alt

শিক্ষা

গবেষণায় বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার জবি

মো. মেহেদী হাসান, জবি : বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার আঠারো পেরিয়ে ঊনিশে পদার্পণ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একাডেমিক, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আন্তর্জাতিকভাবেও নানামুখী সাফল্য অর্জন করছে। রসায়নে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছে। তবে এতকিছুর পরও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) দেয়া বাজেট বরাদ্দে প্রতি অর্থবছরেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গবেষণা খাতেও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বাজেট বরাদ্দে তলানিতে অবস্থান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির। গবেষকের সংখ্যা বেশি হলেও সেই অনুযায়ী গবেষণা বরাদ্দ পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের। এতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা বলছেন, সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং গবেষকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা অনেক বেশি গবেষণা করে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন। বিশ্বের সেরা সব জার্নালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকভাবে এনে দিচ্ছে সম্মানও। তবে প্রতিবছর ইউজিসি থেকে গবেষণা খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম সংখ্যক অধ্যাপক এবং গবেষক থাকার পরও যে পরিমান বাজেট বরাদ্দ পাচ্ছে সেই অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

শিক্ষকদের ভাষ্য, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ হওয়া উচিত সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পরিমাণ গবেষণাকর্ম হচ্ছে, কত সংখ্যক গবেষক কাজ করছেন সেই হিসাব অনুযায়ী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রতিবছর খ্যাতনামা সব আন্তর্জাতিক জার্নালে অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করছেন। অনেকের গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্বের সেরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হিসেবেও পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী তাঁরা গবেষণায় বরাদ্দ পাচ্ছেন না। এতে অনেক গবেষক গবেষণায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হচ্ছে বলেও বলছেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সময় সমকালীন যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আছে সেগুলোর তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রোথ অনেক বেশি। পুরোনো চারটা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিত বাকি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো জবির ধারের কাছেও নেই। সেই তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং এর জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এক্সিলেন্সের জন্য মূল চাবিকাঠি হলো গবেষণা। র‍্যাংকিং তৈরি করা হয় গবেষণার মান কী রকম, ভালো মানের জার্নালের সংখ্যা কী রকম সেটার উপর। কাজেই এখানে যদি গবেষণা প্রমোট করা না যায়, গবেষণাতে আরও বেশি প্রণোদনা না দেয়া যায় তাহলে তো হলো না। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা ভাতা পান সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাও পাচ্ছেন না৷

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জেলা পর্যায়ের ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ জবির তুলনায় বেশি। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষক সংখ্যা জবির তুলনায় কম হওয়া সত্ত্বেও তাদের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বেশি। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জবিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক সংখ্যা ১৫৫ জন। বিপরীতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ৩ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক সংখ্যা মাত্র ২৮ জন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা, যেখানে অধ্যাপক সংখ্যা মাত্র ২৫ জন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা, তাদের অধ্যাপক ৫৪ জন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ টাকা, সেখানে অধ্যাপক আছেন ১৬ জন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ৪ কোটি ২ লক্ষ টাকা, তাদের অধ্যাপক সংখ্যা ১৯২ জন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ ছিলো ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা, তাদের অধ্যাপক আছেন ১৯ জন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং গবেষকের সংখ্যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থেকে বেশি থাকার পরও বাজেট বরাদ্দ একেবারেই নগণ্য। বাজেট বরাদ্দে গড় হারেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে তলানিতে অবস্থান করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। দ্রুতই এই বৈষম্য দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গবেষণা পরিচালক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গবেষণা বরাদ্দ অপ্রতুল। কম মানে খুবই কম। অধিক পরিমাণে অধ্যাপক থাকা স্বত্বেও পর্যাপ্ত গবেষণা বরাদ্দ পাচ্ছে না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কেন পাচ্ছে না তাও বলতে পারছি না। তবে আমি মনে করি আমাদের এই বরাদ্দ কয়েক গুণ বাড়ানো উচিত।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কেন বরাদ্দ কম দেয় তা তো আমি জানি না। শিক্ষকের তুলনার কথা যদি বলতে চাই তাহলে হয়তো আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। সেখানে কতজন এই আবেদন করে তার উপর ও আসতে পারে। শিক্ষকদের প্রপোজালের ভিত্তিতে যদি এটা দেয়া হয় তাহলে আমাদের গবেষণা বরাদ্দ কম। সেই জায়গা থেকে আমরা বার্ষিক চুক্তিতে আমাদের দাবি জানিয়েছি, বেশি বরাদ্দ চেয়েছি।

গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ পরিচালক ড. মো. মহসীন রেজা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে বারবার বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আবেদন করে যাচ্ছি। তারই প্রেক্ষিতে এবার আমরা কিছু অতিরিক্ত বরাদ্দও পেয়েছি। আগামীতে হয়তো সেটা আরও বাড়বে। তবে আমরা নিয়মিতই ইউজিসির কাছে গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে আবেদন করে আসছি৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী বলেন, আমাদের ফান্ড ডিপেন্ড করে ইউজিসির উপরেই। তারা যখন কোনো বরাদ্দ বাড়ায় তখন হয়তো চিন্তা করে আগে যা ছিল তা থেকে কিছু শতাংশ বাড়ানোর। কিন্তু সেই তুলনায় জগন্নাথের বরাদ্দ যথেষ্ট হয় না। এই বিষয় নিয়ে আমরা ইউজিসির সাথে কথা বলেছি৷ আশা করছি আগামীতে বরাদ্দ বেশি পাবো৷

এবিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

ছবি

মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগ এবারও ‘ভাগ্যে’

ছবি

কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের ৬৫ বছরের ঐতিহ্য উদযাপন করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

ছবি

এইচএসসির ফল প্রকাশ ১৫ অক্টোবর

ছবি

বিজ্ঞানমেলায় মুখরিত মানারাত কলেজ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ৩ দিনব্যাপী ইনপার্সন শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেই লক্ষাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য

ছবি

স্টাডি ইউকে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডসের জন্য আবেদন আহ্বান

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে পুলিশে দিলেন জবি শিক্ষার্থীরা

পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ‘বৈষম্যবিরোধী ‘গ্রাফিতি’

ছবি

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অধ্যাপক মনজুর আহমেদের নেতৃত্বে কমিটি করল সরকার

এবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল

শিক্ষায় বদলি নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ছবি

গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনদের ক্লাস শুরু ২০ অক্টোবর

ছবি

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা যেভাবে হবে

মাধ্যমিকে এবারও লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তি

ছবি

ইউআইটিএস এ আউটকাম বেজড এডুকেশন বিষয়ক সেমিনার

ছবি

অক্টোবরেই এইচএসসির ফল: অধ্যাপক তপন

ছবি

বিনামূল্যে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ এর আইটি প্রশিক্ষণ

ছবি

পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯৯২ জন

বাধ্যতামূলক আইসিটি শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য : প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান

ছবি

ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ

ছবি

নিজ শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য পেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস

স্কোপাস-ইনডেক্সড গবেষণা প্রকাশনার জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ড্যাফোডিল দ্বিতীয়

ছবি

ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

‘শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে’

একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু হলেও পাঁচটি বইয়ের ‘পাণ্ডুলিপি’ প্রস্তুত হয়নি

ছবি

মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা ৭০ নম্বরের, ৩০ নম্বর শিখনমূল্যায়ন

ছবি

বিডিকলিং একাডেমিতে নারীদের জন্য ‘অ্যাডভান্স ফটোশপ’ কোর্স

২০২২ সালের ডিগ্রি ৩য় বর্ষের পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়বৃদ্ধি

ছবি

পদত্যাগ করলেন ইউজিসি সদস্য আলমগীর

ছবি

মোঃ সবুর খানকে বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্বর্ধনা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অন-ক্যাম্পাসে ১ম মেধা তালিকা এবং ১ম অপেক্ষমান তালিকায় অন্তর্ভূক্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি

ছবি

ঢাবির উপ-উপাচার্য পদ থেকে সরানো হল সামাদকে

ছবি

সচিবালয়ের সামনে শতাধিক ঢাবি শিক্ষার্থী

ছবি

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়, পরীক্ষাসহ ফিরছে যত নিয়ম

tab

শিক্ষা

গবেষণায় বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার জবি

মো. মেহেদী হাসান, জবি

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার আঠারো পেরিয়ে ঊনিশে পদার্পণ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একাডেমিক, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আন্তর্জাতিকভাবেও নানামুখী সাফল্য অর্জন করছে। রসায়নে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছে। তবে এতকিছুর পরও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) দেয়া বাজেট বরাদ্দে প্রতি অর্থবছরেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গবেষণা খাতেও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বাজেট বরাদ্দে তলানিতে অবস্থান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির। গবেষকের সংখ্যা বেশি হলেও সেই অনুযায়ী গবেষণা বরাদ্দ পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের। এতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা বলছেন, সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং গবেষকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা অনেক বেশি গবেষণা করে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন। বিশ্বের সেরা সব জার্নালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকভাবে এনে দিচ্ছে সম্মানও। তবে প্রতিবছর ইউজিসি থেকে গবেষণা খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম সংখ্যক অধ্যাপক এবং গবেষক থাকার পরও যে পরিমান বাজেট বরাদ্দ পাচ্ছে সেই অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

