alt

সংস্কৃতি

‘গল্প বলার স্বাধীনতা’ চেয়ে শিল্পী-নির্মাতাদের মতবিনিময় সভা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০২২

এক সভায় মিলিত হয়ে অভিনয় শিল্পী-নির্মাতারা বলেছেন, ‘আমরা ভয়ের সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই। নিজের মতো গল্প বলার স্বাধীনতা চাই।” তারা বলেন, “এখন যা হচ্ছে, সেটা ভালো কিছু নয়। সিনেমা বানাতে গেলে আমাদের ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।’

বৃহস্পতিবার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপ খড়গ, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শিরোনামে মতবিনিময় সভায় শিল্পী-কলাকুশলীরা এসব কথা বলেন। কাঁটাতারের বেড়ার আদলে সেট তৈরি করে সেই মঞ্চে বসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন নির্মাতা ও শিল্পীরা। তারা দাবি তুললেন ‘হাওয়া’র বিরুদ্ধে মামলা তোলার, ‘শনিবার বিকেল’কে মুক্ত করার।

হাওয়া নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে বন বিভাগের মামলা, ‘শনিবার বিকেল’র সেন্সর ছাড়পত্র না দেওয়াসহ নানা দাবিতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন তারা। ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপ খড়গ, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শিরোনামে এই সভায় শিল্পী-কলাকুশলীরা মোট পাঁচটি দাবি তোলেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং ‘হাসিনা এ ডটারস টেল’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা পিপলু আর খান দাবিনামা তুলে ধরেন ।

দাবিগুলো হলো ; হাওয়া’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ‘শনিবার বিকেলে’ চলচ্চিত্র কেন সেন্সর ছাড়পত্র পেল না, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে এবং প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সাটিফিকেশন আইনের ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। চলচ্চিত্র বা কনটেন্ট বিষয়ক কোনো মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (যেমন: খসড়া ওটিটি নীতিমালায় প্লাটফর্মগুলোতে আলাদা কমিশন বোর্ড তৈরির প্রস্তাব আছে, এ জাতীয় কোন কর্তৃপক্ষের) সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, নীতিমালা হোক, কিন্তু ‘নিয়ন্ত্রণমালা’ নয়। যদি সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্য দিয়ে সুন্দর পরিবেশ দেওয়া যায়, তাহলে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প আগামী ৫ বছরে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকার বাজার তৈরি করতে পারবে। নির্মাতা-শিল্পীরা বলছেন, তারা এখন এক ধরনের ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এই অবস্থায় ভালো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভবপর নয়। সেই কারণেই সভার এমন মঞ্চ তৈরি করে এসেছেন তারা।

এসব দাবিতে শিগগিরই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও সভা থেকে জানানো হয়। সেই সাঙ্গে বলা হয়, সেপ্টেম্বর মাসে এই বিষয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হবে।

সভায় ‘হাওয়া’র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, “সিনেমায় একটা অবাস্তব দৃশ্যকে বাস্তব করে দেখানোর চেষ্টা করেছি। সাময়িক সময়ের জন্য সেই পাখিটিকে খাঁচায় বন্দি করা হয়েছে, আবার সেটাকে অবমুক্ত করেছি। কিন্তু পাখিটিকে অবমুক্ত করার পর এখন দেখছি, আমি নিজেই বন্দি হয়ে গেছি।

“নতুন সিনেমা নিয়ে যখন ভাবতে যাই, প্রথম মাথায় আসে এটা করা যাবে না, ওটা বলা যাবে না। আমরা মজা করে বলে থাকি, এখন ফুল-পাখি-লতা-পাতা নিয়ে সিনেমা বানাতে হবে। কিন্তু যে বাস্তবতায় দাঁড়িয়েছি, এখন তো পাখি নিয়েও সিনেমা বানানো যাবে না। এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে- এই স্লোগান নিয়েই আমাদের আগাতে হবে।”

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “কোথাও পাহাড় কাটছে না, নদী দখল করছে না, পরিবেশ দূষণ হচ্ছে না- এমন কোনো কাজ কি করতে পারছে পরিবেশ অধিদপ্তর? তারা সেদিকে নজর না দিয়ে সিনেমার পেছনে লেগেছে। এর পেছনে উদ্দেশ্যটা কী?”

চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “মেজবাউর রহমান সুমনের হাওয়া সিনেমাটি মানুষ গ্রহণ করেছে। সিনেমাটি সফল হওয়ায় অনেকের হয়ত গাত্রদাহ হচ্ছে। এই মেধাবী তরুণদের থামাতে কেউ পেছনে লেগেছে। আমি বিশ্বাস করি এই তরুণদের সুন্দর পরিবেশ দিলে ওরা বিশ্ব জয় করবে।”

অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা তারিক আনাম খান বলেন, “পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ নিয়ে তো পরিবেশ অধিদপ্তরের মাথাব্যথা নেই, কিন্তু সিনেমার দৃশ্যে খাঁচায় বন্দি পাখি দেখানো নিয়ে তাদের অনেক মাথা ব্যথা! লঞ্চ দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা। কিন্তু সিনেমায় খাঁচায় বন্দি পাখি দেখানোর জন্য মামলা হয় ২০ কোটি টাকার। আমি একই সাথে ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের সমালোচনা করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, “বন উজাড় হচ্ছে, কাঁটাবনে আমরা পশুপাখি আটকে রাখছি। সেখানে বন অধিদপ্তর কোথায়? সিনেমায় এটা দেখানো যাবে না, ওটা করা যাবে না- এত শর্ত নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা কি সম্ভব? এভাবে তো হয় না। এভাবে সিনেমা নির্মাণ করা যায় না। গল্প বলা যায় না। স্বাধীন বাংলাদেশে এত কালা কানুন কেন?”

‘শনিবার বিকেল’ নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “কেন মুক্তি পাচ্ছে না শনিবার বিকেল? আমি নিজেও জানি না। সাড়ে তিন বছর ধরে সিনেমাটি আটকে রাখা হয়েছে।আমি শুধু বলবো, শিল্পকর্ম হল হেডলাইটের মতো। হেড লাইট বন্ধ করে যদি ভেবে নেন সামনে কোনো বিপদ নাই, তাহলে ভুল করবেন। বরং হেডলাইট জ্বেলে দেখুন ঠিক পথে আছেন কি না?”

সেন্সর বোর্ডের সমালোচনা করে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “সেন্সর বোর্ডে আমিও সদস্য ছিলাম। সেন্সরের নামে সেখানে নানা রকম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এখন নতুন সার্টিফিকেশন আইন করা হচ্ছে। সেটা আরও জঘন্য।”

অভিনেতা জাহিদ হাসান শনিবার বিকেল সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “পুরো সিনেমাটা এক শটে নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা মহড়া করে, খুবই মনোযোগ দিয়ে সিনেমাটি করেছি। এই সিনেমা তো রাশিয়াতে দেখানো হয়েছে। সেখানে দর্শক কেঁদেছে। বুঝলাম না কেন আটকে রাখা হয়েছে সিনেমাটিকে?”

আমি শিল্পী হিসেবে কি স্বাধীনভাবে অভিনয় করতে পারছি? এত শর্ত নিয়ে কিভাবে পারফর্ম করব?”

সভায় সাজু খাদেম, ইরেশ যাকের, জাকিয়া বারী মম, আফসানা মিমি, আজমেরি হক বাঁধন, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, ইরেশ যাকের, নুরুল আলম আতিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাংলাদেশের মিতিয়া ওসমান

ছবি

চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে বর্ষ বরন সম্পন্ন

ছবি

জামালপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

ছবি

বনাঢ্য নানান আয়োজনে বিভাগীয় নগরী রংপুরে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ

ছবি

আজ চৈত্র সংক্রান্তি

ছবি

বর্ষবরণে সময়ের বিধি-নিষেধ মানবে না সাংস্কৃতিক জোট

ছবি

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার গুণীজন সংবর্ধনা

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় সকল প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে : ড. কামাল চৌধুরী

ছবি

এলাকাবাসীর সঙ্গে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নতুন কমিটি, ড. সনজীদা খাতুন সভাপতি, ড. আতিউর রহমান নির্বাহী সভাপতি,লিলি ইসলাম সাধারণ সম্পাদক

ছবি

এবার বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি

ছবি

আজ শেষ হচ্ছে মহান একুশের বইমেলা, বিক্রি বেড়েছে শেষ মুহুর্তে

ছবি

আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার জায়গা বরাদ্দ নাওদিতে পারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

ছবি

বইমেলা, মেয়াদ বাড়ায় খুশি সবাই

ছবি

বইমেলায় ফ্রান্স প্রবাসী কাজী এনায়েত উল্লাহর দুই বই

ছবি

নারী লেখকদের বই কম, বিক্রিও কম

ছবি

বইমেলায় বিদায়ের সুর

ছবি

শিশুদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে জমজমাট বইমেলার শিশু প্রহর

ছবি

বইমেলায় শিশুদের চোখে মুখে ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস

ছবি

বই মেলায় খুদে লেখকদের গল্প সংকলন ‘কিশোর রূপাবলি’

