বাঙালি সাজে কয়েকজন বিদেশী নারী নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। ছবি তুলছেন নিজেদের, আর যা কিছু ভালো লাগছে তার। চার জনের মধ্যে যিনি একটু বয়সী সকলকে গাইড করছিলেন তার কাছ থেকে জানা গেলো তারা ফ্্রান্স থেকে এসেছেন। কক্সবাজারে একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এসেছেন ‘বর্ষবরন’ অনুষ্ঠান দেখতে।
তার নাম এনা। বাংলার বর্ষবরন কেমন লাগছে জানতে চাইলে, আধা বাংলায় এনা বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। সবাই সুন্দর করে সেজেছে, দেখতে ভালো লাগছে। আমরা এই উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। আজ দেখলাম।’
এনার পাশে দাড়ানো এ্যালেন বলেন, ‘বাঙালীর বর্ষবরণ করাটা খুবই আনন্দের হয় অনেকের মুখে শুনেছি। অনেক গান হয়, পান্তা- ইলিশ খায়। এবার সব হচ্ছে না তারপরও আমাদের খুব ভালো লাগছে।’ কথা শেষ না হতেই একজন পরিচিতকে (বিদেশী) দেখে তাকে ডেকে নেয় এ্যালেন। তারা কথা বলায় আর ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
‘এক টুকরো চমৎকার সকাল দিলো ছায়ানট। এমন সকালের অপেক্ষায় ছিলাম গত ২ বছর’-বলেই মূল মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন চিকিৎসক দম্পতি ডা. রিয়াজ ও ডা. সায়মা।
এক রকম সাজে সেজে এসেছেন তিন বন্ধু নিম্মি হোর, রিপা রোজারিও ও এমি রোজারিও। অপেক্ষা করছেন আরো দুই বন্ধুর জন্য। তারাও একইরকম শাড়ী-ব্লাউজ এমনকি চুড়ি-টিপটাও তাদের মতোই পড়ে আসছে জানিয়ে নিম্মি বলেন, ‘যখন শুনেছি বটমূলে বর্ষবরণ করবে ছায়ানট, তখনই আমরা ঠিক করেছি এখানে আসার। আর টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী যখন বল্লেন আপনারা উৎসব করুন, আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তখন খুব ভালো লেগেছে। একথা শুনে আশ্বস্ত হয়েছি। আর এখানে এসে নিরাপত্তার বিষযটা চোখে পড়েছে। যতো সাধারণ মানুষ ততো যেন পুলিশ আর র্যাব।’
‘অন্যান্যবার শাহবাগ থেকে লোকের জোয়ার থাকতো, এবার সেইটা নাই। কোনো দোকান পাট নাই, একদিনের মেলাটা খুব মিস করছি। তালপাতার তেহারী কিংবা পান্তা ইলিশের সেই দোকানগুলোও মিস করছি’ বলেই হেসে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়মান রাফি।
আজ যেন কেউ সাজিয়ে গুছিয়ে পোশাকি কথা বলতে প্রস্তুত না। সবাই বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে অগোছালো কথা বলতেই পছন্দ করছে। কারো সাথেই বেশীক্ষণ কথা বলা যাচ্ছে না। ছায়ানটের মূল মঞ্চের বাইরে নানা বয়সীরা ভিড় করছেন ছবি তুলছেন। অনেকেই লেকের পার ঘেষে বসে চুপচাপ গান শুনছেন।
এতো লোকের ভিড়ে একটু আলাদা করা গেলো একটি পরিবারকে। তারা বেশ একটু প্রস্তুত হয়েই এসেছেন পরিবারের সাথে গল্প করে সময় কাটাবার জন্য। সেগুন বাগিচার বাসিন্দা ইন্ডস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার বাসুদেবের স্ত্রী, মা, ভাই-বোনদের নিয়ে এসেছেন আর এনেছেন বসার জন্য চাদর, পাখা, পানিসহ হালকা খাবার।
বাসুদেব বলেন,‘ প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে আসি। তাই জানি কিভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আগের মতো জমজমাট বর্ষবরণ এর জায়গায় ফিরতে আরো একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে মিস করছি ক্রাউড আর ফকির আলমগীরকে।’
