সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সম্মেলন
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সম্পাদক আহকাম উল্লাহ
সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিকূল পরিবেশে যতটা সফল হয়েছেন, অনুকূল পরিবেশে ঠিক ততটাই ব্যর্থ হচ্ছেন। সংস্কৃতিকর্মীদের খেয়াল রাখতে হবে, তাদের অবস্থান যেন একপেশে হয়ে না যায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশ যেন সংস্কৃতিকর্মীদের কণ্ঠ শুনতে পায়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অষ্টম সম্মেলনে এই প্রত্যাশাই করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
তারা বলেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। ঘটছে মানবিক বিপর্যয়। এ পরিস্থিতিতে আত্মোপলব্ধি ও আত্মজাগরণের সময় এসেছে।
এদিকে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ২০২২-২৪ মেয়াদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আহকাম উল্লাহ। এদিন সংগঠনটির ১০১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এ সম্মেলন হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করেন সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন।
উদ্বোধনী ভাষণে অনুপম সেন বলেন, সংস্কৃতিকর্মীরা সক্রিয় থাকলে সাধারণ মানুষও সমাজের কাজে এগিয়ে আসবে। সাধারণ মানুষ যখন ধর্মান্ধতার ঠুলি পরে থাকে, সেটি সরানোর দায়িত্ব সংস্কৃতিকর্মীর। আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা সবচেয়ে তেজোদ্দীপ্ত, প্রাণবন্ত ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ। কথা-কবিতা, গান, আবৃত্তি ও নাটকে তাদের যে প্রতিবাদ, তা কখনো বৃথা যেতে পারে না। তাদের কণ্ঠে যে বিদ্রোহের গান, তা কোনো দিন ব্যর্থ হবে না।
চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক অনুপম সেন বলেন, মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন-সংগ্রাম, তাতে সংস্কৃতিকর্মীরা কখনো স্তব্ধ হয় না। সমাজে যত গ্লানি, অন্যায়, আমলাতন্ত্র সমাজের ঘাড়ে চেপে বসে আছে, তার প্রতিবাদে সংস্কৃতিকর্মীদের কণ্ঠ যেন সারা বাংলাদেশ শুনতে পায়।
মামুনুর রশীদ বলেন, সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা আজ আমাকে ব্যথিত করে। সংস্কৃতির যে মর্মকথা, তা আমাদের নীতিনির্ধারকেরা ঠিক বুঝতে পারেন না বলে মনে হয়। তাঁরা মনে করেন, সংস্কৃতি মানে হলো নাটক, গান। কিন্তু সংস্কৃতি তো মানুষের প্রতিদিনের জীবন। শত শত বছর ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে নানা উপাদান এসে যুক্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পরামর্শে পাঠ্যক্রমে যে পরিবর্তন এসেছে, তার বিরুদ্ধেও সংস্কৃতিকর্মীদের সোচ্চার হতে হবে।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আজ সারা দেশে যে সংস্কৃতিবিমুখতা, তা কীভাবে দূর করব? আজ সারা দেশে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, তাতে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটাতেই হবে। তিনি বলেন, ‘গত ২১ বছর ধরে বাংলাদেশ যে উল্টো পথে হাঁটছে, তার বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা কি আমাদের মতো করে বাংলাদেশকে পুরোপুরি সাজাতে পেরেছি? এটা একধরনের ব্যর্থতা। আমাদের সেই দুর্বলতা ও ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে বিশ্লেষণ করতে হবে, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করে আশু করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।’
মফিদুল হক বলেন, আজ আত্মসমালোচনার জায়গা থেকে আত্মোপলব্ধি ও আত্মজাগরণের সময় এসেছে আমাদের। আমরা প্রতিকূল পরিবেশে যে বড় ভূমিকা পালন করেছি, অনুকূল পরিবেশে তা পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আজ সমাজ সাম্প্রদায়িকতা দ্বারা আচ্ছাদিত, তখন আমাদের শক্তি কী হবে, কার্যকর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। আজ সরকারের সামগ্রিক অবস্থান কী, তা নিয়েও ভাবতে হবে। জোটকে কী করে আরও প্রভাবসম্পন্ন করা যায়, তা নিয়ে আরও ভাবতে হবে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, তাতে আমাদের ক্লান্তি ছিল না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে বাংলাদেশ, সেদিকে আমরা কতটা এগোতে পেরেছি? আমরা কি সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক শব্দগুলো মুছে ফেলতে পেরেছি? আজ যে অর্থনৈতিক বিভেদ বা সামাজিক সমতার কথা বলছি, সেখানে সংস্কৃতিকর্মীদের একটি সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা শুরু করতে হবে। যদি বায়ান্ন, একাত্তর, নব্বই বা ২০১৩ সালের গণজাগরণে করতে পারি, তবে এখনো সৃষ্টিশীলতার মধ্যে দিয়ে আমরা আবারও মানুষের মুক্তির কথা বলতে পারি।’
রামেন্দু মজুমদার বলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, সে তার প্রতিবাদী চরিত্র হারিয়েছে। আমরা সরকারের সুকৃতির গুণগান যেমন গাইব, তেমনিভাবে যেকোনো অন্যায়ের জোর প্রতিবাদও জানাতে হবে, সমালোচনা করতে হবে। আজ সারা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন করতে হবে, যেখানে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি সারা যাকের জোটের কর্মকাণ্ডকে সরকারের প্রভাবমুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান কোনোভাবে যেন একপেশে হয়ে না যায়। আমরা নিজেদের আরও বিযুক্ত করে শিল্পের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যেন বিরত না থাকি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যে বড় ভূমিকা, সে কথা তো আমরা ভুলে যাইনি। সেই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জোটের কর্মকাণ্ডে নারীদের তিনি সক্রিয়ভাবে সামনের সারিতে আসার আহ্বান জানান।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আজ আমাদের জোটের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ আমরা নাকি সরকারের দালাল। কোনো কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগ বলে আমরা বামের দালাল, বামেরা বলে আওয়ামী লীগের দালাল। কিন্তু আমরা বলতে চাই, আমরা কোনো দলের দালাল নই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের দালাল, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দালাল। আজকে রাষ্ট্রকাঠামোর সর্বস্তরে যখন সাম্প্রদায়িক শক্তি ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তার প্রতিবাদে সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক মহাজাগরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
দুই বছর পর পর এই সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে ৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যজন সারা যাকের, প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সম্মেলন
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সম্পাদক আহকাম উল্লাহ
শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিকূল পরিবেশে যতটা সফল হয়েছেন, অনুকূল পরিবেশে ঠিক ততটাই ব্যর্থ হচ্ছেন। সংস্কৃতিকর্মীদের খেয়াল রাখতে হবে, তাদের অবস্থান যেন একপেশে হয়ে না যায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশ যেন সংস্কৃতিকর্মীদের কণ্ঠ শুনতে পায়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অষ্টম সম্মেলনে এই প্রত্যাশাই করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
তারা বলেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। ঘটছে মানবিক বিপর্যয়। এ পরিস্থিতিতে আত্মোপলব্ধি ও আত্মজাগরণের সময় এসেছে।
এদিকে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ২০২২-২৪ মেয়াদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আহকাম উল্লাহ। এদিন সংগঠনটির ১০১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এ সম্মেলন হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করেন সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন।
উদ্বোধনী ভাষণে অনুপম সেন বলেন, সংস্কৃতিকর্মীরা সক্রিয় থাকলে সাধারণ মানুষও সমাজের কাজে এগিয়ে আসবে। সাধারণ মানুষ যখন ধর্মান্ধতার ঠুলি পরে থাকে, সেটি সরানোর দায়িত্ব সংস্কৃতিকর্মীর। আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা সবচেয়ে তেজোদ্দীপ্ত, প্রাণবন্ত ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ। কথা-কবিতা, গান, আবৃত্তি ও নাটকে তাদের যে প্রতিবাদ, তা কখনো বৃথা যেতে পারে না। তাদের কণ্ঠে যে বিদ্রোহের গান, তা কোনো দিন ব্যর্থ হবে না।
চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক অনুপম সেন বলেন, মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন-সংগ্রাম, তাতে সংস্কৃতিকর্মীরা কখনো স্তব্ধ হয় না। সমাজে যত গ্লানি, অন্যায়, আমলাতন্ত্র সমাজের ঘাড়ে চেপে বসে আছে, তার প্রতিবাদে সংস্কৃতিকর্মীদের কণ্ঠ যেন সারা বাংলাদেশ শুনতে পায়।
