alt

সংস্কৃতি

মাধবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী `কাচারি ঘর’

প্রতিনিধি মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : সোমবার, ০৪ জুলাই ২০২২

মাধবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারী ঘর বা বাংলা ঘর। ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে মাধবপুর উপজেলা গঠিত। এই উপজেলায় অধিকাংশ ইউনিয়নের গ্রামের অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে আভিজাত্যের প্রতীক ছিল কাছারি ঘর বা গ্রামের বাংলা ঘর।

বাড়ির বাহির আঙিনায় অতিথি, মুসাফির, ছাত্র ও জায়গিরদের থাকার এই ঘরটি কাছারি ঘর বা বাংলা ঘর নামে সমধিক পরিচিত ছিল। মাধবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আন্দিউড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী পরিবারের সন্তান হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম বলেন, বর্তমানে ড্রয়িং রুমের সাজ-সজ্জার মাধ্যমে কোনো অভিজাত পরিবারের আভিজাত্যের বহিঃ প্রকাশ ঘটে। ঝাড়বাতি, সোফাসেট, অ্যাকিউরিয়াম, ইন্টেরিয়র, রুচিশীল কোনো ছবি দিয়ে মনোমুগ্ধকর ভাবে সাজানো হয় অতিথিশালা বা ড্রয়িংরুম।

এক সময়ে গ্রামের বাড়ির একমাত্র আভিজাত্যের প্রতীকই ছিল বাড়ির বাহির আঙিনার বৈঠকখানা বা বাংলা ঘর। যা আর এখন চোখে পরে না। এই বাংলা ঘরের চৌকির ওপর থাকত বাড়ির অবিবাহিত ছেলে বা ছাত্ররা। আর মেহমান বা অতিথিরা এলে চৌকির ওপরে থাকতে দেয়া হতো। মাটিতে একঢালা হোগল পাতার বা বাঁশের চাটাই বিছিয়ে বিছানা করে থাকত বারোমাসি কামলারা ও রাখাল। গড় গড় শব্দে তারা হুক্কা টানত আর ধোঁয়া ছাড়ত।

প্রতি রাতেই পাড়ার সব কামলা/রাখাল বড় কোনো কাছারি ঘরে মিলিত হয়ে গানের আসর বসাতো। গান করত পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, রূপবান,গুনাই বিবি, আলোমতি, সাগরভাসা, বেহুলা লখিন্দরের পালা। মাঝে মাঝে গভীর রাত পর্যন্ত বসত শালিস বৈঠক। গৃহ অভ্যন্তরে যারা থাকতেন তাদের চোখেও ঘুম ছিলো না, চা আর পানের ফরমায়েশ রক্ষা করতে।

প্রায় প্রতিটি রাতে কাছারি ঘরওয়ালা বাড়িতে আসত অনাত্মীয়- অচেনা কোনো মুসাফির। ভেতর বাড়ি থেকে শোনা যেত কোনো অচেনা মুসাফিরদের কণ্ঠ : ‘বাড়িতে কেডা আছেন ? কাছে এলে বলত : থাকবার জাগা হবে ? “অনেক রাইত অইছে, বাড়িতে যাওয়া যাবে না” এই কারণেই বাঙালিরা হয়ে উঠেছিল- অতিথি পরায়ণ।

আরবের মানুষও অতিথি পরায়ণ হয়েছিল, শুধু মরুভূমির কারণে। যত রাতেই আসুক অতিথিদের না খেয়ে শুতে দিত না বাড়িওয়ালারা। মজার ব্যাপার হলো- এ সব অতিথিরা রাতের অন্ধকার থাকতেই উঠে চলে যেত, তবে বাড়ির কোনো কিছু হারায়নি কোনো দিন। কাছারি ঘরের সামনে ছিল বারান্দা। বারান্দায় সব সময় একটি হেলনা বেঞ্চ থাকত। ক্লান্ত পথিকরা এখানে বসে একটু জিড়িয়ে নিত। কখনো কখনো পান-তামাক (হুক্কা) খেয়ে যেত।

পশ্চিম মাধবপুরের মরহুম সমুজ আলী সর্দারের ছেলে মাসুদ আলী বলেন, আমাদের একটি কাচারী ঘর ছিল, যেটি আজ পরিত্যক্ত, এই ঘরটি ছিল আমাদের ঐতিহ্য, এক সময় এই ঘরের বারান্দার একপ্রান্তে ছোট কক্ষে থাকতেন মসজিদের মৌলভী বা মক্তবের শিক্ষক। এখন আর কোনো বাড়িতে বাংলা ঘর নেই। যে কয়টি আছে তা ব্যবহৃত না হওয়ায় অবহেলা, অযতেœ মৃত প্রায়।