শিক্ষকদের ভাষ্য, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ হওয়া উচিত সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পরিমাণ গবেষণাকর্ম হচ্ছে, কত সংখ্যক গবেষক কাজ করছেন সেই হিসাব অনুযায়ী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রতিবছর খ্যাতনামা সব আন্তর্জাতিক জার্নালে অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করছেন। অনেকের গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্বের সেরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হিসেবেও পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী তাঁরা গবেষণায় বরাদ্দ পাচ্ছেন না। এতে অনেক গবেষক গবেষণায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হচ্ছে বলেও বলছেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সময় সমকালীন যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আছে সেগুলোর তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রোথ অনেক বেশি। পুরোনো চারটা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিত বাকি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো জবির ধারের কাছেও নেই। সেই তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং এর জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এক্সিলেন্সের জন্য মূল চাবিকাঠি হলো গবেষণা। র‍্যাংকিং তৈরি করা হয় গবেষণার মান কী রকম, ভালো মানের জার্নালের সংখ্যা কী রকম সেটার উপর। কাজেই এখানে যদি গবেষণা প্রমোট করা না যায়, গবেষণাতে আরও বেশি প্রণোদনা না দেয়া যায় তাহলে তো হলো না। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা ভাতা পান সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাও পাচ্ছেন না৷

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জেলা পর্যায়ের ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ জবির তুলনায় বেশি। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষক সংখ্যা জবির তুলনায় কম হওয়া সত্ত্বেও তাদের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বেশি। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জবিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক সংখ্যা ১৫৫ জন। বিপরীতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ৩ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক সংখ্যা মাত্র ২৮ জন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা, যেখানে অধ্যাপক সংখ্যা মাত্র ২৫ জন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা, তাদের অধ্যাপক ৫৪ জন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ টাকা, সেখানে অধ্যাপক আছেন ১৬ জন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে ৪ কোটি ২ লক্ষ টাকা, তাদের অধ্যাপক সংখ্যা ১৯২ জন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ ছিলো ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা, তাদের অধ্যাপক আছেন ১৯ জন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং গবেষকের সংখ্যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থেকে বেশি থাকার পরও বাজেট বরাদ্দ একেবারেই নগণ্য। বাজেট বরাদ্দে গড় হারেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে তলানিতে অবস্থান করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। দ্রুতই এই বৈষম্য দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গবেষণা পরিচালক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গবেষণা বরাদ্দ অপ্রতুল। কম মানে খুবই কম। অধিক পরিমাণে অধ্যাপক থাকা স্বত্বেও পর্যাপ্ত গবেষণা বরাদ্দ পাচ্ছে না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কেন পাচ্ছে না তাও বলতে পারছি না। তবে আমি মনে করি আমাদের এই বরাদ্দ কয়েক গুণ বাড়ানো উচিত।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কেন বরাদ্দ কম দেয় তা তো আমি জানি না। শিক্ষকের তুলনার কথা যদি বলতে চাই তাহলে হয়তো আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। সেখানে কতজন এই আবেদন করে তার উপর ও আসতে পারে। শিক্ষকদের প্রপোজালের ভিত্তিতে যদি এটা দেয়া হয় তাহলে আমাদের গবেষণা বরাদ্দ কম। সেই জায়গা থেকে আমরা বার্ষিক চুক্তিতে আমাদের দাবি জানিয়েছি, বেশি বরাদ্দ চেয়েছি।

গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ পরিচালক ড. মো. মহসীন রেজা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে বারবার বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আবেদন করে যাচ্ছি। তারই প্রেক্ষিতে এবার আমরা কিছু অতিরিক্ত বরাদ্দও পেয়েছি। আগামীতে হয়তো সেটা আরও বাড়বে। তবে আমরা নিয়মিতই ইউজিসির কাছে গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে আবেদন করে আসছি৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী বলেন, আমাদের ফান্ড ডিপেন্ড করে ইউজিসির উপরেই। তারা যখন কোনো বরাদ্দ বাড়ায় তখন হয়তো চিন্তা করে আগে যা ছিল তা থেকে কিছু শতাংশ বাড়ানোর। কিন্তু সেই তুলনায় জগন্নাথের বরাদ্দ যথেষ্ট হয় না। এই বিষয় নিয়ে আমরা ইউজিসির সাথে কথা বলেছি৷ আশা করছি আগামীতে বরাদ্দ বেশি পাবো৷

এবিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

back to top