ছবি: সংগৃহীত
করুণ আবহসংগীতের সাথে মঞ্চে পর্দা নামে। কলাকৌশলির অভিনয় দক্ষতার নিরিখে করতালি যেন প্রাপ্য ছিল। অথচ করতালির পরিবর্তে অতিথি ও দর্শকদের অধিকাংশের গা শিউরে ওঠা অনুভূতির সাথে চোখে নোনা জল। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মঞ্চ ছাপিয়ে পুরো মিলনায়তনে তখন বেদনাবহ এক পরিস্থিতি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কাকডাকা ভোরের নির্মম সেই হত্যাকান্ডই যেন প্রত্যক্ষ করলেন সকলে। এ যেন মর্মান্তিক ইতিহাসের এক করুণ আলেখ্য।
গত ১৩ ও ১৪ মে রাতে নবনির্মিত নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদল প্রযোজিত ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে রচিত হয়েছে নাটকটি। পরিকল্পনা, নির্দেশনা, অভিনয় ও আবহসংগীত থেকে শুরু করে নাটকের প্রত্যেক কলাকৌশলীই বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য। এক ঘন্টা বিশ মিনিট দৈর্ঘ্যরে এই নাটকে শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা ছিল অনন্য সাধারণ। সংলাপের পাশাপাশি শিল্পীদের অভিব্যক্তিও ছিল প্রশংসনীয়।
নাটকের পর্দা ওঠে ভীতিকর এক আবহসংগীতের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর খোন্দকার মোশতাক। ঘুম ভাঙে তার ভৃত্যের ডাকে। বিরক্ত মোশতাকের চোখেমুখে তখন বিরক্তির ছাপ। অপেক্ষা যেন তার সইছে না। সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় পরিকল্পিত এক নির্মম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে।
প্রধান চরিত্র খোন্দকার মোশতাকের ভূমিকায় প্রশংসনীয় অভিনয় করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পরিদর্শক জাহিদুর রহমান। এই নাটকের নির্দেশকও তিনি। সংলাপ ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন মেজর ফারুক চরিত্রে অভিনয় করা ডিএমপির সোহাগ হোসাইন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন পরিবানু চরিত্রটি। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেলা পুলিশের তামান্না তমা। শুরুর দিকের দৃশ্যে পরীবানুর আগমনে মঞ্চে হেসে ওঠেন দর্শকরা। বঙ্গবন্ধুর পাইপ হাতে পরীবানুর ক্রন্দনরত দৃশ্যের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে মঞ্চের।
পুলিশ সদস্যদের দক্ষ অভিনয়ে মর্মান্তিক এক হত্যাকান্ডের দৃশ্যায়নে অতিথি ও শ্রোতাদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নাটকটি দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিপথগামী কিছু কুলাঙ্গার সদস্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর সঠিক নেতৃত্ব পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নাটকের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।’
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকটি দেখেছেন বেসরকারি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাকিল আবেদীন। প্রতিক্রিয়ায় তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিটি চরিত্র দারুনভাবে ফুটে উটেছে এই নাটকের মধ্য দিয়ে। প্রত্যেকের অভিনয় ছিল অসাধারণ। খলচরিত্র হলেও অনবদ্য অভিনয় করেছেন মোশতাক ও ফারুক চরিত্রের দুই শিল্পী। তবে বঙ্গবন্ধুর যে দরাজ কণ্ঠ সেটির খামতি ছিল নাটকে।’
টানা দুইদিন এই নাটক মঞ্চায়নের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। শেষদিনে সশরীরে নাটকটি উপভোগ করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), ডিআইজি হাবিবুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। নাটকের কলাকৌশলী ও সংশ্লিষ্টদের ভূয়সী প্রশংসা করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলনে এবং পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুর রহমানের রচনা ও নির্দেশনায় গত বছরের ৩১ জুলাই রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়। নারায়ণগঞ্জে এই নাটকের ৬৬ ও ৬৭তম মঞ্চায়ন হয়েছে। নাটক প্রসঙ্গে ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজারবাগ থেকে প্রথম প্রতিরোধ করেছে পুলিশ। ১৫ আগস্ট কালরাতে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তা এখন ইতিহাসের পাতায়। এই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য জাতির পিতার জীবন ও কাজ নিয়ে আমাদের পুলিশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। ১৫ আগস্টের ঘটনায় হত্যা মামলার নথিপত্র ও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এ নাটকটি রচনা করা হয়েছে। নাটকটির মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মকে বার্তাটি দেওয়া। তারা জানে না পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াবহতা। অনেকে বইপুস্তক পড়ে জেনেছে। বাংলাদেশ পুলিশ নাটকের মাধ্যমে বার্তাটি দেশব্যাপী নতুন প্রজন্মকে জানাতে এই আয়োজন করেছে।’
ছবি: সংগৃহীত
