alt

আন্তর্জাতিক

ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে একা হয়ে পড়ছেন ট্রুডো

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে কানাডার মিত্র দেশগুলো অনেকটা দায়সারা গোছের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে, কাউকেই ট্রুডোর পাশে শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায়নি-বিবিসি

সম্প্রতি কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকা-ের ঘটনায় ভারত এবং কানাডার কূটনৈতিক অবস্থান তলানিতে পৌঁছেছে। কানাডা বলছে, এই হত্যাকা-ের পেছনে যে ভারত সরকারের হাত রয়েছে সে বিষয়ে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।

অপরদিকে ভারত বিষয়টিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যেই দুদেশ পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক বহিষ্কার করায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কানাডা চাচ্ছে তাদের মিত্র দেশগুলো ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে।

কিন্তু মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তখন তার মুখের হাসি যেন ক্রমেই মলিন হয়ে যাচ্ছিল।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের প্রায় সবই ছিল ভারতের বিরুদ্ধে তোলা ট্রুডোর অভিযোগের বিষয়কে কেন্দ্র করে।

গত সপ্তাহে ট্রুডো অভিযোগ করেন, কানাডার মাটিতে দেশটির একজন নাগরিকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে কানাডা। নিহত ব্যক্তি হরদীপ সিং নিজ্জার একজন শিখ অধিকার রক্ষাকর্মী যাকে এর আগে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করেছিল ভারত।

যদিও তার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সতর্কভাবে ট্রুডো বলেন, আমরা কাউকে উস্কানি দিতে চাই না বা কোনো সমস্যা তৈরি করতে চাই না। আমরা আইনের শাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।

সে সময় কয়েকজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন যে, কানাডার মিত্ররা কোথায়? ট্রুডোকে উদ্দেশ্য করে এক সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘প্রয়োজনের সময়’ আপনাকে একা মনে হচ্ছে। সাদা চোখে অন্তত এখনো পর্যন্ত এটাই মনে হচ্ছে যে, ভারতের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার সময় ট্রুডোকে পুরোপুরি একাই দাঁড়াতে হয়েছে।

ভারত বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে দেশটি কানাডার তুলনায় ৩৫গুণ বড়। ট্রুডো যেদিন কানাডার হাউজ অব কমন্সে ওই বিস্ফোরক ঘোষণা দেন, সেদিন থেকেই দেশটির প্রধান মিত্রদের কাউকেই শক্ত গলায় সহায়তার আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্টসহ বেশ কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা চক্রের (ফাইভ আইস ইন্টেলিজেন্স অ্যালায়েন্স) সাহায্যেই খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের খুনের তদন্ত চালাচ্ছে কানাডা। প্রধান মিত্রগুলোর সঙ্গে এই সংস্থার মাধ্যমে দেশটি নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে। কানাডা ছাড়াও এর অন্য সদস্যরা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড।

কিন্তু ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে কানাডার পক্ষে এই দেশগুলো অনেকটা দায়সারা গোছের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। কাউকেই ট্রুডোর পাশে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়া বলছে, তারা এই হত্যাকা-ের অভিযোগ নিয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। অস্ট্রেলিয়ার মতোই অনেকটা একই ধরনের শব্দ বেছে নিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি বলেন, কানাডা যা বলছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে তার দেশ।

সবচেয়ে নীরব প্রতিক্রিয়া এসেছে কানাডার প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। এই দুটি দেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্র কানাডার পক্ষ নিয়ে ভারতের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেনি। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ভারতের প্রসঙ্গ টানেন, তখন তিনি ভারতের প্রতি নিন্দা জানাননি। বরং নতুন অর্থনৈতিক পথ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য দেশটির প্রশংসা করেছেন।

বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোন ‘প্রতিবন্ধকতা’ নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কানাডার সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলাপ করা হচ্ছে। কিন্তু জনসমক্ষে প্রকাশিত অন্যান্য বিবৃতিতেও তেমন উত্তাপ ছিল না। দুই দেশের মধ্যকার চলমান বিরোধকে ‘গভীর উদ্বেগের’ বিষয় বলার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোতে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের বিষয়টিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ট্রুডোর জন্য সমস্যা হচ্ছে ভারতের ব্যাপক কৌশলগত গুরুত্বের তুলনায় কানাডার স্বার্থ কিছুটা মলিন হয়ে গেছে। উইলসন সেন্টারের কানাডা ইন্সটিটিউটের গবেষক জেভিয়ার ডেলগ্যাডো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্য পশ্চিমা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্ররা চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা ও পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে যে কৌশল ঠিক করেছে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারত নির্ভর। সেটা এই মূহুর্তে চাইলেই তারা একেবারে বাদ দিতে পারবে না।

