alt

সংস্কৃতি

‘শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা’য় লেখক-পাঠক-শুভাকাক্সক্ষীর বাঁধভাঙা সম্মিলন

সাংস্কৃতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ০৩ জুলাই ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/01.jpg

শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা ১৭-এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন কবি জুনান নাশিত

কবিতাপাঠ, সাহিত্যবিষয়ক আলোচনা, কিংবা সংস্কৃতির বিকাশে অন্তরায়সমূহ উন্মোচনে, এবং তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে কবিতা বা সংস্কৃতির মুক্তির জন্য যে মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি হতে পারে, তার আর একটি নজির সৃষ্টি করল কবি ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত অধুনাবাদী চিন্তার লিটল ম্যাগাজিন ‘শালুক’।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/02.jpg

শেষ মুহূর্তের ফটোসেশন। গত পহেলা জুলাই শুক্রবার কাঁটাবন পাঠক সমাবেশে অনুষ্ঠিত শালুক সাহিত্যসন্ধ্যায় উপস্থিত কবি-লেখক ও সাংস্কৃতিককর্মীবৃন্দ

গত ১ জুলাই শুক্রবার বিকাল চারটায় ছিল ‘শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা’র ১৭তম আয়োজন। রাজধানীর কাঁটাবনস্থ পাঠক সমাবেশের নতুন আউটলেটে কবি-লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় দেখে আবারো প্রমাণিত হলো যে, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসনই কখনো শক্ত ভিত্তি পায় না। সংস্কৃতি চর্চা এবং একত্রিত হয়ে তার প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে ফেলতে কবি-লেখক-সংস্কৃতিকর্মীরা একত্রিত হতে পারে, যদি তেমন কোনো বিশুদ্ধ চর্চাপীঠ তাদের আহ্বান করে।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/03.jpg

গত পহেলা জুলাই শুক্রবার কাঁটাবন পাঠক সমাবেশে অনুষ্ঠিত শালুক সাহিত্যসন্ধ্যায় উপস্থিত কবি-লেখক ও সাংস্কৃতিককর্মীবৃন্দ

এদিক থেকে, দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে প্রকাশিত ‘শালুক’-এর আহ্বান ছিল চোখে পড়ার মতো আগ্রহোদ্দীপক। এটি আসলে শালুকের প্রতি কবি-লেখকদের অকৃত্রিম ভালবাসাকেই প্রমাণ করে। শালুকের বিগত ১৬টি আয়োজনও ক্রমশ উজ্জ্বলতায় লেখক-পাঠকের মনে গভীর আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। করোনা সংক্রমণের দুই বছর শালুকের এ আয়োজন স্থগিত থাকলেও এ বছরের শুরুর দিকে রাজধানীর অদূরে জিন্দাপার্কে ১৫তম আয়োজনের ভিতর দিয়ে শুরু হয় শালুক সাহিত্যআড্ডার দ্বিতীয় যাত্রা।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/04.jpg

শালুকসাহিত্যসন্ধ্যার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- প্রতিমাসের প্রথম শুক্রবার এ আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে এটা কোনো অমোঘ ব্যাপার নয়। যে কোনো সময়ই এ আড্ডা অনুষ্ঠিত হতে পারে। শালুক সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশের দূরদর্শিতা ও শালুকের সহযোগী সম্পাদক মাহফুজ আল-হোসেনের শ্রমনিষ্ঠ পরামর্শ ও সহযোগিতা এ আয়োজকে একটি যোগ্য মাত্রা দিয়ে থাকে।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/05.jpg

এছাড়া শালুকের অপর সহযোগী সম্পাদক কবি ভাগ্যধন বড়–য়াসহ আরো অনেকের গভীর উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সহযোগিতায় প্রতিটি আড্ডাই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। শালুকের লেখক-পাঠক-শুভাকাক্সক্ষীদের স্বতঃস্ফূত উপস্থিতি, আলোচনা, আড্ডা, কবিতাপাঠে অংশগ্রহণে স্বতোজ্জ্বল এ আড্ডাটি এখন দেশের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য আড্ডা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অগণিত কবি-লেখক-পাঠকের ভালবাসায় আপ্লুত শালুক সাহিত্যআড্ডা এখন যেন সকলেরই দীর্ঘ অপেক্ষার প্রাপ্তি হিসেবে গণ্য।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/06.jpg