রোজা রেখেই স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন সদ্য চাকরী থেকে অবসরে যাওয়া আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘জীবন পার করে দিলাম ঢাকায়। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানে নানা কারণে আসা হয়নি। এবারই প্রথম।’ সেহরী খেয়ে আর ঘুমাননি আলমগীর, বলেন, ‘শাহবাগ থেকে হেঁটে আসতে একটু কষ্ট হয়েছে। যারা আয়োজন করে বা সরকারীভাবে ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা রাখলে ভালো হতো।’
কারওয়ান বাজার থেকে হেঁটে এসেছেন রবিন, মুক্তা, সবুজ, রুমিসহ কয়েকজন। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এতো আগে থেকেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত বাস যেতে দিলে ভালো হতো।’
করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের ঐহিত্যবাহী নববর্ষ বরণ। বন্ধ ছিলো সকল আয়োজন। আজ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষ ১৪২৯ বরণের অনুষ্ঠান। আর সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষের ঘোষণা আসে ঘড়ির কাঁটা যখন সাড়ে আটটায়। অনুষ্ঠান শেষ হলেও দল বেধে পরিবার নিয়ে রমনায় আসতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
বৈশাখের প্রথম দিন ঝাঁঝালো রোদের পরিবর্তে আলতো রোদ সকলকে স্বস্তি দিয়েছিলো। আর তাই যেন ছায়ানটের পরিবেশনা শেষ হলেও অনেকেই অলস বসে থাকেন, গল্পে মাতেন। শিশুরা ছুটতে থাকে মনের আনন্দে। রমনা পার্ক রঙিন হয়ে ওঠে নানা রঙের মানুষের পদচারনায়। দুই বছর পর একটুকরো চমৎকার সকাল পার করলো উৎসবপ্রেমী মানুষ।
বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২
বাঙালি সাজে কয়েকজন বিদেশী নারী নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। ছবি তুলছেন নিজেদের, আর যা কিছু ভালো লাগছে তার। চার জনের মধ্যে যিনি একটু বয়সী সকলকে গাইড করছিলেন তার কাছ থেকে জানা গেলো তারা ফ্্রান্স থেকে এসেছেন। কক্সবাজারে একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এসেছেন ‘বর্ষবরন’ অনুষ্ঠান দেখতে।
তার নাম এনা। বাংলার বর্ষবরন কেমন লাগছে জানতে চাইলে, আধা বাংলায় এনা বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। সবাই সুন্দর করে সেজেছে, দেখতে ভালো লাগছে। আমরা এই উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। আজ দেখলাম।’
এনার পাশে দাড়ানো এ্যালেন বলেন, ‘বাঙালীর বর্ষবরণ করাটা খুবই আনন্দের হয় অনেকের মুখে শুনেছি। অনেক গান হয়, পান্তা- ইলিশ খায়। এবার সব হচ্ছে না তারপরও আমাদের খুব ভালো লাগছে।’ কথা শেষ না হতেই একজন পরিচিতকে (বিদেশী) দেখে তাকে ডেকে নেয় এ্যালেন। তারা কথা বলায় আর ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
‘এক টুকরো চমৎকার সকাল দিলো ছায়ানট। এমন সকালের অপেক্ষায় ছিলাম গত ২ বছর’-বলেই মূল মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন চিকিৎসক দম্পতি ডা. রিয়াজ ও ডা. সায়মা।
এক রকম সাজে সেজে এসেছেন তিন বন্ধু নিম্মি হোর, রিপা রোজারিও ও এমি রোজারিও। অপেক্ষা করছেন আরো দুই বন্ধুর জন্য। তারাও একইরকম শাড়ী-ব্লাউজ এমনকি চুড়ি-টিপটাও তাদের মতোই পড়ে আসছে জানিয়ে নিম্মি বলেন, ‘যখন শুনেছি বটমূলে বর্ষবরণ করবে ছায়ানট, তখনই আমরা ঠিক করেছি এখানে আসার। আর টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী যখন বল্লেন আপনারা উৎসব করুন, আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তখন খুব ভালো লেগেছে। একথা শুনে আশ্বস্ত হয়েছি। আর এখানে এসে নিরাপত্তার বিষযটা চোখে পড়েছে। যতো সাধারণ মানুষ ততো যেন পুলিশ আর র্যাব।’