বারোমাসি রাখালের প্রচলন নেই, নেই রাখালি গান। বাড়ির ছেলেদের রাতে বাইরে থাকার অনুমতি নেই। অবকাঠামো উন্নতির ফলে মাঠে ঘাটে যারা কাজ করে তারা দিন শেষে নিজ বাড়িতে চলে যায়। পরিবার গুলো ছোট ও খুব বেশী আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তাই বিলুপ্ত হচ্ছে শতবর্ষের ঐতিহ্য কাছারি ঘর নামে খ্যাত বাহির বাড়ির বাংলো ঘরটি। মাধবপুর পৌরসভা মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক বলেন, এখন সবাই শহর কেন্দ্রীক। নিজেদের পরিবার নিয়েই সবাই ব্যস্ত। বাবা দাদার ঐতিয্য নিয়ে মোটেও মাথা ব্যাথা নেই। বাবা দাদার সম্পদ ঠিকই বিক্রি করে নিয়ে যায় নিজের আভিজাত্য আরও অভিজাত করার জন্য।

শুক্রবার থেকে ৩ দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব

ছবি

‘রোড টু বালুরঘাট’, মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের চিত্র প্রদর্শন

ছবি

পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাংলাদেশের মিতিয়া ওসমান

ছবি

চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে বর্ষ বরন সম্পন্ন

ছবি

জামালপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

ছবি

বনাঢ্য নানান আয়োজনে বিভাগীয় নগরী রংপুরে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ

ছবি

আজ চৈত্র সংক্রান্তি

ছবি

বর্ষবরণে সময়ের বিধি-নিষেধ মানবে না সাংস্কৃতিক জোট

ছবি

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার গুণীজন সংবর্ধনা

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় সকল প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে : ড. কামাল চৌধুরী

ছবি

এলাকাবাসীর সঙ্গে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নতুন কমিটি, ড. সনজীদা খাতুন সভাপতি, ড. আতিউর রহমান নির্বাহী সভাপতি,লিলি ইসলাম সাধারণ সম্পাদক

ছবি

এবার বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি

ছবি

আজ শেষ হচ্ছে মহান একুশের বইমেলা, বিক্রি বেড়েছে শেষ মুহুর্তে

ছবি

আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার জায়গা বরাদ্দ নাওদিতে পারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

ছবি

বইমেলা, মেয়াদ বাড়ায় খুশি সবাই

ছবি

বইমেলায় ফ্রান্স প্রবাসী কাজী এনায়েত উল্লাহর দুই বই

ছবি

নারী লেখকদের বই কম, বিক্রিও কম

ছবি

বইমেলায় বিদায়ের সুর

ছবি

শিশুদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে জমজমাট বইমেলার শিশু প্রহর

ছবি

বইমেলায় শিশুদের চোখে মুখে ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস

ছবি

বই মেলায় খুদে লেখকদের গল্প সংকলন ‘কিশোর রূপাবলি’

ছবি

`বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত উন্নত শিরের বাঙালি জাতি চাই’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ছবি

বইমেলায় সরোজ মেহেদীর ‘চেনা নগরে অচিন সময়ে’

ছবি

বইমেলায় মাহবুবুর রহমান তুহিনের ‘চেকবই’

বইমেলায় প্রকাশিত হলো সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের ‘যাপিত জীবনের গল্প’

ছবি

সমাজসেবায় একুশে পদকঃ এখনও ফেরি করে দই বিক্রি করেন জিয়াউল হক

ছবি

বইমেলায় পন্নী নিয়োগীর নতুন গ্রল্পগ্রন্থ আতশবাজি

ছবি

ভাষার শক্তি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সুদৃঢ় করে: উপাচার্য ড. মশিউর রহমান

ছবি

রুবেলের গ্রন্থ শিশির ঝরা কবিতা

ঢাবিতে পাঁচ দিনব্যাপী ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র’ উৎসব শুরু

ছবি

সোনারগাঁয়ে লোকজ উৎসবে খেলাঘরের নাচ-গান পরিবেশন

ছবি

বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফেরত দিলেন জাকির তালুকদার

ছবি

রংতুলির মাধ্যমে নিরাপদ সড়কের দাবি শিশুদের

ছবি

জাতীয় প্রেস ক্লাবে পিঠা উৎসব ও লোকগানের আসর

ফরিদপুরে ২ ফেব্রূয়ারি থেকে ঐতিহ্যবাহী জসীম পল্লী মেলা

tab

সংস্কৃতি

মাধবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী `কাচারি ঘর’

প্রতিনিধি মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

সোমবার, ০৪ জুলাই ২০২২

মাধবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারী ঘর বা বাংলা ঘর। ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে মাধবপুর উপজেলা গঠিত। এই উপজেলায় অধিকাংশ ইউনিয়নের গ্রামের অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে আভিজাত্যের প্রতীক ছিল কাছারি ঘর বা গ্রামের বাংলা ঘর।

