ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারে শুরু হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বৃহত্তম সামাজিক উৎসব জলকেলি। এ সামাজিক উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পল্লীগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা।
শহরের প্রায় ২০টি প্যান্ডেলে এবার উৎসবে মেতেছে রাখাইন সম্প্রদায়। এ উৎসব রাখাইন সম্প্রদায়ের হলেও এবারও পর্যটকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহণে উৎসব হয়ে ওঠে সার্বজনীন। এ উপলক্ষে বর্ণিল রূপে সেজেছে রাখাইন পল্লীগুলো।
রোববার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে শুরু হওয়া রাখাইনদের প্রাণের এই উৎসব শেষ হবে আজ ১৯ এপ্রিল।
প্রতি বছর রাখাইন নববর্ষকে বরণে রাখাইন সম্প্রদায় কক্সবাজারে মহাসমারোহে উদযাপন করে জলকেলি উৎসব। উৎসবে রাখাইন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী এবং আবাল বৃদ্ধবনিতা নেচে গেয়ে, একে অপরের শরীরে জল ছিটিয়ে উৎসব পালন করে থাকে। এ যেন এক মহা আনন্দযজ্ঞ। এ সময় তারা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দল বেঁধে নাচতে নাচতে বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শন করেন।
আয়োজকেরা জানান, শনিবার ( ১৬ এপ্রিল) শেষ হয়েছে রাখাইন বর্ষ ১৩৮৩ সন। আর গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে নতুন ১৩৮৪ রাখাইন বর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে পাপ-পঙ্কিলতা ও অশুভ সবকিছুকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করতে প্রতি বছর রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসবে মেতে ওঠে। রাখাইনদের ভাষায় বর্ষ বরণের এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রে পোয়ে।
কক্সবাজার শহরের পূর্ব মাছ বাজার, পশ্চিম মাছ বাজার, ফুলবাগ সড়ক, ক্যাং পাড়া, হাঙর পাড়া, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও চাউল বাজার এবং জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদন্ডীসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক প্যান্ডেলে এ উৎসব আয়োজন চলছে।
জানাগেছে, এই উৎসবকে ঘিরে নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় হয়েছে গত ১৩ এপ্রিল বাংলা বর্ষের চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে। ওই দিন থেকে রাখাইনরা বৌদ্ধ বিহারগুলোতে পালন শুরু করেন নানান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠান পালন শেষে নতুন বছরের প্রথমদিন থেকে (১৭ এপ্রিল) শুরু হয় জলকেলি। যা চলে তিন দিনব্যাপী।
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মংছেন হ্লা রাখাইন বলেন, উৎসব উপলক্ষে রোববার সকালে প্রতিটি রাখাইন পল্লী থেকে আবাল-বৃদ্ধ বনিতা শোভাযাত্রা সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। এতে অল্প-বয়সীরা মাটির কলস এবং বয়স্করা কল্পতরু বহন করেন। এরপর সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর্ব শেষ করেন। বিকালে তরুণ-তরুণীরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ান জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে।
তিনি আরও বলেন, নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। তারা নাচে-গানে মেতে উঠে একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন মঙ্গল জল। রাখাইনদের বিশ্বাস, এই মঙ্গলজল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের সকল গ্লানি, ব্যথা, বেদনা, অপ্রাপ্তিসহ নানা অসঙ্গতি।
এ বছর কক্সবাজারে এ উৎসব আয়োজনে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রোববার বিকালে কক্সবাজার শহরের আছিমং পেশকার পাড়ায় স্থাপিত প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ।
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মং এ খেন রাখাইন বলেন, বিশ্বব্যাপী যে করোনা মহামারি চলছে আমরা চাই এ উৎসবের মঙ্গল জল ছিটানোর মধ্য দিয়ে সকল অশুভ শক্তি পৃথিবী থেকে দূরীভূত হবে। পুরনো বা অশুভকে পেছনে ফেলে আসবে মঙ্গলের বারতা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, বাংলাদেশ সকল ধর্ম-বর্ণের জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এদেশের আবহমান সংস্কৃতি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। জলকেলি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। রাখাইনদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও এই স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপভোগ করায় এটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত
সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২
কক্সবাজারে শুরু হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বৃহত্তম সামাজিক উৎসব জলকেলি। এ সামাজিক উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পল্লীগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা।
শহরের প্রায় ২০টি প্যান্ডেলে এবার উৎসবে মেতেছে রাখাইন সম্প্রদায়। এ উৎসব রাখাইন সম্প্রদায়ের হলেও এবারও পর্যটকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহণে উৎসব হয়ে ওঠে সার্বজনীন। এ উপলক্ষে বর্ণিল রূপে সেজেছে রাখাইন পল্লীগুলো।
রোববার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে শুরু হওয়া রাখাইনদের প্রাণের এই উৎসব শেষ হবে আজ ১৯ এপ্রিল।
প্রতি বছর রাখাইন নববর্ষকে বরণে রাখাইন সম্প্রদায় কক্সবাজারে মহাসমারোহে উদযাপন করে জলকেলি উৎসব। উৎসবে রাখাইন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী এবং আবাল বৃদ্ধবনিতা নেচে গেয়ে, একে অপরের শরীরে জল ছিটিয়ে উৎসব পালন করে থাকে। এ যেন এক মহা আনন্দযজ্ঞ। এ সময় তারা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দল বেঁধে নাচতে নাচতে বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শন করেন।
আয়োজকেরা জানান, শনিবার ( ১৬ এপ্রিল) শেষ হয়েছে রাখাইন বর্ষ ১৩৮৩ সন। আর গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে নতুন ১৩৮৪ রাখাইন বর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে পাপ-পঙ্কিলতা ও অশুভ সবকিছুকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করতে প্রতি বছর রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসবে মেতে ওঠে। রাখাইনদের ভাষায় বর্ষ বরণের এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রে পোয়ে।
কক্সবাজার শহরের পূর্ব মাছ বাজার, পশ্চিম মাছ বাজার, ফুলবাগ সড়ক, ক্যাং পাড়া, হাঙর পাড়া, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও চাউল বাজার এবং জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদন্ডীসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক প্যান্ডেলে এ উৎসব আয়োজন চলছে।
জানাগেছে, এই উৎসবকে ঘিরে নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় হয়েছে গত ১৩ এপ্রিল বাংলা বর্ষের চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে। ওই দিন থেকে রাখাইনরা বৌদ্ধ বিহারগুলোতে পালন শুরু করেন নানান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠান পালন শেষে নতুন বছরের প্রথমদিন থেকে (১৭ এপ্রিল) শুরু হয় জলকেলি। যা চলে তিন দিনব্যাপী।
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মংছেন হ্লা রাখাইন বলেন, উৎসব উপলক্ষে রোববার সকালে প্রতিটি রাখাইন পল্লী থেকে আবাল-বৃদ্ধ বনিতা শোভাযাত্রা সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। এতে অল্প-বয়সীরা মাটির কলস এবং বয়স্করা কল্পতরু বহন করেন। এরপর সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর্ব শেষ করেন। বিকালে তরুণ-তরুণীরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ান জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে।
তিনি আরও বলেন, নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। তারা নাচে-গানে মেতে উঠে একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন মঙ্গল জল। রাখাইনদের বিশ্বাস, এই মঙ্গলজল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের সকল গ্লানি, ব্যথা, বেদনা, অপ্রাপ্তিসহ নানা অসঙ্গতি।
এ বছর কক্সবাজারে এ উৎসব আয়োজনে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রোববার বিকালে কক্সবাজার শহরের আছিমং পেশকার পাড়ায় স্থাপিত প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ।
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মং এ খেন রাখাইন বলেন, বিশ্বব্যাপী যে করোনা মহামারি চলছে আমরা চাই এ উৎসবের মঙ্গল জল ছিটানোর মধ্য দিয়ে সকল অশুভ শক্তি পৃথিবী থেকে দূরীভূত হবে। পুরনো বা অশুভকে পেছনে ফেলে আসবে মঙ্গলের বারতা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, বাংলাদেশ সকল ধর্ম-বর্ণের জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এদেশের আবহমান সংস্কৃতি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। জলকেলি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। রাখাইনদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও এই স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপভোগ করায় এটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।