বইমেলার আজ ২৭তম দিন। আজ, কাল ও পরশু তারপরই ইতি টানা হবে অমর একুশে বইমেলার। এ বছর মেলা দুইদিন বাড়ানোর জন্য বাংলা একাডেমির কাছে প্রকাশকরা আবেদন করলেও এখনও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সময় না বাড়ালে আর বাকি ২ দিন। সেই হিসেবে বইমেলায় বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। প্রকাশক ও লেখকরা শেষ বেলায় নিজেদের বই কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্টলগুলোতে পাঠকের হাতে পছন্দের বই তুলে দিতে ব্যস্ত বিক্রয়কর্মীরা। তাদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। তবে সব স্টলের চিত্র এমন নয়।
গতকাল মেলার প্রবেশ দ্বার দুপুর ১২টায় খুললেও অন্যান্য দিনের মতো বিকেল ৩টা থেকেই মানুষের ঢল নামে। শবে বরাতের ছুটি থাকায়, অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন পাঠক দর্শনার্থী সমাগম কম হবে। কিন্তু তাদের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে গতকালও প্রচুর মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মেলায় মানুষের ঢল থাকলেও বই বিকিকিনি ছিল না অভিযোগ প্রকাশকদের। হাতেগোনো কয়েকটি প্রকাশনার স্টল ও প্যাভিলিয়ন বাদ দিলে বাকি স্টলগুলো ছিল ক্রেতাশূন্য। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, এবার মেলায় দর্শনার্থী বেশি এলেও গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম। ‘বিক্রি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নন’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমা, অন্বেষা, ছায়াবিথীসহ বেশ কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে বিক্রয়কর্মীদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। বিশষে করে প্রথমা স্টলে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বই বিক্রিও ছিল অন্যান্য স্টল প্যাভিলিয়নের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে লিটলম্যাগ চত্ত্বরে তখন হতাশার সুর। বিক্রয়কর্মীরা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে সময় পার করছিলেন।
এই চত্ত্বরের ৩৮ নম্বর ‘খেয়া’ স্টলের পাশের স্টলটি দেখা গেল ফাঁকা। এ স্টলটি কি কেউ নেননি জানতে চাইলে লেখক শ্যামল দাষ বলেন, ‘এখানে স্টল বরাদ্দ পেলে কি আর না পেলেই কি। এদিকে কেউ আসেই না। বই বা ম্যাগাজিন না কিনুক। লোকজন আসলেও তো ভালো লাগে’।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শেষ হয়ে গেলো বইমেলা। এই চত্ত্বরে শুধু পরিচিতরা আসে, আমাদের খুঁজতে। পাঠক দর্শনার্থীরা জানেই না লিটল ম্যাগ নামে একটা চত্ত্বর আছে। এতো বাজেভাবে আমাদের এই চত্বরের স্টলগুলো সাজিয়েছে এজন্য ঘৃণা জানাই বাংলা একাডেমিকে। এই চত্ব¡রকে ঘিরেই মেলা হওয়া উচিত ছিল, অথচ সবচেয়ে অবহেলা আর অবজ্ঞা করা হয়েছে আমাদের সঙ্গে।
নামসর্বস্ব, গুরুত্বহীন পুরো বছর বই বা ম্যাগাজিনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এমন অনেকেই স্টল নিয়েছেন। আবার স্টল নিয়েছেন কিন্তু বসেননি এমনও আছে। লিটল ম্যাগাজিন যে তার গৌরব হারিয়েছে তা এই ঘিঞ্জি চত্ত্বর থেকেই বোঝা যায়, বলে দুঃখ প্রকাশ করেন এই লেখক।
‘লেখক তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত লিটল ম্যাগ চত্বর ক্রমেই তার জৌলুস হারাচ্ছে’ বলেন লেখক, কবি ও ‘শালুক’ পত্রিকার সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ। লিটল ম্যাগ চত্বর ২৭ নম্বরের শালুক স্টলে তাকে পাওয়া গেলো না। তাকে পাওয়া গেলো মূল মেলার ইত্যাদি প্রকাশনীতে। লিটল ম্যাগ চত্ত্বরে আপনি নেই জিজ্ঞেস করতেই বলেন, ওদিকটায় কেউ যায় না। তাই ওখানে একটু কম থাকা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লিটল ম্যাগ চত্বর নিয়ে আয়োজকদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এর জৌলুস ক্রমাগত হারাচ্ছে’।
