এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। সারাদেশে বিদ্যালয়গুলোতে আনন্দমুখর শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের চিত্র
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হারে এবারও ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়েও এগিয়ে ছাত্রীরা। মাধ্যমিক ও সমমানে গত পাঁচ বছর ধরেই ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রী ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।
গত বছর এ পরীক্ষায় ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমলেও রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২১ সালে এই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন।
এ বছর মোট পূর্ণাঙ্গ জিপিএ অর্থাৎ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এক লাখ ২১ হাজার ১৫৬ ছাত্র এবং এক লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন ছাত্রী। এ হিসেবে ২৭ হাজার ২৯০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে গড় পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে যশোর বোর্ড। আর পাসের হার সবচেয়ে কম সিলেট বোর্ডে। গত বছর সিলেটসহ আশপাশের জেলাগুলিতে আকস্মিক বন্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল। এর প্রভাবে সিলেট বোর্ডে এসএসসির পাসের কম হয়ে থাকতে পারে বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বছর এসএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পরিসরে নেয়া হয়েছিল। ওই বছর ইংরেজি ও গণিতসহ কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এসব বিষয়ে অষ্টম শ্রেণির (জেএসসি) ফলের ভিত্তিতে নম্বর দেয়া হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরীক্ষা নেয়ার কারণে গত বছর গড় পাসের বেশি ছিল বলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিকের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর আগে সকালে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পক্ষ্য থেকে জানানো হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। গত বছর ছাত্রীদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি ফল :
এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ হিসেবে গড় পাসের হার দাঁড়ায় ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭১ জন। এ হিসেবে এসএসসিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ। এ ৯টি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ জন।
মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষায় মোট দুই লাখ ৬০ হাজার ১৩২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে দুই লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। মাদ্রাসায় গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর দাখিলে এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন।
কারিগরি বোর্ডের অধীনে এ বছর এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন পাস করেছে। এ হিসেবে কারিগরিতে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর কারিগরিতে এবার ১৮ হাজার ৬৫৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজ্ঞানে ৯৭ দশমিক ০৯ শতাংশ ছাত্র এবং ৯৭ দশমিক ০৮ শতাংশ ছাত্রী, মানবিকে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ছাত্র ও ৮২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছাত্রী এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ ছাত্র ও ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে।
অর্ধশত প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি :
এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কোন পরীক্ষার্থী পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, চলতি বছর মোট ২৯ হাজার ৬৩৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। তবে ৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়নি।
২০২১ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৯ হাজার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে পাঁচ হাজার ৪৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এ হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ৫১৯টি কমেছে।
গত বছর শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৮টি। এ হিসেবে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৩২টি।
বিদেশের কেন্দ্রের তথ্য :
বিদেশের আটটি পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে এবার মোট ৩৬৩ জন পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৩৪৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বোর্ডভিত্তিক ফল- শীর্ষে যশোর, সবচেয়ে কম সিলেটে :
গড় পাসের হারে এবার শীর্ষে রয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ হাজার ৮৯১ জন।
তবে গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এবার সবচেয়ে কম সিলেট বোর্ডে। সিলেটে এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৫৬৫ জন।
এ বছর সিলেট বোর্ডে পাসের হার কমার পেছনে বন্যাকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সিলেটে পরীক্ষার সময় বন্যা হওয়ার কারণে পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছিল। অনেকে স্থানান্তর হয়েছে। অনেকের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এখানে আরও কোন বিষয় আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯২৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৩ জন। গড় পাসের ৯০ দশমিক ০৩ শতাংশ। আর ঢাকা বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৪ হাজার ৯৮৪ জন।
অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে রাজশাহীতে গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৫১৭ জন।
কুমিল্লা বোর্ডে গড় পাসের হার ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ হাজার ৯৯৮ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৬৪ জন।
বরিশাল বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে দশ হাজার ৬৮ জন।
দিনাজপুরে এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫৮৬ জন।
ময়মনসিংহ বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ০২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ২১৬ জন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দাখিলে এবার গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৫ জন।
ফল জানা যাবে যেভাবে :
আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারছে। একই সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডগুলোর ফলাফল প্রকাশের ওয়েবসাইট www.educationboardresults.gov.bd -তে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট করেও ফল জানা যাচ্ছে। এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব কামাল হোসেন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। সারাদেশে বিদ্যালয়গুলোতে আনন্দমুখর শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের চিত্র
সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০২২
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হারে এবারও ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়েও এগিয়ে ছাত্রীরা। মাধ্যমিক ও সমমানে গত পাঁচ বছর ধরেই ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রী ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।
গত বছর এ পরীক্ষায় ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমলেও রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২১ সালে এই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন।
এ বছর মোট পূর্ণাঙ্গ জিপিএ অর্থাৎ গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এক লাখ ২১ হাজার ১৫৬ ছাত্র এবং এক লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন ছাত্রী। এ হিসেবে ২৭ হাজার ২৯০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে গড় পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে যশোর বোর্ড। আর পাসের হার সবচেয়ে কম সিলেট বোর্ডে। গত বছর সিলেটসহ আশপাশের জেলাগুলিতে আকস্মিক বন্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল। এর প্রভাবে সিলেট বোর্ডে এসএসসির পাসের কম হয়ে থাকতে পারে বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বছর এসএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পরিসরে নেয়া হয়েছিল। ওই বছর ইংরেজি ও গণিতসহ কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এসব বিষয়ে অষ্টম শ্রেণির (জেএসসি) ফলের ভিত্তিতে নম্বর দেয়া হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরীক্ষা নেয়ার কারণে গত বছর গড় পাসের বেশি ছিল বলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিকের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর আগে সকালে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পক্ষ্য থেকে জানানো হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। গত বছর ছাত্রীদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি ফল :
এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ হিসেবে গড় পাসের হার দাঁড়ায় ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭১ জন। এ হিসেবে এসএসসিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ। এ ৯টি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ জন।
মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষায় মোট দুই লাখ ৬০ হাজার ১৩২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে দুই লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। মাদ্রাসায় গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর দাখিলে এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন।
কারিগরি বোর্ডের অধীনে এ বছর এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন পাস করেছে। এ হিসেবে কারিগরিতে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর কারিগরিতে এবার ১৮ হাজার ৬৫৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজ্ঞানে ৯৭ দশমিক ০৯ শতাংশ ছাত্র এবং ৯৭ দশমিক ০৮ শতাংশ ছাত্রী, মানবিকে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ছাত্র ও ৮২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছাত্রী এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ ছাত্র ও ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে।
অর্ধশত প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি :
এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কোন পরীক্ষার্থী পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, চলতি বছর মোট ২৯ হাজার ৬৩৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। তবে ৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়নি।
২০২১ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৯ হাজার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে পাঁচ হাজার ৪৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এ হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ৫১৯টি কমেছে।
গত বছর শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৮টি। এ হিসেবে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৩২টি।
বিদেশের কেন্দ্রের তথ্য :
বিদেশের আটটি পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে এবার মোট ৩৬৩ জন পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৩৪৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বোর্ডভিত্তিক ফল- শীর্ষে যশোর, সবচেয়ে কম সিলেটে :
গড় পাসের হারে এবার শীর্ষে রয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ হাজার ৮৯১ জন।
তবে গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এবার সবচেয়ে কম সিলেট বোর্ডে। সিলেটে এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৫৬৫ জন।
এ বছর সিলেট বোর্ডে পাসের হার কমার পেছনে বন্যাকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সিলেটে পরীক্ষার সময় বন্যা হওয়ার কারণে পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছিল। অনেকে স্থানান্তর হয়েছে। অনেকের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এখানে আরও কোন বিষয় আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯২৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৩ জন। গড় পাসের ৯০ দশমিক ০৩ শতাংশ। আর ঢাকা বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৪ হাজার ৯৮৪ জন।
অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে রাজশাহীতে গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৫১৭ জন।
কুমিল্লা বোর্ডে গড় পাসের হার ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ হাজার ৯৯৮ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৬৪ জন।
বরিশাল বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে দশ হাজার ৬৮ জন।
দিনাজপুরে এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫৮৬ জন।
ময়মনসিংহ বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ০২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ২১৬ জন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দাখিলে এবার গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৫ জন।
ফল জানা যাবে যেভাবে :
আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারছে। একই সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডগুলোর ফলাফল প্রকাশের ওয়েবসাইট www.educationboardresults.gov.bd -তে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট করেও ফল জানা যাচ্ছে। এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব কামাল হোসেন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।