alt

সংস্কৃতি

সমাজসেবায় একুশে পদকঃ এখনও ফেরি করে দই বিক্রি করেন জিয়াউল হক

ইয়াহিয়া খান রুবেল, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ইচ্ছে ছিলো লেখাপড়া করবেন। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণীতেই থেমে যায় তার সেই ইচ্ছা। কারণ, অভাব। বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ দহন করে জীবিকা নির্বাহ করা বাবা বই কেনার জন্য দেড় টাকা দিতে পারেননি। তবে সেই বালক জিয়াউল হককে এখন দেশের অনেকেই চেনেন। কারণ তিনি এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

https://sangbad.net.bd/images/2024/February/16Feb24/news/ziaul-haque-1.jpg

না লেখাপড়া আর হয়নি। এখন ফেরি করে নিজের বানানো দই বিক্রি করেন। বয়স এখন ৯১। তার মতো টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে কেউ যেন লেখাপড়া থেকে ছিটকে না পড়ে, সেই চিন্তা থেকেই শুরু করেন কাজ।

জিয়াউল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন সাধারণ দই বিক্রেতা হলেও তার নেশা সমাজসেবা। দই বিক্রির টাকায় তিনি তৈরি করেছেন লাইব্রেরি।

স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেন জিয়াউল হক। তাই তাকে সবাই চেনে সাদা মনের মানুষ হিসেবে।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন নাগরিককে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় নাম রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দই বিক্রেতারও। সমাজসেবায় অবদান রাখায় এই পদক পাচ্ছেন তিনি।

জিয়াউল হকের বাবার নাম তৈয়ব আলী মোল্লা এবং মায়ের নাম শরীফুন নেছা। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ৩ নম্বর দলদলী ইউনিয়নের চামা মুশরিভুজা গ্রামে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর বর্তমানে তিনি বটতলা গ্রামে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন।

জিয়াউল হক ১৯৫৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চান। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ দহন করে জীবিকা নির্বাহ করা বাবা বই কেনার জন্য দেড় টাকা দিতে পারেননি। এই কারণে উচ্চবিদ্যালয়েও ভর্তি হওয়া হয়নি তার। এরপর বাবার সংগ্রহ করা দুধ দিয়ে দই তৈরি করে ফেরি করে বিক্রি করা শুরু করেন।

দু-তিন বছর পর কিছু টাকা জমা হয় জিয়াউল হকের হাতে। তখন জিয়াউল হকের চিন্তা হয়, যারা তার মতো টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়তে পারে, তাদের তিনি এই টাকা দিয়ে বই কিনে দেবেন। তবেই তার বিদ্যালয়ে পড়তে না পারার বেদনা লাঘব হবে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/February/16Feb24/news/ziaul-haque-2.jpg

আর এই লক্ষ্য সামনে রেখে গরিব ছাত্রদের মধ্যে বই বিলি শুরু করেন। যতদিন পর্যন্ত সরকার বই বিনা মূল্যে দেওয়া শুরু করেনি, ততোদিন পর্যন্ত বই দিতে থাকেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির ছাত্রদের বই দিতে থাকেন জিয়াউল। তার দেওয়া বই পড়ে ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে অনেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি করছেন। শুধু তা–ই নয়, দই বিক্রি করা টাকায় বইয়ের ভান্ডার গড়ে তোলেন। ১৯৬৯ সালে নিজের বাড়ির একটি ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’। এ পাঠাগারে এখন ১৪ হাজার বই আছে বলে জানা গেছে।

ভোলাহাট উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা জামিল বলেন, ৬৫ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে সাইকেলে চেপে মাথায় দই নিয়ে বিক্রি করেন জিয়াউল হক। আর এ দই বিক্রি থেকে যে টাকা আয় হয়, তা দিয়েই সমাজসেবা চালিয়ে যান। এলাকার শত শত মানুষের উপকার করেছেন তিনি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদানও দিয়েছেন। এমনকি, কেউ টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারছেন না শুনলে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবসময়।

