শীতলক্ষ্যার অববাহিকায় গড়ে ওঠা বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জ। এই নগরীর দেয়ালে-দেয়ালে লেগে আছে মানুষের হাসি, কান্না ও বিচ্ছিন্নতার গল্প। বাতাসে ভেসে বেড়ায় সভ্যতার নামে নদী, পাখি, মাছ, গাছ, প্রকৃতি ধ্বংসের করুণ সুর। লক্ষ্যাপারের এইসব গল্প জানাতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে দাগ আর্ট স্টেশন।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে ‘লক্ষ্যাপারের চিত্রকথা’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। শহরের ডিআইটির আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের গ্যালারিতে এই প্রদর্শনী চলবে ২৬ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত।
প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রবীণ শিল্পী আব্দুল খালেদ, শিল্পী হানিফ পাপ্পু ও শিল্পী রফিউর রাব্বি। রফিউর রাব্বি বলেন, আধুনিক পৃথিবীর সভ্যতাই গড়ে উঠেছে নদীর অববাহিকায়। চার হাজার বছর আগে শীতলক্ষ্যার পাড়ে গড়ে উঠা জনপদে এ নদীর বড় অবদান আছে। যে নদী আমাদের জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সেই নদীকে সভ্যতার নামে আমরা ধ্বংস করেছি। শিল্পের মধ্য দিয়ে এই সত্যকে দাগ ফুটিয়ে তুলতে চাচ্ছে। আশা করছি এর মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে।
এই প্রদর্শনীতে দাগের ৮ জন সদস্যশিল্পী তাদের চিত্রকর্মের মাধ্যমে লক্ষ্যাপাড়ের ইতিহাস ও মানুষের গল্প তুলে ধরেছেন। অমল আকাশ পটের গানে তুলে ধরেন হাসেম ফুডে ঝলসে যাওয়া ৫২ প্রাণের করুণ ঘটনা। দখলে ও দূষণে এই শহরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব রাখা শীতলক্ষ্যা নদীর করুণ দশা দেখিয়েছেন লিটন সরকার। তিনি বলেন, এ বিষাক্ত প্রবাহে জলদেবী কি আসবেন ফিরে শীতলক্ষ্যায়? যে জলে ভাসে মানুষের লাশ, শহরের সমুদয় বর্জ্য, তাকে কি আর নদী নামে চেনা যায়। এই শহরের মানুষ আবার মানুষ হয়ে ফিরবে একদিন শীতলক্ষ্যার কাছে, বিশুদ্ধ জলের স্রোতধারা নিয়ে।
‘পেপার ক্লে’র চিত্রকর্মে খন্দকার নাসির আহমেদ সামনে এনেছেন আত্মকেন্দ্রীক শহুরে জীবনের পরস্পর বিচ্ছিন্নতার গল্প। শিল্পী নাসির বলেন, শহরের জীবনে মানুষের মধ্যে বড়ই বিচ্ছিন্নতা। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া, রিকশার চালক ও আরোহীর মধ্যে কোন আবেগ বিনিময় হয় না। গরীব মানুষ ধনীকে ঘৃণা করে আর ধনী গরীবকে। পরস্পর বিচ্ছিন্নতার কারণে চারদিকে কেমন যেন হাহাকার। বড় বড় ইমারত যেন একেকটা বৃহদাকার খাঁচা। এই খাঁচা ভাঙতে হবে সেই উপলব্ধিই যেন মানুষের মধ্যে তৈরি যাতে হয় সেই প্রচেষ্টা করেছি।
প্রদর্শনীতে ছিল শহীদ আহম্মেদ, সুমনা আক্তার, রঞ্জিত কর্মকার, বদরুল আলম ইমন ও মুনতাসির মঈনের কাজ। তবে গ্যালারির শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নয় শিক্ষার্থীদের করা নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থাপনার মডেল দৃষ্টি আকর্ষণ করে দর্শনার্থীদের। ওই মডেলে তুলে ধরা হয়েছে কদমরসুল দরগা, বিবি মরিয়মের মাজার, হাজীগঞ্জ দুর্গ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, বোস কেবিনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পুরো মডেলটি তৈরি করতে কাগজের ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা।
