alt

শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন

করোনা সহনীয় নিয়ন্ত্রণে আসলে পরীক্ষা শুরু, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ড

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ২২ মে ২০২১

করোনা সংক্রমণের কারণে টানা ১৩ মাসেরও বেশি সময় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে বারবার স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এবারও একই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চেয়েও এবার এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন শিক্ষা প্রশাসন। করোনা পরিস্থিতি অবনতির আগে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়া গেলেও এইচএসসি নেয়া যায়নি। বারবার সূচি পিছিয়ে একপর্যায়ে পরীক্ষা না নিয়েই এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়।

এবারও এই দুই পাবলিক পরীক্ষার ‘নির্ধারিত’ সময় চলে গেছে। এই অবস্থায় করোনা প্রাদুর্ভাব সহনীয় নিয়ন্ত্রণে আসার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছুদিন ক্লাস নিয়ে যে কোনোভাবে হোক এই দুই পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বেশ কয়েক বছর ধরেই ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে আসছিল শিক্ষা বোর্ডগুলো।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুনে সীমিত পরিসরে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি না হলে শুধু এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণী কার্যক্রম চালু হতে পারে।

ওই কর্মকর্তারা জানান, করোনা সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে নিচে নামলে ‘কিছুদিন’ সরাসরি ক্লাস নিয়েই প্রথমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়া হবে। এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী। এই পরীক্ষা শেষ হলেই এইচএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষা আরও পেছালেও তা ‘ভার্চুয়ালি’ নয়, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে বসতেই হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ইতোমধ্যে সারাদেশে পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ছাপানোসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ শনিবার (২২ মে) সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত সরাসরি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তই রয়েছে। গতবারের মতো পরীক্ষা ছাড়া (এইচএসসি) আমরা রেজাল্ট দিতে চাচ্ছি না। এসএসসি-এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেয়া হয়েছে। ওই সিলেবাস অনুযায়ীই আমরা কিছুদিন ক্লাস নেব, তারপর পরীক্ষা নেব।’

করোনা পরিস্থিতি একটু সহনীয় হলেই পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে জানিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুটি পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ জন্য ক্লাস শুরু হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিদিনই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হবে আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন শ্রেণীর শনিবার, কোনটির রোববার... অন্য একটির ক্লাস সোমবার- এভাবে ক্লাস ভাগ করে দেয়া হবে।’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এবার ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। কিছুদিনের মধ্যে এইচএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সূচি প্রকাশ করা হবে।

করোনা মহামারীর আগে গত ১০/১২ বছর ধরে প্রতিবারই ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও সমপর্যায়ের এবং এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশেরও রেওয়াজ তৈরি হয়। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গতবছর কোনভাবে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলেও, একমাস বিলম্বে গত বছরের ৩১ মে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তবে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পেলেও কোন শিক্ষার্থীই কলেজে শ্রেণী কার্যক্রমের সুযোগ পায়নি।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়াই সম্ভব হয়নি। নানাভাবে চেষ্টা করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও উচ্চ মাধ্যমিকের এই পরীক্ষা নিতে পারেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরবর্তীতে জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করা হয়।

এবার দুই পাবলিক পরীক্ষা আরও পিছিয়ে যেতে পারে জানিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, ‘সারাবিশ্বেই পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়েছে; অন্য কোন সিস্টেমে এই পরীক্ষা হচ্ছে না।’

এছাড়া পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা এবং প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শ্রেণিভিত্তিক সব পরীক্ষাই বাতিল করে সব ছাত্রছাত্রীকে উচ্চতর শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়।

গত বছর গুরুত্বপূর্ণ দুটি পাবলিক পরীক্ষার (এসএসসি এবং এইচএসসি) ফল প্রকাশ ও ফল তৈরির বিষয়টির সুরাহা করা সম্ভব হলেও এবার সেই পথে এগোতে পারছেন না শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা। এর কারণ হলোÑ গত বছর এইচএসসির শিক্ষার্থীরা শ্রেণী কার্যক্রমের সুযোগ পেয়েছিল; প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছিল আর এবার এই দুই পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাঠলাভের সুযোগই হয়নি। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, যাতে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছেন বলে বিভিন্ন জরিপে তথ্য প্রকাশ হয়েছে।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর সাধারণ ছুটির আওতায় গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৯ মে পর্যন্ত ছুটি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২৩ মে (আজ) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী মাসেই তারা স্কুল-কলেজ খুলতে চায়। এই প্রস্তুতির লক্ষ্যেই করোনা মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত ১৮ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে জানান, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু সব শিক্ষক-কর্মচারী করোনা টিকা পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রমে ফেরা কঠিন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেয়া হবে জানিয়ে মাউশি পরিচালক বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলারে ঘাষণা দিলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হবে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার থাকবে- এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া। এই দুটি পরীক্ষা যে কোনভাবেই হোক নিতে হবে। তাছাড়া গতবছর যারা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে তারা একদিনও শ্রেণীকক্ষে বসতে পারেনি; তাদেরও ক্লাস নিতে হবে।’ অন্যান্য শ্রেণীর কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী।

এদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত ১৭ মে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার পর যত দ্রত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।

ওইদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সবারই বক্তব্য আগে কমপ্লাই করতে হবে। ইউনিভার্সিটি বা কলেজগুলোর যে হোস্টেল আছে সেগুলো অলরেডি ৪০টির মতো রিপিয়ার হয়ে গেছে। এদিকে ভ্যাকসিন আসতেছে। ইউনিভার্সিটির ছেলেদের যদি ভ্যাকসিনেটেড করে ফেলতে পারি, তারপরে স্কুল-কলেজ খুলে দিতে পারব।’

ছবি

শিক্ষার্থীর ‘কটূক্তি’র অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষায় বসছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

ছবি

২৬ জুন শুরু এইচএসসি, কেন্দ্র এলাকায় চলাচলে ডিএমপির বিধিনিষেধ জারি

ছবি

রাতের ঘটনায় আসন বাতিল, শৃঙ্খলা কমিটিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমার প্রস্তুতি

পরীক্ষার আগের সপ্তাহ পর্যন্ত ফরম পূরণের সুযোগ, জানাল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

মহামারির আশঙ্কায় এইচএসসি কেন্দ্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের নির্দেশ

পরীক্ষা পেছানোর পরিকল্পনা নেই, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ডগুলো

ছবি

ভিসি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ২৬ জুন

ছবি

আদালতের রায়ে এক যুগ পর চাকরিতে ফিরছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ছবি

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির অধীনেই চলবে সাত কলেজ

ছবি

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, আন্দোলনে ছাত্রদলসহ শিক্ষার্থীরা

ছবি

শাহরিয়ার সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাবিতে অর্ধদিবস শ্রদ্ধা, নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল স্থানান্তর ও রাজস্ব ফাঁকিতে দুদকের নজরে দুই প্রতিষ্ঠান

ছবি

কোরবানির ঈদ আর গ্রীষ্ম: লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ছবি

১৬ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের নাম

ছবি

কুয়েটে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষকদের অনড় কর্মবিরতি, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

ছবি

৬ বছর পর ইইডিতে উপপরিচালক পদায়ন

ছবি

শিক্ষার্থী-শিক্ষক উত্তেজনায় কুয়েটে অনিশ্চয়তায় একাডেমিক কার্যক্রম

ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন স্থগিত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ মে

ছবি

মে মাসের মাঝামাঝিতে তারিখ ঘোষণার লক্ষ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ

ছবি

কক্সবাজারে পরীক্ষা দিচ্ছে সেই ১৩ শিক্ষার্থী

ছবি

ভিসি অপসারণ একমাত্র দাবি: কুয়েট শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন

ছবি

কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১২ এপ্রিল

ছবি

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

ছবি

১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

শিক্ষা সংস্কারে পদক্ষেপ নেই, বাজেট বাড়ানোর দাবি শিক্ষাবিদদের

ছবি

এসএসসি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার বন্ধ ও কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা

ছবি

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ফল প্রকাশে দুই মাসের স্থগিতাদেশ

ছবি

পেছালো এসএসসির গণিত পরীক্ষা, নতুন সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

ঢাবির সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা চূড়ান্ত নয়, পুনঃতদন্তে কমিটি

ছবি

নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদিত

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা প্রকাশ

ছবি

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে রোববার ছুটি

ছবি

শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষায় আপাতত সব কোটা স্থগিত

tab

শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন

করোনা সহনীয় নিয়ন্ত্রণে আসলে পরীক্ষা শুরু, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ড

রাকিব উদ্দিন

শনিবার, ২২ মে ২০২১

করোনা সংক্রমণের কারণে টানা ১৩ মাসেরও বেশি সময় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে বারবার স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এবারও একই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চেয়েও এবার এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন শিক্ষা প্রশাসন। করোনা পরিস্থিতি অবনতির আগে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়া গেলেও এইচএসসি নেয়া যায়নি। বারবার সূচি পিছিয়ে একপর্যায়ে পরীক্ষা না নিয়েই এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়।

এবারও এই দুই পাবলিক পরীক্ষার ‘নির্ধারিত’ সময় চলে গেছে। এই অবস্থায় করোনা প্রাদুর্ভাব সহনীয় নিয়ন্ত্রণে আসার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছুদিন ক্লাস নিয়ে যে কোনোভাবে হোক এই দুই পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বেশ কয়েক বছর ধরেই ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে আসছিল শিক্ষা বোর্ডগুলো।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুনে সীমিত পরিসরে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি না হলে শুধু এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণী কার্যক্রম চালু হতে পারে।

