নাট্যকর্মীদের মুক্ত আলোচনা-মতবিনিময়
আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্য ধারন করে অনেক পথ এগিয়ে আসা বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গণ এখন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে- এই মূল্যায়ন-অভিযোগ বাংলাদেশের সক্রীয় নাট্যকর্মীদের। নাট্যকর্মীরা বলছেন, যে সংগঠন দেশের নানা সংকট, আন্দোলন–-সংগ্রাম আর দাবী আদায়ে ভূমিকা রেখেছে, নাট্যকর্মীদের সেই সংগঠন গ্রুপথিয়েটার ফেডারেশন স্থবির অবস্থানে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ নাট্যকর্মীরা।
গতকাল শনিবার নাট্যকর্মীদের এক মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ-ক্ষোভ-হতাশা উঠে আসে নাট্যকর্মী ও সংগঠকদের কথা-আলোচনায়। নাট্যকর্মীরা গ্রুপথিয়েটার ফেডারেশনের নানা অনিয়ম তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ছিল ‘থিয়েটার চর্চায় সাম্প্রতিক সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান নূর, মফিদুল হক, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আহমেদ ইকবাল হায়দার প্রমুখ নেতৃস্থানীয় নাট্যজন। তারা ছাড়াও বেশ কয়েকজন সাধারণ নাট্যকর্মী মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
মতবিনিময় সভার শুরুতে নাট্যকর্মী অলক বসু সাধারণ নাট্যকর্মীদের পক্ষে ধারণাপত্র পাঠ করেন। নাট্যচর্চার বেশকিছু সমস্যা সনাক্ত করা হয় এ ধারনাপত্রে। এগুলো হলো, শিক্ষার সঙ্গে নাট্যচর্চার সম্পর্ক না থাকা, দল পরিচালনায় যুগোপযুগী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, পেশাদারত্ব ও শিল্পমান বিবেচনায় না নিয়ে থিয়েটার চর্চা, ব্যক্তি ও সাংগঠনিক পর্যায়ে বিভেদ। একইভাবে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকেন্দ্রিক বেশ কিছু সমস্যাও তুলে ধরেন নাট্যকর্মীরা। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভূমিকা ও কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তা, জবাবদিহিতা না থাকার বিষয়গুলো উঠে আসে নাট্যকর্মীদের বক্তব্যবে।
আলোচনায় একাধিক নাট্যকর্মী এমন অভিমত প্রকাশ করেন যে, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ফেডারেশনের চেয়ারম্যান একই ব্যক্তি হওয়ায় সামাজিক ও জাতীয় সংকটগুলোতে প্রতিবাদী কর্মসূচী দেওয়া হয় না।
লেখক-নাট্য সমালোচক মফিদুল হক তার আলোচনায় বলেন, ‘যাত্রা শুরুর পর গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। আজ এটি একটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।’ এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দেন তিনি।
নাট্যকার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, নাট্যাঙ্গনের বর্তমান অবস্থা সৃষ্টিশীলতা বনাম কাঠামোর দ্বন্দ্ব। ফেডারেশানে যারা নেতৃত্ব দেন, তাদের সঙ্গে অন্যদেরও একই দ্বন্দ্ব চলতে থাকে।
নাট্যকার-অভিনেতা মামুনুর রশিদ আলোচনার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধানের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমি ফেডারেশানকে অভিন্ন এবং শক্তিশালী দেখতে চাই। সংকট সব সময় আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমাধান করতে হবে।’
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন,‘আমরা ফেডারেশনের মুখাপেক্ষী হয় নাট্যচর্চা করি না। ফেডারেশন না থাকলে কী হবে?’ সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করে বলে অভিমত দিয়ে বলেন, ‘তবে দুটোর মেলবন্ধন করা গেলে ভালো হয়।’
এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এক সময় সক্রিয় ছিল এবং তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় ছিল। সেই পরিচয় আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
কামাল বায়েজিদ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে বলেন, ‘লিয়াকত আলী ১৯৯৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ফেডারেশনের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত আছেন। গত ১৩ বছর ধরে তিনি এর চেয়ারম্যান, ১২ বছর ধরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। কোনো সামাজিক আন্দোলনে তাঁকে নেওয়া যায়নি। শিল্প সংস্কৃতিকে একটি দুর্বোদ্ধ জায়গায় নিয়ে গেছেন তিনি।’
মুক্ত আলোচনায় এ ছাড়াও নাটকের হল বরাদ্দে অব্যবস্থাপনা, মহড়াকক্ষের অভাব এবং সার্বিক নাট্যচর্চার নানা ত্রুটিসহ বেশকিছু অভিমত উঠে আসে।
