ঢাকা লিট ফেস্ট
জনপ্রিয় লেখক হওয়ার পেছনে প্রত্যহিক জীবনে সাধারণ মানুষের জটিলতা আর চিন্তাকে ধারণ করে কলম ধরার কথা বলেছেন সাহিত্যে নোবেলজয়ী আব্দুলরাজাক গুরনাহ। আজ শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের একটি অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমি তাদের নিয়ে আগ্রহী নই, যারা মূল মঞ্চ দখল করে থাকে বা যারা পত্রিকার পাতায় থাকেন। কারণ, তারা ইতোমধ্যেই সেখানে অবস্থান করছেন, তাদের কাজ তারা করে যাচ্ছেন।
বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ঢাকা লিট ফেস্টের ‘কেন্দ্রহীন এক বিশ্ব’ অধিবেশনে নিজের লেখালেখির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তানজানিয়া-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক গুরনাহ। অধিবেশনে যোগ দেন ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষ ও ভারতীয় প্রাবন্ধিক-ঔপন্যাসিক পঙ্কজ মিশ্র। সঞ্চালনা করেন ভারতীয় সাংবাদিক-সাহিত্য সমালোচক নীলাঞ্জনা এস রায়।
গুরনাহ বলেন, “আমি মনে করি, সাধারণ মানুষের জীবনের জটিলতা নিয়ে আমি বেশি পরিমাণে আগ্রহী। কারণ, সেই জীবনেই আমাদের সবার বসবাস। আর সেখানেই মানুষের সংশয় ও কষ্টগুলো প্রতিভাত হয়; আর এটা প্রতিফলিত হয় না বড় মঞ্চে কিংবা সংবাদপত্রে।”
সাধারণের জীবন নিয়ে আগ্রহী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ২০২১ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারজয়ী এই লেখক বলেন, “সুতরাং এটি একটি অভূতপূর্ব প্রতিশ্রুতির মতো নয় যে আমি ছোট জীবনে আগ্রহী, এটিই আমি। আমি মনে করি যে স্থান এবং লোকদের সম্পর্কে লেখা হয়েছে, তা আমার কাছে আকর্ষণীয়।
“আমি নায়কদের সাথে কাঁধ মিলাই না; আমি এমন লোকদের সাথে কাঁধ মিলাই যাদেরকে জীবন চালিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটার সঙ্গে মানিয়েও নিতে হয়। আসলে সাধারণ মানুষ কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে লেখার চেয়ে হিরোদের সম্পর্কে লেখা আমার জন্য বড় চাপ। এবং শেষ পর্যন্ত এটি বলি যে, আসুন এই ছোট জীবনগুলিকে অবহেলা না করি।”
কাদের জন্য লেখেন- দর্শকসারি থেকে এমন প্রশ্নে গুরনাহ বলেন, “আমি কার জন্য বলি, সেটা আমি জানি; আর সেটা হচ্ছি আমি নিজে। লেখার দৃষ্টিকোণ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সংশয় নেই, কারণ আমি যা-ই দেখি, তা-ই প্রকাশ করি। তার মানে এই নয় যে আমি নিজস্ব কোনো বুদবুদের জন্য বাস করি।
“আমি এমন কিছু প্রকাশ করি, যা আমি জানি, যা দেখি আর সেটাই আমার মতো। যখন লিখি, তখন আমি চাই যে, এটা পড়ছে সে যেন বলতে পারে- এভাবেইতো আমি বিষয়গুলোকে দেখছি কিংবা বলতে পারে যে, আমিওতো এটা নিয়ে ভেবেছি, এটা খুব কৌতূহল উদ্দীপক। অথবা বলতে পারে, কিচ্ছু হয়নি, এটা একটা আবর্জনা।”
নিজে যখন অন্যের লেখা পড়েন, তখনও তার কাছে একই রকমের অনুভূতি হওয়ার কথা তুলে ধরে গুরনাহ বলেন, “আমি যখন কোনো নতুন লেখা পড়ি, আমার প্রতিক্রিয়াও এমনিভাবে হয় যে, এটা আমার কাছে নতুন নয়, তবে আমি এটাকে এভাবে চিন্তা করিনি।”
তিনি আরও বলেন, “কার জন্য বলি, সেই প্রশ্নের উত্তর- সবার জন্য। আমার এটা নিয়ে কখনও দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ ছিল না যে, আমার পাঠক কে? আমি শুধু ভেবেছি, আমি লিখছি যাতে যে কেউ চাইলেই এটা পড়তে পারবে।”
এ অধিবেশনে গল্প-উপন্যাসের বাইরে গিয়ে ইতিহাস ও গবেষণা নির্ভর সাহিত্য রচনা নিয়ে নিজের পথচলার কথা তুরে ধরেন অমিতাভ ঘোষ। প্রচলিত ধারার উপন্যাস পরিবর্তিত বাস্তবতায় মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা অনেক সময় ধরতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অমিতাভ ঘোষ বলেন, “আমরা একটি সংকটকাল অতিক্রম করছি। এই সংকট আমাদের রাজনীতিতে আছে, অর্থনীতিতেও আছে। যার সমস্ত প্রতিফলন হচ্ছে আমাদের সাহিত্যে।”
ঢাকা লিট ফেস্ট
শনিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৩
জনপ্রিয় লেখক হওয়ার পেছনে প্রত্যহিক জীবনে সাধারণ মানুষের জটিলতা আর চিন্তাকে ধারণ করে কলম ধরার কথা বলেছেন সাহিত্যে নোবেলজয়ী আব্দুলরাজাক গুরনাহ। আজ শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের একটি অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমি তাদের নিয়ে আগ্রহী নই, যারা মূল মঞ্চ দখল করে থাকে বা যারা পত্রিকার পাতায় থাকেন। কারণ, তারা ইতোমধ্যেই সেখানে অবস্থান করছেন, তাদের কাজ তারা করে যাচ্ছেন।
বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ঢাকা লিট ফেস্টের ‘কেন্দ্রহীন এক বিশ্ব’ অধিবেশনে নিজের লেখালেখির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তানজানিয়া-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক গুরনাহ। অধিবেশনে যোগ দেন ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষ ও ভারতীয় প্রাবন্ধিক-ঔপন্যাসিক পঙ্কজ মিশ্র। সঞ্চালনা করেন ভারতীয় সাংবাদিক-সাহিত্য সমালোচক নীলাঞ্জনা এস রায়।
গুরনাহ বলেন, “আমি মনে করি, সাধারণ মানুষের জীবনের জটিলতা নিয়ে আমি বেশি পরিমাণে আগ্রহী। কারণ, সেই জীবনেই আমাদের সবার বসবাস। আর সেখানেই মানুষের সংশয় ও কষ্টগুলো প্রতিভাত হয়; আর এটা প্রতিফলিত হয় না বড় মঞ্চে কিংবা সংবাদপত্রে।”
সাধারণের জীবন নিয়ে আগ্রহী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ২০২১ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারজয়ী এই লেখক বলেন, “সুতরাং এটি একটি অভূতপূর্ব প্রতিশ্রুতির মতো নয় যে আমি ছোট জীবনে আগ্রহী, এটিই আমি। আমি মনে করি যে স্থান এবং লোকদের সম্পর্কে লেখা হয়েছে, তা আমার কাছে আকর্ষণীয়।
“আমি নায়কদের সাথে কাঁধ মিলাই না; আমি এমন লোকদের সাথে কাঁধ মিলাই যাদেরকে জীবন চালিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটার সঙ্গে মানিয়েও নিতে হয়। আসলে সাধারণ মানুষ কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে লেখার চেয়ে হিরোদের সম্পর্কে লেখা আমার জন্য বড় চাপ। এবং শেষ পর্যন্ত এটি বলি যে, আসুন এই ছোট জীবনগুলিকে অবহেলা না করি।”
কাদের জন্য লেখেন- দর্শকসারি থেকে এমন প্রশ্নে গুরনাহ বলেন, “আমি কার জন্য বলি, সেটা আমি জানি; আর সেটা হচ্ছি আমি নিজে। লেখার দৃষ্টিকোণ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সংশয় নেই, কারণ আমি যা-ই দেখি, তা-ই প্রকাশ করি। তার মানে এই নয় যে আমি নিজস্ব কোনো বুদবুদের জন্য বাস করি।
“আমি এমন কিছু প্রকাশ করি, যা আমি জানি, যা দেখি আর সেটাই আমার মতো। যখন লিখি, তখন আমি চাই যে, এটা পড়ছে সে যেন বলতে পারে- এভাবেইতো আমি বিষয়গুলোকে দেখছি কিংবা বলতে পারে যে, আমিওতো এটা নিয়ে ভেবেছি, এটা খুব কৌতূহল উদ্দীপক। অথবা বলতে পারে, কিচ্ছু হয়নি, এটা একটা আবর্জনা।”
নিজে যখন অন্যের লেখা পড়েন, তখনও তার কাছে একই রকমের অনুভূতি হওয়ার কথা তুলে ধরে গুরনাহ বলেন, “আমি যখন কোনো নতুন লেখা পড়ি, আমার প্রতিক্রিয়াও এমনিভাবে হয় যে, এটা আমার কাছে নতুন নয়, তবে আমি এটাকে এভাবে চিন্তা করিনি।”
তিনি আরও বলেন, “কার জন্য বলি, সেই প্রশ্নের উত্তর- সবার জন্য। আমার এটা নিয়ে কখনও দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ ছিল না যে, আমার পাঠক কে? আমি শুধু ভেবেছি, আমি লিখছি যাতে যে কেউ চাইলেই এটা পড়তে পারবে।”
এ অধিবেশনে গল্প-উপন্যাসের বাইরে গিয়ে ইতিহাস ও গবেষণা নির্ভর সাহিত্য রচনা নিয়ে নিজের পথচলার কথা তুরে ধরেন অমিতাভ ঘোষ। প্রচলিত ধারার উপন্যাস পরিবর্তিত বাস্তবতায় মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা অনেক সময় ধরতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অমিতাভ ঘোষ বলেন, “আমরা একটি সংকটকাল অতিক্রম করছি। এই সংকট আমাদের রাজনীতিতে আছে, অর্থনীতিতেও আছে। যার সমস্ত প্রতিফলন হচ্ছে আমাদের সাহিত্যে।”