ওই কর্মকর্তারা জানান, করোনা সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে নিচে নামলে ‘কিছুদিন’ সরাসরি ক্লাস নিয়েই প্রথমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়া হবে। এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী। এই পরীক্ষা শেষ হলেই এইচএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষা আরও পেছালেও তা ‘ভার্চুয়ালি’ নয়, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে বসতেই হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ইতোমধ্যে সারাদেশে পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ছাপানোসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ শনিবার (২২ মে) সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত সরাসরি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তই রয়েছে। গতবারের মতো পরীক্ষা ছাড়া (এইচএসসি) আমরা রেজাল্ট দিতে চাচ্ছি না। এসএসসি-এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেয়া হয়েছে। ওই সিলেবাস অনুযায়ীই আমরা কিছুদিন ক্লাস নেব, তারপর পরীক্ষা নেব।’

করোনা পরিস্থিতি একটু সহনীয় হলেই পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে জানিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুটি পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ জন্য ক্লাস শুরু হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিদিনই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হবে আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন শ্রেণীর শনিবার, কোনটির রোববার... অন্য একটির ক্লাস সোমবার- এভাবে ক্লাস ভাগ করে দেয়া হবে।’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এবার ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। কিছুদিনের মধ্যে এইচএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সূচি প্রকাশ করা হবে।

করোনা মহামারীর আগে গত ১০/১২ বছর ধরে প্রতিবারই ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও সমপর্যায়ের এবং এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশেরও রেওয়াজ তৈরি হয়। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গতবছর কোনভাবে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলেও, একমাস বিলম্বে গত বছরের ৩১ মে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তবে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পেলেও কোন শিক্ষার্থীই কলেজে শ্রেণী কার্যক্রমের সুযোগ পায়নি।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়াই সম্ভব হয়নি। নানাভাবে চেষ্টা করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও উচ্চ মাধ্যমিকের এই পরীক্ষা নিতে পারেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরবর্তীতে জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করা হয়।

এবার দুই পাবলিক পরীক্ষা আরও পিছিয়ে যেতে পারে জানিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, ‘সারাবিশ্বেই পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়েছে; অন্য কোন সিস্টেমে এই পরীক্ষা হচ্ছে না।’

এছাড়া পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা এবং প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শ্রেণিভিত্তিক সব পরীক্ষাই বাতিল করে সব ছাত্রছাত্রীকে উচ্চতর শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়।

গত বছর গুরুত্বপূর্ণ দুটি পাবলিক পরীক্ষার (এসএসসি এবং এইচএসসি) ফল প্রকাশ ও ফল তৈরির বিষয়টির সুরাহা করা সম্ভব হলেও এবার সেই পথে এগোতে পারছেন না শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা। এর কারণ হলোÑ গত বছর এইচএসসির শিক্ষার্থীরা শ্রেণী কার্যক্রমের সুযোগ পেয়েছিল; প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছিল আর এবার এই দুই পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাঠলাভের সুযোগই হয়নি। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, যাতে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছেন বলে বিভিন্ন জরিপে তথ্য প্রকাশ হয়েছে।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর সাধারণ ছুটির আওতায় গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৯ মে পর্যন্ত ছুটি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২৩ মে (আজ) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী মাসেই তারা স্কুল-কলেজ খুলতে চায়। এই প্রস্তুতির লক্ষ্যেই করোনা মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত ১৮ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে জানান, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু সব শিক্ষক-কর্মচারী করোনা টিকা পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রমে ফেরা কঠিন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেয়া হবে জানিয়ে মাউশি পরিচালক বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলারে ঘাষণা দিলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হবে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার থাকবে- এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া। এই দুটি পরীক্ষা যে কোনভাবেই হোক নিতে হবে। তাছাড়া গতবছর যারা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে তারা একদিনও শ্রেণীকক্ষে বসতে পারেনি; তাদেরও ক্লাস নিতে হবে।’ অন্যান্য শ্রেণীর কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী।

এদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত ১৭ মে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার পর যত দ্রত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।

ওইদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সবারই বক্তব্য আগে কমপ্লাই করতে হবে। ইউনিভার্সিটি বা কলেজগুলোর যে হোস্টেল আছে সেগুলো অলরেডি ৪০টির মতো রিপিয়ার হয়ে গেছে। এদিকে ভ্যাকসিন আসতেছে। ইউনিভার্সিটির ছেলেদের যদি ভ্যাকসিনেটেড করে ফেলতে পারি, তারপরে স্কুল-কলেজ খুলে দিতে পারব।’

back to top