিয় গ্রামের সহজ-সরল মানুষজন। ক্যানভাসে আমার সেই ভালোলাগা অনুভূতি, চিন্তা ও ভাবনাকেই ঠাঁই দিয়েছি আপন মহিমায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় বসবাস করি বাধ্য হয়ে। ঢাকায় ভালো লাগে না আমার। যে কারণে প্রায়ই ঢাকার বাইরে চলে যাই। ঢাকার বাইরে পঞ্চাশ মাইল দূরে উত্তর পশ্চিম পূর্ব দক্ষিণ যেদিকেই যাই আমার দেশটা অপূর্ব সুন্দর! সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে পঞ্চাশ মাইল দূরে যেতে যেতেই দেখা যায় মানুষের ভাষা কালচার আচার আচরণে পরিবর্তন আসতে থাকে। অচেনা অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয় কথা হয়, নদীর সঙ্গে দেখা হয়, পাহাড়ের সঙ্গে দেখা হয়। এসব পুঞ্জিভুত হতে থাকে আমার ভাবনার জগতে। আমার ছবির মুল বিষয় হচ্ছে এসব প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ ও তাদের আনন্দ বেদনা। এসব মানুষের জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু প্রাণবন্ত তারা। এ বিষয়টা আমাকে অনেক বেশি টানে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বৈশিষ্ট। তাই আমার ঢাকার ছবি খুব কম। দুই একটা ছবি আছে নদী ভাঙনের শিকার সংগ্রামী মানুষদের নিয়ে।’
শিল্পী এসব বিষয়ে আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি ঢাকার বাইরে বেড়াতে গেলে হয় যাব কক্সবাজার নয় যাব পাহাড় দেখতে। কিন্তু এর বাইরেও সারা দেশে রয়েছে শিল্প সাহিত্যের অনেক উপাদান। সেসব দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। কারণ একেকটি ঋতুতে গ্রামবাংলার রূপ একেক রকম। সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা এই বাংলার ঋতুবৈচিত্র সব সময় আমাকে প্রলুব্ধ করেছে। তুলির আঁচড়ে সেসব দৃশ্যই আমি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।’
খুলনার মানুষ কারু তিতাস ৩০ বছর ধরে ক্যানভাসে রঙ দিয়ে সৃষ্টি করছেন প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি। জানালেন তিনি প্রথম প্রদর্শনী করেন ১৯৮৮ সালে। তারপর দীর্ঘ ব্যাবধানে ১৯৯৭ সালে করেন আরেকটি প্রদর্শনী। পরের প্রদর্শনীটি হয় ২০১৬ সালে। সর্বশেষ প্রদর্শনী করেন ২০১৮ সালে। ছোট বেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল চারুকলায় পড়বেন। তবে চারুকলায় চান্স পেয়েও যান রাজশাহীতে পড়তে। কারণ ঢাকায় ভালো লাগছিল না তার। ঢাকার সবকিছু মেকি লাগত তার কাছে। রাজশাহী থেকে বিএফএ করে ঢাকায় চারুকলাতে এসে মাস্টার্স করেন।
ছবি আঁকার শুরুটা কারু তিতাসের কীভাবে হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে বলতে পারেন না। তাবে তাদের বাড়িতে সবসময় আঁকাআঁকির পরিবেশ ছিল। মা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তার অনেক বড় অনুপ্রেরণা।
কারু তিতাস বলেন, ‘আমাদের পরিবারটা একটি আগাগোড়া শিল্পী পরিবার। এখানে আমরা পেয়েছি অবাধ স্বাধীনতা, শিল্পী হওয়ার সুযোগ। পরিবার কখনও আমাদের ওপরে কোনও কিছু চাপিয়ে দেয়নি। বলেনি যে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। আমরা আমাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়েছি।
তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশ্যে এই শিল্পী বলেন, ‘ছবি আঁকা কাজটি করতে হয় ধৈর্য আর ভালোবাসা নিয়ে। আপনার মাথায় যদি সারাদিনের কর্মব্যস্ত দিকগুলো নিয়ে চিন্তা থাকে তবে আপনি কখনও ভালো ছবি আঁকতে পারবেন না। আর আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এখানে কোনও শর্টকাট ওয়ে নেই। তরুণ যারা কাজ করছে তারা প্রচণ্ড সম্ভাবনাময়। কিন্তু শিল্প আমাদের দেশে প্রফেসনাল ভাবে নেয়া খুব কঠিন। যেমন আমি ছবি আঁকার বাইরে কিচ্ছু করি না। এই শিল্পকর্ম করেই চলি। আমি জানি কতটা কঠিন এভাবে ঢাকা শহরে জীবনধারণ। খুবই চ্যালেঞ্জিং এটা। এমনও হয় আমার পকেটে সকালে দশটাকা নাই; কিন্তু আত্মবিশ^াস থাকে বিকেলে ১০টাকা হয়ে যাবে। কোন না কোন ভাবে হয়ে যায়। ছবি আঁকতে গেলে অন্য কিছু করা যায় না। আমি ছবিও আঁকব আবার শেয়ারের ব্যবসা দেখব, গার্মেন্টস দেখব তা হয় না। আমি তাই কোন দিন চাকরির চেষ্টা করিনি, সুযোগ আসলেও গ্রহণ করিনি। শুধু রঙের কাজটাই করে গেছি। অন্য কিছু করলে আমার ছবি আঁকায় বিঘœ ঘটে। অনেকে হয়তো এক সঙ্গে অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু আমি পারি না। ছবি আঁকা আমার কাছে আরাধনার মতো। মানুষ মেডিটেশন করতে যায় পয়সা খরচ করে। আমি মনে করি ছবি আঁকার চেয়ে বড় মেডিটেশন আর কিছু নেই।
এযাবত ভারত, জাপান, দুবাইসহ দেশ বিদেশের বহু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে কারু তিতাসের আঁকা ছবি। জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে স্থান পেয়েছে এই শিল্পীর আঁকা ছবি। শুধু ছবি নিয়ে বাংলাদেশের মতো একটি জায়গায় কাজ করে টিকে থাকা খুব কঠিন হলেও ছবি ছাড়া দিন শুরু করতে পারেন না কারু তিতাস। ছবি নিয়েই জীবন শুরু, ছবি নিয়েই শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চান তিনি।
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র, ষড়ঋতুর সৌন্দর্য যাঁর ক্যানভাসে উঠে আসে তুলির আঁচড়ে, তিনি চিত্রশিল্পী কারু তিতাস। রাজধানীর লালমাটিয়ায় শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে চলছে তার একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। ‘মৃত্তিকা মোহ’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীটি শিল্পীর ৫ম একক প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
শিল্পীর প্রিয় মাধ্যম হলো অয়েল। কিন্তু এ মাধ্যমটি সংরক্ষণ করা খুব কঠিন এবং আমাদের দেশে ভালো মেট্রিয়াল পাওয়া যায় না বলে তিনি নিয়মিত কাজ করেন এক্রেলিক দিয়ে। তবে জলরং তার খুব প্রিয় মাধ্যম। যে মাধ্যমেই কাজ করেন না কেন এক মাধ্যমে বেশি দিন থাকতে পারেন না কারু তিতাস। যে কারণে সব মাধ্যমেই কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তাই প্রদর্শনীতে দেখা মিলছে শিল্পীর আঁকা অনেক মাধ্যমের কাজ। যার মধ্যে আছে অ্যাক্রিলিক, জলরং, মিশ্র, অয়েলসহ নানা মাধ্যমের কাজ। চীনা কালি আর প্যাস্টেলেরও কাজ আছে কয়েকটি। সব মিলিয়ে ৪৯টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে তার এবারের প্রদর্শনীটিতে ।
ক্যানভাসে কারু তিতাস এঁকেছেন বাংলার রূপবৈচিত্র্য। তুলে ধরেছেন বিভিন্ন জনপদের যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন স্থাপতি ও অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস। সেদিন বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। শিল্পীরা সৌন্দর্যের পূজারী। সৌন্দর্য ও মানবিক বোধকে তারা মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করেন তাদের কাজের মাধ্যমে। অন্তরের মধ্যে গেঁথে দেন ভালোবাসার অনুভূতি। শিল্পী কারু তিতাসের চিত্রকর্ম যেন তেমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করিয়ে দেয়।
শিল্পীকর্মগুলো ঘুরে দেখার পর ছবিগুলো নিয়ে কারু তিতাসের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে যাই। শহর আমার তেমন ভালো লাগত না। আমার কাছে গ্রাম, নদী ও প্রকৃতি যেমন প্রিয়, তেমনই প্রিয় গ্রামের সহজ-সরল মানুষজন। ক্যানভাসে আমার সেই ভালোলাগা অনুভূতি, চিন্তা ও ভাবনাকেই ঠাঁই দিয়েছি আপন মহিমায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় বসবাস করি বাধ্য হয়ে। ঢাকায় ভালো লাগে না আমার। যে কারণে প্রায়ই ঢাকার বাইরে চলে যাই। ঢাকার বাইরে পঞ্চাশ মাইল দূরে উত্তর পশ্চিম পূর্ব দক্ষিণ যেদিকেই যাই আমার দেশটা অপূর্ব সুন্দর! সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে পঞ্চাশ মাইল দূরে যেতে যেতেই দেখা যায় মানুষের ভাষা কালচার আচার আচরণে পরিবর্তন আসতে থাকে। অচেনা অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয় কথা হয়, নদীর সঙ্গে দেখা হয়, পাহাড়ের সঙ্গে দেখা হয়। এসব পুঞ্জিভুত হতে থাকে আমার ভাবনার জগতে। আমার ছবির মুল বিষয় হচ্ছে এসব প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ ও তাদের আনন্দ বেদনা। এসব মানুষের জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু প্রাণবন্ত তারা। এ বিষয়টা আমাকে অনেক বেশি টানে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বৈশিষ্ট। তাই আমার ঢাকার ছবি খুব কম। দুই একটা ছবি আছে নদী ভাঙনের শিকার সংগ্রামী মানুষদের নিয়ে।’