ছবি

`বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত উন্নত শিরের বাঙালি জাতি চাই’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ছবি

বইমেলায় সরোজ মেহেদীর ‘চেনা নগরে অচিন সময়ে’

ছবি

বইমেলায় মাহবুবুর রহমান তুহিনের ‘চেকবই’

বইমেলায় প্রকাশিত হলো সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের ‘যাপিত জীবনের গল্প’

ছবি

সমাজসেবায় একুশে পদকঃ এখনও ফেরি করে দই বিক্রি করেন জিয়াউল হক

ছবি

বইমেলায় পন্নী নিয়োগীর নতুন গ্রল্পগ্রন্থ আতশবাজি

ছবি

ভাষার শক্তি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সুদৃঢ় করে: উপাচার্য ড. মশিউর রহমান

ছবি

রুবেলের গ্রন্থ শিশির ঝরা কবিতা

ঢাবিতে পাঁচ দিনব্যাপী ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র’ উৎসব শুরু

ছবি

সোনারগাঁয়ে লোকজ উৎসবে খেলাঘরের নাচ-গান পরিবেশন

ছবি

বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফেরত দিলেন জাকির তালুকদার

ছবি

রংতুলির মাধ্যমে নিরাপদ সড়কের দাবি শিশুদের

ছবি

জাতীয় প্রেস ক্লাবে পিঠা উৎসব ও লোকগানের আসর

ফরিদপুরে ২ ফেব্রূয়ারি থেকে ঐতিহ্যবাহী জসীম পল্লী মেলা

ছবি

লেনিন উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসব

ছবি

ঢাবিতে ৭ম নন-ফিকশন বইমেলার উদ্বোধন

tab

সংস্কৃতি

‘গল্প বলার স্বাধীনতা’ চেয়ে শিল্পী-নির্মাতাদের মতবিনিময় সভা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০২২

এক সভায় মিলিত হয়ে অভিনয় শিল্পী-নির্মাতারা বলেছেন, ‘আমরা ভয়ের সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই। নিজের মতো গল্প বলার স্বাধীনতা চাই।” তারা বলেন, “এখন যা হচ্ছে, সেটা ভালো কিছু নয়। সিনেমা বানাতে গেলে আমাদের ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।’

বৃহস্পতিবার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপ খড়গ, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শিরোনামে মতবিনিময় সভায় শিল্পী-কলাকুশলীরা এসব কথা বলেন। কাঁটাতারের বেড়ার আদলে সেট তৈরি করে সেই মঞ্চে বসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন নির্মাতা ও শিল্পীরা। তারা দাবি তুললেন ‘হাওয়া’র বিরুদ্ধে মামলা তোলার, ‘শনিবার বিকেল’কে মুক্ত করার।

হাওয়া নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে বন বিভাগের মামলা, ‘শনিবার বিকেল’র সেন্সর ছাড়পত্র না দেওয়াসহ নানা দাবিতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন তারা। ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপ খড়গ, গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শিরোনামে এই সভায় শিল্পী-কলাকুশলীরা মোট পাঁচটি দাবি তোলেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং ‘হাসিনা এ ডটারস টেল’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা পিপলু আর খান দাবিনামা তুলে ধরেন ।

দাবিগুলো হলো ; হাওয়া’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ‘শনিবার বিকেলে’ চলচ্চিত্র কেন সেন্সর ছাড়পত্র পেল না, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে এবং প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সাটিফিকেশন আইনের ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। চলচ্চিত্র বা কনটেন্ট বিষয়ক কোনো মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (যেমন: খসড়া ওটিটি নীতিমালায় প্লাটফর্মগুলোতে আলাদা কমিশন বোর্ড তৈরির প্রস্তাব আছে, এ জাতীয় কোন কর্তৃপক্ষের) সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, নীতিমালা হোক, কিন্তু ‘নিয়ন্ত্রণমালা’ নয়। যদি সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্য দিয়ে সুন্দর পরিবেশ দেওয়া যায়, তাহলে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প আগামী ৫ বছরে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকার বাজার তৈরি করতে পারবে। নির্মাতা-শিল্পীরা বলছেন, তারা এখন এক ধরনের ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এই অবস্থায় ভালো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভবপর নয়। সেই কারণেই সভার এমন মঞ্চ তৈরি করে এসেছেন তারা।

এসব দাবিতে শিগগিরই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও সভা থেকে জানানো হয়। সেই সাঙ্গে বলা হয়, সেপ্টেম্বর মাসে এই বিষয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হবে।

