এক কোটির টাকার ফান্ড গঠন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশই আসে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। যারা প্রচন্ড মেধাবী কিন্ত আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। অচেনা পরিবেশে এসেই প্রথমে বেশ কিছু বাস্তবতার সম্মুখীন হন তারা। ঢাকায় পরিচিত কেউ না থাকায় বিভিন্নভাবে সমস্যায় পড়েন তারা। যার কারণে অনেকে নিজের খরচ মেটানোর জন্য টিউশন বা পার্ট টাইম জবের জন্য চেষ্টা করেন। এসবের প্রভাবে তাদের অ্যাকাডেমিক ফলাফল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের টিউশন পাওয়াটাও বেশ কঠিন। কেননা বিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষাসহ অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক টিউশনির অনেক সুযোগ থাকলেও কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের সে সুযোগটি থাকে না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের চলার পথকে মসৃণ করতে সহযোগী হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলা অনুষদের শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে অনুষদের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকার “কলা অনুষদ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে শুধু কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের এ ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। শতবর্ষ মেধাবৃত্তির আওতায় অনুষদভূক্ত ১৭টি বিভাগের স্নাতক(সম্মান) ২০১৯- এ সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত মোট ১৯ (দুটি বিভাগে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়া) জন শিক্ষার্থীকে আট হাজার টাকা করে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সাধারণ মেধাবৃত্তির আওতায় ৫০ জন মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীসহ মোট ৮৮ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন পাঁচ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে কলা অনুষদের সদ্য সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুষদগুলোকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। তাই নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন উৎসকে কাজে লগিয়ে আমরা এ ফান্ডগুলো গঠন করেছি। আশা করি ভবিষ্যতে বৃত্তির সংখ্যা ও পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। আমাদের এ উদ্যোগের মাধ্যমে অন্যরাও অনুপ্রেরণা পাবে। এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশা ইসলাম নাঈম বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মঙ্গল সাধন করা। এই বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যদি আর্থিক চাপ থেকে বের হয়ে পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগী হতে পারে, শিক্ষক হিসেবে এটিই আমাদের পরম পাওয়া।
পাশাপাশি কলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কুদুসিয়া চৌধুরী বৃত্তি ফান্ড, অধ্যাপক সুকমোল বড়–য়া বৃত্তি ফান্ড, আনোয়ারা রমজান হোসেন স্মৃতি বৃত্তি ফান্ড, আফরোজা আকবর স্মৃৃতি বৃত্তি ফান্ড, আব্দুস ছামাদ ভঁুইয়া বৃত্তি ফান্ড ও ইতিহাস ব্যাচ ৮৩ বৃৃত্তি ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে মোট ১৫ জনকে পাঁচ হাজার টাকা করে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়। সব মিলিয়ে মোট আট লক্ষ সতেরো হাজার টাকা এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে চাওয়া আবেদন এবং বিভাগের মনোনয়নের ভিত্তিতে বৃত্তির চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
বৃত্তিপ্রাপ্ত তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী দেবব্রত রায় নন্দী বলেন, কলা অনুষদ এ উদ্যোগের মাধ্যমে একটি নতুন ধার উন্মোচন করেছে। এটি আমার জন্য একটি অনুপ্রেরণা্ হিসেবে কাজ করবে। এজন্য কলা অনুষদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতে আমি যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করবে, তখন আমিও এ ধরণের কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো।
এছাড়া শিক্ষকদের জন্য পৃথক এক কোটি টাকার একটি এফডিয়ার করা হয়। যার লভ্যাংশ থেকে শিক্ষকদের শিক্ষা ও গবেষণা আন্তার্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের উদ্দেশ্যে বিদেশগমন, এজঊ-ঞঙঊঋখ, শ্রেষ্ঠ বই-প্রবন্ধবাবদ ফান্ড প্রদান করা হবে। কলা অনুষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও পাঁচ লক্ষ টাকার একটি ফান্ড গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুমিত আল রশিদ বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদের শিক্ষকদের গবেষণার ক্ষেত্রটি অবহেলিত। বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকদের গবেষণাকার্যের ফান্ডিংয়ের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। কিন্তু কলা অনুষদের শিক্ষকদের জন্য ফান্ড তেমনভাবে পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম ও মানোন্নয়নে এ ফান্ড সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কলা অনুষদের এ উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।
সার্বিক বিষয়ে কলা অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির সংবাদকে বলেন, কলা অনুষদ তার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের জন্য ফান্ড গঠন করেছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়ও বটে। এ উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।