গত পহেলা জুলাই শালুক সাহিত্যসন্ধ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল “শিল্পচর্চায় রাহুগ্রাস: কবিতার মুক্তি”। যথারীতি এ বিষয়ে একটি মূল প্রবন্ধ ছিল। এবারের প্রবন্ধটি রচনা করেন কবি জুনান নাশিত। এবং প্রবন্ধভিত্তিক আলোচনা করেন তিনজন আলোচক যথাক্রমে- কবি শান্তা মারিয়া, প্রাবন্ধিক-অনুবাদক স্বপন নাথ এবং কবি ও কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/07.jpg

জুনান নাশিতের সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল প্রবন্ধে সাহিত্যচর্চার প্রতিবন্ধকতাগুলো চমৎকারভাবে উচ্চারিত হয় এবং এ থেকে কবিতার মুক্তির আবশ্যকতা উচ্চারিত হয়। এবং আলোচকগণ আরো নানামুখ উন্মোচন করে বিষয়টির সত্যতা ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/08.jpg

শেষ বক্তা শান্তা মারিয়া ঐ দিনই একজন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিক্ষক রতন সিদ্দিকীর ওপর হামলার নিন্দা জানান।

দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বই আলোচনা দিয়ে। “বই নিয়ে কথা” শিরোনামের এ পর্বে আটজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি-লেখকের বই নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনাগুলো লেখেন তরুণ কবি রিসতিয়াক আহমেদ ও কবি ওবায়েদ আকাশ। আলোচনাগুলো পাঠ করে শোনান কবি স্নিগ্ধা বাউল ও রিসতিয়াক আহমেদ।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/09.jpg

এ পর্বে যে আটটি গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো যথাক্রমে- জাতীয় সাহিত্যভবন প্রকাশিত শুক্লা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সহস্রার মূলাধার’, শালুক প্রকাশিত চারটি বই- তাপস গায়েনের ‘কালের খেয়ায় স্বপ্নময় শরীর’, মাহফুজ আল-হোসেনের ‘সিজোফ্রেনিক রাখালবালিকা ও মনের বাঘ’, ওবায়েদ আকাশের ‘নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়’ ও ভাগ্যধন বড়ুয়ার ‘জ্বর ও নজর’। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশিত অরবিন্দ চক্রবর্তীর ‘অ্যাকোস্টিক শরীর সুতরাং গিটারপূর্ণ এবং ফুর্তি অর্গ্যানিক’, অভিযান প্রকাশিত স্নিগ্ধা বাউলের ‘মনোলগ জলজ ফুল’ এবং ফারহানা রহমানের ‘অপরাহ্ণের চিঠি’।

কানায় কানায় পূর্ণ দর্শক-পাঠকের উপস্থিতিতে এ পর্বটিও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনুষ্ঠানের শেষ ও তৃতীয় পর্ব শুরু হয় কবিতা পাঠ দিয়ে। এ পর্বে কবিতা পাঠ করেন- মনজুর শামস, ফারুক সুমন, আফরোজা সোমা, জাহানারা পারভীন, মনিরুল মোমেন, মিলটন রহমান, শিহাব শাহরিয়ার, ঋজু রেজওয়ান, সৌম্য সালেক, আবদুর রাজ্জাক, কুসুম তাহেরা, জাফর সাদেক, ফারহানা রহমান, জুনান নাশিত, শান্তা মারিয়া, মাহফুজ আল-হোসেন, ভাগ্যধন বড়ুয়া, সেঁজুতি বড়ুয়া ও সুপ্তি জামান।

আড্ডাটি সঞ্চালনা করেন কবি মাহফুজ আল-হোসেন ও কবি ওবায়েদ আকাশ।

আড্ডার বক্তাগণ চতুর্মুখী এই ক্রান্তিকালে শালুক সাহিত্যসন্ধ্যার অপরিহার্যতা স্বীকার করেন। এমন একটি সময়ে এরকম বিশুদ্ধ ও সম্পূর্ণই সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকে যে আড্ডাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, মানুষের স্বতঃস্ফূত উপস্থিতিই এ আড্ডার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রমাণ করে। সকলের আগ্রহ ও সহযোগিতার আশ্বাসে অনুষ্ঠানে প্রাণ ফিরে আছে।