রোববার, ১৫ মে ২০২২
করুণ আবহসংগীতের সাথে মঞ্চে পর্দা নামে। কলাকৌশলির অভিনয় দক্ষতার নিরিখে করতালি যেন প্রাপ্য ছিল। অথচ করতালির পরিবর্তে অতিথি ও দর্শকদের অধিকাংশের গা শিউরে ওঠা অনুভূতির সাথে চোখে নোনা জল। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মঞ্চ ছাপিয়ে পুরো মিলনায়তনে তখন বেদনাবহ এক পরিস্থিতি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কাকডাকা ভোরের নির্মম সেই হত্যাকান্ডই যেন প্রত্যক্ষ করলেন সকলে। এ যেন মর্মান্তিক ইতিহাসের এক করুণ আলেখ্য।
গত ১৩ ও ১৪ মে রাতে নবনির্মিত নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদল প্রযোজিত ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে রচিত হয়েছে নাটকটি। পরিকল্পনা, নির্দেশনা, অভিনয় ও আবহসংগীত থেকে শুরু করে নাটকের প্রত্যেক কলাকৌশলীই বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য। এক ঘন্টা বিশ মিনিট দৈর্ঘ্যরে এই নাটকে শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা ছিল অনন্য সাধারণ। সংলাপের পাশাপাশি শিল্পীদের অভিব্যক্তিও ছিল প্রশংসনীয়।
নাটকের পর্দা ওঠে ভীতিকর এক আবহসংগীতের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর খোন্দকার মোশতাক। ঘুম ভাঙে তার ভৃত্যের ডাকে। বিরক্ত মোশতাকের চোখেমুখে তখন বিরক্তির ছাপ। অপেক্ষা যেন তার সইছে না। সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় পরিকল্পিত এক নির্মম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে।
প্রধান চরিত্র খোন্দকার মোশতাকের ভূমিকায় প্রশংসনীয় অভিনয় করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পরিদর্শক জাহিদুর রহমান। এই নাটকের নির্দেশকও তিনি। সংলাপ ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন মেজর ফারুক চরিত্রে অভিনয় করা ডিএমপির সোহাগ হোসাইন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন পরিবানু চরিত্রটি। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেলা পুলিশের তামান্না তমা। শুরুর দিকের দৃশ্যে পরীবানুর আগমনে মঞ্চে হেসে ওঠেন দর্শকরা। বঙ্গবন্ধুর পাইপ হাতে পরীবানুর ক্রন্দনরত দৃশ্যের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে মঞ্চের।
পুলিশ সদস্যদের দক্ষ অভিনয়ে মর্মান্তিক এক হত্যাকান্ডের দৃশ্যায়নে অতিথি ও শ্রোতাদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নাটকটি দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিপথগামী কিছু কুলাঙ্গার সদস্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর সঠিক নেতৃত্ব পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নাটকের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।’
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকটি দেখেছেন বেসরকারি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাকিল আবেদীন। প্রতিক্রিয়ায় তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিটি চরিত্র দারুনভাবে ফুটে উটেছে এই নাটকের মধ্য দিয়ে। প্রত্যেকের অভিনয় ছিল অসাধারণ। খলচরিত্র হলেও অনবদ্য অভিনয় করেছেন মোশতাক ও ফারুক চরিত্রের দুই শিল্পী। তবে বঙ্গবন্ধুর যে দরাজ কণ্ঠ সেটির খামতি ছিল নাটকে।’
টানা দুইদিন এই নাটক মঞ্চায়নের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। শেষদিনে সশরীরে নাটকটি উপভোগ করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), ডিআইজি হাবিবুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। নাটকের কলাকৌশলী ও সংশ্লিষ্টদের ভূয়সী প্রশংসা করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলনে এবং পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুর রহমানের রচনা ও নির্দেশনায় গত বছরের ৩১ জুলাই রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়। নারায়ণগঞ্জে এই নাটকের ৬৬ ও ৬৭তম মঞ্চায়ন হয়েছে। নাটক প্রসঙ্গে ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজারবাগ থেকে প্রথম প্রতিরোধ করেছে পুলিশ। ১৫ আগস্ট কালরাতে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তা এখন ইতিহাসের পাতায়। এই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য জাতির পিতার জীবন ও কাজ নিয়ে আমাদের পুলিশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। ১৫ আগস্টের ঘটনায় হত্যা মামলার নথিপত্র ও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এ নাটকটি রচনা করা হয়েছে। নাটকটির মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মকে বার্তাটি দেওয়া। তারা জানে না পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াবহতা। অনেকে বইপুস্তক পড়ে জেনেছে। বাংলাদেশ পুলিশ নাটকের মাধ্যমে বার্তাটি দেশব্যাপী নতুন প্রজন্মকে জানাতে এই আয়োজন করেছে।’