একুশে পদকপ্রাপ্ত জিয়াউল হক জানান, ‘২০২৪ সালের একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় আমার নামও রয়েছে। বিষয়টি মঙ্গলবার (১৩) ফেব্রুয়ারি বিকেলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব আমাকে জানান। এতে আমি ভীষণ আনন্দিত। এই পদক আমার সমাজসেবাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।’

ছবি

কুমিল্লা শাখায় কাব্যকথার নবিন-প্রবীণ কবি সাহিত্যিকের মিলনমেলা

ছবি

গ্যালারী কায়ার ২০ তম প্রষ্ঠিাবার্ষিকীতে বিশেষ প্রদর্শনী

ছবি

দৃকে চলছে বাংলাদেশ প্রেস ফটো প্রদর্শনী ২০২৪

ছবি

লা গ্যালারিতে চলছে ‘গল্পের বাস্তবতা’ শীর্ষক একক চিত্র প্রদর্শনী

ছবি

বাউল-ফকিরদের ওপর নির্যাতন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিবাদ

ছবি

অ্যানিমেশন ফিল্ম খোকা এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত

ছবি

স্মৃতি সংরক্ষণে ৫ দফা দাবি

ছবি

রাজশাহীতে দু’দিনব্যাপী হাসান আজিজুল হক সাহিত্য উৎসব শুরু

ছবি

জাতীয় জাদুঘরে ‘কলের গান: সেকাল-একাল’ শীর্ষক প্রদর্শনী

শুক্রবার থেকে ৩ দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব

ছবি

‘রোড টু বালুরঘাট’, মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের চিত্র প্রদর্শন

ছবি

পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাংলাদেশের মিতিয়া ওসমান

ছবি

চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে বর্ষ বরন সম্পন্ন

ছবি

জামালপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

ছবি

বনাঢ্য নানান আয়োজনে বিভাগীয় নগরী রংপুরে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ

ছবি

আজ চৈত্র সংক্রান্তি

ছবি

বর্ষবরণে সময়ের বিধি-নিষেধ মানবে না সাংস্কৃতিক জোট

ছবি

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার গুণীজন সংবর্ধনা

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় সকল প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে : ড. কামাল চৌধুরী

ছবি

এলাকাবাসীর সঙ্গে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নতুন কমিটি, ড. সনজীদা খাতুন সভাপতি, ড. আতিউর রহমান নির্বাহী সভাপতি,লিলি ইসলাম সাধারণ সম্পাদক

ছবি

এবার বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি

ছবি

আজ শেষ হচ্ছে মহান একুশের বইমেলা, বিক্রি বেড়েছে শেষ মুহুর্তে

ছবি

আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার জায়গা বরাদ্দ নাওদিতে পারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

ছবি

বইমেলা, মেয়াদ বাড়ায় খুশি সবাই

ছবি

বইমেলায় ফ্রান্স প্রবাসী কাজী এনায়েত উল্লাহর দুই বই

ছবি

নারী লেখকদের বই কম, বিক্রিও কম

ছবি

বইমেলায় বিদায়ের সুর

ছবি

শিশুদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে জমজমাট বইমেলার শিশু প্রহর

ছবি

বইমেলায় শিশুদের চোখে মুখে ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস

ছবি

বই মেলায় খুদে লেখকদের গল্প সংকলন ‘কিশোর রূপাবলি’

ছবি

`বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত উন্নত শিরের বাঙালি জাতি চাই’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ছবি

বইমেলায় সরোজ মেহেদীর ‘চেনা নগরে অচিন সময়ে’

ছবি

বইমেলায় মাহবুবুর রহমান তুহিনের ‘চেকবই’

বইমেলায় প্রকাশিত হলো সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের ‘যাপিত জীবনের গল্প’

ছবি

বইমেলায় পন্নী নিয়োগীর নতুন গ্রল্পগ্রন্থ আতশবাজি

tab

সংস্কৃতি

সমাজসেবায় একুশে পদকঃ এখনও ফেরি করে দই বিক্রি করেন জিয়াউল হক

ইয়াহিয়া খান রুবেল, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ইচ্ছে ছিলো লেখাপড়া করবেন। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণীতেই থেমে যায় তার সেই ইচ্ছা। কারণ, অভাব। বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ দহন করে জীবিকা নির্বাহ করা বাবা বই কেনার জন্য দেড় টাকা দিতে পারেননি। তবে সেই বালক জিয়াউল হককে এখন দেশের অনেকেই চেনেন। কারণ তিনি এবার একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

https://sangbad.net.bd/images/2024/February/16Feb24/news/ziaul-haque-1.jpg

না লেখাপড়া আর হয়নি। এখন ফেরি করে নিজের বানানো দই বিক্রি করেন। বয়স এখন ৯১। তার মতো টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে কেউ যেন লেখাপড়া থেকে ছিটকে না পড়ে, সেই চিন্তা থেকেই শুরু করেন কাজ।

জিয়াউল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন সাধারণ দই বিক্রেতা হলেও তার নেশা সমাজসেবা। দই বিক্রির টাকায় তিনি তৈরি করেছেন লাইব্রেরি।

স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেন জিয়াউল হক। তাই তাকে সবাই চেনে সাদা মনের মানুষ হিসেবে।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন নাগরিককে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় নাম রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দই বিক্রেতারও। সমাজসেবায় অবদান রাখায় এই পদক পাচ্ছেন তিনি।

জিয়াউল হকের বাবার নাম তৈয়ব আলী মোল্লা এবং মায়ের নাম শরীফুন নেছা। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ৩ নম্বর দলদলী ইউনিয়নের চামা মুশরিভুজা গ্রামে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর বর্তমানে তিনি বটতলা গ্রামে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন।

জিয়াউল হক ১৯৫৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চান। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ দহন করে জীবিকা নির্বাহ করা বাবা বই কেনার জন্য দেড় টাকা দিতে পারেননি। এই কারণে উচ্চবিদ্যালয়েও ভর্তি হওয়া হয়নি তার। এরপর বাবার সংগ্রহ করা দুধ দিয়ে দই তৈরি করে ফেরি করে বিক্রি করা শুরু করেন।

দু-তিন বছর পর কিছু টাকা জমা হয় জিয়াউল হকের হাতে। তখন জিয়াউল হকের চিন্তা হয়, যারা তার মতো টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়তে পারে, তাদের তিনি এই টাকা দিয়ে বই কিনে দেবেন। তবেই তার বিদ্যালয়ে পড়তে না পারার বেদনা লাঘব হবে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/February/16Feb24/news/ziaul-haque-2.jpg

আর এই লক্ষ্য সামনে রেখে গরিব ছাত্রদের মধ্যে বই বিলি শুরু করেন। যতদিন পর্যন্ত সরকার বই বিনা মূল্যে দেওয়া শুরু করেনি, ততোদিন পর্যন্ত বই দিতে থাকেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির ছাত্রদের বই দিতে থাকেন জিয়াউল। তার দেওয়া বই পড়ে ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে অনেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি করছেন। শুধু তা–ই নয়, দই বিক্রি করা টাকায় বইয়ের ভান্ডার গড়ে তোলেন। ১৯৬৯ সালে নিজের বাড়ির একটি ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’। এ পাঠাগারে এখন ১৪ হাজার বই আছে বলে জানা গেছে।

ভোলাহাট উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা জামিল বলেন, ৬৫ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে সাইকেলে চেপে মাথায় দই নিয়ে বিক্রি করেন জিয়াউল হক। আর এ দই বিক্রি থেকে যে টাকা আয় হয়, তা দিয়েই সমাজসেবা চালিয়ে যান। এলাকার শত শত মানুষের উপকার করেছেন তিনি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদানও দিয়েছেন। এমনকি, কেউ টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারছেন না শুনলে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবসময়।

একুশে পদকপ্রাপ্ত জিয়াউল হক জানান, ‘২০২৪ সালের একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় আমার নামও রয়েছে। বিষয়টি মঙ্গলবার (১৩) ফেব্রুয়ারি বিকেলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব আমাকে জানান। এতে আমি ভীষণ আনন্দিত। এই পদক আমার সমাজসেবাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।’

back to top