ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নির্বাচনে বিজয়ী হলে মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়িতে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের জুনাউ বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনী সমাবেশে এই ঘোষণা দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলের প্রার্থী। তার এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পে সুরক্ষাবাদী নীতির প্রতিফলন।
আমদানিকৃত গাড়িতে শুল্ক বৃদ্ধি
মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়িতে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের এই ঘোষণা নতুন নয়। এর আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় আরও জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমদানি করা গাড়ি ও ট্রাকের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই নীতির পেছনে তার যুক্তি হলো দেশীয় গাড়ি শিল্পকে রক্ষা করা ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করা।
সুরক্ষাবাদী নীতি ও আগের পদক্ষেপ
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প সুরক্ষাবাদী হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে বিশাল শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলে চীনের সঙ্গে এক ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। সেই সময়ে ট্রাম্প চীনের প্রযুক্তি ও পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও তার শাসনামলে এই বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, তবুও ট্রাম্প দাবি করেন যে তার নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সুরক্ষা দিয়েছে।
জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরেও যুক্তরাষ্ট্র সেই সুরক্ষাবাদী নীতি থেকে পুরোপুরি সরে আসেনি। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি অব্যাহত রেখেছে।
মেক্সিকো থেকে গাড়ি আমদানি এবং প্রভাব
মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানির অন্যতম প্রধান দেশ। ২০২৩ সালে মেক্সিকো থেকে প্রায় ৩০ লাখ গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়, যার একটি বড় অংশ জেনারেল মোটরস, ফোর্ড মোটর কোম্পানি এবং স্টেলান্টিসের মতো মার্কিন কোম্পানির নির্মিত গাড়ি। যদিও এই কোম্পানিগুলো মার্কিন ভিত্তিক, তবে তারা মেক্সিকোতে উৎপাদিত গাড়ি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরবরাহ করে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এই বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
মেক্সিকোর গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করলে কেবল আমদানিকৃত গাড়ির দাম বাড়বে না, বরং এর প্রভাব মার্কিন বাজারেও পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের মতে, মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়িতে শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় উৎপাদিত ও ব্যবহৃত গাড়ির দামও বাড়তে পারে। কারণ, গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান মেক্সিকো থেকে সরবরাহ করা হয়, যা শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
মেক্সিকো নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান
ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই মেক্সিকোকে লক্ষ্য করে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এর আগে ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি মেক্সিকো থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে বিশাল দেয়াল নির্মাণ করেছিলেন। যদিও তার শাসনামল শেষে সেই দেয়ালের একটি বড় অংশ ভেঙে ফেলা হয়, তবুও তিনি পুনরায় ক্ষমতায় আসলে দেয়াল নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্যকে সমর্থন করে, তবে তা তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন বাণিজ্য বৈষম্যহীন এবং উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হয়। তিনি মনে করেন, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব, এবং এই নীতিমালা মেনে চলা সবার জন্য প্রয়োজনীয়।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা দেশীয় গাড়ি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে পারে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য খরচ বাড়াতে পারে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত গাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যার প্রভাব মার্কিন বাজারেও পড়বে। এটি গাড়ি শিল্পে এক ধরণের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং বাজারে গাড়ির চাহিদা কমিয়ে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সার্বিকভাবে, ট্রাম্পের এই শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা তার সুরক্ষাবাদী অর্থনৈতিক নীতির অংশ, যা দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মূল্যস্ফীতি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের উপর কীভাবে পড়বে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নির্বাচনে বিজয়ী হলে মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়িতে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের জুনাউ বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনী সমাবেশে এই ঘোষণা দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলের প্রার্থী। তার এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পে সুরক্ষাবাদী নীতির প্রতিফলন।
আমদানিকৃত গাড়িতে শুল্ক বৃদ্ধি
মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়িতে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের এই ঘোষণা নতুন নয়। এর আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় আরও জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমদানি করা গাড়ি ও ট্রাকের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই নীতির পেছনে তার যুক্তি হলো দেশীয় গাড়ি শিল্পকে রক্ষা করা ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করা।
সুরক্ষাবাদী নীতি ও আগের পদক্ষেপ
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প সুরক্ষাবাদী হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে বিশাল শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলে চীনের সঙ্গে এক ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। সেই সময়ে ট্রাম্প চীনের প্রযুক্তি ও পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও তার শাসনামলে এই বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, তবুও ট্রাম্প দাবি করেন যে তার নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সুরক্ষা দিয়েছে।
জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরেও যুক্তরাষ্ট্র সেই সুরক্ষাবাদী নীতি থেকে পুরোপুরি সরে আসেনি। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি অব্যাহত রেখেছে।
মেক্সিকো থেকে গাড়ি আমদানি এবং প্রভাব
মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানির অন্যতম প্রধান দেশ। ২০২৩ সালে মেক্সিকো থেকে প্রায় ৩০ লাখ গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়, যার একটি বড় অংশ জেনারেল মোটরস, ফোর্ড মোটর কোম্পানি এবং স্টেলান্টিসের মতো মার্কিন কোম্পানির নির্মিত গাড়ি। যদিও এই কোম্পানিগুলো মার্কিন ভিত্তিক, তবে তারা মেক্সিকোতে উৎপাদিত গাড়ি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরবরাহ করে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এই বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
মেক্সিকোর গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করলে কেবল আমদানিকৃত গাড়ির দাম বাড়বে না, বরং এর প্রভাব মার্কিন বাজারেও পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের মতে, মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়িতে শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় উৎপাদিত ও ব্যবহৃত গাড়ির দামও বাড়তে পারে। কারণ, গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান মেক্সিকো থেকে সরবরাহ করা হয়, যা শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
মেক্সিকো নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান
ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই মেক্সিকোকে লক্ষ্য করে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এর আগে ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি মেক্সিকো থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে বিশাল দেয়াল নির্মাণ করেছিলেন। যদিও তার শাসনামল শেষে সেই দেয়ালের একটি বড় অংশ ভেঙে ফেলা হয়, তবুও তিনি পুনরায় ক্ষমতায় আসলে দেয়াল নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্যকে সমর্থন করে, তবে তা তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন বাণিজ্য বৈষম্যহীন এবং উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হয়। তিনি মনে করেন, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব, এবং এই নীতিমালা মেনে চলা সবার জন্য প্রয়োজনীয়।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা দেশীয় গাড়ি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে পারে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য খরচ বাড়াতে পারে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত গাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যার প্রভাব মার্কিন বাজারেও পড়বে। এটি গাড়ি শিল্পে এক ধরণের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং বাজারে গাড়ির চাহিদা কমিয়ে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সার্বিকভাবে, ট্রাম্পের এই শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা তার সুরক্ষাবাদী অর্থনৈতিক নীতির অংশ, যা দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মূল্যস্ফীতি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের উপর কীভাবে পড়বে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।