alt

সংস্কৃতি

আহা বৈশাখ এলো বৈশাখ

জামিরুল শরীফ

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১

শিল্পী : সমর মজুমদার

উদ্ধৃত কবিতার পংক্তিমালায় চমৎকার মিলের অকৃত্রিম উপলব্ধির ধ্বনিতরঙ্গে শত শত বছর ধরে বাঙালির জীবনধারার বহুবর্ণ চিত্র ফোটে। ধরিত্রীর মাতৃস্নেহের অধিকারী চিরপ্রাণের মমতায় ও রঙে, তার ভাবনা-ইতিহাস ও ভূগোলের গর্বিত সংকলনে, রূপময় গড়নে, আর উদার প্রকৃতির উপাদানে বাঙালির প্রাণের গঠন। সেখানেই তার ঘরে বাইরে প্রীতিবন্ধন। সেখানে তার বিরাট বুকের সঞ্চিত স্বদেশপ্রেমের অধিকারী সে। যুগ ও জাতির জীবনে তার নিজস্ব সংস্কৃতির গর্বিত ঐতিহ্যের বর্ণিল উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত সর্বজনীন উৎসবের চির বাঙালির বর্ষবরণের দিন আজ- পহেলা বৈশাখ। স্বাগত ১৪২৮, শুভ নববর্ষ।

মুসলিম ধর্মীয় কিছু নেতা তাদের প্রচারের সাহায্যে ধর্মীয় অনৈক্যের ওপর শ্রেণিসংগ্রামকে পরিণত করতে চাইছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ক্ষমতা ও অর্থ লোলুপতা, অপরের মত ও পথ সম্পর্কে অসহিষ্ণুতা, সংকীর্ণতা, মিথ্যাচার ও সুবিধাবাদ যেভাবে এসে ভর করছে, তার ফলে প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের শৃঙ্খলাবোধ, ঐক্য হারিয়ে ফেলছে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের জীবন ও সম্পদ-সম্পত্তির ওপর আক্রমণ ও আত্মসাতের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণে চালিত হচ্ছে। ধূলিসাৎ করতে চাইছে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন, লক্ষ্য ও গৌরব। সমস্যা যত জটিল ও ঘনীভূত হোক, আবহমান নদীর নির্মল জল যতোই ঘোলা করা হোক- বাঙালির ভাষা, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও গৌরব, বাংলা গান, বাংলা নাটক, বাংলা কবিতা, বাংলার চিত্রকলা, তার মনোলোকের চিন্তা স্রোতে ঐতিহ্যের নতুন পথের সন্ধানে নেমেছে অতীতে এবং নামবে। শত ষড়যন্ত্র, উৎপীড়ন সয়েও প্রজন্ম পরম্পরার মধ্যে তার আপন অস্তিত্বকে সে অক্ষুণ্ণে রেখেছে। তার আত্মবলিদান আর ধ্বংসাবশেষের স্মারক চিহ্নে চোখ রেখেই সে ভূগর্ভ খুঁড়ে জেনে নিয়েছে তার ইতিহাস। বাঙালি পরের মুখ চেয়ে বাঁচবে না, সে কেবলই আত্মজ্ঞ হয়ে উঠছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুর্ভাবনায় সে পীড়িত নয়। তার সৃজনপ্রগতি থেমে নেই, নিছক কল্পনাবিলাসের ভাবনা ভুলে বিশ্ববিকিরণের আকাশবাণী তার কানে ঝংকৃত। অজানা তিমির অতিক্রমণের সঙ্গে তার সেই লোকোত্তর প্রতিভা, সেই সঞ্জীবনী ব্যক্তিত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চিরপ্রতিবাদী বিবেকের স্বপ্ন-বজ্রবাণী।

তার অর্থ সংগতি থাক আর নাই থাক, তার উৎসব থেমে নেই। তার পাদটীকায় আছে তার ভাষা ও দেশপ্রেম। সবার হৃদয়ে আজ অবিরাম বাজে রবীন্দ্রনাথের সেই চিরচেনা বাণী ও সুর ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’, দ্বিজেন্দ্রলালের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’, নজরুলের ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’- নতুনের কেতন উড়িয়ে এসেছে বজ্রবৈশাখ; তার সম্ভাবনা, প্রত্যাশা আর সমৃদ্ধি অর্জনের লড়াইয়ে, বাংলাদেশ ও বাঙালির স্বপ্ন সংস্কৃতির বিরুদ্ধ-শক্তির অনিষ্টের মূলধারা উপড়ে ফেলার প্রত্যয় ও প্রেরণা নিয়ে। আনন্দ-হিল্লোলে, উচ্ছ্বাস-উষ্ণতায়, প্রত্যয়-প্রতিজ্ঞায় আজ দেশবাসীর আবাহন নতুন বছরকে। পুরনো ব্যর্থতা, জঞ্জাল সরিয়ে নতুন আশা, কর্মোদ্দীপনা, স্বপ্ন, প্রত্যয় ও প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হওয়ার ডাক নিয়ে এলো বৈশাখ।

সূর্য ওঠে বেলা বাড়ে, মনোরথের গতিও বাড়ে, শহরের রাস্তায়-উদ্যানে, খণ্ড খণ্ড প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনে নামে মানুষের ঢল, হৃদয়ের অনুরুদ্ধ আবেগে লোকসমাগম। গ্রীষ্মের দাবদাহ তুচ্ছ করে, অস্বস্তি উপেক্ষা করে বর্ষবরণের প্রাণোচ্ছল তরঙ্গ-উৎসবে ছোটে মানুষের দল। ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত অবধি চলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। কান পাতলে শোনা যাবে নাগরদোলার কচকচ আর পায়ে পায়ে উত্থিত ধূলিপুঞ্জের মধ্যে মানুষের গুঞ্জন-ধনি, শিশুর কলরব-কোলাহল আর উচ্ছ্বাস। নাচ, গান, নাটক, মেলা, নতুন হালখাতা, মিষ্টিমুখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নতুন পাঞ্জাবি, লালপেড়ে সাদা শাড়ি, ফতুয়া পরার ধুম। দলে দলে খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো, আড্ডা, শুভ নববর্ষ জানানোর রেওয়াজ রঙিন উৎসবের নানা অনুষঙ্গে বর্ষ উদযাপনে নতুন মাত্রিকতায় সেই পুরাতন রং ও সুর।

চারপাশে সবুজের লহরি, নতুন পাতার ছন্দে-গানে অজানা আনন্দে চিত্ত উঠেছে ভরে। এমনই হৃদয়ের গতি, নতুন তরঙ্গ উঠেছে, ক্ষণিকের পাগল হাওয়ার স্পর্শে জেগে উঠেছে চারপাশ। উদ্যম ঢাকা শহরের ঘনবসতি আর জনমানুষের প্রবল চাপে দমবন্ধের উপক্রম সত্ত্বেও এখানে মানুষ কর্মপ্রবর্তনার যান্ত্রিক জাগরণ আর মরণব্যাধি করোনার প্রভাবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট ভুলে নব আনন্দে নেমেছে পথে, মেতেছে বর্ষবরণ উৎসবে। বহুমৃত্যু বহু বিচ্ছেদ-বেদনার উপত্যকায় দাঁড়িয়েও বাঙালি তার দীর্ঘ-প্রসর জীবন সঞ্চরণে তীক্ষ্ণে, তির্যক, দীপ্ত, দৃপ্ত-বহুচেতনার বিস্ময় জাগরণে চিরকাল অপ্রতিদ্বন্দ্বি, আন্দোলিত তার জীবনতৃষ্ণা। চৈতন্যের জাগরণের দিকে নিরন্তর ধ্বনিত এক দিকচিহ্ন, এক পরাক্রান্ত রূঢ়তার ভিতর দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির লাবণ্য প্রকাশ।

আজ নববর্ষের প্রত্যুষে সুস্থ আলোক বাঙালির পূর্ণ-আত্মপ্রকাশের ব্যর্থ লজ্জাকে ঢেকে দিক। হৃদয় রঙের প্রাণে মোচড় উঠুক... জনসমুদ্রে নামুক জোয়ার... তরঙ্গ ভাঙুক উন্মত্ত কোলাহল। তার উজ্জ্বল ললাটে কাঁপুক কামনার ঘোর... অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাগুক অনির্বাণ চেতনায়, রচিত হোক আরেক নতুন পাণ্ডুলিপি... আজ বেলাশেষে সূর্যাস্তের সংরক্ত আবিরমাখা বহ্নিবরণ ফিতেয় বাঁধুক বিশ্বজয়ীর স্বপ্নবাণী।

সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে

ছবি

রোটারি ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট ভোকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান

ছবি

দর্শক নে, ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ময়মনসিংহের পূরবী সিনেমা হল

প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে পদত্যাগপত্র, চার শর্ত মানলে ফিরবেন জামিল আহমেদ

ছবি

বইমেলায় তপন কান্তি সরকারের বই ‘নতুন বিশ্বের নতুন ক্যারিয়ার’

ছবি

পর্দা নেমেছে সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের

ছবি

পাঠাও-এর ‘অগ্রযাত্রার অগ্রদূত’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

শেষ মুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব

ছবি

হুমকির মুখে স্থগিত ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব

ছবি

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব

ছবি

বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি আয়েশা মুন্নির ‘গুলবাহার ভোর’

ছবি

সোনারগাঁয়ে লোককারুশিল্প মেলা, লুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য শীতল পাটির প্রদর্শনী

ছবি

সোনারগাঁয়ে ছুটির দিনে লোকারন্য লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

ছবি

বাংলা একাডেমি পুরস্কারের খবর নেই, এবার সরে গেলেন জুরি সদস্য

ছবি

কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রত্যাখ্যান করেছেন

এবার দশজন পাচ্ছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।

ছবি

সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধন

ছবি

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদীচী যশোর জেলা সংসদের ২২তম সম্মেলন শুরু

ছবি

ভিভো ও এসওএস এর যৌথ উদ্যোগে ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী

ছবি

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দিনব্যাপী চ্যারিটি মেলা

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে জাতীয় অধ্যাপক করার দাবি

ছবি

শিল্পকলা একাডেমিতে চলচ্চিত্রের জন্য পৃথক বিভাগ চায় চলচ্চিত্রকর্মীরা

ছবি

শিল্পকর্মে বুড়িগঙ্গা পাড়ের জীবন

ছবি

শিল্পকর্মে বুড়িগঙ্গা পাড়ের জীবন

ছবি

এবার শিল্পকলায় নাটক বন্ধের প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা

ছবি

রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

ছবি

শহীদদের স্মরণে সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বান: ভয়কে জয় করে চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়

ছবি

রিয়েলমি’র আয়োজনে ন্যাশনাল মোবাইল ফটোগ্রাফি কনটেস্ট ২০২৪

ছবি

ময়মনসিংহে ৩ শতাধিক আলোকচিত্র নিয়ে ’ফ্যাসিস্ট প্রদর্শনী’