আড্ডায় সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল কবি-লেখকগণ বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করেন। আগামী দিনের সাহিত্যের প্রাণভোমরা এই তরুণরাই। তাদের সমৃদ্ধ ও বুদ্ধিদীপ্ত, বিকল্প চিন্তার আলোচনায় উপস্থিত সকলের উপকৃত না হয়ে উপায় নেই। এই আড্ডা অব্যাহতভাবে পরিচালনার জন্য অনেকে অনুরোধ করেন। প্রতিটি আড্ডায়ই কোনো না কোনো নতুন মুখের সংযোজন শালুক সাহিত্যসন্ধ্যার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

আড্ডার প্রাণপুরুষ শালুক সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশ বলেন, “আমরা বিকল্প চিন্তায় বিশ্বাসী, প্রচলিত গড্ডলে ভাসা চিন্তার আবর্জনা ফেলে বেরিয়ে আসুক তারুণ্য। অধুনাবাদ সেই তারুণ্যের শক্তিতে শক্তিমান। শালুক একটি অধুনাবাদী চিন্তার লিটল ম্যাগাজিন। শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা অধুনাবদী বা সম্পূর্ণ স্বাদেশিকতায়, আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে কাজ করে চলেছে। এ আড্ডা মানুষের একঘেয়ে, ডিভাইসমুখিতা, অনলাইনকেন্দ্রিক গৃহকোণের আড্ডা থেকে লেখক-পাঠকদের মুখোমুখি হবার সুযোগ করে দিয়েছে। সামনাসামনি দাঁড় করিয়েছে। শালুক সাহিত্যসন্ধ্যায় অংশ নিয়ে অনেকে নতুন নতুন সৃষ্টির অনুপ্রেরণা পায়। তাই প্রতিটি আড্ডাই অসংখ্য তারুণ্যের উপস্থিতিতে জমজমাট থাকে। শালুকের এই আড্ডা অব্যাবহ থাকবে।”

শালুকের সহযোগী সম্পাদক কবি ও নন্দনতাত্ত্বিক মাহফুজ আল- হোসেন বলেন, “অধুবাদ চর্চা মানেই হচ্ছে আমাদের স্বাদেশিকতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা। আমরা অনুকরণ বা কপিকরণে বিশ্বাসী নই। আমরা আমাদের আত্মপরিচয় খুঁজে পেতে পথে নেমেছি। আমাদের ঐতিহ্য ও বাঙালিত্বকে ধারণ করছি। একদিন সারাবিশ্ব জানবে আমাদের এই প্রয়াস কতটা মহার্ঘ ও মৌলিক। আর এই মহতী চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শালুক। শালুক একটি আন্দোলন, একটি কবিতা আন্দোলন, শিল্প আন্দোলন, শালুক একটি প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের চিন্তাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবো। ইউরোপ আমেরিকা তথা পশ্চিম থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা চিন্তা আমাদের মৌলিকত্ব দেবে না।

আমরা মৌলিক কিছু করতে চাই। সেই মৌলিকত্বকে ধারণ করছে শালুক এবং শালুককেন্দ্রিক লেখক-পাঠকের চিন্তাচেতনা। আমরা বাঙালিত্বের শেকড়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিতে চাই। এজন্য আমরা আশ্রয় করেছি তারুণ্যকে। সহজাতভাবে পাওয়া তারুণ্যের শক্তি বা মেধা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। আমরা সেই তারুণ্যের সন্ধান ও পরিচর্যা করতে চাই। আমরা যারা শালুক সাহিত্যসন্ধ্যাকে আশ্রয় করেছি, ভালবেসেছি, তাদের প্রত্যেকের ভাবনাই এমন। আমাদের লেখার টেবিল যেন সদাস্বকীয় ও মৌলিকত্বের শক্তিতে প্রাণবান থাকে। শালুক সাহিত্যসন্ধাকে ঘিরে আমাদের সেটাই প্রত্যাশা।”

অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত কবি লেখক দর্শকদের শাহী জিলাপি, হাতে তৈরি কেক ও সমুচা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর বাইরে ছিল ক্ষণে ক্ষণে পাঠক সমাবেশ পরিবেশিত চা-বিস্কুট প্রভৃতি আপ্যায়ন। এরপর গ্রুপ ফটোসেশন ও বিচ্ছিন্নভাবে আরেক মাত্রার আড্ডা শুরু হয় খণ্ডে খণ্ডে।

সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে

ছবি

রোটারি ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট ভোকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান

ছবি

দর্শক নে, ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ময়মনসিংহের পূরবী সিনেমা হল

প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে পদত্যাগপত্র, চার শর্ত মানলে ফিরবেন জামিল আহমেদ

ছবি

বইমেলায় তপন কান্তি সরকারের বই ‘নতুন বিশ্বের নতুন ক্যারিয়ার’

ছবি

পর্দা নেমেছে সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের

ছবি

পাঠাও-এর ‘অগ্রযাত্রার অগ্রদূত’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

শেষ মুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব

ছবি

হুমকির মুখে স্থগিত ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব

ছবি

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা মহানগর নাট্য উৎসব

ছবি

বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি আয়েশা মুন্নির ‘গুলবাহার ভোর’

ছবি

সোনারগাঁয়ে লোককারুশিল্প মেলা, লুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য শীতল পাটির প্রদর্শনী

ছবি

সোনারগাঁয়ে ছুটির দিনে লোকারন্য লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

ছবি

বাংলা একাডেমি পুরস্কারের খবর নেই, এবার সরে গেলেন জুরি সদস্য

ছবি

কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রত্যাখ্যান করেছেন

এবার দশজন পাচ্ছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।

ছবি

সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধন

ছবি

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদীচী যশোর জেলা সংসদের ২২তম সম্মেলন শুরু

ছবি

ভিভো ও এসওএস এর যৌথ উদ্যোগে ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী

ছবি

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দিনব্যাপী চ্যারিটি মেলা

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে জাতীয় অধ্যাপক করার দাবি

ছবি

শিল্পকলা একাডেমিতে চলচ্চিত্রের জন্য পৃথক বিভাগ চায় চলচ্চিত্রকর্মীরা

ছবি

শিল্পকর্মে বুড়িগঙ্গা পাড়ের জীবন

ছবি

শিল্পকর্মে বুড়িগঙ্গা পাড়ের জীবন

ছবি

এবার শিল্পকলায় নাটক বন্ধের প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা

ছবি

রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

ছবি

শহীদদের স্মরণে সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বান: ভয়কে জয় করে চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়

ছবি

রিয়েলমি’র আয়োজনে ন্যাশনাল মোবাইল ফটোগ্রাফি কনটেস্ট ২০২৪

ছবি

ময়মনসিংহে ৩ শতাধিক আলোকচিত্র নিয়ে ’ফ্যাসিস্ট প্রদর্শনী’

ছবি

ফ্লোরিডায় সোহরাব আলমের একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী

ছবি

ডিজিটাল মিডিয়ার আসক্তি পৃথিবীকে অশান্ত করছে

জাতীয় সাংস্কৃতিক মৈত্রী নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

ছবি

মাসজুড়ে ভিভো’র ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা

ছবি

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী পদত্যাগ

ছবি

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারীর পদত্যাগ

tab

সংস্কৃতি

‘শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা’য় লেখক-পাঠক-শুভাকাক্সক্ষীর বাঁধভাঙা সম্মিলন

সাংস্কৃতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ০৩ জুলাই ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/01.jpg

শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা ১৭-এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন কবি জুনান নাশিত

কবিতাপাঠ, সাহিত্যবিষয়ক আলোচনা, কিংবা সংস্কৃতির বিকাশে অন্তরায়সমূহ উন্মোচনে, এবং তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে কবিতা বা সংস্কৃতির মুক্তির জন্য যে মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি হতে পারে, তার আর একটি নজির সৃষ্টি করল কবি ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত অধুনাবাদী চিন্তার লিটল ম্যাগাজিন ‘শালুক’।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/02.jpg