বাড়ির বাহির আঙিনায় অতিথি, মুসাফির, ছাত্র ও জায়গিরদের থাকার এই ঘরটি কাছারি ঘর বা বাংলা ঘর নামে সমধিক পরিচিত ছিল। মাধবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আন্দিউড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী পরিবারের সন্তান হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম বলেন, বর্তমানে ড্রয়িং রুমের সাজ-সজ্জার মাধ্যমে কোনো অভিজাত পরিবারের আভিজাত্যের বহিঃ প্রকাশ ঘটে। ঝাড়বাতি, সোফাসেট, অ্যাকিউরিয়াম, ইন্টেরিয়র, রুচিশীল কোনো ছবি দিয়ে মনোমুগ্ধকর ভাবে সাজানো হয় অতিথিশালা বা ড্রয়িংরুম।

এক সময়ে গ্রামের বাড়ির একমাত্র আভিজাত্যের প্রতীকই ছিল বাড়ির বাহির আঙিনার বৈঠকখানা বা বাংলা ঘর। যা আর এখন চোখে পরে না। এই বাংলা ঘরের চৌকির ওপর থাকত বাড়ির অবিবাহিত ছেলে বা ছাত্ররা। আর মেহমান বা অতিথিরা এলে চৌকির ওপরে থাকতে দেয়া হতো। মাটিতে একঢালা হোগল পাতার বা বাঁশের চাটাই বিছিয়ে বিছানা করে থাকত বারোমাসি কামলারা ও রাখাল। গড় গড় শব্দে তারা হুক্কা টানত আর ধোঁয়া ছাড়ত।

প্রতি রাতেই পাড়ার সব কামলা/রাখাল বড় কোনো কাছারি ঘরে মিলিত হয়ে গানের আসর বসাতো। গান করত পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, রূপবান,গুনাই বিবি, আলোমতি, সাগরভাসা, বেহুলা লখিন্দরের পালা। মাঝে মাঝে গভীর রাত পর্যন্ত বসত শালিস বৈঠক। গৃহ অভ্যন্তরে যারা থাকতেন তাদের চোখেও ঘুম ছিলো না, চা আর পানের ফরমায়েশ রক্ষা করতে।

প্রায় প্রতিটি রাতে কাছারি ঘরওয়ালা বাড়িতে আসত অনাত্মীয়- অচেনা কোনো মুসাফির। ভেতর বাড়ি থেকে শোনা যেত কোনো অচেনা মুসাফিরদের কণ্ঠ : ‘বাড়িতে কেডা আছেন ? কাছে এলে বলত : থাকবার জাগা হবে ? “অনেক রাইত অইছে, বাড়িতে যাওয়া যাবে না” এই কারণেই বাঙালিরা হয়ে উঠেছিল- অতিথি পরায়ণ।

আরবের মানুষও অতিথি পরায়ণ হয়েছিল, শুধু মরুভূমির কারণে। যত রাতেই আসুক অতিথিদের না খেয়ে শুতে দিত না বাড়িওয়ালারা। মজার ব্যাপার হলো- এ সব অতিথিরা রাতের অন্ধকার থাকতেই উঠে চলে যেত, তবে বাড়ির কোনো কিছু হারায়নি কোনো দিন। কাছারি ঘরের সামনে ছিল বারান্দা। বারান্দায় সব সময় একটি হেলনা বেঞ্চ থাকত। ক্লান্ত পথিকরা এখানে বসে একটু জিড়িয়ে নিত। কখনো কখনো পান-তামাক (হুক্কা) খেয়ে যেত।

পশ্চিম মাধবপুরের মরহুম সমুজ আলী সর্দারের ছেলে মাসুদ আলী বলেন, আমাদের একটি কাচারী ঘর ছিল, যেটি আজ পরিত্যক্ত, এই ঘরটি ছিল আমাদের ঐতিহ্য, এক সময় এই ঘরের বারান্দার একপ্রান্তে ছোট কক্ষে থাকতেন মসজিদের মৌলভী বা মক্তবের শিক্ষক। এখন আর কোনো বাড়িতে বাংলা ঘর নেই। যে কয়টি আছে তা ব্যবহৃত না হওয়ায় অবহেলা, অযতেœ মৃত প্রায়।

বারোমাসি রাখালের প্রচলন নেই, নেই রাখালি গান। বাড়ির ছেলেদের রাতে বাইরে থাকার অনুমতি নেই। অবকাঠামো উন্নতির ফলে মাঠে ঘাটে যারা কাজ করে তারা দিন শেষে নিজ বাড়িতে চলে যায়। পরিবার গুলো ছোট ও খুব বেশী আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তাই বিলুপ্ত হচ্ছে শতবর্ষের ঐতিহ্য কাছারি ঘর নামে খ্যাত বাহির বাড়ির বাংলো ঘরটি। মাধবপুর পৌরসভা মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক বলেন, এখন সবাই শহর কেন্দ্রীক। নিজেদের পরিবার নিয়েই সবাই ব্যস্ত। বাবা দাদার ঐতিয্য নিয়ে মোটেও মাথা ব্যাথা নেই। বাবা দাদার সম্পদ ঠিকই বিক্রি করে নিয়ে যায় নিজের আভিজাত্য আরও অভিজাত করার জন্য।

back to top