মিত্ররা যে কানাডার প্রতিরক্ষায় দ্রুত এগিয়ে আসেনি, সেটা আসলে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় সকলের অবস্থানের ইঙ্গিত। কানাডার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন নিশ্চিত করে বলেছেন যে, ফাইভ আইস ভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করেছে।

তবে এ ঘটনা বিশ্বমঞ্চে কানাডার দুর্বল অবস্থানেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। পশ্চিমাদের নির্ভরযোগ্য এই মিত্র দেশটি নিজ গুণে পরাশক্তি হয়ে উঠতে পারেনি। কানাডা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টোফার স্যান্ড মনে করেন, এখানে একটি শক্তির খেলা দেখা যাচ্ছে।

ছবি

অস্ত্রবিরতির পরও ‘স্থগিত’ থাকছে ভারত-পাকিস্তান পানি চুক্তি

ছবি

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই শ্রীনগরে বিস্ফোরণের শব্দ, ট্রেসার শুটিংয়ের ভিডিও প্রকাশ

ছবি

অস্ত্রবিরতি মেনে চলার অঙ্গীকার; সতর্ক ও প্রস্তুত ভারতের সশস্ত্র বাহিনী

ছবি

যুদ্ধবিরতির পর সোমবার ফের আলোচনায় বসছে ভারত-পাকিস্তান

ছবি

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা সংস্থার জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তান

ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস, দেড় লাখ ঘরবন্দী স্পেনে

ছবি

চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের

ছবি

রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে কিয়েভে ইউরোপীয় নেতারা

নাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের গুলিতে ৩০ যাত্রী নিহত

ইকুয়েডরে সংঘর্ষে ১১ সেনা নিহত

সুদানে ড্রোন হামলা ও বোমাবর্ষণে ৩৩ জন নিহত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে : ট্রাম্প

ছবি

ভারতের বিপক্ষে অভিযানের নাম ‘বুনিয়ান–উন–মারসুস’ হলো কেনো?

ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’

ছবি

ভারতের ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্রঘাঁটিতে হামলার দাবি পাকিস্তানের

ছবি

ভারতের সামরিক স্থাপনায় পাল্টা হামলার দাবি পাকিস্তানের, কাশ্মীরে বিস্ফোরণের শব্দ

ছবি

যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানকে আইএমএফের ঋণ, ভারতের তীব্র আপত্তি

ছবি

তিন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের সেনাবাহিনী

ছবি

বাংলাদেশ সীমান্তে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করল ভারতের মেঘালয়

ছবি

পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যেই বেলুচিস্তানের ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’

ছবি

গাজায় চিরতরে বদলে গেছে জীবন

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের কোনও বিষয় নয়’: যুক্তরাষ্ট্র

জম্মুতে পাকিস্তানের হামলা ব্যর্থ: জম্মু-কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী

ভারতের ৭৭ ড্রোন ধ্বংসের দাবি পাকিস্তানের

ছবি

ভারত-পাকিস্তানের ‘ডগ ফাইটে’ নজর পরাশক্তিগুলোর

ছবি

চীনা যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান

ছবি

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে লাহোরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অচল, সীমান্তজুড়ে

ছবি

উত্তরকাশীতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, একজন আহত

ছবি

অভাব, ক্ষুধা ও হতাশায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে গাজাবাসী

ছবি

রাজস্থান-পাঞ্জাবে সতর্কতা, পুলিশের ছুটি বাতিল-প্রস্তুত মিসাইল

ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেওয়া হবে: জয়শঙ্কর

দুই দেশকেই ভালোভাবে চিনি, এই সংঘাত বন্ধ হোক : ট্রাম্প

ইসরায়েলি ২৫ ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান

ছবি

ভূস্বর্গ কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত কোথায়

ছবি

‘অপারেশন সিঁদুর’ চলমান, পাল্টা জবাব দেবে ভারত: রাজনাথ সিং

ছবি

পাকিস্তানে ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত, উত্তেজনা চরমে

tab

আন্তর্জাতিক

ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে একা হয়ে পড়ছেন ট্রুডো

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে কানাডার মিত্র দেশগুলো অনেকটা দায়সারা গোছের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে, কাউকেই ট্রুডোর পাশে শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায়নি-বিবিসি

সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্প্রতি কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকা-ের ঘটনায় ভারত এবং কানাডার কূটনৈতিক অবস্থান তলানিতে পৌঁছেছে। কানাডা বলছে, এই হত্যাকা-ের পেছনে যে ভারত সরকারের হাত রয়েছে সে বিষয়ে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।

অপরদিকে ভারত বিষয়টিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যেই দুদেশ পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক বহিষ্কার করায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কানাডা চাচ্ছে তাদের মিত্র দেশগুলো ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে।