মামুনুর রশীদ বলেন, সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা আজ আমাকে ব্যথিত করে। সংস্কৃতির যে মর্মকথা, তা আমাদের নীতিনির্ধারকেরা ঠিক বুঝতে পারেন না বলে মনে হয়। তাঁরা মনে করেন, সংস্কৃতি মানে হলো নাটক, গান। কিন্তু সংস্কৃতি তো মানুষের প্রতিদিনের জীবন। শত শত বছর ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে নানা উপাদান এসে যুক্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পরামর্শে পাঠ্যক্রমে যে পরিবর্তন এসেছে, তার বিরুদ্ধেও সংস্কৃতিকর্মীদের সোচ্চার হতে হবে।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আজ সারা দেশে যে সংস্কৃতিবিমুখতা, তা কীভাবে দূর করব? আজ সারা দেশে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, তাতে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটাতেই হবে। তিনি বলেন, ‘গত ২১ বছর ধরে বাংলাদেশ যে উল্টো পথে হাঁটছে, তার বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা কি আমাদের মতো করে বাংলাদেশকে পুরোপুরি সাজাতে পেরেছি? এটা একধরনের ব্যর্থতা। আমাদের সেই দুর্বলতা ও ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে বিশ্লেষণ করতে হবে, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করে আশু করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।’
মফিদুল হক বলেন, আজ আত্মসমালোচনার জায়গা থেকে আত্মোপলব্ধি ও আত্মজাগরণের সময় এসেছে আমাদের। আমরা প্রতিকূল পরিবেশে যে বড় ভূমিকা পালন করেছি, অনুকূল পরিবেশে তা পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আজ সমাজ সাম্প্রদায়িকতা দ্বারা আচ্ছাদিত, তখন আমাদের শক্তি কী হবে, কার্যকর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। আজ সরকারের সামগ্রিক অবস্থান কী, তা নিয়েও ভাবতে হবে। জোটকে কী করে আরও প্রভাবসম্পন্ন করা যায়, তা নিয়ে আরও ভাবতে হবে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, তাতে আমাদের ক্লান্তি ছিল না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে বাংলাদেশ, সেদিকে আমরা কতটা এগোতে পেরেছি? আমরা কি সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক শব্দগুলো মুছে ফেলতে পেরেছি? আজ যে অর্থনৈতিক বিভেদ বা সামাজিক সমতার কথা বলছি, সেখানে সংস্কৃতিকর্মীদের একটি সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা শুরু করতে হবে। যদি বায়ান্ন, একাত্তর, নব্বই বা ২০১৩ সালের গণজাগরণে করতে পারি, তবে এখনো সৃষ্টিশীলতার মধ্যে দিয়ে আমরা আবারও মানুষের মুক্তির কথা বলতে পারি।’
রামেন্দু মজুমদার বলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, সে তার প্রতিবাদী চরিত্র হারিয়েছে। আমরা সরকারের সুকৃতির গুণগান যেমন গাইব, তেমনিভাবে যেকোনো অন্যায়ের জোর প্রতিবাদও জানাতে হবে, সমালোচনা করতে হবে। আজ সারা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন করতে হবে, যেখানে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি সারা যাকের জোটের কর্মকাণ্ডকে সরকারের প্রভাবমুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান কোনোভাবে যেন একপেশে হয়ে না যায়। আমরা নিজেদের আরও বিযুক্ত করে শিল্পের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যেন বিরত না থাকি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যে বড় ভূমিকা, সে কথা তো আমরা ভুলে যাইনি। সেই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জোটের কর্মকাণ্ডে নারীদের তিনি সক্রিয়ভাবে সামনের সারিতে আসার আহ্বান জানান।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আজ আমাদের জোটের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ আমরা নাকি সরকারের দালাল। কোনো কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগ বলে আমরা বামের দালাল, বামেরা বলে আওয়ামী লীগের দালাল। কিন্তু আমরা বলতে চাই, আমরা কোনো দলের দালাল নই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের দালাল, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দালাল। আজকে রাষ্ট্রকাঠামোর সর্বস্তরে যখন সাম্প্রদায়িক শক্তি ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তার প্রতিবাদে সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক মহাজাগরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
দুই বছর পর পর এই সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে ৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যজন সারা যাকের, প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।