শিল্পী এসব বিষয়ে আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি ঢাকার বাইরে বেড়াতে গেলে হয় যাব কক্সবাজার নয় যাব পাহাড় দেখতে। কিন্তু এর বাইরেও সারা দেশে রয়েছে শিল্প সাহিত্যের অনেক উপাদান। সেসব দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। কারণ একেকটি ঋতুতে গ্রামবাংলার রূপ একেক রকম। সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা এই বাংলার ঋতুবৈচিত্র সব সময় আমাকে প্রলুব্ধ করেছে। তুলির আঁচড়ে সেসব দৃশ্যই আমি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।’
খুলনার মানুষ কারু তিতাস ৩০ বছর ধরে ক্যানভাসে রঙ দিয়ে সৃষ্টি করছেন প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি। জানালেন তিনি প্রথম প্রদর্শনী করেন ১৯৮৮ সালে। তারপর দীর্ঘ ব্যাবধানে ১৯৯৭ সালে করেন আরেকটি প্রদর্শনী। পরের প্রদর্শনীটি হয় ২০১৬ সালে। সর্বশেষ প্রদর্শনী করেন ২০১৮ সালে। ছোট বেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল চারুকলায় পড়বেন। তবে চারুকলায় চান্স পেয়েও যান রাজশাহীতে পড়তে। কারণ ঢাকায় ভালো লাগছিল না তার। ঢাকার সবকিছু মেকি লাগত তার কাছে। রাজশাহী থেকে বিএফএ করে ঢাকায় চারুকলাতে এসে মাস্টার্স করেন।
ছবি আঁকার শুরুটা কারু তিতাসের কীভাবে হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে বলতে পারেন না। তাবে তাদের বাড়িতে সবসময় আঁকাআঁকির পরিবেশ ছিল। মা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তার অনেক বড় অনুপ্রেরণা।
কারু তিতাস বলেন, ‘আমাদের পরিবারটা একটি আগাগোড়া শিল্পী পরিবার। এখানে আমরা পেয়েছি অবাধ স্বাধীনতা, শিল্পী হওয়ার সুযোগ। পরিবার কখনও আমাদের ওপরে কোনও কিছু চাপিয়ে দেয়নি। বলেনি যে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। আমরা আমাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়েছি।
তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশ্যে এই শিল্পী বলেন, ‘ছবি আঁকা কাজটি করতে হয় ধৈর্য আর ভালোবাসা নিয়ে। আপনার মাথায় যদি সারাদিনের কর্মব্যস্ত দিকগুলো নিয়ে চিন্তা থাকে তবে আপনি কখনও ভালো ছবি আঁকতে পারবেন না। আর আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এখানে কোনও শর্টকাট ওয়ে নেই। তরুণ যারা কাজ করছে তারা প্রচণ্ড সম্ভাবনাময়। কিন্তু শিল্প আমাদের দেশে প্রফেসনাল ভাবে নেয়া খুব কঠিন। যেমন আমি ছবি আঁকার বাইরে কিচ্ছু করি না। এই শিল্পকর্ম করেই চলি। আমি জানি কতটা কঠিন এভাবে ঢাকা শহরে জীবনধারণ। খুবই চ্যালেঞ্জিং এটা। এমনও হয় আমার পকেটে সকালে দশটাকা নাই; কিন্তু আত্মবিশ^াস থাকে বিকেলে ১০টাকা হয়ে যাবে। কোন না কোন ভাবে হয়ে যায়। ছবি আঁকতে গেলে অন্য কিছু করা যায় না। আমি ছবিও আঁকব আবার শেয়ারের ব্যবসা দেখব, গার্মেন্টস দেখব তা হয় না। আমি তাই কোন দিন চাকরির চেষ্টা করিনি, সুযোগ আসলেও গ্রহণ করিনি। শুধু রঙের কাজটাই করে গেছি। অন্য কিছু করলে আমার ছবি আঁকায় বিঘœ ঘটে। অনেকে হয়তো এক সঙ্গে অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু আমি পারি না। ছবি আঁকা আমার কাছে আরাধনার মতো। মানুষ মেডিটেশন করতে যায় পয়সা খরচ করে। আমি মনে করি ছবি আঁকার চেয়ে বড় মেডিটেশন আর কিছু নেই।
এযাবত ভারত, জাপান, দুবাইসহ দেশ বিদেশের বহু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে কারু তিতাসের আঁকা ছবি। জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে স্থান পেয়েছে এই শিল্পীর আঁকা ছবি। শুধু ছবি নিয়ে বাংলাদেশের মতো একটি জায়গায় কাজ করে টিকে থাকা খুব কঠিন হলেও ছবি ছাড়া দিন শুরু করতে পারেন না কারু তিতাস। ছবি নিয়েই জীবন শুরু, ছবি নিয়েই শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চান তিনি।