এক কোটির টাকার ফান্ড গঠন
শনিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশই আসে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। যারা প্রচন্ড মেধাবী কিন্ত আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। অচেনা পরিবেশে এসেই প্রথমে বেশ কিছু বাস্তবতার সম্মুখীন হন তারা। ঢাকায় পরিচিত কেউ না থাকায় বিভিন্নভাবে সমস্যায় পড়েন তারা। যার কারণে অনেকে নিজের খরচ মেটানোর জন্য টিউশন বা পার্ট টাইম জবের জন্য চেষ্টা করেন। এসবের প্রভাবে তাদের অ্যাকাডেমিক ফলাফল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের টিউশন পাওয়াটাও বেশ কঠিন। কেননা বিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষাসহ অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক টিউশনির অনেক সুযোগ থাকলেও কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের সে সুযোগটি থাকে না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের চলার পথকে মসৃণ করতে সহযোগী হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলা অনুষদের শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে অনুষদের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকার “কলা অনুষদ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে শুধু কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের এ ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। শতবর্ষ মেধাবৃত্তির আওতায় অনুষদভূক্ত ১৭টি বিভাগের স্নাতক(সম্মান) ২০১৯- এ সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত মোট ১৯ (দুটি বিভাগে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়া) জন শিক্ষার্থীকে আট হাজার টাকা করে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সাধারণ মেধাবৃত্তির আওতায় ৫০ জন মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীসহ মোট ৮৮ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন পাঁচ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে কলা অনুষদের সদ্য সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুষদগুলোকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। তাই নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন উৎসকে কাজে লগিয়ে আমরা এ ফান্ডগুলো গঠন করেছি। আশা করি ভবিষ্যতে বৃত্তির সংখ্যা ও পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। আমাদের এ উদ্যোগের মাধ্যমে অন্যরাও অনুপ্রেরণা পাবে। এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশা ইসলাম নাঈম বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মঙ্গল সাধন করা। এই বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যদি আর্থিক চাপ থেকে বের হয়ে পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগী হতে পারে, শিক্ষক হিসেবে এটিই আমাদের পরম পাওয়া।
পাশাপাশি কলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কুদুসিয়া চৌধুরী বৃত্তি ফান্ড, অধ্যাপক সুকমোল বড়–য়া বৃত্তি ফান্ড, আনোয়ারা রমজান হোসেন স্মৃতি বৃত্তি ফান্ড, আফরোজা আকবর স্মৃৃতি বৃত্তি ফান্ড, আব্দুস ছামাদ ভঁুইয়া বৃত্তি ফান্ড ও ইতিহাস ব্যাচ ৮৩ বৃৃত্তি ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে মোট ১৫ জনকে পাঁচ হাজার টাকা করে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়। সব মিলিয়ে মোট আট লক্ষ সতেরো হাজার টাকা এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে চাওয়া আবেদন এবং বিভাগের মনোনয়নের ভিত্তিতে বৃত্তির চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
বৃত্তিপ্রাপ্ত তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী দেবব্রত রায় নন্দী বলেন, কলা অনুষদ এ উদ্যোগের মাধ্যমে একটি নতুন ধার উন্মোচন করেছে। এটি আমার জন্য একটি অনুপ্রেরণা্ হিসেবে কাজ করবে। এজন্য কলা অনুষদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতে আমি যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করবে, তখন আমিও এ ধরণের কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো।
এছাড়া শিক্ষকদের জন্য পৃথক এক কোটি টাকার একটি এফডিয়ার করা হয়। যার লভ্যাংশ থেকে শিক্ষকদের শিক্ষা ও গবেষণা আন্তার্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের উদ্দেশ্যে বিদেশগমন, এজঊ-ঞঙঊঋখ, শ্রেষ্ঠ বই-প্রবন্ধবাবদ ফান্ড প্রদান করা হবে। কলা অনুষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও পাঁচ লক্ষ টাকার একটি ফান্ড গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুমিত আল রশিদ বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদের শিক্ষকদের গবেষণার ক্ষেত্রটি অবহেলিত। বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকদের গবেষণাকার্যের ফান্ডিংয়ের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। কিন্তু কলা অনুষদের শিক্ষকদের জন্য ফান্ড তেমনভাবে পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম ও মানোন্নয়নে এ ফান্ড সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কলা অনুষদের এ উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।
সার্বিক বিষয়ে কলা অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির সংবাদকে বলেন, কলা অনুষদ তার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের জন্য ফান্ড গঠন করেছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়ও বটে। এ উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।