এই ধরনের প্রদর্শনী প্রায়সময় আয়োজন করার প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রদর্শনী দেখতে আসা তরুণী আফরিন আহমেদ হিয়া। তিনি বলেন, শহরের মানুষ প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। যার ফলে নদী দূষণ হচ্ছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির সাথে সংযোগ আবার সৃষ্টি করতে হবে। এই উপলব্ধি সৃষ্টির জন্য হলেও এই ধরনের প্রদর্শনীর প্রয়োজন।
দাগ আর্ট স্টেশনের সদস্য শিল্পী অমল আকাশ বলেন, ২০১৮ সালের জুলাইতে দলীয় প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে দাগের। এরপর থেকে প্রতি শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে শিল্পকর্মের সাপ্তাহিক মুক্ত প্রদর্শনী ও বিক্রয়। করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ‘স্বল্প মূল্যে শিল্পকর্ম বিক্রয়’ নীতিতে দাগ আর্ট স্টেশন আবার এই উন্মুক্ত প্রদর্শনী আয়োজন শুরু করতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। এর প্রধান উদ্দেশ্য-নগরবাসীর মাঝে নিয়মিত শিল্পকর্ম ক্রয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং শিল্পী ও শিল্পকর্মের সাথে জনতার নিকটবর্তী সম্পর্ক গড়ে তোলা।
আবার এই নতুন যাত্রায় নারায়ণগঞ্জ শহরে আন্তর্জাতিক আর্ট প্রোগ্রাম আয়োজন করা, আর্টিস্ট টক, ওয়ার্কশপ, আউটিংসহ নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বছর থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের নবীন, প্রবীণ শিল্পীদের দলীয় ও একক চিত্র নিয়ে নিয়মিত দ্বিমাসিক প্রদর্শনীর আয়োজন শুরু করতে যাচ্ছি। তারই প্রথম আয়োজন ‘লক্ষ্যাপাড়ের চিত্রকথা-১’ শিরোনামের দলীয় প্রদর্শনী।
শনিবার, ২০ আগস্ট ২০২২
শীতলক্ষ্যার অববাহিকায় গড়ে ওঠা বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জ। এই নগরীর দেয়ালে-দেয়ালে লেগে আছে মানুষের হাসি, কান্না ও বিচ্ছিন্নতার গল্প। বাতাসে ভেসে বেড়ায় সভ্যতার নামে নদী, পাখি, মাছ, গাছ, প্রকৃতি ধ্বংসের করুণ সুর। লক্ষ্যাপারের এইসব গল্প জানাতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে দাগ আর্ট স্টেশন।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে ‘লক্ষ্যাপারের চিত্রকথা’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। শহরের ডিআইটির আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের গ্যালারিতে এই প্রদর্শনী চলবে ২৬ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত।
প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রবীণ শিল্পী আব্দুল খালেদ, শিল্পী হানিফ পাপ্পু ও শিল্পী রফিউর রাব্বি। রফিউর রাব্বি বলেন, আধুনিক পৃথিবীর সভ্যতাই গড়ে উঠেছে নদীর অববাহিকায়। চার হাজার বছর আগে শীতলক্ষ্যার পাড়ে গড়ে উঠা জনপদে এ নদীর বড় অবদান আছে। যে নদী আমাদের জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সেই নদীকে সভ্যতার নামে আমরা ধ্বংস করেছি। শিল্পের মধ্য দিয়ে এই সত্যকে দাগ ফুটিয়ে তুলতে চাচ্ছে। আশা করছি এর মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে।