শেষ মুহূর্তের ফটোসেশন। গত পহেলা জুলাই শুক্রবার কাঁটাবন পাঠক সমাবেশে অনুষ্ঠিত শালুক সাহিত্যসন্ধ্যায় উপস্থিত কবি-লেখক ও সাংস্কৃতিককর্মীবৃন্দ

গত ১ জুলাই শুক্রবার বিকাল চারটায় ছিল ‘শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা’র ১৭তম আয়োজন। রাজধানীর কাঁটাবনস্থ পাঠক সমাবেশের নতুন আউটলেটে কবি-লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় দেখে আবারো প্রমাণিত হলো যে, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসনই কখনো শক্ত ভিত্তি পায় না। সংস্কৃতি চর্চা এবং একত্রিত হয়ে তার প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে ফেলতে কবি-লেখক-সংস্কৃতিকর্মীরা একত্রিত হতে পারে, যদি তেমন কোনো বিশুদ্ধ চর্চাপীঠ তাদের আহ্বান করে।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/03.jpg

গত পহেলা জুলাই শুক্রবার কাঁটাবন পাঠক সমাবেশে অনুষ্ঠিত শালুক সাহিত্যসন্ধ্যায় উপস্থিত কবি-লেখক ও সাংস্কৃতিককর্মীবৃন্দ

এদিক থেকে, দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে প্রকাশিত ‘শালুক’-এর আহ্বান ছিল চোখে পড়ার মতো আগ্রহোদ্দীপক। এটি আসলে শালুকের প্রতি কবি-লেখকদের অকৃত্রিম ভালবাসাকেই প্রমাণ করে। শালুকের বিগত ১৬টি আয়োজনও ক্রমশ উজ্জ্বলতায় লেখক-পাঠকের মনে গভীর আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। করোনা সংক্রমণের দুই বছর শালুকের এ আয়োজন স্থগিত থাকলেও এ বছরের শুরুর দিকে রাজধানীর অদূরে জিন্দাপার্কে ১৫তম আয়োজনের ভিতর দিয়ে শুরু হয় শালুক সাহিত্যআড্ডার দ্বিতীয় যাত্রা।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/04.jpg

শালুকসাহিত্যসন্ধ্যার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- প্রতিমাসের প্রথম শুক্রবার এ আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে এটা কোনো অমোঘ ব্যাপার নয়। যে কোনো সময়ই এ আড্ডা অনুষ্ঠিত হতে পারে। শালুক সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশের দূরদর্শিতা ও শালুকের সহযোগী সম্পাদক মাহফুজ আল-হোসেনের শ্রমনিষ্ঠ পরামর্শ ও সহযোগিতা এ আয়োজকে একটি যোগ্য মাত্রা দিয়ে থাকে।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/05.jpg

এছাড়া শালুকের অপর সহযোগী সম্পাদক কবি ভাগ্যধন বড়–য়াসহ আরো অনেকের গভীর উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সহযোগিতায় প্রতিটি আড্ডাই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। শালুকের লেখক-পাঠক-শুভাকাক্সক্ষীদের স্বতঃস্ফূত উপস্থিতি, আলোচনা, আড্ডা, কবিতাপাঠে অংশগ্রহণে স্বতোজ্জ্বল এ আড্ডাটি এখন দেশের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য আড্ডা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অগণিত কবি-লেখক-পাঠকের ভালবাসায় আপ্লুত শালুক সাহিত্যআড্ডা এখন যেন সকলেরই দীর্ঘ অপেক্ষার প্রাপ্তি হিসেবে গণ্য।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/06.jpg

গত পহেলা জুলাই শালুক সাহিত্যসন্ধ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল “শিল্পচর্চায় রাহুগ্রাস: কবিতার মুক্তি”। যথারীতি এ বিষয়ে একটি মূল প্রবন্ধ ছিল। এবারের প্রবন্ধটি রচনা করেন কবি জুনান নাশিত। এবং প্রবন্ধভিত্তিক আলোচনা করেন তিনজন আলোচক যথাক্রমে- কবি শান্তা মারিয়া, প্রাবন্ধিক-অনুবাদক স্বপন নাথ এবং কবি ও কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/07.jpg