সভায় ‘হাওয়া’র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, “সিনেমায় একটা অবাস্তব দৃশ্যকে বাস্তব করে দেখানোর চেষ্টা করেছি। সাময়িক সময়ের জন্য সেই পাখিটিকে খাঁচায় বন্দি করা হয়েছে, আবার সেটাকে অবমুক্ত করেছি। কিন্তু পাখিটিকে অবমুক্ত করার পর এখন দেখছি, আমি নিজেই বন্দি হয়ে গেছি।

“নতুন সিনেমা নিয়ে যখন ভাবতে যাই, প্রথম মাথায় আসে এটা করা যাবে না, ওটা বলা যাবে না। আমরা মজা করে বলে থাকি, এখন ফুল-পাখি-লতা-পাতা নিয়ে সিনেমা বানাতে হবে। কিন্তু যে বাস্তবতায় দাঁড়িয়েছি, এখন তো পাখি নিয়েও সিনেমা বানানো যাবে না। এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে- এই স্লোগান নিয়েই আমাদের আগাতে হবে।”

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “কোথাও পাহাড় কাটছে না, নদী দখল করছে না, পরিবেশ দূষণ হচ্ছে না- এমন কোনো কাজ কি করতে পারছে পরিবেশ অধিদপ্তর? তারা সেদিকে নজর না দিয়ে সিনেমার পেছনে লেগেছে। এর পেছনে উদ্দেশ্যটা কী?”

চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “মেজবাউর রহমান সুমনের হাওয়া সিনেমাটি মানুষ গ্রহণ করেছে। সিনেমাটি সফল হওয়ায় অনেকের হয়ত গাত্রদাহ হচ্ছে। এই মেধাবী তরুণদের থামাতে কেউ পেছনে লেগেছে। আমি বিশ্বাস করি এই তরুণদের সুন্দর পরিবেশ দিলে ওরা বিশ্ব জয় করবে।”

অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা তারিক আনাম খান বলেন, “পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ নিয়ে তো পরিবেশ অধিদপ্তরের মাথাব্যথা নেই, কিন্তু সিনেমার দৃশ্যে খাঁচায় বন্দি পাখি দেখানো নিয়ে তাদের অনেক মাথা ব্যথা! লঞ্চ দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা। কিন্তু সিনেমায় খাঁচায় বন্দি পাখি দেখানোর জন্য মামলা হয় ২০ কোটি টাকার। আমি একই সাথে ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের সমালোচনা করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, “বন উজাড় হচ্ছে, কাঁটাবনে আমরা পশুপাখি আটকে রাখছি। সেখানে বন অধিদপ্তর কোথায়? সিনেমায় এটা দেখানো যাবে না, ওটা করা যাবে না- এত শর্ত নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা কি সম্ভব? এভাবে তো হয় না। এভাবে সিনেমা নির্মাণ করা যায় না। গল্প বলা যায় না। স্বাধীন বাংলাদেশে এত কালা কানুন কেন?”

‘শনিবার বিকেল’ নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “কেন মুক্তি পাচ্ছে না শনিবার বিকেল? আমি নিজেও জানি না। সাড়ে তিন বছর ধরে সিনেমাটি আটকে রাখা হয়েছে।আমি শুধু বলবো, শিল্পকর্ম হল হেডলাইটের মতো। হেড লাইট বন্ধ করে যদি ভেবে নেন সামনে কোনো বিপদ নাই, তাহলে ভুল করবেন। বরং হেডলাইট জ্বেলে দেখুন ঠিক পথে আছেন কি না?”

সেন্সর বোর্ডের সমালোচনা করে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “সেন্সর বোর্ডে আমিও সদস্য ছিলাম। সেন্সরের নামে সেখানে নানা রকম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এখন নতুন সার্টিফিকেশন আইন করা হচ্ছে। সেটা আরও জঘন্য।”

অভিনেতা জাহিদ হাসান শনিবার বিকেল সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “পুরো সিনেমাটা এক শটে নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা মহড়া করে, খুবই মনোযোগ দিয়ে সিনেমাটি করেছি। এই সিনেমা তো রাশিয়াতে দেখানো হয়েছে। সেখানে দর্শক কেঁদেছে। বুঝলাম না কেন আটকে রাখা হয়েছে সিনেমাটিকে?”

আমি শিল্পী হিসেবে কি স্বাধীনভাবে অভিনয় করতে পারছি? এত শর্ত নিয়ে কিভাবে পারফর্ম করব?”

সভায় সাজু খাদেম, ইরেশ যাকের, জাকিয়া বারী মম, আফসানা মিমি, আজমেরি হক বাঁধন, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, ইরেশ যাকের, নুরুল আলম আতিকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

back to top