নাট্যকর্মীদের মুক্ত আলোচনা-মতবিনিময়
রোববার, ২৪ জুলাই ২০২২
আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্য ধারন করে অনেক পথ এগিয়ে আসা বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গণ এখন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে- এই মূল্যায়ন-অভিযোগ বাংলাদেশের সক্রীয় নাট্যকর্মীদের। নাট্যকর্মীরা বলছেন, যে সংগঠন দেশের নানা সংকট, আন্দোলন–-সংগ্রাম আর দাবী আদায়ে ভূমিকা রেখেছে, নাট্যকর্মীদের সেই সংগঠন গ্রুপথিয়েটার ফেডারেশন স্থবির অবস্থানে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ নাট্যকর্মীরা।
গতকাল শনিবার নাট্যকর্মীদের এক মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ-ক্ষোভ-হতাশা উঠে আসে নাট্যকর্মী ও সংগঠকদের কথা-আলোচনায়। নাট্যকর্মীরা গ্রুপথিয়েটার ফেডারেশনের নানা অনিয়ম তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ছিল ‘থিয়েটার চর্চায় সাম্প্রতিক সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান নূর, মফিদুল হক, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আহমেদ ইকবাল হায়দার প্রমুখ নেতৃস্থানীয় নাট্যজন। তারা ছাড়াও বেশ কয়েকজন সাধারণ নাট্যকর্মী মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
মতবিনিময় সভার শুরুতে নাট্যকর্মী অলক বসু সাধারণ নাট্যকর্মীদের পক্ষে ধারণাপত্র পাঠ করেন। নাট্যচর্চার বেশকিছু সমস্যা সনাক্ত করা হয় এ ধারনাপত্রে। এগুলো হলো, শিক্ষার সঙ্গে নাট্যচর্চার সম্পর্ক না থাকা, দল পরিচালনায় যুগোপযুগী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, পেশাদারত্ব ও শিল্পমান বিবেচনায় না নিয়ে থিয়েটার চর্চা, ব্যক্তি ও সাংগঠনিক পর্যায়ে বিভেদ। একইভাবে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকেন্দ্রিক বেশ কিছু সমস্যাও তুলে ধরেন নাট্যকর্মীরা। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভূমিকা ও কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তা, জবাবদিহিতা না থাকার বিষয়গুলো উঠে আসে নাট্যকর্মীদের বক্তব্যবে।
আলোচনায় একাধিক নাট্যকর্মী এমন অভিমত প্রকাশ করেন যে, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ফেডারেশনের চেয়ারম্যান একই ব্যক্তি হওয়ায় সামাজিক ও জাতীয় সংকটগুলোতে প্রতিবাদী কর্মসূচী দেওয়া হয় না।
লেখক-নাট্য সমালোচক মফিদুল হক তার আলোচনায় বলেন, ‘যাত্রা শুরুর পর গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। আজ এটি একটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।’ এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দেন তিনি।
নাট্যকার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, নাট্যাঙ্গনের বর্তমান অবস্থা সৃষ্টিশীলতা বনাম কাঠামোর দ্বন্দ্ব। ফেডারেশানে যারা নেতৃত্ব দেন, তাদের সঙ্গে অন্যদেরও একই দ্বন্দ্ব চলতে থাকে।
নাট্যকার-অভিনেতা মামুনুর রশিদ আলোচনার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধানের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমি ফেডারেশানকে অভিন্ন এবং শক্তিশালী দেখতে চাই। সংকট সব সময় আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমাধান করতে হবে।’
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন,‘আমরা ফেডারেশনের মুখাপেক্ষী হয় নাট্যচর্চা করি না। ফেডারেশন না থাকলে কী হবে?’ সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করে বলে অভিমত দিয়ে বলেন, ‘তবে দুটোর মেলবন্ধন করা গেলে ভালো হয়।’
এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এক সময় সক্রিয় ছিল এবং তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় ছিল। সেই পরিচয় আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
কামাল বায়েজিদ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে বলেন, ‘লিয়াকত আলী ১৯৯৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ফেডারেশনের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত আছেন। গত ১৩ বছর ধরে তিনি এর চেয়ারম্যান, ১২ বছর ধরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। কোনো সামাজিক আন্দোলনে তাঁকে নেওয়া যায়নি। শিল্প সংস্কৃতিকে একটি দুর্বোদ্ধ জায়গায় নিয়ে গেছেন তিনি।’
মুক্ত আলোচনায় এ ছাড়াও নাটকের হল বরাদ্দে অব্যবস্থাপনা, মহড়াকক্ষের অভাব এবং সার্বিক নাট্যচর্চার নানা ত্রুটিসহ বেশকিছু অভিমত উঠে আসে।