এই প্রদর্শনীতে দাগের ৮ জন সদস্যশিল্পী তাদের চিত্রকর্মের মাধ্যমে লক্ষ্যাপাড়ের ইতিহাস ও মানুষের গল্প তুলে ধরেছেন। অমল আকাশ পটের গানে তুলে ধরেন হাসেম ফুডে ঝলসে যাওয়া ৫২ প্রাণের করুণ ঘটনা। দখলে ও দূষণে এই শহরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব রাখা শীতলক্ষ্যা নদীর করুণ দশা দেখিয়েছেন লিটন সরকার। তিনি বলেন, এ বিষাক্ত প্রবাহে জলদেবী কি আসবেন ফিরে শীতলক্ষ্যায়? যে জলে ভাসে মানুষের লাশ, শহরের সমুদয় বর্জ্য, তাকে কি আর নদী নামে চেনা যায়। এই শহরের মানুষ আবার মানুষ হয়ে ফিরবে একদিন শীতলক্ষ্যার কাছে, বিশুদ্ধ জলের স্রোতধারা নিয়ে।
‘পেপার ক্লে’র চিত্রকর্মে খন্দকার নাসির আহমেদ সামনে এনেছেন আত্মকেন্দ্রীক শহুরে জীবনের পরস্পর বিচ্ছিন্নতার গল্প। শিল্পী নাসির বলেন, শহরের জীবনে মানুষের মধ্যে বড়ই বিচ্ছিন্নতা। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া, রিকশার চালক ও আরোহীর মধ্যে কোন আবেগ বিনিময় হয় না। গরীব মানুষ ধনীকে ঘৃণা করে আর ধনী গরীবকে। পরস্পর বিচ্ছিন্নতার কারণে চারদিকে কেমন যেন হাহাকার। বড় বড় ইমারত যেন একেকটা বৃহদাকার খাঁচা। এই খাঁচা ভাঙতে হবে সেই উপলব্ধিই যেন মানুষের মধ্যে তৈরি যাতে হয় সেই প্রচেষ্টা করেছি।
প্রদর্শনীতে ছিল শহীদ আহম্মেদ, সুমনা আক্তার, রঞ্জিত কর্মকার, বদরুল আলম ইমন ও মুনতাসির মঈনের কাজ। তবে গ্যালারির শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের নয় শিক্ষার্থীদের করা নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থাপনার মডেল দৃষ্টি আকর্ষণ করে দর্শনার্থীদের। ওই মডেলে তুলে ধরা হয়েছে কদমরসুল দরগা, বিবি মরিয়মের মাজার, হাজীগঞ্জ দুর্গ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, বোস কেবিনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পুরো মডেলটি তৈরি করতে কাগজের ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা।
এই ধরনের প্রদর্শনী প্রায়সময় আয়োজন করার প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রদর্শনী দেখতে আসা তরুণী আফরিন আহমেদ হিয়া। তিনি বলেন, শহরের মানুষ প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। যার ফলে নদী দূষণ হচ্ছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির সাথে সংযোগ আবার সৃষ্টি করতে হবে। এই উপলব্ধি সৃষ্টির জন্য হলেও এই ধরনের প্রদর্শনীর প্রয়োজন।
দাগ আর্ট স্টেশনের সদস্য শিল্পী অমল আকাশ বলেন, ২০১৮ সালের জুলাইতে দলীয় প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে দাগের। এরপর থেকে প্রতি শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে শিল্পকর্মের সাপ্তাহিক মুক্ত প্রদর্শনী ও বিক্রয়। করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ‘স্বল্প মূল্যে শিল্পকর্ম বিক্রয়’ নীতিতে দাগ আর্ট স্টেশন আবার এই উন্মুক্ত প্রদর্শনী আয়োজন শুরু করতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। এর প্রধান উদ্দেশ্য-নগরবাসীর মাঝে নিয়মিত শিল্পকর্ম ক্রয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং শিল্পী ও শিল্পকর্মের সাথে জনতার নিকটবর্তী সম্পর্ক গড়ে তোলা।
আবার এই নতুন যাত্রায় নারায়ণগঞ্জ শহরে আন্তর্জাতিক আর্ট প্রোগ্রাম আয়োজন করা, আর্টিস্ট টক, ওয়ার্কশপ, আউটিংসহ নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বছর থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের নবীন, প্রবীণ শিল্পীদের দলীয় ও একক চিত্র নিয়ে নিয়মিত দ্বিমাসিক প্রদর্শনীর আয়োজন শুরু করতে যাচ্ছি। তারই প্রথম আয়োজন ‘লক্ষ্যাপাড়ের চিত্রকথা-১’ শিরোনামের দলীয় প্রদর্শনী।