মায়ানমারের অর্থনীতি বর্তমানে এমন অবস্থায় আছে যে, দেখা যাচ্ছে, আগামীতে দেশের অর্থনৈতিক গতি হবে কচ্ছপের গতির মতো ধীর! বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহযুদ্ধ কবলিত এই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে মাত্র ১ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। এটি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময়।
**বর্তমান সংকটের গভীরতা:
১.ক্রমবর্ধমান সহিংসতা:
মায়ানমারে সহিংসতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ব্যবসায়ীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসা পরিচালনায় প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
২. কর্মী সংকট:
সামরিক জান্তার অত্যাচার ও অর্থনৈতিক অবনতির কারণে বহু লোক কাজের সন্ধানে গ্রামীণ এলাকায় চলে যাচ্ছে বা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে এই অভাব দেশটির শিল্পখাতকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে।
৩. মুদ্রার অবমূল্যায়ন:
দেশের মুদ্রার অবস্থা এমন খারাপ যে, বাজারে গেলে টাকাগুলো যেন আপনার চোখের সামনেই গলে যাচ্ছে। মায়ানমারের কিয়াত মুদ্রার মান আন্তর্জাতিক বাজারে এতটাই কমেছে যে, এটি নিয়ে কৌতুকময় মন্তব্য করা ছাড়া উপায় নেই।
** নতুন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ:
১.২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান:
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশের অর্থনীতি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল এবং এর পরবর্তী দমন-পীড়ন দেশের অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।
২. অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ:
মায়ানমারে সামরিক বাহিনী এবং বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এটি শুধু জনগণের জীবনকেই বিপন্ন করেনি, বরং দেশের আর্থিক অবস্থা ও স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। গৃহযুদ্ধের কারণে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
৩. দারিদ্র্যের বৃদ্ধি :
বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, মায়ানমারের দারিদ্র্যের হার আবার ২০১৫ সালের স্তরে পৌঁছে গেছে, যা ৩২.১ শতাংশ। গত ছয় বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। দারিদ্র্যের গভীরতা এবং তীব্রতা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
৪. শ্রমবাজারের সংকট:
সামরিক জান্তা তাদের ক্ষয় হওয়া সামরিক জনবল পূরণের জন্য চলতি বছরের প্রথম দিকে নিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর ফলে, অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামীণ এলাকায় চলে গেছে অথবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ফলে দেশের শিল্পখাতে শ্রমিক সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
৫. সীমান্ত বাণিজ্যের অবনতি:
মায়ানমারের জান্তা সরকার চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এর ফলে, দেশের স্থল বাণিজ্য মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
৬. মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি:
মূল্যস্ফীতির উচ্চহার এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলছে। এটি দেশটির দৃশ্যমান অর্থনীতিকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
মায়ানমারের অর্থনীতি বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। গৃহযুদ্ধ, দারিদ্র্য, কর্মী সংকট, এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন সবই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশের একটি স্থায়ী সমাধান ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন।
বুধবার, ১২ জুন ২০২৪
মায়ানমারের অর্থনীতি বর্তমানে এমন অবস্থায় আছে যে, দেখা যাচ্ছে, আগামীতে দেশের অর্থনৈতিক গতি হবে কচ্ছপের গতির মতো ধীর! বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহযুদ্ধ কবলিত এই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে মাত্র ১ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। এটি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময়।
**বর্তমান সংকটের গভীরতা:
১.ক্রমবর্ধমান সহিংসতা:
মায়ানমারে সহিংসতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ব্যবসায়ীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসা পরিচালনায় প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
২. কর্মী সংকট:
সামরিক জান্তার অত্যাচার ও অর্থনৈতিক অবনতির কারণে বহু লোক কাজের সন্ধানে গ্রামীণ এলাকায় চলে যাচ্ছে বা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে এই অভাব দেশটির শিল্পখাতকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে।
৩. মুদ্রার অবমূল্যায়ন:
দেশের মুদ্রার অবস্থা এমন খারাপ যে, বাজারে গেলে টাকাগুলো যেন আপনার চোখের সামনেই গলে যাচ্ছে। মায়ানমারের কিয়াত মুদ্রার মান আন্তর্জাতিক বাজারে এতটাই কমেছে যে, এটি নিয়ে কৌতুকময় মন্তব্য করা ছাড়া উপায় নেই।
** নতুন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ:
১.২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান:
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশের অর্থনীতি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল এবং এর পরবর্তী দমন-পীড়ন দেশের অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।
২. অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ:
মায়ানমারে সামরিক বাহিনী এবং বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এটি শুধু জনগণের জীবনকেই বিপন্ন করেনি, বরং দেশের আর্থিক অবস্থা ও স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। গৃহযুদ্ধের কারণে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
৩. দারিদ্র্যের বৃদ্ধি :
বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, মায়ানমারের দারিদ্র্যের হার আবার ২০১৫ সালের স্তরে পৌঁছে গেছে, যা ৩২.১ শতাংশ। গত ছয় বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। দারিদ্র্যের গভীরতা এবং তীব্রতা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
৪. শ্রমবাজারের সংকট:
সামরিক জান্তা তাদের ক্ষয় হওয়া সামরিক জনবল পূরণের জন্য চলতি বছরের প্রথম দিকে নিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর ফলে, অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামীণ এলাকায় চলে গেছে অথবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ফলে দেশের শিল্পখাতে শ্রমিক সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
৫. সীমান্ত বাণিজ্যের অবনতি:
মায়ানমারের জান্তা সরকার চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এর ফলে, দেশের স্থল বাণিজ্য মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
৬. মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি:
মূল্যস্ফীতির উচ্চহার এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলছে। এটি দেশটির দৃশ্যমান অর্থনীতিকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
মায়ানমারের অর্থনীতি বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। গৃহযুদ্ধ, দারিদ্র্য, কর্মী সংকট, এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন সবই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশের একটি স্থায়ী সমাধান ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন।