হুমায়ুন কবীর
নয় মাসব্যাপী মানব ইতিহাসের এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে।
সেই আনন্দ-বেদনায় সিক্ত দিনটির ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। স্বাধীনতার অন্বেষণ, ১৯৭১ সালের মহোত্তম ত্যাগ, বীরত্ব গাঁথা আর কষ্টগুলি এখনও আমাদের আবেগের সর্বোচ্চ স্তরকে নাড়া দিয়ে যায় প্রতিমুহূর্তে।
স্বাধীনতার জন্য বাংলার মহাকাব্যিক যাত্রা এবং সেই সময়ে এ দেশের মানুষের আত্মত্যাগের ঘটনাকে উপস্থাপন করার জন্য ঢাকার উত্তরায় গ্যালারী কায়া স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ‘এপিক ১৯৭১’ শীর্ষক একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ১৪ জানুয়ারী শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২৯ জানুয়ারী। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য খোলা থাকবে।
প্রদর্শনীতে আটজন শিল্পীর – বাংলাদেশের শাহাবুদ্দিন আহমেদ, জামাল আহমেদ, রঞ্জিত দাস এবং আলপ্তগীন তুষার আর ভারতের সোমনাথ হোর , চন্দ্র ভট্টাচার্য, অতীন বসাক ও আদিত্য বসাক – উজ্জ্বল কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে।
বিভিন্ন মাধ্যমের – এক্রেলিক, তেল, কালি, এচিং, সিনথেটিক, টেম্পেরা, সেরিগ্রাফ, লিথোগ্রাফ এবং কাগজ ও ক্যানভাসে – ১৯৬৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে করা তাদের ৩১টি শিল্পকর্ম জায়গা পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে পটুয়া কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ কিবরিয়ার পাঁচটি কাজও রয়েছে প্রদর্শনীতে।
গ্যালারী কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী বলছিলেন যে প্রদর্শনীটির ধারণা প্রথম তার মাথায় আসে ২০২০ সালে।
"আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে কিছু করার তাগিদ আমার সবসময় ছিল। আমি শিল্পের মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং ১৯৭১ সালের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে চেয়েছিলাম। ‘এপিক ১৯৭১’ সেই সবেরই চূড়ান্ত ধাপ। এখানকার প্রখ্যাত প্রবীণ ও তরুণ শিল্পী এবং বাংলাদেশ যখন সৃষ্টি হয়েছিল সেই সমযয়ের প্রকৃত সারমর্মকে চিত্রিত করার জন্য ভারতকে একত্রিত করা হয়েছে,” বলেন গৌতম।
"দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন আমি শিশু ছিলাম। যাইহোক, এটি আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কারণ আমি আমার পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং বাকিরা বাংলাদেশে রয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমরা যে মাসগুলো কাটিয়েছি তা ছিল যন্ত্রণায় ভরা। দখলদার বাহিনীর হাতে আমাদের প্রিয়জন হারানোর ভয়। আজকের প্রজন্মের ১৯৭১ সালে কী ঘটেছিল তা জানা দরকার, মনে রাখা দরকার. পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক এবং সামাজিক দিকগুলিও আত্মস্থ করতে হবে,” বলেন তিনি।
গ্যালারী কায়ার এই প্রদর্শনীতে শাহবুদ্দিন আহমেদের শত্রু নিধনে ধাবমান মুক্তিযোদ্ধার একটি বিশাল তৈলচিত্রসহ শিল্পকর্ম রয়েছে পাঁচটি। জামাল আহমেদের অস্ত্র নিয়ে গেরিলা যোদ্ধার ছবি। কোলাজের আঙ্গিকে রণজিৎ দাশ তুলে ধরেছেন গণহত্যা, নারীদের ওপর নির্যাতন ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দৃশ্য। আলপ্তগীন তুষার এঁকেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি।
ভারতের শিল্পীদের মধ্যে সোমনাথ হোরের রয়েছে কয়েকটি ছাপচিত্র আর ড্রয়িং। আদিত্য বসাক ফুটিয়েছেন যোদ্ধা ও গণহত্যার ছবি। ‘যুদ্ধ শেষে’ নামের একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে স্তূপাকার মাথার খুলি। চন্দ্র ভট্টাচার্য ‘তীরবিদ্ধ মানুষ’ এ বেদনা ও বীভৎসতা তুলে এনেছেন। আর অতীন বসাক দেখিয়েছেন অস্থির স্তূপের ভেতর নতুন জীবনের উন্মেষ।
হুমায়ুন কবীর
রোববার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২
নয় মাসব্যাপী মানব ইতিহাসের এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে।
সেই আনন্দ-বেদনায় সিক্ত দিনটির ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। স্বাধীনতার অন্বেষণ, ১৯৭১ সালের মহোত্তম ত্যাগ, বীরত্ব গাঁথা আর কষ্টগুলি এখনও আমাদের আবেগের সর্বোচ্চ স্তরকে নাড়া দিয়ে যায় প্রতিমুহূর্তে।
স্বাধীনতার জন্য বাংলার মহাকাব্যিক যাত্রা এবং সেই সময়ে এ দেশের মানুষের আত্মত্যাগের ঘটনাকে উপস্থাপন করার জন্য ঢাকার উত্তরায় গ্যালারী কায়া স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ‘এপিক ১৯৭১’ শীর্ষক একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ১৪ জানুয়ারী শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২৯ জানুয়ারী। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য খোলা থাকবে।
প্রদর্শনীতে আটজন শিল্পীর – বাংলাদেশের শাহাবুদ্দিন আহমেদ, জামাল আহমেদ, রঞ্জিত দাস এবং আলপ্তগীন তুষার আর ভারতের সোমনাথ হোর , চন্দ্র ভট্টাচার্য, অতীন বসাক ও আদিত্য বসাক – উজ্জ্বল কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে।
বিভিন্ন মাধ্যমের – এক্রেলিক, তেল, কালি, এচিং, সিনথেটিক, টেম্পেরা, সেরিগ্রাফ, লিথোগ্রাফ এবং কাগজ ও ক্যানভাসে – ১৯৬৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে করা তাদের ৩১টি শিল্পকর্ম জায়গা পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে পটুয়া কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ কিবরিয়ার পাঁচটি কাজও রয়েছে প্রদর্শনীতে।
গ্যালারী কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী বলছিলেন যে প্রদর্শনীটির ধারণা প্রথম তার মাথায় আসে ২০২০ সালে।
"আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে কিছু করার তাগিদ আমার সবসময় ছিল। আমি শিল্পের মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং ১৯৭১ সালের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে চেয়েছিলাম। ‘এপিক ১৯৭১’ সেই সবেরই চূড়ান্ত ধাপ। এখানকার প্রখ্যাত প্রবীণ ও তরুণ শিল্পী এবং বাংলাদেশ যখন সৃষ্টি হয়েছিল সেই সমযয়ের প্রকৃত সারমর্মকে চিত্রিত করার জন্য ভারতকে একত্রিত করা হয়েছে,” বলেন গৌতম।
"দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন আমি শিশু ছিলাম। যাইহোক, এটি আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কারণ আমি আমার পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং বাকিরা বাংলাদেশে রয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমরা যে মাসগুলো কাটিয়েছি তা ছিল যন্ত্রণায় ভরা। দখলদার বাহিনীর হাতে আমাদের প্রিয়জন হারানোর ভয়। আজকের প্রজন্মের ১৯৭১ সালে কী ঘটেছিল তা জানা দরকার, মনে রাখা দরকার. পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক এবং সামাজিক দিকগুলিও আত্মস্থ করতে হবে,” বলেন তিনি।
গ্যালারী কায়ার এই প্রদর্শনীতে শাহবুদ্দিন আহমেদের শত্রু নিধনে ধাবমান মুক্তিযোদ্ধার একটি বিশাল তৈলচিত্রসহ শিল্পকর্ম রয়েছে পাঁচটি। জামাল আহমেদের অস্ত্র নিয়ে গেরিলা যোদ্ধার ছবি। কোলাজের আঙ্গিকে রণজিৎ দাশ তুলে ধরেছেন গণহত্যা, নারীদের ওপর নির্যাতন ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দৃশ্য। আলপ্তগীন তুষার এঁকেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি।
ভারতের শিল্পীদের মধ্যে সোমনাথ হোরের রয়েছে কয়েকটি ছাপচিত্র আর ড্রয়িং। আদিত্য বসাক ফুটিয়েছেন যোদ্ধা ও গণহত্যার ছবি। ‘যুদ্ধ শেষে’ নামের একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে স্তূপাকার মাথার খুলি। চন্দ্র ভট্টাচার্য ‘তীরবিদ্ধ মানুষ’ এ বেদনা ও বীভৎসতা তুলে এনেছেন। আর অতীন বসাক দেখিয়েছেন অস্থির স্তূপের ভেতর নতুন জীবনের উন্মেষ।