নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসির লিখিত পরীক্ষা বা মূল্যায়নে ৬৫ নম্বর এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নে ৩৫ নম্বর রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) পক্ষ্য থেকে ৬৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ৩৫ নম্বরের কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের প্রস্তাব করা হয়।
ডিপিইর এই প্রস্তাবে কয়েকজন কর্মকর্তা ’সায়’ দেন বলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন। এর আগে মূল্যায়ন কমিটি ৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের সুপারিশ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়া তাদের প্রতিবেদনে। নতুন শিক্ষাক্রমে (কারিকুলাম) ২০২৬ সালে প্রথম এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষার নাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতির ধরন ঠিক করতে গত ৫ মার্চ ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি এ পরীক্ষার নাম ‘মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’ রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণে সমন্বয়হীনতা
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ব্যয় ‘ডেসিমিনেশন অফ নিউ কারিকুলাম স্কিম’ থেকে বহন করা হচ্ছে। এই স্কিম মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ বাস্তবায়নে মাউশি, এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছেন। মাহফুজ আলীর বরাত দিয়ে গত ৫ মে প্রকাশিত মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডার (জুন, ২০২৪ পর্যন্ত) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। ক্যালেন্ডারে ‘প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপের ১৫ ধরনের অ্যাক্টিভিটি রয়েছে’।
কিন্তু এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাউশি, এনসিটিবিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ‘সঠিক সমন্বয় করতে না পারায়’ প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্কিম পরিচালক।
এর ফলে চলতি অর্থবছরে প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দকৃত ‘অনেক অর্থ’ অব্যয়িত থেকে যাবে জানিয়ে মাহফুজ আলী বলেন, ‘এই মুহূর্তে ৩টি অ্যাক্টিভিটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্কপ্ল্যান অনুযায়ী নায়েমের কর্মকর্তাদের স্কিম কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও এনসিটিবি ইতোমধ্যে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।’ ফলে এ খাতে সাত ২৪ হাজার ২৮০ টাকা অব্যয়িত থাকবে।
৮০ হাজার শিক্ষকের পেশাগত প্রশিক্ষণে জটিলতা
স্কিম অফিস জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমের ওয়ার্কপ্ল্যান অনুযায়ী নবম শ্রেণীর প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের বৃত্তিমূলক বা পেশাগত প্রশিক্ষণ আয়োজনের বিষয়টি নির্ধারিত থাকলেও এনসিটিবি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ম্যানুয়াল বা ট্রেনিং সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণীর এক লাখ ৫০ হাজার ৪০০ জন শিক্ষককে (স্কুল, মাদ্রাসা, কারিগরি ও সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের) প্রশিক্ষণের এখন আর প্রয়োজন নেই বলে স্কিম অফিসকে জানিয়েছে এনসিটিবি। এ খাতে ৮২ কোটি এক লাখ ৯২ হাজার টাকা অব্যয়িত থাকবে বলে স্কিম পরিচালক জানান।
সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডারে ডিজিটাল টেকনোলজির ওপর পাঁচ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণের কথা থাকলেও স্কিম ডকুমেন্টের বাজেটে ভুলবশত একদিনের আবাসিকের সংস্থান রাখা হয়েছে।’
৬৫ নম্বরের মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ডিপিইর একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রথম বছরই ৫০ নম্বরের মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু না করে প্রথমবার মূল্যায়নে ৬৫ নম্বর রাখার প্রস্তাব করেন। তিনি আগামী দুই-তিন বছরে এই পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেন।
এই প্রস্তাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তাও সায় দেন বলে সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করার দিক-নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা দুটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, মূল্যায়ন বা লিখিত পরীক্ষার নম্বর ধাপে ধাপে কমালেই ভালো হয়। এতে শিক্ষার্থীরাও নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর অভ্যস্ত হতে থাকবে। এ নিয়ে ‘সমালোচনা’ও কম হবে।
সভায় মূল্যায়ন কার্যক্রমের সময় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিরতিসহ প্রতি বিষয়ে মূল্যায়নের সময় পাঁচ ঘণ্টা রাখার প্রস্তাবেই বেশিরভাগ কর্মকর্তা সম্মতি দিয়েছেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি সভা হয়েছে। আরও সভা হবে।
মূল্যায়নের সময় নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, সব বিষয়ে পাঁচ ঘণ্টা পরীক্ষা হবে না। কোনো বিষয়ে তিন বা চার ঘণ্টা, কোনো বিষয়ে দুই ঘণ্টার পরীক্ষাও হতে পারে। সেটি নির্ভর করবে বিষয়ের (গুরুত্বের) ওপর।
এর আগে লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা বা মূল্যায়ন রাখা যেতে পারে। আন্তঃসম্পর্ক বজায় রেখে লিখিত মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ (মূল্যায়ন) ৫০ শতাংশ ও ‘কার্যক্রমভিত্তিক’ মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ ৫০ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়। স্কুলভিত্তিক ষান্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।
এছাড়া চূড়ান্ত মূল্যায়ন সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টে মূল্যায়নের সাত পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচকের বিষয়টি অভিভাবক এবং অংশীজনদের অবহিত করার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আন্তজার্তিক পর্যায়ে কোনো কোনো দেশের মডেলকে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং কোনো কোনো দেশে এই মডেল সফল বাস্তবায়ন হয়েছে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির আন্তর্জাতিক গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়ে অংশীজনকে অবহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করেছে মূল্যায়ন কমিটি।
বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রমে দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হয়। একটি বছরব্যাপী শ্রেণীকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি হলো- বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।
তবে চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের ‘শিখনকালীন’ মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। বাকি অংশের সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।
এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাদের যুক্তি হলো-নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে কোনো লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে তারা লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।
একজন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বোঝাতে নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। ত্রিভুজ হচ্ছে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্ত হচ্ছে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ হলো- উন্নতি প্রয়োজন।
১৯৬২ সাল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা হয়ে আসছে। নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর এসএসসি পরীক্ষা থাকবে নাকি উঠে যাচ্ছে সেই বিষয়ে নানা আলোচনা ছিল।
চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসির লিখিত পরীক্ষা বা মূল্যায়নে ৬৫ নম্বর এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নে ৩৫ নম্বর রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) পক্ষ্য থেকে ৬৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ৩৫ নম্বরের কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের প্রস্তাব করা হয়।
ডিপিইর এই প্রস্তাবে কয়েকজন কর্মকর্তা ’সায়’ দেন বলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন। এর আগে মূল্যায়ন কমিটি ৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের সুপারিশ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়া তাদের প্রতিবেদনে। নতুন শিক্ষাক্রমে (কারিকুলাম) ২০২৬ সালে প্রথম এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষার নাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতির ধরন ঠিক করতে গত ৫ মার্চ ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি এ পরীক্ষার নাম ‘মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’ রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণে সমন্বয়হীনতা
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ব্যয় ‘ডেসিমিনেশন অফ নিউ কারিকুলাম স্কিম’ থেকে বহন করা হচ্ছে। এই স্কিম মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ বাস্তবায়নে মাউশি, এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছেন। মাহফুজ আলীর বরাত দিয়ে গত ৫ মে প্রকাশিত মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডার (জুন, ২০২৪ পর্যন্ত) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। ক্যালেন্ডারে ‘প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপের ১৫ ধরনের অ্যাক্টিভিটি রয়েছে’।
কিন্তু এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাউশি, এনসিটিবিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ‘সঠিক সমন্বয় করতে না পারায়’ প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্কিম পরিচালক।
এর ফলে চলতি অর্থবছরে প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দকৃত ‘অনেক অর্থ’ অব্যয়িত থেকে যাবে জানিয়ে মাহফুজ আলী বলেন, ‘এই মুহূর্তে ৩টি অ্যাক্টিভিটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্কপ্ল্যান অনুযায়ী নায়েমের কর্মকর্তাদের স্কিম কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও এনসিটিবি ইতোমধ্যে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।’ ফলে এ খাতে সাত ২৪ হাজার ২৮০ টাকা অব্যয়িত থাকবে।
৮০ হাজার শিক্ষকের পেশাগত প্রশিক্ষণে জটিলতা
স্কিম অফিস জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমের ওয়ার্কপ্ল্যান অনুযায়ী নবম শ্রেণীর প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের বৃত্তিমূলক বা পেশাগত প্রশিক্ষণ আয়োজনের বিষয়টি নির্ধারিত থাকলেও এনসিটিবি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ম্যানুয়াল বা ট্রেনিং সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণীর এক লাখ ৫০ হাজার ৪০০ জন শিক্ষককে (স্কুল, মাদ্রাসা, কারিগরি ও সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের) প্রশিক্ষণের এখন আর প্রয়োজন নেই বলে স্কিম অফিসকে জানিয়েছে এনসিটিবি। এ খাতে ৮২ কোটি এক লাখ ৯২ হাজার টাকা অব্যয়িত থাকবে বলে স্কিম পরিচালক জানান।
সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডারে ডিজিটাল টেকনোলজির ওপর পাঁচ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণের কথা থাকলেও স্কিম ডকুমেন্টের বাজেটে ভুলবশত একদিনের আবাসিকের সংস্থান রাখা হয়েছে।’
৬৫ নম্বরের মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ডিপিইর একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রথম বছরই ৫০ নম্বরের মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু না করে প্রথমবার মূল্যায়নে ৬৫ নম্বর রাখার প্রস্তাব করেন। তিনি আগামী দুই-তিন বছরে এই পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেন।
এই প্রস্তাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তাও সায় দেন বলে সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করার দিক-নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা দুটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, মূল্যায়ন বা লিখিত পরীক্ষার নম্বর ধাপে ধাপে কমালেই ভালো হয়। এতে শিক্ষার্থীরাও নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর অভ্যস্ত হতে থাকবে। এ নিয়ে ‘সমালোচনা’ও কম হবে।
সভায় মূল্যায়ন কার্যক্রমের সময় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিরতিসহ প্রতি বিষয়ে মূল্যায়নের সময় পাঁচ ঘণ্টা রাখার প্রস্তাবেই বেশিরভাগ কর্মকর্তা সম্মতি দিয়েছেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি সভা হয়েছে। আরও সভা হবে।
মূল্যায়নের সময় নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, সব বিষয়ে পাঁচ ঘণ্টা পরীক্ষা হবে না। কোনো বিষয়ে তিন বা চার ঘণ্টা, কোনো বিষয়ে দুই ঘণ্টার পরীক্ষাও হতে পারে। সেটি নির্ভর করবে বিষয়ের (গুরুত্বের) ওপর।
এর আগে লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা বা মূল্যায়ন রাখা যেতে পারে। আন্তঃসম্পর্ক বজায় রেখে লিখিত মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ (মূল্যায়ন) ৫০ শতাংশ ও ‘কার্যক্রমভিত্তিক’ মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ ৫০ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়। স্কুলভিত্তিক ষান্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।
এছাড়া চূড়ান্ত মূল্যায়ন সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টে মূল্যায়নের সাত পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচকের বিষয়টি অভিভাবক এবং অংশীজনদের অবহিত করার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আন্তজার্তিক পর্যায়ে কোনো কোনো দেশের মডেলকে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং কোনো কোনো দেশে এই মডেল সফল বাস্তবায়ন হয়েছে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির আন্তর্জাতিক গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়ে অংশীজনকে অবহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করেছে মূল্যায়ন কমিটি।
বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রমে দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হয়। একটি বছরব্যাপী শ্রেণীকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি হলো- বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।
তবে চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের ‘শিখনকালীন’ মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। বাকি অংশের সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।
এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাদের যুক্তি হলো-নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে কোনো লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে তারা লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।
একজন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বোঝাতে নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। ত্রিভুজ হচ্ছে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্ত হচ্ছে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ হলো- উন্নতি প্রয়োজন।
১৯৬২ সাল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা হয়ে আসছে। নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর এসএসসি পরীক্ষা থাকবে নাকি উঠে যাচ্ছে সেই বিষয়ে নানা আলোচনা ছিল।
চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।