জুনান নাশিতের সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল প্রবন্ধে সাহিত্যচর্চার প্রতিবন্ধকতাগুলো চমৎকারভাবে উচ্চারিত হয় এবং এ থেকে কবিতার মুক্তির আবশ্যকতা উচ্চারিত হয়। এবং আলোচকগণ আরো নানামুখ উন্মোচন করে বিষয়টির সত্যতা ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/08.jpg

শেষ বক্তা শান্তা মারিয়া ঐ দিনই একজন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিক্ষক রতন সিদ্দিকীর ওপর হামলার নিন্দা জানান।

দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বই আলোচনা দিয়ে। “বই নিয়ে কথা” শিরোনামের এ পর্বে আটজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি-লেখকের বই নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনাগুলো লেখেন তরুণ কবি রিসতিয়াক আহমেদ ও কবি ওবায়েদ আকাশ। আলোচনাগুলো পাঠ করে শোনান কবি স্নিগ্ধা বাউল ও রিসতিয়াক আহমেদ।

https://sangbad.net.bd/images/2022/July/03Jul22/news/09.jpg

এ পর্বে যে আটটি গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলো যথাক্রমে- জাতীয় সাহিত্যভবন প্রকাশিত শুক্লা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সহস্রার মূলাধার’, শালুক প্রকাশিত চারটি বই- তাপস গায়েনের ‘কালের খেয়ায় স্বপ্নময় শরীর’, মাহফুজ আল-হোসেনের ‘সিজোফ্রেনিক রাখালবালিকা ও মনের বাঘ’, ওবায়েদ আকাশের ‘নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়’ ও ভাগ্যধন বড়ুয়ার ‘জ্বর ও নজর’। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশিত অরবিন্দ চক্রবর্তীর ‘অ্যাকোস্টিক শরীর সুতরাং গিটারপূর্ণ এবং ফুর্তি অর্গ্যানিক’, অভিযান প্রকাশিত স্নিগ্ধা বাউলের ‘মনোলগ জলজ ফুল’ এবং ফারহানা রহমানের ‘অপরাহ্ণের চিঠি’।

কানায় কানায় পূর্ণ দর্শক-পাঠকের উপস্থিতিতে এ পর্বটিও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনুষ্ঠানের শেষ ও তৃতীয় পর্ব শুরু হয় কবিতা পাঠ দিয়ে। এ পর্বে কবিতা পাঠ করেন- মনজুর শামস, ফারুক সুমন, আফরোজা সোমা, জাহানারা পারভীন, মনিরুল মোমেন, মিলটন রহমান, শিহাব শাহরিয়ার, ঋজু রেজওয়ান, সৌম্য সালেক, আবদুর রাজ্জাক, কুসুম তাহেরা, জাফর সাদেক, ফারহানা রহমান, জুনান নাশিত, শান্তা মারিয়া, মাহফুজ আল-হোসেন, ভাগ্যধন বড়ুয়া, সেঁজুতি বড়ুয়া ও সুপ্তি জামান।

আড্ডাটি সঞ্চালনা করেন কবি মাহফুজ আল-হোসেন ও কবি ওবায়েদ আকাশ।

আড্ডার বক্তাগণ চতুর্মুখী এই ক্রান্তিকালে শালুক সাহিত্যসন্ধ্যার অপরিহার্যতা স্বীকার করেন। এমন একটি সময়ে এরকম বিশুদ্ধ ও সম্পূর্ণই সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকে যে আড্ডাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, মানুষের স্বতঃস্ফূত উপস্থিতিই এ আড্ডার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রমাণ করে। সকলের আগ্রহ ও সহযোগিতার আশ্বাসে অনুষ্ঠানে প্রাণ ফিরে আছে।