কিন্তু মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তখন তার মুখের হাসি যেন ক্রমেই মলিন হয়ে যাচ্ছিল।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের প্রায় সবই ছিল ভারতের বিরুদ্ধে তোলা ট্রুডোর অভিযোগের বিষয়কে কেন্দ্র করে।

গত সপ্তাহে ট্রুডো অভিযোগ করেন, কানাডার মাটিতে দেশটির একজন নাগরিকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে কানাডা। নিহত ব্যক্তি হরদীপ সিং নিজ্জার একজন শিখ অধিকার রক্ষাকর্মী যাকে এর আগে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করেছিল ভারত।

যদিও তার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সতর্কভাবে ট্রুডো বলেন, আমরা কাউকে উস্কানি দিতে চাই না বা কোনো সমস্যা তৈরি করতে চাই না। আমরা আইনের শাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।

সে সময় কয়েকজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন যে, কানাডার মিত্ররা কোথায়? ট্রুডোকে উদ্দেশ্য করে এক সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘প্রয়োজনের সময়’ আপনাকে একা মনে হচ্ছে। সাদা চোখে অন্তত এখনো পর্যন্ত এটাই মনে হচ্ছে যে, ভারতের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার সময় ট্রুডোকে পুরোপুরি একাই দাঁড়াতে হয়েছে।

ভারত বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে দেশটি কানাডার তুলনায় ৩৫গুণ বড়। ট্রুডো যেদিন কানাডার হাউজ অব কমন্সে ওই বিস্ফোরক ঘোষণা দেন, সেদিন থেকেই দেশটির প্রধান মিত্রদের কাউকেই শক্ত গলায় সহায়তার আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্টসহ বেশ কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা চক্রের (ফাইভ আইস ইন্টেলিজেন্স অ্যালায়েন্স) সাহায্যেই খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের খুনের তদন্ত চালাচ্ছে কানাডা। প্রধান মিত্রগুলোর সঙ্গে এই সংস্থার মাধ্যমে দেশটি নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে। কানাডা ছাড়াও এর অন্য সদস্যরা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড।

কিন্তু ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে কানাডার পক্ষে এই দেশগুলো অনেকটা দায়সারা গোছের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। কাউকেই ট্রুডোর পাশে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়া বলছে, তারা এই হত্যাকা-ের অভিযোগ নিয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। অস্ট্রেলিয়ার মতোই অনেকটা একই ধরনের শব্দ বেছে নিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি বলেন, কানাডা যা বলছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে তার দেশ।

সবচেয়ে নীরব প্রতিক্রিয়া এসেছে কানাডার প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। এই দুটি দেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্র কানাডার পক্ষ নিয়ে ভারতের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেনি। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ভারতের প্রসঙ্গ টানেন, তখন তিনি ভারতের প্রতি নিন্দা জানাননি। বরং নতুন অর্থনৈতিক পথ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য দেশটির প্রশংসা করেছেন।

বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোন ‘প্রতিবন্ধকতা’ নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কানাডার সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলাপ করা হচ্ছে। কিন্তু জনসমক্ষে প্রকাশিত অন্যান্য বিবৃতিতেও তেমন উত্তাপ ছিল না। দুই দেশের মধ্যকার চলমান বিরোধকে ‘গভীর উদ্বেগের’ বিষয় বলার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোতে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের বিষয়টিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ট্রুডোর জন্য সমস্যা হচ্ছে ভারতের ব্যাপক কৌশলগত গুরুত্বের তুলনায় কানাডার স্বার্থ কিছুটা মলিন হয়ে গেছে। উইলসন সেন্টারের কানাডা ইন্সটিটিউটের গবেষক জেভিয়ার ডেলগ্যাডো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্য পশ্চিমা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্ররা চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা ও পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে যে কৌশল ঠিক করেছে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারত নির্ভর। সেটা এই মূহুর্তে চাইলেই তারা একেবারে বাদ দিতে পারবে না।

মিত্ররা যে কানাডার প্রতিরক্ষায় দ্রুত এগিয়ে আসেনি, সেটা আসলে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় সকলের অবস্থানের ইঙ্গিত। কানাডার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন নিশ্চিত করে বলেছেন যে, ফাইভ আইস ভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করেছে।

তবে এ ঘটনা বিশ্বমঞ্চে কানাডার দুর্বল অবস্থানেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। পশ্চিমাদের নির্ভরযোগ্য এই মিত্র দেশটি নিজ গুণে পরাশক্তি হয়ে উঠতে পারেনি। কানাডা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টোফার স্যান্ড মনে করেন, এখানে একটি শক্তির খেলা দেখা যাচ্ছে।

back to top