ছবি

ফ্লোরিডায় সোহরাব আলমের একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী

ছবি

ডিজিটাল মিডিয়ার আসক্তি পৃথিবীকে অশান্ত করছে

জাতীয় সাংস্কৃতিক মৈত্রী নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

ছবি

মাসজুড়ে ভিভো’র ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা

ছবি

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী পদত্যাগ

ছবি

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারীর পদত্যাগ

tab

সংস্কৃতি

আহা বৈশাখ এলো বৈশাখ

জামিরুল শরীফ

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

শিল্পী : সমর মজুমদার

বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১

উদ্ধৃত কবিতার পংক্তিমালায় চমৎকার মিলের অকৃত্রিম উপলব্ধির ধ্বনিতরঙ্গে শত শত বছর ধরে বাঙালির জীবনধারার বহুবর্ণ চিত্র ফোটে। ধরিত্রীর মাতৃস্নেহের অধিকারী চিরপ্রাণের মমতায় ও রঙে, তার ভাবনা-ইতিহাস ও ভূগোলের গর্বিত সংকলনে, রূপময় গড়নে, আর উদার প্রকৃতির উপাদানে বাঙালির প্রাণের গঠন। সেখানেই তার ঘরে বাইরে প্রীতিবন্ধন। সেখানে তার বিরাট বুকের সঞ্চিত স্বদেশপ্রেমের অধিকারী সে। যুগ ও জাতির জীবনে তার নিজস্ব সংস্কৃতির গর্বিত ঐতিহ্যের বর্ণিল উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত সর্বজনীন উৎসবের চির বাঙালির বর্ষবরণের দিন আজ- পহেলা বৈশাখ। স্বাগত ১৪২৮, শুভ নববর্ষ।

মুসলিম ধর্মীয় কিছু নেতা তাদের প্রচারের সাহায্যে ধর্মীয় অনৈক্যের ওপর শ্রেণিসংগ্রামকে পরিণত করতে চাইছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ক্ষমতা ও অর্থ লোলুপতা, অপরের মত ও পথ সম্পর্কে অসহিষ্ণুতা, সংকীর্ণতা, মিথ্যাচার ও সুবিধাবাদ যেভাবে এসে ভর করছে, তার ফলে প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের শৃঙ্খলাবোধ, ঐক্য হারিয়ে ফেলছে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের জীবন ও সম্পদ-সম্পত্তির ওপর আক্রমণ ও আত্মসাতের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণে চালিত হচ্ছে। ধূলিসাৎ করতে চাইছে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন, লক্ষ্য ও গৌরব। সমস্যা যত জটিল ও ঘনীভূত হোক, আবহমান নদীর নির্মল জল যতোই ঘোলা করা হোক- বাঙালির ভাষা, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও গৌরব, বাংলা গান, বাংলা নাটক, বাংলা কবিতা, বাংলার চিত্রকলা, তার মনোলোকের চিন্তা স্রোতে ঐতিহ্যের নতুন পথের সন্ধানে নেমেছে অতীতে এবং নামবে। শত ষড়যন্ত্র, উৎপীড়ন সয়েও প্রজন্ম পরম্পরার মধ্যে তার আপন অস্তিত্বকে সে অক্ষুণ্ণে রেখেছে। তার আত্মবলিদান আর ধ্বংসাবশেষের স্মারক চিহ্নে চোখ রেখেই সে ভূগর্ভ খুঁড়ে জেনে নিয়েছে তার ইতিহাস। বাঙালি পরের মুখ চেয়ে বাঁচবে না, সে কেবলই আত্মজ্ঞ হয়ে উঠছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুর্ভাবনায় সে পীড়িত নয়। তার সৃজনপ্রগতি থেমে নেই, নিছক কল্পনাবিলাসের ভাবনা ভুলে বিশ্ববিকিরণের আকাশবাণী তার কানে ঝংকৃত। অজানা তিমির অতিক্রমণের সঙ্গে তার সেই লোকোত্তর প্রতিভা, সেই সঞ্জীবনী ব্যক্তিত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চিরপ্রতিবাদী বিবেকের স্বপ্ন-বজ্রবাণী।

তার অর্থ সংগতি থাক আর নাই থাক, তার উৎসব থেমে নেই। তার পাদটীকায় আছে তার ভাষা ও দেশপ্রেম। সবার হৃদয়ে আজ অবিরাম বাজে রবীন্দ্রনাথের সেই চিরচেনা বাণী ও সুর ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’, দ্বিজেন্দ্রলালের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’, নজরুলের ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’- নতুনের কেতন উড়িয়ে এসেছে বজ্রবৈশাখ; তার সম্ভাবনা, প্রত্যাশা আর সমৃদ্ধি অর্জনের লড়াইয়ে, বাংলাদেশ ও বাঙালির স্বপ্ন সংস্কৃতির বিরুদ্ধ-শক্তির অনিষ্টের মূলধারা উপড়ে ফেলার প্রত্যয় ও প্রেরণা নিয়ে। আনন্দ-হিল্লোলে, উচ্ছ্বাস-উষ্ণতায়, প্রত্যয়-প্রতিজ্ঞায় আজ দেশবাসীর আবাহন নতুন বছরকে। পুরনো ব্যর্থতা, জঞ্জাল সরিয়ে নতুন আশা, কর্মোদ্দীপনা, স্বপ্ন, প্রত্যয় ও প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হওয়ার ডাক নিয়ে এলো বৈশাখ।