‘অন্যান্যবার শাহবাগ থেকে লোকের জোয়ার থাকতো, এবার সেইটা নাই। কোনো দোকান পাট নাই, একদিনের মেলাটা খুব মিস করছি। তালপাতার তেহারী কিংবা পান্তা ইলিশের সেই দোকানগুলোও মিস করছি’ বলেই হেসে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়মান রাফি।
আজ যেন কেউ সাজিয়ে গুছিয়ে পোশাকি কথা বলতে প্রস্তুত না। সবাই বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে অগোছালো কথা বলতেই পছন্দ করছে। কারো সাথেই বেশীক্ষণ কথা বলা যাচ্ছে না। ছায়ানটের মূল মঞ্চের বাইরে নানা বয়সীরা ভিড় করছেন ছবি তুলছেন। অনেকেই লেকের পার ঘেষে বসে চুপচাপ গান শুনছেন।
এতো লোকের ভিড়ে একটু আলাদা করা গেলো একটি পরিবারকে। তারা বেশ একটু প্রস্তুত হয়েই এসেছেন পরিবারের সাথে গল্প করে সময় কাটাবার জন্য। সেগুন বাগিচার বাসিন্দা ইন্ডস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার বাসুদেবের স্ত্রী, মা, ভাই-বোনদের নিয়ে এসেছেন আর এনেছেন বসার জন্য চাদর, পাখা, পানিসহ হালকা খাবার।
বাসুদেব বলেন,‘ প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে আসি। তাই জানি কিভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আগের মতো জমজমাট বর্ষবরণ এর জায়গায় ফিরতে আরো একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে মিস করছি ক্রাউড আর ফকির আলমগীরকে।’
রোজা রেখেই স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন সদ্য চাকরী থেকে অবসরে যাওয়া আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘জীবন পার করে দিলাম ঢাকায়। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানে নানা কারণে আসা হয়নি। এবারই প্রথম।’ সেহরী খেয়ে আর ঘুমাননি আলমগীর, বলেন, ‘শাহবাগ থেকে হেঁটে আসতে একটু কষ্ট হয়েছে। যারা আয়োজন করে বা সরকারীভাবে ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা রাখলে ভালো হতো।’
কারওয়ান বাজার থেকে হেঁটে এসেছেন রবিন, মুক্তা, সবুজ, রুমিসহ কয়েকজন। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এতো আগে থেকেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত বাস যেতে দিলে ভালো হতো।’
করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের ঐহিত্যবাহী নববর্ষ বরণ। বন্ধ ছিলো সকল আয়োজন। আজ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষ ১৪২৯ বরণের অনুষ্ঠান। আর সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষের ঘোষণা আসে ঘড়ির কাঁটা যখন সাড়ে আটটায়। অনুষ্ঠান শেষ হলেও দল বেধে পরিবার নিয়ে রমনায় আসতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
বৈশাখের প্রথম দিন ঝাঁঝালো রোদের পরিবর্তে আলতো রোদ সকলকে স্বস্তি দিয়েছিলো। আর তাই যেন ছায়ানটের পরিবেশনা শেষ হলেও অনেকেই অলস বসে থাকেন, গল্পে মাতেন। শিশুরা ছুটতে থাকে মনের আনন্দে। রমনা পার্ক রঙিন হয়ে ওঠে নানা রঙের মানুষের পদচারনায়। দুই বছর পর একটুকরো চমৎকার সকাল পার করলো উৎসবপ্রেমী মানুষ।