লিটল ম্যাগ চত্বর আগের পরিবেশ হারিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক সময় লিটল ম্যাগাজিন চত্বর মানেই ছিল তরুণদের আড্ডা, গল্প, সাহিত্য নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। এখন আর সেই পরিবেশটা নেই। এখন ইন্টারনেট, আকাশ সংস্কৃতি ও তরুণদের বই বিমুখতা আমাদের ব্যথিত করে। তবে আমরা আশাহত নই। এখনও সারা বাংলাদেশে লিটল ম্যাগাজিনের চর্চা হচ্ছে। কোনো সাহসী লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে হয়তো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাহস করে না। সেটি প্রকাশের জন্যই লিটল ম্যাগাজিন। হয়তো সাময়িকভাবে এতে ভাটা পড়েছে, তবে আমরা আশাবাদী এটি আবার তার জৌলুশ ফিরে পাবে।
লেখক ও সাংবাদিক হানযালা হান জানান, এই চত্বর ঘিরে পাঠকের আগ্রহ কম। অনেকেই জানেই না। কারণ একসময় এখানে সমাজের প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে যেসব ম্যাগাজিন প্রকাশ পেতো, রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণে এখন আর এমন ম্যাগাজিন নেই বললেই চলে। তবে লিটল ম্যাগাজিনই কিন্তু লেখক তৈরির আঁতুড়ঘর ছিল। আমরা চাই আগের মতো লিটল ম্যাগ চত্বর তার প্রাণ ফিরে পাক।
এবারের বইমেলায় লিটল ম্যাগ চত্বরে ১৩৩টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত স্টলের মধ্যে অনেক স্টল নাই। যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আবার স্টল খোলা রেখে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন কিংবা মোবাইলে সময় পার করছেন।
লিটল ম্যাগ চত্বরের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হলে মেলা শেষে রিভিউ মিটিং জরুরি বলে জানান চত্বরে স্টল বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই।
মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
বইমেলার আজ ২৭তম দিন। আজ, কাল ও পরশু তারপরই ইতি টানা হবে অমর একুশে বইমেলার। এ বছর মেলা দুইদিন বাড়ানোর জন্য বাংলা একাডেমির কাছে প্রকাশকরা আবেদন করলেও এখনও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সময় না বাড়ালে আর বাকি ২ দিন। সেই হিসেবে বইমেলায় বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। প্রকাশক ও লেখকরা শেষ বেলায় নিজেদের বই কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্টলগুলোতে পাঠকের হাতে পছন্দের বই তুলে দিতে ব্যস্ত বিক্রয়কর্মীরা। তাদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। তবে সব স্টলের চিত্র এমন নয়।
গতকাল মেলার প্রবেশ দ্বার দুপুর ১২টায় খুললেও অন্যান্য দিনের মতো বিকেল ৩টা থেকেই মানুষের ঢল নামে। শবে বরাতের ছুটি থাকায়, অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন পাঠক দর্শনার্থী সমাগম কম হবে। কিন্তু তাদের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে গতকালও প্রচুর মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মেলায় মানুষের ঢল থাকলেও বই বিকিকিনি ছিল না অভিযোগ প্রকাশকদের। হাতেগোনো কয়েকটি প্রকাশনার স্টল ও প্যাভিলিয়ন বাদ দিলে বাকি স্টলগুলো ছিল ক্রেতাশূন্য। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, এবার মেলায় দর্শনার্থী বেশি এলেও গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম। ‘বিক্রি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নন’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমা, অন্বেষা, ছায়াবিথীসহ বেশ কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে বিক্রয়কর্মীদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। বিশষে করে প্রথমা স্টলে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বই বিক্রিও ছিল অন্যান্য স্টল প্যাভিলিয়নের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে লিটলম্যাগ চত্ত্বরে তখন হতাশার সুর। বিক্রয়কর্মীরা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে সময় পার করছিলেন।