আড্ডায় সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল কবি-লেখকগণ বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করেন। আগামী দিনের সাহিত্যের প্রাণভোমরা এই তরুণরাই। তাদের সমৃদ্ধ ও বুদ্ধিদীপ্ত, বিকল্প চিন্তার আলোচনায় উপস্থিত সকলের উপকৃত না হয়ে উপায় নেই। এই আড্ডা অব্যাহতভাবে পরিচালনার জন্য অনেকে অনুরোধ করেন। প্রতিটি আড্ডায়ই কোনো না কোনো নতুন মুখের সংযোজন শালুক সাহিত্যসন্ধ্যার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

আড্ডার প্রাণপুরুষ শালুক সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশ বলেন, “আমরা বিকল্প চিন্তায় বিশ্বাসী, প্রচলিত গড্ডলে ভাসা চিন্তার আবর্জনা ফেলে বেরিয়ে আসুক তারুণ্য। অধুনাবাদ সেই তারুণ্যের শক্তিতে শক্তিমান। শালুক একটি অধুনাবাদী চিন্তার লিটল ম্যাগাজিন। শালুক সাহিত্যসন্ধ্যা অধুনাবদী বা সম্পূর্ণ স্বাদেশিকতায়, আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে কাজ করে চলেছে। এ আড্ডা মানুষের একঘেয়ে, ডিভাইসমুখিতা, অনলাইনকেন্দ্রিক গৃহকোণের আড্ডা থেকে লেখক-পাঠকদের মুখোমুখি হবার সুযোগ করে দিয়েছে। সামনাসামনি দাঁড় করিয়েছে। শালুক সাহিত্যসন্ধ্যায় অংশ নিয়ে অনেকে নতুন নতুন সৃষ্টির অনুপ্রেরণা পায়। তাই প্রতিটি আড্ডাই অসংখ্য তারুণ্যের উপস্থিতিতে জমজমাট থাকে। শালুকের এই আড্ডা অব্যাবহ থাকবে।”

শালুকের সহযোগী সম্পাদক কবি ও নন্দনতাত্ত্বিক মাহফুজ আল- হোসেন বলেন, “অধুবাদ চর্চা মানেই হচ্ছে আমাদের স্বাদেশিকতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা। আমরা অনুকরণ বা কপিকরণে বিশ্বাসী নই। আমরা আমাদের আত্মপরিচয় খুঁজে পেতে পথে নেমেছি। আমাদের ঐতিহ্য ও বাঙালিত্বকে ধারণ করছি। একদিন সারাবিশ্ব জানবে আমাদের এই প্রয়াস কতটা মহার্ঘ ও মৌলিক। আর এই মহতী চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শালুক। শালুক একটি আন্দোলন, একটি কবিতা আন্দোলন, শিল্প আন্দোলন, শালুক একটি প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের চিন্তাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবো। ইউরোপ আমেরিকা তথা পশ্চিম থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা চিন্তা আমাদের মৌলিকত্ব দেবে না।

আমরা মৌলিক কিছু করতে চাই। সেই মৌলিকত্বকে ধারণ করছে শালুক এবং শালুককেন্দ্রিক লেখক-পাঠকের চিন্তাচেতনা। আমরা বাঙালিত্বের শেকড়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিতে চাই। এজন্য আমরা আশ্রয় করেছি তারুণ্যকে। সহজাতভাবে পাওয়া তারুণ্যের শক্তি বা মেধা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। আমরা সেই তারুণ্যের সন্ধান ও পরিচর্যা করতে চাই। আমরা যারা শালুক সাহিত্যসন্ধ্যাকে আশ্রয় করেছি, ভালবেসেছি, তাদের প্রত্যেকের ভাবনাই এমন। আমাদের লেখার টেবিল যেন সদাস্বকীয় ও মৌলিকত্বের শক্তিতে প্রাণবান থাকে। শালুক সাহিত্যসন্ধাকে ঘিরে আমাদের সেটাই প্রত্যাশা।”

অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত কবি লেখক দর্শকদের শাহী জিলাপি, হাতে তৈরি কেক ও সমুচা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর বাইরে ছিল ক্ষণে ক্ষণে পাঠক সমাবেশ পরিবেশিত চা-বিস্কুট প্রভৃতি আপ্যায়ন। এরপর গ্রুপ ফটোসেশন ও বিচ্ছিন্নভাবে আরেক মাত্রার আড্ডা শুরু হয় খণ্ডে খণ্ডে।

back to top