সূর্য ওঠে বেলা বাড়ে, মনোরথের গতিও বাড়ে, শহরের রাস্তায়-উদ্যানে, খণ্ড খণ্ড প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনে নামে মানুষের ঢল, হৃদয়ের অনুরুদ্ধ আবেগে লোকসমাগম। গ্রীষ্মের দাবদাহ তুচ্ছ করে, অস্বস্তি উপেক্ষা করে বর্ষবরণের প্রাণোচ্ছল তরঙ্গ-উৎসবে ছোটে মানুষের দল। ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত অবধি চলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। কান পাতলে শোনা যাবে নাগরদোলার কচকচ আর পায়ে পায়ে উত্থিত ধূলিপুঞ্জের মধ্যে মানুষের গুঞ্জন-ধনি, শিশুর কলরব-কোলাহল আর উচ্ছ্বাস। নাচ, গান, নাটক, মেলা, নতুন হালখাতা, মিষ্টিমুখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নতুন পাঞ্জাবি, লালপেড়ে সাদা শাড়ি, ফতুয়া পরার ধুম। দলে দলে খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো, আড্ডা, শুভ নববর্ষ জানানোর রেওয়াজ রঙিন উৎসবের নানা অনুষঙ্গে বর্ষ উদযাপনে নতুন মাত্রিকতায় সেই পুরাতন রং ও সুর।

চারপাশে সবুজের লহরি, নতুন পাতার ছন্দে-গানে অজানা আনন্দে চিত্ত উঠেছে ভরে। এমনই হৃদয়ের গতি, নতুন তরঙ্গ উঠেছে, ক্ষণিকের পাগল হাওয়ার স্পর্শে জেগে উঠেছে চারপাশ। উদ্যম ঢাকা শহরের ঘনবসতি আর জনমানুষের প্রবল চাপে দমবন্ধের উপক্রম সত্ত্বেও এখানে মানুষ কর্মপ্রবর্তনার যান্ত্রিক জাগরণ আর মরণব্যাধি করোনার প্রভাবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট ভুলে নব আনন্দে নেমেছে পথে, মেতেছে বর্ষবরণ উৎসবে। বহুমৃত্যু বহু বিচ্ছেদ-বেদনার উপত্যকায় দাঁড়িয়েও বাঙালি তার দীর্ঘ-প্রসর জীবন সঞ্চরণে তীক্ষ্ণে, তির্যক, দীপ্ত, দৃপ্ত-বহুচেতনার বিস্ময় জাগরণে চিরকাল অপ্রতিদ্বন্দ্বি, আন্দোলিত তার জীবনতৃষ্ণা। চৈতন্যের জাগরণের দিকে নিরন্তর ধ্বনিত এক দিকচিহ্ন, এক পরাক্রান্ত রূঢ়তার ভিতর দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির লাবণ্য প্রকাশ।

আজ নববর্ষের প্রত্যুষে সুস্থ আলোক বাঙালির পূর্ণ-আত্মপ্রকাশের ব্যর্থ লজ্জাকে ঢেকে দিক। হৃদয় রঙের প্রাণে মোচড় উঠুক... জনসমুদ্রে নামুক জোয়ার... তরঙ্গ ভাঙুক উন্মত্ত কোলাহল। তার উজ্জ্বল ললাটে কাঁপুক কামনার ঘোর... অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাগুক অনির্বাণ চেতনায়, রচিত হোক আরেক নতুন পাণ্ডুলিপি... আজ বেলাশেষে সূর্যাস্তের সংরক্ত আবিরমাখা বহ্নিবরণ ফিতেয় বাঁধুক বিশ্বজয়ীর স্বপ্নবাণী।

back to top