এই চত্ত্বরের ৩৮ নম্বর ‘খেয়া’ স্টলের পাশের স্টলটি দেখা গেল ফাঁকা। এ স্টলটি কি কেউ নেননি জানতে চাইলে লেখক শ্যামল দাষ বলেন, ‘এখানে স্টল বরাদ্দ পেলে কি আর না পেলেই কি। এদিকে কেউ আসেই না। বই বা ম্যাগাজিন না কিনুক। লোকজন আসলেও তো ভালো লাগে’।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শেষ হয়ে গেলো বইমেলা। এই চত্ত্বরে শুধু পরিচিতরা আসে, আমাদের খুঁজতে। পাঠক দর্শনার্থীরা জানেই না লিটল ম্যাগ নামে একটা চত্ত্বর আছে। এতো বাজেভাবে আমাদের এই চত্বরের স্টলগুলো সাজিয়েছে এজন্য ঘৃণা জানাই বাংলা একাডেমিকে। এই চত্ব¡রকে ঘিরেই মেলা হওয়া উচিত ছিল, অথচ সবচেয়ে অবহেলা আর অবজ্ঞা করা হয়েছে আমাদের সঙ্গে।
নামসর্বস্ব, গুরুত্বহীন পুরো বছর বই বা ম্যাগাজিনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এমন অনেকেই স্টল নিয়েছেন। আবার স্টল নিয়েছেন কিন্তু বসেননি এমনও আছে। লিটল ম্যাগাজিন যে তার গৌরব হারিয়েছে তা এই ঘিঞ্জি চত্ত্বর থেকেই বোঝা যায়, বলে দুঃখ প্রকাশ করেন এই লেখক।
‘লেখক তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত লিটল ম্যাগ চত্বর ক্রমেই তার জৌলুস হারাচ্ছে’ বলেন লেখক, কবি ও ‘শালুক’ পত্রিকার সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ। লিটল ম্যাগ চত্বর ২৭ নম্বরের শালুক স্টলে তাকে পাওয়া গেলো না। তাকে পাওয়া গেলো মূল মেলার ইত্যাদি প্রকাশনীতে। লিটল ম্যাগ চত্ত্বরে আপনি নেই জিজ্ঞেস করতেই বলেন, ওদিকটায় কেউ যায় না। তাই ওখানে একটু কম থাকা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লিটল ম্যাগ চত্বর নিয়ে আয়োজকদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এর জৌলুস ক্রমাগত হারাচ্ছে’।
লিটল ম্যাগ চত্বর আগের পরিবেশ হারিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক সময় লিটল ম্যাগাজিন চত্বর মানেই ছিল তরুণদের আড্ডা, গল্প, সাহিত্য নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। এখন আর সেই পরিবেশটা নেই। এখন ইন্টারনেট, আকাশ সংস্কৃতি ও তরুণদের বই বিমুখতা আমাদের ব্যথিত করে। তবে আমরা আশাহত নই। এখনও সারা বাংলাদেশে লিটল ম্যাগাজিনের চর্চা হচ্ছে। কোনো সাহসী লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে হয়তো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাহস করে না। সেটি প্রকাশের জন্যই লিটল ম্যাগাজিন। হয়তো সাময়িকভাবে এতে ভাটা পড়েছে, তবে আমরা আশাবাদী এটি আবার তার জৌলুশ ফিরে পাবে।
লেখক ও সাংবাদিক হানযালা হান জানান, এই চত্বর ঘিরে পাঠকের আগ্রহ কম। অনেকেই জানেই না। কারণ একসময় এখানে সমাজের প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে যেসব ম্যাগাজিন প্রকাশ পেতো, রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণে এখন আর এমন ম্যাগাজিন নেই বললেই চলে। তবে লিটল ম্যাগাজিনই কিন্তু লেখক তৈরির আঁতুড়ঘর ছিল। আমরা চাই আগের মতো লিটল ম্যাগ চত্বর তার প্রাণ ফিরে পাক।
এবারের বইমেলায় লিটল ম্যাগ চত্বরে ১৩৩টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত স্টলের মধ্যে অনেক স্টল নাই। যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আবার স্টল খোলা রেখে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন কিংবা মোবাইলে সময় পার করছেন।
লিটল ম্যাগ চত্বরের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হলে মেলা শেষে রিভিউ মিটিং জরুরি বলে জানান চত্বরে স্টল বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই।